
বাঁধাকপির স্বাস্থ্যোপযোগীতা, গুণাগুণ, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, এবং ব্যবহার | All About Cabbage
শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টি যোগানের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো শাকসব্জি। শাকসব্জি একদিনে যেমন স্বাদিষ্ট হয় অন্যদিকে শরীরকে খাদ্য উপাদানের সরবরাহ করে সচল এবং সজীব করে রাখে। আমাদের দৈনন্দিনের খাদ্য তালিকায় ব্যবহৃত শাক সব্জির মধ্যে একটি অন্যতম গুরুত্ব হলো বাঁধাকপি। সাধারণত মরসুমী ফসল হলেও বর্তমানে সারা বছরই প্রায় নানান আকার এবং রঙের বাঁধাকপি বাজারে দেখতে পাওয়া যায়। বিশ্বের নানান দেশের রন্ধন প্রণালীতেই বাঁধাকপির ব্যবহার রয়েছে।প্রধাণত শীত ঋতুতে উৎপাদিত এই সবজি একাধিক রোগ বিসুখ থেকে শরীরকে রক্ষা করে বলেও জানা যায়। এই প্রবন্ধে বাঁধাকপির স্বাস্থ্যোপযোগীতা, পুষ্টিগুণ, ব্যবহার, এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্বদ্ধে বিশদে আলোচনা করা হবে।
Table Of Contents
বাঁধাকপি আসলে কী?
বাঁধাকপির হলো মূলত এক ধরণের সবজি। যা ইংরিজি ভাষায় ক্যাবেজ এবং হিন্দিতে পাতা কপি নামে পরিচিত। বাঁধাকপির বিজ্ঞানসম্মত নাম হলো ব্রেসিকা অলেরেসিয়া। আকারে সাধারণত ঈষৎ গোলাকার হয় বাঁধাকপি। লালচে বেগুনি, হালকা অথবা গাঢ় সবুজ রঙের হয় বাঁধাকপি। একটি মজবুত কাণ্ডযুক্ত ফুলের ন্যায় বেড়ে ওঠে বাঁধাকপি। স্যালাড হিসেবে এবং রান্না করেও খাদ্যে বাঁধাকপির ব্যবহারের প্রচলন রয়েছে।
বাঁধাকপি কী শরীরের জন্য উপকারী?
একাধিক পৌষ্টিক উপাদানের উপস্থিতির জন্য বাঁধাকপিকে খুবই স্বাস্থ্যকর একটি সবজি বলে মনে করা হয়। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি ইনফ্লেমেটারি বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন বাঁধাকপি পরিপাক সম্বদ্ধীয় যাবতীয় সমস্যা যেমন গ্যাস্ট্রিক, পাচনতন্ত্রে আলসার, পেট ফাঁপা ইত্যাদি সমস্যার অনায়াস প্রতিকার করে। শুধু তাই নয় একইসাথে শরীরের বাইরে কোনো অল্প কাটা ছেঁড়া স্থানে বাঁধাকপির মতন পাতা বিশিষ্ট সবজি লাগালে দ্রুত উপশম হয়। এছাড়াও বাঁধাকপির মতন পাতা বিশিষ্ট সবজি ভিটামিন, মিনারেলস এবং ফাইটোনিউট্রিয়েন্সের একটা অন্যতম উৎস হিসেবে পরিগণিত হয়। অধিক ফাইবার এবং অল্প ক্যালোরি বিশিষ্ট এই সবজি স্বাস্থ্যের উন্নতির পাশাপাশি ওজন নিয়ন্ত্রনেও সহায়তা করে। (1).
বাঁধাকপির স্বাস্থ্যোপযোগীতা
এই প্রবন্ধ থেকে বাঁধাকপির স্বাস্থ্যোপযোগীতা সম্বদ্ধীয় বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত যাবতীয় তথ্যাদি আমরা জানতে পারবো। তবে একইসাথে একথাও মাথায় রাখা দরকার যে যেকোনো কঠিন শারীরিক পরিস্থিতিতেই শুধুমাত্র বাঁধাকপির ওপর নির্ভরশীল না হয়ে চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করা দরকার। সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য এবং অল্পবিস্তর শারীরিক সমস্যার ক্ষেত্রেই খাদ্য হিসেবে বাঁধাকপি গ্রহণের উপকারীতা পাওয়া যায়। বাঁধাকপির স্বাস্থ্যোপযোগীতার সম্বদ্ধে নিম্নে আলোচনা করা হলো –
১. পরিপাকে সহায়ক এবং কোষ্ঠ্যকাঠিন্য নাশক – বাঁধাকপির স্বাস্থ্যোপযোগীতার মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি হলো পরিপাকে সহায়তা এবং কোষ্ঠ্যকাঠিন্য নাশ করা। একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণা থেকে প্রাপ্ত রিপোর্ট অনুসারে লালচে বেগুনী বাঁধাকপিতে রয়েছে অ্যান্থোসায়নিন পলিফেনাল যা পরিপাক ক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে (2)। এছাড়াও যেহেতু বাঁধাকপিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ফাইবার থাকে তাই এই সবজি হজমে সাহায্য করে। আসলে ফাইবার শুধুমাত্র যে ভালোভাবে হজম হতে সাহায্য করে তাই নয় কোষ্ঠ্য কাঠিণ্যের সমস্যাও লাঘব করে দেয়। (3)
২. ক্যান্সার প্রতিরোধক – ক্যান্সার প্রতিরোধের ক্ষেত্রেও বাঁধাকপির গুরুত্ব অপরিসীম বলে মনে করা হয়। এই বিষয়ে একটি চিকিৎসা গবেষণা থেকে জানা গেছে যে বাঁধাকপিতে উপস্থিত ব্রাসিইন নামক উপাদান ক্যান্সার প্রতিরোধে কেমোথেরাপির বিকল্প হিসেবে কাজ করে (4)। একইসাথে ক্যান্সারের সম্ভবনাযুক্ত টিউমারের জন্ম এবং বৃদ্ধির প্রবণতা রোধ করে। তবে পাঠকের একথা মনে রাখা দরকার ক্যান্সারের চিকিৎসায় বা প্রতিরোধে বাঁধাকপি একমাত্র উপাদান নয়। ক্যান্সারের চিকিৎসায় চিকিৎসক প্রস্তাবিত পদ্ধতি অনুসরণ করা একান্তভাবেই কাম্য। (5)
৩. চোখের দৃষ্টি শক্তি উন্নত করে – চোখের দৃষ্টিশক্তি উন্নত করতে বাঁধাকপি একটি প্রয়োজনীয় উপাদান হিসেবে বিবেচিত হয়। এনসিবিআই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি মেডিক্যাল রিপোর্ট অনুসারে বাঁধাকপিতে রয়েছে লুটেইন এবং জ্যাক্সোন্থিন , যা চোখের দৃষ্টিশক্তি উন্নত করতে সহায়তা করে। এই কারণে খাদ্য তালিকায় বাঁধাকপির উপস্থিতিতে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়। (6)
৪. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা অনাক্রম্যতা শক্তি বর্দ্ধক – বাঁধাকপি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এতে উপস্থিত ভিটামিন সি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এই কারণে খাদ্য তালিকায় বাঁধাকপির উপস্থিতি সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে খুবই জরুরী বলে মনে করা হয়। অনাক্রম্যতা শক্তি বৃদ্ধিতে বাঁধাকপির রস বা জুস ও পান করা যেতে পারে। এছাড়াও বাঁধাকপির মতন পাতা জাতীয় সব্জি গোষ্ঠীর অন্তর্ভূক্ত সব্জিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন সি এবং ভিটামিন কে এর উপস্থিতি রয়েছে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। (7)
৫. মেদ হ্রাসক – শরীরের অতিরিক্ত মেদ হ্রাস করার জন্য খাদ্য তালিকায় বাঁধাকপি অন্তর্ভূক্ত করা যায়। বাঁধাকপি ফাইবার সমৃদ্ধ হয় আর ওজন হ্রাসের ক্ষেত্রে ফাইবারযুক্ত খাদ্য খুবই উপকারী হিসেবে বিবেচিত হয়। দেখতে গেলে খাদ্য হিসেবে ফাইবারযুক্ত খাদ্য গ্রহণ করলে অনেকক্ষণ পর্যন্ত পেট ভর্তি থাকে তাই বার বার খাদ্য গ্রহণের প্রবণতা অনেকটাই হ্রাস পায়। এবং কম খাদ্য গ্রহণের ফলে স্বাভাবিকভাবেই ওয়ন কমে যায়।
৬. আলসার বা ঘা – অন্ত্রে ঘা বা আলসারের সমস্যার উপশমের ক্ষেত্রেও বাঁধাকপি একটি অতি পরিচিত সবজি। এনসিবিআই এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি রিপোর্ট অনুসারে বাঁধাকপির রস অ্যান্টিপেপ্টিক আলসার বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন হয়। যা আলসারের নিরাময়ের ক্ষেত্রে কার্যকরী প্রভাব বিস্তার করে। তাই পেটে আলসার হয়েছে সনাক্ত হলে বা আলসারের লক্ষণ সম্পর্কে অবগত হলে তা নিরাময়ের জন্য বাঁধাকপির রস পান করা যেতে পারে। বাঁধাকপি গ্যাস্ট্রিক, পেট ফাঁপা, আলসার ইত্যাদি নানা প্রকার পৈটিক গোলযোগের ক্ষেত্রে খুবই উপকারী পথ্য বলে প্রমাণিত হয়েছে। (8)
৭. পেশির ক্লান্তি নাশক – বাঁধাকপির উপকারীতা গুলির মধ্যে পেশির ক্লান্তি নাশ বা ব্যথা উপশম একটি অন্যতম। একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণা থেকে জানতে পারা গেছে বাঁধাকপির ব্যবহারের সাহায্যে স্তনদায়ী মহিলাদের স্তনের ব্যথা উপশম হয়। যদি স্তনে বেশি ব্যথা অনুভূত হয় তাহলে বাঁধাকপির পাতার সাহায্যে সেঁক দিলে দ্রুত আরাম পাওয়া যায়। অন্য একটি গবেষণা অনুসারে খাদ্য হিসেবে বাঁধাকপির ব্যবহার করলে বার্ধক্যজনিত কারণে সৃষ্ট গাঁটের ব্যথার নিরাময় হয়। তবে উপরিল্লিখিত দুটি গবেষণারই আরো পরিসর বৃদ্ধি করা প্রয়োজন, তাহলে খাদ্য হিসেবে বাঁধাকপি গ্রহণের পরিমাণ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে। (9) (10)
৮. হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য উপযোগী – হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য বাঁধাকপির উপকারীতা অপরিসীম। বাঁধাকপি হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা হ্রাস করে। এই সবজিতে উপস্থিত অ্যান্থোসায়নিন পলিফেলন হার্ট সুস্থ্য রাখতে সহায়তা করে। শুধু তাই নয় একইসাথে ফ্রি র্যাডিক্যাল ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার সম্ভবনাও অনেকাংশেই কমিয়ে দেয়। এছাড়াও এতে উপস্থিত ক্যারোটিনয়েড পিগমেন্ট হার্টকে সুস্থ্য রাখে এবং হার্ট অ্যাটাকের প্রবণতাও কমিয়ে দেয়। অ্যান্থোসায়নিন একটি উদ্ভিদ রঞ্জক। লালচে বেগুনী বাঁধাকপির মধ্যে এই রঞ্জক উপস্থিত থাকে। এবং মনে কর হয় যে, যে সব্জিতে অ্যান্থোসায়ানিনের উপস্থিতি রয়েছে তা হার্টের স্বাস্থ্যের পক্ষে অত্যন্ত উপাদেয়। (11) (12)
৯. প্রদাহ নাশক – বাঁধাকপি প্রদাহ সংক্রান্ত সমস্যারও অনায়াস সমাধান করতে সক্ষম। এনসিবিআই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণা অনুসারে বাঁধাকপি অ্যান্টি ইনফ্লেমেটারি বৈশিষ্ট্যযুক্ত হওয়ার কারণে প্রদাহ বা জ্বালাভাব দূর করতে সাহায্য করে। গবেষণা সূত্রে আরোও জানা গিয়েছে যে বাঁধাকপি কান এবং ত্বকের প্রদাহ কমাতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই কারণে প্রদাহ দূর করার জন্য খাদ্য হিসেবে বাঁধাকপি গ্রহণ করতে বলা হয়।
১০. মধুমেহ রোগ নিয়ন্ত্রক – খাদ্য হিসেবে বাঁধাকপি গ্রহণ মধুমেহ বা ডায়বিটিস রোগাক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য খুবই উপাদেয়। এই বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার জন্য ইঁদুরের ওপর একটি গবেষণা করা হয়। সেই গবেষণা অনুসারে লালচে বাঁধাকপির একই অ্যান্টিডায়বেটিক প্রভাব রয়েছে, যা ডায়বিটিসের সমস্যার সমাধান করতে পারে। এর কারণ বাঁধাকপির নির্যাসে রয়েছে অ্যান্টিহাইপারগ্লাইসেমিক প্রভাব যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রন করে এবং ইনসুলিনের মাত্রা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এরফলে সহজেই রক্তে শর্করা বা গ্লুকোজের মাত্রা হ্রাস পায়। তাই মধুমেহ রোগাক্রান্ত মানুষদের জন্য বাঁধাকপি খুবই উপকারী হিসেবে বিবেচিত হয়। (13)
১১. ভিটামিন সি এর উৎস – বাঁধাকপিতে উপস্থিত একাধিক পৌষ্টিক উপাদানের মধ্যে অন্যতম একটি হলো ভিটামিন সি। সারা শরীরের বিভিন্ন অংশে কোষের বৃদ্ধি এবং উন্নতি সাধনে ভিটামিন সি এর গুরুত্ব অপরিহার্য। ভিটামিন সি ক্ষত সারাতে, হাড় এবং দাঁতের সুস্থ্যতা বজায় রাখতে সহায়তা করে। এছাড়াও ভিটামিন সি একটি কার্যকর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে, যা ক্যান্সার এবং হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকটাই কমিয়ে দেয়। (14)
১২. উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রক – বাঁধাকপ্পির উপকারীতা গুলির মধ্যে একটি হলো এটা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রক। এতে উপস্থিত ইনডোলস ফাইটোকেমিক্যালস শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ন্যায় কাজ করে। মনে করা হয় এই কারণেই বাঁধাকপি দ্বারা প্রস্তুত কিমচি স্যালাড এর ব্যবহার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করে। প্রসঙ্গত কিমচি একটি ফার্মেন্টেড খাদ্য, যা বাঁধাকপি এবং অন্যান্য সবজি দিয়ে প্রস্তুত করা যেতে পারে। এটি একটি স্বাস্থ্যকর রান্নার উদাহরণ বলে বিবেচিত হয়। (15)
১৩. কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রক – রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রনের ক্ষেত্রে বাঁধাকপির গুরুত্ব অপরিসীম। এই সবজি রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রন করে। একটি গবেষণা থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে ৬-৯ সপ্তাহ ব্যাপী বাঁধাকপি খাদ্য হিসেবে গ্রহণকারী মানুষদের এলডিএল (ক্ষতিকর কোলেস্টেরল) পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে। যদিও এটা এখনও পরিষ্কার নয় যে বাঁধাকপির প্রভাবেই এটা সম্ভব হয়েহে। অবশ্য চিকিৎসকদের মতে এতে উপস্থিত দ্রবণীয় ফাইবার এবং ফাইটোস্টেরল কারণে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রিত হতে পারে।
১৪. ত্বকের স্বাস্থ্যোন্নতি করে – বাঁধাকপি ত্বকের স্বাস্থ্যোন্নতির জন্য খুবই উপকারী সবজি। বাঁধাকপি ইউভি রশ্মি থেকে রক্ষা করে ফটোএজিং এর ঝুঁকি কমাতে পারে।ফটোএজিং সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি দ্বারা সৃষ্ট একটি ত্বকের সমস্যা, এরফলে ত্বকের বলিরেখা দেখা যায় এবং অকাল বার্ধক্য ত্বরান্বিত করে। বাঁধাকপি ভিটামিন সি সমৃদ্ধ হওয়ার কারণে ত্বকের কোষের দ্রুত বৃদ্ধি
এবং বিকাশ ঘটায়। এবং ত্বকের ক্ষত দ্রুত নিরাময় করে।
১৫. চুলের উন্নতিতে – শুধু চুল বলেই নয় সারা শরীরের জন্যই বাঁধাকপি খুবই উপাদেয় একটি মরসুমী সবজি। একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণা সূত্রে জানা গিয়েছে বাঁধাকপিতে কোয়ের্সেটিন নামে একটি উপাদান আছে। এই যৌগ চুল সংক্রান্ত যাবতীয় সমস্যা যেমন অ্যালোপেসিয়ার (হঠাৎ করে মাথার সব চুল পড়ে যায়।) সমস্যা হ্রাস করতে পারে। এই কারণে খাদ্য হিসেবে বাঁধাকপি গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়।
তাহলে প্রবন্ধের এই অংশ থেকে বাঁধাকপির স্বাস্থ্যোপযোগীতা গুলির ব্যাপারে একটা ধারণা পাওয়া গেলো।
বাঁধাকপির পুষ্টি গুণ
বাঁধাকপির পুষ্টি গুণ গুলি হলো যথা –
পৌষ্টিক উপাদান | প্রতি ১০০ গ্রামে পরিমাণ |
---|---|
জল | ৯২.১৮ গ্রাম |
শক্তি | ২৫ কিলোক্যালোরি |
প্রোটিন | ১.২৮ গ্রাম |
ফ্যাট (মোট লিপিড) | ০.১ গ্রাম |
কার্বোহাইড্রেট | ৫.৮ গ্রাম |
ফাইবার | ২.৫ গ্রাম |
শর্করা | ৩.২ গ্রাম |
ক্যালসিয়াম | ৪০ মিলিগ্রাম |
আয়রণ | ০.৪৭ মিলিগ্রাম |
ম্যাগনেশিয়াম | ১২ মিলিগ্রাম |
ফসফরাস | ২৬ মিলিগ্রাম |
পটাশিয়াম | ১৭০ মিলিগ্রাম |
সোডিয়াম | ১৮ মিলিগ্রাম |
জিঙ্ক | ০.১৮ মিলিগ্রাম |
কপার | ০.০১৯ মিলিগ্রাম |
ম্যাঙ্গানীজ | ০.১৬ মিলিগ্রাম |
সেলেনিয়াম | ০.৩ মাইক্রোগ্রাম |
ভিটামিন সি | ৩৬.৬ মিলিগ্রাম |
থায়মিন | ০.০৬১ মিলিগ্রাম |
রাইবোফ্লাবিন | ০.০৪ মিলিগ্রাম |
নিয়াসিন | ০.২৩৪ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন বি ৬ | ০.১২৪ মিলিগ্রাম |
ফলেট | ৪৩ মাইক্রোগ্রাম |
কেলিন | ১০.৭ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন এ | ৫ মাইক্রোগ্রাম |
ভিটামিন ই | ০.১৫ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন কে | ৭৬ মাইক্রোগ্রাম |
মোট স্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড | ০.০৩৪ গ্রাম |
মোট মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড | ০.০১৭ গ্রাম |
মোট পলি অ্যানস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড | ০.০১৭ গ্রাম |
বাঁধাকপির ব্যবহার
স্বাদে অতুলনীয় খাদ্য বাঁধাকপি নানাভাবে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করা যায়। এবার দেখে নেওয়া যাক বাঁধাকপি কী কী ভাবে ব্যবহার করা যায়।
- বাঁধাকপির তরকারী রান্না করে খাওয়া যেতে পারে।
- স্যুপ প্রস্তুত করতেও বাঁধাকপি ব্যবহার করা হয়।
- ন্যুডলস এবং ম্যাকারনী রান্নার ক্ষেত্রেও বাঁধাকপি প্রয়োগ করা হয়।
- সুস্বাস্থ্য রক্ষার জন্য বাঁধাকপির জুস বা রস পান করা যেতে পারে।
- স্যালাড বানানোর সময়ও বাঁধাকপির ব্যবহারের প্রচলন রয়েছে।
- ভারতীয়দের কাছে বাঁধাকপির পরোটা একটি অতি সুস্বাদু এবং জনপ্রিয় খাদ্য উপাদান।
বাঁধাকপি বেছে নেওয়ার এবং তা সংরক্ষণের পদ্ধতি
বাঁধাকপির উপযোগ সম্পূর্ণভাবে লাভ করতে হলে সেটা বেছে নেওয়ার পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা থাকা দরকার। বাঁধাকপি স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারী হলেও খারাপ বাঁধাকপি স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক হয়। এই কারণে সঠিক বাঁধাকপি বেছে নেওয়া খুবই জরুরী। এবার দেখে নেওয়া যাক পাতা বিশিষ্ট এই সবজি বেছে নেওয়ার পদ্ধতি গুলি কী কী –
বেছে নেওয়ার পদ্ধতি
- যেহেতু বাঁধাকপি সাধারণত সবুজ এবং লালচে বেগুণী রঙের হয় তাই এই দুই রঙ ব্যতীত অন্য রঙের বাঁধাকপি ক্রয় করা উচিৎ নয়।
- সব সময় টাটকা তাজা বাঁধাকপি বেছে নেওয়া উচিৎ। বাঁধাকপি টাটকা নাকি অনেকদিনের পুরনো জানতে হলে কপির গোড়ার দিকে লক্ষ্য করতে হবে, তাহলেই জানা যাবে।
- যদি বাঁধাকপির গোড়া কালো হয়ে যায় অথবা নরম হয়ে যায় তাহলে সেটা ক্রয় না করাই শ্রেয়।
- সবসময় ঠাস ভরাট বাঁধাকপিই বেছে নেওয়া দরকার।
- পাতা গুলিতে ভালো করে নজর দেওয়া উচিৎ যেনো তা কোনোভাবেই পোকা আক্রান্ত না হয়ে থাকে।
- টাটকা তাজা বাঁধাকপি কখনও শুকনো হয়না। তাই এই বিষয়টাতে খেয়াল রাখা উচিৎ।
সংরক্ষণ পদ্ধতি
- বেশিদিন ধরে টাটকা এবং তাজা রাখতে হলে বাঁধাকপি ফ্রিজে সংরক্ষণ করা দরকার।
- অথবা অল্প ভিজে কাপড় জড়িয়ে রাখলেও বাঁধাকপি বেশ কয়েকদিন পর্যন্ত তাজা থাকে।
বাঁধাকপির পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
বাঁধাকপি স্বাস্থ্যের জন্য উপযোগী হলেও নির্দিষ্ট পরিমাণের বেশি খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করলে তা স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক হিসেবে পরিলক্ষিত হয়। কী হতে পারে বাঁধাকপির পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া এবার সেগুলি জেনে নেওয়া যাক –
- বাঁধাকপির পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া গুলির মধ্যে অন্যতম একটি হলো গলায় অ্যালার্জি। যদিও তা খুব কম সংখ্যক মানুষের শরীরেই দেখা যায়।
- মধুমেহ রোগাক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য বাঁধাকপি খুবই উপকারী হিসেবে মনে করা হলেও যাদের রক্তে শর্করার মাত্রা কম তাদের জন্য খুবই ক্ষতিকারক। কারণ বাঁধাকপি রক্তে শর্করার মাত্রা হ্রাস করে। এরফলে যাদের স্বাভাবিকভাবেই রক্তে শর্করার মাত্রা কম তাদের রক্তে শর্করা একদম নিঃশেষ হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা দেখা যায়।
- বাঁধাকপি পেট ফাঁপা এবং গ্যাসের সমস্যা সৃষ্টি করে।
- হাইপোথাইরয়েডিজম (থাইরোয়েড গ্রন্থি যখন থাইরয়েড হরমোণ উৎপাদন করতে অক্ষম হয়ে যায়।) এর সমস্যা গ্রস্থ ব্যক্তিদের জন্য খাদ্য হিসেবে বাঁধাকপি গ্রহণ করা ক্ষতিকারক বলে মনে করা হয়।
আশা করা যায় এবার, বাঁধাকপির গুণাগুণ এবং আমাদের শরীরে এর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে পাঠকের একটা ধারণা হয়েছে। আর বাঁধাকপির পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থেকে নিরাপদে থাকার জন্য পরিমিত পরিমাণে বাঁধাকপি গ্রহণ করা দরকার। আর বাঁধাকপি গ্রহণের ফলে যখনই কোনো শারীরিক সমস্যার উদ্ভব হবে তখনই সময় নষ্ট না করে চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করা জরুরী।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী
বাঁধাকপি কী ওজন হ্রাসে সহায়তা করে?
হ্যাঁ, বাঁধাকপি ওজন হ্রাসে সহায়তা করে। উপরিল্লিখিত প্রবন্ধে এই বিষয়ে বিশদে আলচনা করা হয়েছে।
প্রতিদিনের খাদ্য তালিকা বাঁধাকপি রাখা যেতে পারে?
হ্যাঁ প্রতিদিন ৮৪ গ্রাম ওজন পর্যন্ত বাঁধাকপি খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করা যেতে পারে।
খাদ্য হিসেবে বাঁধাকপি গ্রহণ কী মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক?
লাল বাঁধাকপিতে অ্যান্থোসায়ান পলিফেনল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা মস্তিষ্কের বিকারগ্রস্থতার সম্ভবনা কম করে। তাই বাঁধাকপি মস্তিষ্কের জন্য কোনোভাবেই ক্ষতিকারক নয় বলে মনে করা হয়।
বাঁধাকপি কে কী কিটো ডায়েটের অন্তর্ভূক্ত করা যায়?
হ্যাঁ বাঁধাকপি কিটো ডায়েটের অন্তর্ভূক্ত।
কাঁচা না রান্না করা কোনো ধরণের বাঁধাকপি বেশি স্বাস্থ্যকর হয়?
কাঁচা বাঁধাকপি স্যালাড প্রস্তুতে ব্যবহৃত হয়। আর বাঁধাকপিতে উপস্থিত পৌষ্টিক উপাদানের জন্য এটা কাঁচা বা রান্না করা উভয়ভাবেই শরীরের জন্য উপকারী বলে বিবেচিত হয়।
আলসার নিরাময়ের জন্য কতদিন পর্যন্ত বাঁধাকপির রস পান করা দরকার?
এইভাবে নিরাময়ের নির্দিষ্ট মেয়াদ বলা সম্ভব নয়। তবে নিয়মিতভাবে বাঁধাকপির রস পান করলে ১০-৪২ দিনের মধ্যে আলসারের সম্পূর্ণ নিরাময় হয়।
শল্য চিকিৎসা বা সার্জারির পূর্বে খাদ্য হিসেবে বাঁধাকপি গ্রহণ করলে কী সমস্যা দেখা যাবে?
এটা নির্ভর করে অস্ত্রোপচার এবং ব্যক্তির শারীরিক অবস্থার উপর। যাই হোক অনেক অস্ত্রোপচারের আগে খালি পেটে থাকা বাঞ্ছনীয়। প্রায়ই, অস্ত্রোপচারের পর চিকিৎসকেরা ডায়েট চার্ট অনুসরণ করতে বলেন।
বাঁধাকপির জল কী স্বাস্থ্যকর হয়?
হ্যাঁ স্বাস্থ্যকর হয়। বাঁধাকপির পাতা গুলিকে জলে ধুয়ে তারপর তা থেকে রস বের করে পান করা যেতে পারে।
বাঁধাকপির ধরণ কেমন হয়?
বাঁধাকপি সাধারণত ঠাণ্ডা ধরণের হয়।
বাঁধাকপিতে কী কী ভিটামিন পাওয়া যায়?
বাঁধাকপিতে পর্যাপ্ত পরিমানে ভিটামিন কে এবং ভিটামিন সি রয়েছে। এছাড়াও এতে ভিটামিন এ, ভিটামিন ই এবং ভিটামিন বি ৬ রয়েছে।
বাঁধাকপিতে কী মস্তিষ্কের কৃমি রয়েছে?
না, বাঁধাকপিতে মস্তিষ্কের কৃমি নেই কোনো বৈজ্ঞানিক গবেষণা থেকেই এই তথ্যের সত্যতা জানা যায়না।
16 Sources

Latest posts by StyleCraze (see all)
- কৃমির সংক্রমণ চিকিৎসার ঘরোয়া প্রতিকার | Pinworms Home Remedies in Bengali - February 28, 2021
- কুষ্ঠ রোগের কারণ, লক্ষণ এবং চিকিৎসা – Leprosy Causes, Symptoms and Treatment in Bengali - February 26, 2021
- সামুদ্রিক লবণের উপকারীতা এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া | Sea Salt Benefits and Side Effects - February 26, 2021
- তেজপাতা সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য | All About Bay Leaf (Tej Patta) in Bengali - February 26, 2021
- ভিটামিন ডি-3 এর উপকারিতা, এর ঘাটতির কারণ এবং লক্ষণ | Vitamin D3 Benefits in Bengali - February 26, 2021
