
বেসনের উপকারিতা, ব্যবহার ও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া | Gram Flour (Besan) Benefits and Side Effects in Bengali
ভারতীয় রান্নাঘরে একটা অপরিহার্য খাদ্য উপাদান হল বেসন। বেসনের উপকারিতা নানাবিধ। রান্নার উপকরণ হিসেবে যেমন এটি বহুল ব্যবহৃত হয় তেমনি রূপচর্চাতেও এর অবদান কোনেও অংশে কম নয়। সৌন্দর্য্য নিয়ে সচেতন মানুষেরাও নানা উপায়ে বেসন ব্যবহার করে থাকেন। ঘরে তৈরি সুস্বাদু মিষ্টিই হোক কিংবা মুখরোচক পকোড়া, সব জায়গায় বেসন নিজের জাদু দেখায়। এছাড়াও আপনি কি জানেন যে বেসন শুধু খাবারের স্বাদই বাড়ায় না, স্বাস্থ্যের জন্যও এটি খুব ভালো। তাহলে চলুন আমরা বিশদে জেনে নিই বেসনের উপযোগিতা সম্পর্কে।
Table Of Contents
বেসন কী?
শুরুতেই আমরা জানব বেসন কী? তবে বেসন কী সেটা আশা করি কম বেশি সকলেই জানেন। তাও জানিয়ে রাখি- বেসন হল আটার মতো এক প্রকারের পদার্থ যা ছোলার ডাল পিষে বানানো হয়। কাঁচা ছোলার ডাল বা শুকনো ছোলার ডাল থেকেই মূলত বেসন তৈরি করা হয়। ভারতের বিভিন্ন জায়গায় বেসনের বিভিন্ন রকমের নাম রয়েছে। তবে বেসনের যত রকম নাম আছে তার থেকেও বেশি রয়েছে তার উপকারিতা। কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফাইবার এবং অন্যান্য মিনারেলে সমৃদ্ধ বেসনের, খাবার হিসেবে যেমন উপযোগিতা রয়েছে তেমনই সৌন্দর্য্য বৃদ্ধিতে বেসনের ব্যবহারও খুব জনপ্রিয়।
বেসনের সম্পর্কে জানার পর আসুন জেনে নেওয়া যাক বেসনের উপকারিতাগুলি। এখানে বলে দেওয়া ভালো, বেসনের চেয়ে ছোলার ওপর অনেক বেশী গবেষণা করা হয়ছে, আর যেহেতু ছোলা পিষেই বেসন তৈরি করা হয় তাই ছোলা আর বেসনের উপকারিতা মোটামোটি একই। এই জন্য এই প্রতিবেদনের কিছু কিছু অংশে বেসনের বদলে ছোলার ওপর করা গবেষণাকেই বৈজ্ঞানিক প্রমাণ হিসেবে দেওয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্য সম্পর্কিত উপকারিতা
বেসন এমনই একটি পুষ্টিকর খাদ্য উপাদান যা শুধু মুখরোচক খাবার তৈরিতেই সাহায্য করে না, পাশাপাশি দেহে পুষ্টিও যোগায়। এমনকি বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার সমাধানও করে। তাই বেসনের উপকারিতা বলে শেষ করা যাইয় না। তবুও দেখে নেওয়া যাক স্বাস্থ্যের পক্ষে কতটা উপকারী বেসন?
১) কোলেস্টেরল কমানোঃ
ইউনিভার্সিটি অফ টরেন্টো থেকে প্রকাশিত একটি রিপোর্টে জানা গেছে, দিনে একবার বেসন খেলে তা রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। (১) বেসন দ্রাব্য ও অদ্রাব্য দুই প্রকার ফাইবারেই সমৃদ্ধ হওয়ায় তা কোলেস্টরেল কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। একটি অস্ট্রেলিয়ান গবেষণায় দেখা গেছে, যে সব ডায়েটে বেসন থাকে সেগুলো গমের থেকেও বেশি মাত্রায় খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমিয়ে দেয়। (২) চীনের একটি গবেষণা অনুসারে বেসন খেলে সিরাম কোলেস্টরেল লেভেলের ওপর উপকারী প্রভাব দেখা যায়।(৩) আরেকটি অস্ট্রেলিয়ান গবেষণা বলছে যে, বেসন ফাইবার ও পলি আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিডে পূর্ণ। তাই এটি খেলে রক্তে কোলেস্টেরল মাত্রা কমে। (৪) এছাড়া দেখা গেছে বেসনে লিপোপ্রোটিনের মাত্রা কম হওয়ায় কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে থাকে।
২) ডায়াবেটিস নিন্ত্রয়ণঃ
গবেষণায় জানা যাচ্ছে যে বেসন ডায়াবেটিস কমাতে সাহায্য করে। লেগিউমে গ্লাইসেমিক সূচক খুব কম থাকায় এটি খুব উপকারী সেটা অনেকেই জানেন। (৫) দৈনিক খাদ্য তালিকায় বেসন যোগ করলে ডায়াবেটিসের পাশাপাশি আরও অনেক রকম হার্ট সম্পর্কিত রোগের ঝুঁকিও কমে।
আমেরিকান ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশনের মতে ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য বেসন হল সুপার ফুড। হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের রিপোর্ট অনুযায়ী বেসনের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ১০ যা কিনা তাৎপর্যপূর্ণভাবে অনেক কম। আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যে প্যাকেটজাত বা টিনজাত বেসন নয় শুকনো বেসনই খাবেন। কারণ টিনজাত বেসন ব্রাইনে সংরক্ষণ করা থাকে যা গ্লাইসেমিক সূচকের মান ৩৮ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়।
যেহেতু বেসনে ফাইবার থাকে, ডায়াবেটিসের জন্য এর একটা উপকারিতা রয়েছে। ফাইবার ব্লাড সুগার শোষণ কমিয়ে দেয় আর দুই রকমের ডায়াবেটিসের রিস্কও কমায়। এই ফাইবার ক্ষিদে নিয়ন্ত্রণ করে এবং ডায়েবেটিস সংক্রান্ত স্থূলতা কমাতে সাহায্য করে।
অ্যামেরিকান জার্নাল অফ নিউট্রিশনের একটা রিপোর্ট অনুযায়ী, বেসন গ্রহণ করার ৩০ মিনিট ও ৬০ মিনিট পরে খাদ্য গ্রহনের পরবর্তী সময়ে ব্লাড সুগার লেভেল কমিয়ে দেয়। এটি রক্তে ইনসুলিনের মাত্রাও কমিয়ে আনে গ্রহনের ১২০ মিনিট পর। (৬)
নর্থ ডাকোটা স্টেট ইউনিভার্সিটির রিপোর্ট অনুযায়ী লেগিউমে পূর্ণ ডায়েট দুই প্রকার ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় ও প্রতিরোধে একটি প্রাকৃতিক সাশ্রয়ী সমাধান এবং এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও নেই। (৭)
৩) হার্টের অবস্থার উন্নতিঃ
বেসন ভিটামিন, মিনারেলস ও ফাইবারে সমৃদ্ধ একটি খাদ্য উপাদান। রোজকার ডায়েটে এটি যোগ করলে হার্টের পক্ষে খুবই উপকারী। লেগিউম হার্টের রোগ কমাতে কার্যকরী। একটা কলায় যে পরিমাণ ক্যালশিয়াম থাকে, তিন টেবিল চামচ বেসন থেকে ঠিক তত পরিমাণ ক্যালশিয়ামই পাওয়া যায়। পটাশিয়াম হার্টকে ভালো রাখে এবং ব্লাড প্রেসার কমাতে সাহায্য করে। বেসনে থাকে স্যাপোনিনস যা রক্তে কোলেস্টেরল লেভেল কমাতে সাহায্য করে।
৪) ওজন কমানোঃ
২০১০ সালের একটি গবেষণা থেকে জানা যায় যে বেসন দেহের ওজন কমাতে খুব কার্যকরী। আসলে এই ওজন কমাতে সাহায্য করে বেসনে উপস্থিত প্রোটিন এবং ফাইবার। ৪২ জনকে নিয়ে ১২ সপ্তাহের জন্য একটি গবেষণা চালানো হয়। এতে দেখা যায় বেসনের তৈরি খাবার খাওয়ার পর ক্ষিদে মিটে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে।
২০১১ সালের এক গবেষণায় খাদ্য সম্পর্কিত একটি জার্নাল থেকে জন্য গেছে ওজন কমানোর ক্ষেত্রে হাই প্রোটিন ডায়েটের থেকে হাই কার্ব ডায়েট অনেক বেশি কার্যকরী। (৮) মাংসের পরিবর্তে আপনি বেসন খেতে পারেন ফাইবার পেতে। এটা স্যাচুরেটেড ফ্যাট গ্রহনের মাত্রা কমাতে সাহায্য করবে। এই জন্য প্যান কেক তৈরি করার সময় বেসন ব্যবহার করতেই পারেন।
প্রোটিনের মধ্যে এক প্রকার উচ্চ তাপীয় ধর্ম দেখা যায় যার অর্থ আপনার দেহ প্রোটিনকে অ্যামিনো অ্যাসিডে ভেঙে ক্যালোরি ক্ষয় করে। প্রোটিনের তাপীয় প্রভাব প্রায় ৩০%, তার মানে পরিপাকের সময় ৩০% ক্যালোরি ক্ষয় হয়।
যদি আপনি বেসনের বদলে বিনস্ খান, অবশ্যই প্রোটিনের পরিমাণ মাথায় রেখে খাবেন। এক কাপ রান্না করা মটরে প্রায় ২৭০ ক্যালোরি থাকে। বেসন একমাত্র উপাদান যা ওজন কমানোর সাথে সাথে আবার ওজন বৃদ্ধিও রোধ করে। (৯)
৫) গ্লুটনের বিকল্পঃ
গ্লুটন এক প্রকার প্রোটিন যা যে কোনো খাদ্য পদার্থে পাওয়া যায়। আর আপনার যদি গ্লুটনে অ্যালার্জি থাকে তাহলে আপনার জন্য এটাই সুখবর যে বেসন গ্লুটনহীন একটি খাদ্য উপাদান। অতিরিক্ত পরিমাণে গ্লুটন খেলে পেটের রোগ দেখা যেতে পারে।
বেসনের একটা আলাদা স্বাদ থাকায় এটি প্রায় সব রকম সুস্বাদু খাবার বা ডেজার্ট প্রস্তুতিতে ব্যবহার করা হয়। মধ্য প্রাচ্যের দেশগুলিতে এর ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। বেসন খুব তাড়াতাড়ি তরল পদার্থ শোষণ করে নিতে পারে তার জন্য বেকিং করতে বেসন খুব ভালো কাজে দেয়। যেহেতু এটি ভারী আটার মতো পদার্থ তাই বেকিং করার সময় কেক প্রস্তুতিতে ডিমের পরিবর্তে এটি ব্যবহার করা হয়। ভেগানদের জন্য সুখবর। যারা ডায়েটে গ্লুটন এড়িয়ে যেতে চান তাদের জন্যও বেসন খুব ভালো।
আপনাদের জন্য ছোট্ট টিপস্ আছে। বেসনের স্বাদ অনেকটাই বিনস্ -এর মতো। যদি রান্নায় কাপের এক চতুর্থাংশের বেশি পরিমাণে বেসন দিতে হয়, তাহলে একটু মিষ্টি জাতীয় কিছু যোগ করে নেবেন, এতে স্বাদ খুব ভালো হয়।
৬) রক্তাল্পতার চিকিৎসায়ঃ
আমরা জানি আয়রনের ঘাটতির জন্য আমাদের শরীরে রক্তাল্পতা বা অ্যানিমিয়া দেখা যায়। বেসন অ্যানিমিয়ার চিকিৎসায় বিশেষভাবে কার্যকারী। বেসনে আয়রনের পরিমাণ অনেক। কত কাপ বেসন রান্নায় ব্যবহার করছেন সেটা মাপলে কত পরিমাণ আয়রন আপনি খাচ্ছেন সেটাও পরিমাপ করা করা হয়ে যাবে। যারা শাকাহারী তাদের জন্যও বেসন খুব গুরুত্বপূর্ণ কারণ যেহেতু তারা মাছ, মাংস খান না তাই আয়রনের উৎস হিসেবে কাজ করে বেসন। লোহিত রক্ত কণিকা উৎপাদনে আয়রনের ভূমিকা রয়েছে, এছাড়াও দেহের প্রতিটি কোষে রক্ত সরবরাহ করে। বিপাক ক্রিয়ার হার বাড়িয়ে এনার্জি লেভেল বাড়ায়।
৭) কোলরেক্টাল ক্যানসার প্রতিরোধঃ
একটি মেক্সিকান গবেষণা অনুসারে জানা যায় বেসন কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধ করার ক্ষমতা রাখে। প্রোটিন ও ডিএনএর অক্সিডেশন কমিয়ে এবং বিটা ক্যাটেনিন যেটা কিনা একটু মেজর অঙ্কোজেনিক প্রোটিন, তার কার্যকলাপে বাধা ঘটিয়ে কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। (১০)
আমেরিকান ইনস্টিটিউট অফ ক্যান্সার রিসার্চের গবেষণা অনুসারে বেসনে আছে স্যাপোনিন ও লিগানানস যা কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। (১১) এছাড়াও বেসনে রয়েছে এক প্রকার প্রতিরোধী স্টার্চ যা কোলন কোষগুলোকে রক্ষা করে। এই বিশেষ প্রকার স্টার্চ ক্ষুদ্রান্ত্রে পাচিত হয় না, এটি উপকারী কোলন ব্যাকটেরিয়া দ্বারা ব্যবহৃত হয় এবং এভাবেই কোলন কোষকে রক্ষা করে।
বেসনে থাকে ফ্ল্যাভোনয়েড, ট্রেটারপিনয়েডের মতো অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, প্রোটেস ইনহিবিটর, স্টেরল, ইনোসিটল ইত্যাদি। একটি টার্কিশ রিসার্চ অনুযায়ী দৈনন্দিন ডায়েটে লেগিউম জাতীয় খাদ্য যোগ করলে অনেক উপকার পাওয়া যায় তার মধ্যে কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধ অন্যতম। (১২)
আরেকটি গবেষণায় জানা গেছে যে, যে সব দেশে লেগিউম বেশি পরিমাণে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করা হয় সেসব দেশে কোলন ক্যান্সারের কেস কম থাকে। লেগিউম বীজ বিভিন্ন রকমের ক্যান্সার চিকিৎসায় থেরাপি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এই রোগের প্রাথমিক দশায় লেগিউমের অ্যান্টি ক্যানসার অ্যাক্টিভিটি আরেকটি মেক্সিকান গবেষণা দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে। (১৩)
একটু পর্তুগিজ গবেষণায় জানা গেছে বেসন গ্রহণ করলে এমএমপি – ৯ জিলাটিনেজ প্রোটিন যা মানবদেহে কোলন ক্যান্সারের জন্য দায়ী, তা কমাতে সাহায্য করে। অতিরিক্ত মাত্রায় লেগিউম কোলরেক্টাল অ্যাডেনোমার রিস্ক বাড়ায়। এটি কোলন কোষে তৈরি হওয়া এক প্রকারের টিউমর।
আমাদের দেহে দৈনিক ফাইবার প্রয়োজন ২৫ গ্রাম। বেসন ফাইবারে সমৃদ্ধ হওয়ায় এই চাহিদা পূরণ করতে সমর্থ। ফাইবারই কোলন ক্যান্সারের রিস্ক কমায়। ছোলা রক্ত জালিকার কাজের উন্নতিসাধন করে থাকে। বেসনে থাকা ফাইবার পরিপাকে সাহায্য করে। কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যার সমাধানও করে।
৮) ক্লান্তি দূর করাঃ
বেসনে থাকা ফাইবার ক্লান্তি রোধ করতে সহায়তা করে। এর প্রক্রিয়াটি চমৎকার। ফাইবার হজম প্রক্রিয়ার গতি কম করে এবং এটি পরিপাক নালী থেকে রক্তে শর্করার প্রবাহ কমিয়ে দেয়। এর মানে খাওয়ার পর শর্করা উৎপাদন মাত্রা কমে যায় এবং শর্করা জারিত হয়ে ক্লান্তির সৃষ্টি করে না। এক কাপ রান্না করা ছোলায় ১২.৫ গ্রাম ফাইবার থাকে। দৈনিক যে পরিমাণ ফাইবার গ্রহণ করা উচিৎ এটাতে তার অর্ধেক পরিমাণ গ্রহণ হয়ে যায়।
৯) রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণঃ
বেসনের একটি ভালো দিক হল এর মধ্যে সোডিয়ামের পরিমাণ কম থাকে। বেসন উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধে সক্ষম। একটি রিপোর্ট অনুযায়ী একটি পূর্ণপবয়স্ক ব্যাক্তির ২৩০০ মিলিগ্রামের বেশি সোডিয়াম শরীরের জন্য ক্ষতিকারক।
বেসনে থাকে ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম এবং ফাইবার। এই পরিপোষক উপাদান গুলি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। (১৪) উচ্চ রক্তচাপের জন্য রক্তজলিকার পরিবর্তনের বিপরীতধর্মী হিসেবেও কাজ করে। পায়ের মধ্যে রক্ত সঞ্চালন ভালো রেখে প্রান্তিক ধমনী রোগীর (করোনারি আর্টারি রোগের সমগোত্রীয়) সাহায্য করে বেসন। এটি রক্তজলিকার রোগ নিরাময়ে সক্ষম।
কানাডিয়ান এক গবেষণায় জানা গেছে ডায়েটে বেসন থাকলে হাইপারটেনশন অনেক কমে, রক্তজালকের স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়। আরেকটি সুইডিশ গবেষণা থেকে জানতে পারি যে লেগিউম সমৃদ্ধ খাবার কার্ডিওমেটাবলিক রিস্ক কমায়। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। এছাড়া আরও অন্যান্য গবেষণাও একই কথা বলছে যে লেগিউম গ্রহনে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
১০) হাড় শক্ত করাঃ
রেসপন্সিবেল ওষুধের জন্য নিযুক্ত ফিজিশিয়ান কমিটির দ্বারা প্রকাশিত একটি রিপোর্টে জানা যায় বেসনে আছে ক্যালশিয়াম এবং তার সাথে ম্যাগনেশিয়ামও। এই দুটি মিনারেলস দেহে শক্ত হাড় গঠন করে। (১৫)
এছাড়া আরেকটি উপায়েও হাড়কে শক্ত করা যায়- প্রতিদিন ব্যায়াম করে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ডি সেবন করে। ক্যালশিয়ামের ক্ষয় রোধ করাও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এর জন্য লবণ গ্রহনের পরিমাণ সীমিত রাখতে হবে, উদ্ভিজ্জ প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে এবং ধূমপান ও মদ্যপান বন্ধ করতে হবে।
১১) মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য উন্নতিঃ
বেসনের মধ্যে থাকে ম্যাগনেশিয়াম। কলোরাডো ক্রিশ্চিয়ান ইউনিভার্সিটির একটা রিপোর্ট অনুযায়ী ম্যাগনেশিয়াম মস্তিষ্কের কোষগুলিকে খুশি করে। রক্তজালিকাগুলোকেও আরাম দেয়, যার ফলে মস্তিষ্কে আরও বেশি পরিমাণে রক্ত চলাচল হয়। বেসনে আছে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স এবং ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট যা ব্রেনের স্বাস্থ্যের উন্নতি সাধন করে।নির্দিষ্ট পরিমাণে গ্লুকোজের সরবরাহ করে ব্লাড সুগার লেভেল স্থিতিশীল রাখে। গ্লুকোজ ব্রেনের জন্য আদর্শ জ্বালানি।
১২) ফোলা কমাতেঃ
বেসন যে প্রদাহ কম করতে সাহায্য করে এটা হয়ত অনেকেরই অজানা। এক পাকিস্তানি পরীক্ষা অনুযায়ী বেসনের প্রদাহ রোধকারী গুণের জন্য এটি প্রদাহ কমাতে সক্ষম। এর মধ্যে থাকে শর্ট চেন ফ্যাটি অ্যাসিড বিউটিরেট যা কোলন প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
১৩) অ্যালার্জি প্রতিরোধ ক্ষমতাঃ
ন্যাশন্যাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ এর অনুসারে বেসন ভিটামিন বি-৬ এর একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস (১৬) এবং এই পরিপোষক উপাদানটি রোগ প্রতিরোধে দারুণ কাজ করে। এছাড়া বেসনে ভিটামিন এ থাকে সেটিও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এর মধ্যে থাকে জিঙ্ক আর একটি পরিপোষক উপাদান যা দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে তোলে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়লে অ্যালার্জি প্রতিরোধ ক্ষমতাও গড়ে ওঠে।
ত্বকের যত্নে বেসনঃ
আমাদের রান্নাঘরেই আছে রূপচর্চার অনেক সামগ্রী। প্রাচীনকাল থেকেই রান্নাঘরের সেই সব উপাদান দিয়ে মেয়েরা ত্বকের পরিচর্যা করে এসেছে। দুধ, হলুদ, মধুর মত বেসনও একটি প্রাকৃতিক উপাদান যার মধ্যে লুকিয়ে আছে সুন্দর রূপের রহস্য। রূপবিশেষজ্ঞরা জানান যে বেসন ত্বককে লাবণ্যময় ও প্রাণবন্ত করে তোলে। ত্বকের যত্নে বেসনের নানাবিধ ব্যবহার রয়েছে। আপনারা শুনে থাকবেন অনেকেই মুখে বেসন মাখেন, কিন্তু বেসন আমাদের ত্বকের ঠিক কী কী উপকার করে সেটা হয়তো অনেকেই জানেন না। দেখে নেওয়া যাক বেসন কীভাবে আমাদের ত্বকের যত্ন নিতে ব্যবহার করা হয়?
১) সানট্যান দূর করতেঃ
দিনের বেলা রোদে বেরোলেই একটা সমস্যা সবার দেখা যায় – সান ট্যান। সূর্যের প্রখর রশ্মি আমাদের ত্বককে কালো করে দেয়। ভারতের মত দেশে ট্রপিক্যাল আবহাওয়ায় ট্যান পড়াটা খুব স্বাভাবিক। ট্যান দূর করার জন্য বেসন কিন্তু খুব উপকারী। বেসনের সাহায্যে ক্লিনজিং খুব ভালো হয়। ত্বককে ডি ট্যানিং করতে বেসনের জুড়ি মেলা ভার।
- প্রয়োজনীয় সামগ্রীঃ
বেসন, লেবুর রস, টক দই আর হলুদ
- কী করতে হবে?
৪ চা চামচ বেসন, এক চা চামচ লেবুর রস আর ১ টেবিল চামচ টক দই এর একটু হলুদ নিয়ে একটা মিশ্রণ তৈরি করে যেখানে যেখানে ট্যান রয়েছে সেখানে লাগিয়ে নিন। শুকিয়ে গেলে ঠাণ্ডা জলে ধুয়ে নিন। প্রতিদিন স্নানের আগে এটা করুন, দেখবেন কিছুদিনের মধ্যেই ট্যানের বিশ্রী দাগ চলে গেছে। রোজ করলে খুব কম সময়েই চমকপ্রদ রেজাল্ট পাবেন।
২) মৃত কোষ দূর করতেঃ
ত্বকের ওপর যে ডেড সেল অর্থাৎ মৃত কোষ জমে যায় সেগুলো না তুললে ত্বক নিষ্প্রাণ হয়ে যায়। এই মৃত কোষগুলো রোমকূপগুলো ঢেকে ফেলে। এতে আবার অ্যাকনের সমস্যাও দেখা যায়। ব্ল্যাকহেডসও জমতে থাকে। তাই নিয়মিত মৃত কোষগুলো সরিয়ে ফেলা উচিৎ। বেসন হল একটি প্রাকৃতিক ক্লিনজার। এটি স্ক্র্যাবিং করতেও ব্যবহৃত হয়।
- প্রয়োজনী়য় সামগ্রীঃ
বেসন, চালের পাউডার, ওটস, দুধ
- কী কী করতে হবে?
তিন টেবিল চামচ বেসন, এক টেবিল চামচ চালের পাউডার, দুই টেবিল চামচ ওটস, একটু দুধের সাথে মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করে মুখে লাগান। ১০ মিনিট আস্তে আস্তে পুরো মুখে ঘষতে থাকুন। তারপর জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এতে ত্বকের মৃত কোষগুলো উঠে যাবে। বেসন ত্বকে জমে থাকা নোংরা তুলে দেবে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে।
৩) ফেসিয়াল হেয়ার বা মুখের রোম দূর করতেঃ
ভারতে বেসনের ব্যবহার শিশুদের অনাবশ্যক মুখের রোম তুলতে করা হয়। শিশুরা ছাড়াও এটি যে কেউ করতে পারেন। ত্বকের যে সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম লোমগুলো থাকে সেগুলো তোলা যেতে পারে।
- প্রয়োজনীয় সামগ্রীঃ
বেসন ও মেথি পাউডার
- কী কী করতে হবে?
সম পরিমাণ বেসন ও মেথি পাউডার নিয়ে একটু জল মিশিয়ে একটা পেস্ট তৈরি করুন। এই মাস্ক মুখের যেখানে ফেসিয়াল হেয়ার আছে সেখানে লাগিয়ে রাখুন যতক্ষণ না পর্যন্ত শুকনো হচ্ছে। তারপর জল দিয়ে ধুয়ে ফেলে মুখ মুছে নিন। রাতারাতি কোনো ফল আশা না করে নিয়মিত করলে উপকার পাওয়া যেতে পারে।
৪) ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পেতেঃ
বাইরে কোথাও ঘুরতে যাবেন বা কোনো পার্টিতে যেতে হবে, কিন্তু আয়নায় দেখছেন আপনার ত্বক খুবই শুষ্ক, জৌলুসহীন দেখাচ্ছে। চিন্তার কোনো কারণ নেই যদি আপনার বাড়িতে বেসন থাকে। একদম ঠিক ধরেছেন, বেসন কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি ত্বকে এনে দিতে পারে উজ্জ্বলতা।
- প্রয়োজনীয় সামগ্রীঃ
বেসন, কমলালেবুর খোসার পাউডার আর দুধের সর
- কী কী করতে হবে?
চার চা চামচ বেসনের সাথে এক চা চামচ কমলালেবুর খোসার পাউডার এবং হাফ চা চামচ দুধের সর মিশিয়ে একটি ফেস প্যাক তৈরি করুন। এই প্যাকটি পুরো মুখে এবং গলায় মাখুন। তারপর চোখ বন্ধ করে ১৫ মিনিট বিশ্রাম নিন। এরপর ঠাণ্ডা জল দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। হাতে বা গলায় কালো ছোপ থাকলে এটা লাগাতে পারেন, ভীষণ উপকার পাওয়া যায়। সপ্তাহে তিনদিন করলে দারুণ রেজাল্ট পাবেন।
৫) তৈলাক্ত ভাব কমেঃ
যাদের ত্বক খুবই তৈলাক্ত, তাদের এই সমস্যার সমাধান করবে বেসন। বেসন দিয়ে ত্বকের অতিরিক্ত তেল দূর করুন।
- প্রয়োজনীয় সামগ্রীঃ
বেসন ও কাঁচা দুধ বা দই
- কী করতে হবে?
সম পরিমাণ বেসন ও কাঁচা দুধ বা দই মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। সারা মুখে এটি লাগান। ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন জল দিয়ে। এটা করলে যেমন আপনার ত্বক পরিষ্কার হবে তেমনই ত্বকের তৈলাক্তভাবও কমে।
৬) অ্যাকনের সমস্যায়ঃ
বেসনে যে জিঙ্ক থাকে তা অ্যাকনের জন্য দায়ী ইনফেকশনের বিরুদ্ধে লড়াই করে। বেসনে উপস্থিত ফাইবার ব্লাড সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণ করে। অনিয়ন্ত্রিত ব্লাড সুগার লেভেল ব্রণ, অ্যাকনের সৃষ্টি করে। কিন্তু বেসন অ্যাকনে সমস্যার সমাধান করে ত্বককে সুন্দর করে তোলে।
প্রয়োজনীয় সামগ্রীঃ
বেসন, হলুদ, লেবুর রস ও মধু
- কী কী করতে হবে?
প্রথমে ত্বক পরিষ্কার করে নিন। তারপর ১ টেবিল চামচ বেসন, একটু হলুদ, ১ চা চামচ করে লেবুর রস ও মধু মিশিয়ে একটি মাস্ক তৈরি করুন। এরপর ভেজা ত্বকে এটি আস্তে আস্তে লাগিয়ে নিন। ১০ মিনিট অপেক্ষা করে হাল্কা গরম জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই ঘরোয়া উপায়টি খুব ভালো। ধীরে ধীরে আপনার ত্বককে দাগছোপহীনও করে তুলবে।
এই উপায় গুলো ছাড়াও আরোও কয়েকটি সহজ উপায় দেওয়া হল যা আপনার রূপচর্চায় কাজে আসবে।
- অ্যাকনের দাগের জন্য– বেসন, কাঁচা দুধ আর সামান্য হলুদ মিশিয়ে একটি স্মুদ পেস্ট তৈরি করুন, ২০-২৫ মিনিট মুখে মেখে রেখে ধুয়ে ফেলুন। এটি নিয়মিত করলে ঝকঝকে তকতকে দাগমুক্ত ত্বক পাবেন।
- তৈলাক্ত ত্বকের জন্য– একটা ডিমের কুসুম বাড়ে সাদা অংশ নিয়ে, ২ চামচ বেসন দিয়ে একটু ফেস মাস্ক তৈরি করুন। ১৫ মিনিট মুখে মেখে তারপর ঠাণ্ডা জল দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
- দাগহীন ত্বকের জন্য– মুখে দাগ, ছোপ, কালোভাব এসব থাকলে মুখের সৌন্দর্যটাই আর থাকে না, তাই না? তাই ব্লেমিশ ছাড়া ত্বক পেতে আপনাদের জন্য রইল আরেকটি দারুণ ফেস মাস্কের আইডিয়া। ৫০ গ্রাম মুসুর ডাল, ১০ গ্রাম মেথি, ২-৩ পিস কাঁচা হলুদ। ব্লেন্ডারের সাহায্যে এইসব গুলোকে গুঁড়ো করে নিয়ে পাউডার করে নিন। একটু পাত্রে সেটা রাখুন। সপ্তাহে দুই – তিন দিন এই পাউডার নিয়ে দুধের সর আর বেসনের সাথে মিশিয়ে একটা মাস্ক তৈরি করুন। মুখে লাগিয়ে রেখে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলুন। প্রতিদিন সাবানের পরিবর্তে এটি ব্যবহার করা যেতে পারে।
ভারতে রূপচর্চায় বেসনের ব্যবহার বহুযুগ থেকে হয়ে আসছে কিন্তু এখনো পর্যন্ত এর কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ পাওয়া যায় নি। তাই ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা জেনে এই ঘরোয়া উপায়গুলো প্রয়োগ করুন। দরকার হলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিন।
চুলের স্বাস্থ্য রক্ষাঃ
অনেকেই তো বেসন মুখে মাখেন। কিন্তু শুনেছি চুলেও নাকি বেসন মাখলে উপকার পাওয়া যায়? আপনারা নিশ্চয় একটু অবাক হচ্ছেন? আসলে আমরা অনেকেই জানি না যে বেসন চুলের জন্যও খুবই উপকারী। আপনার সৌন্দর্য্যকে চতুর্গুণ করতে বেসনের কিন্তু জুড়ি মেলা ভার। আজকাল বেশির ভাগ মানুষেরই চুল পড়ার সমস্যা দেখা যাচ্ছে। কালো ঘন উজ্জ্বল চুল সবারই পছন্দ। তাই আপনাদের জন্য রইল কিছু হেয়ার মাস্কের হদিশ যা আপনার চুলকে করে তোলে আরও সুন্দর।
১) প্রাকৃতিক শ্যাম্পুঃ
আমরা শ্যাম্পু হিসেবে কত কী কেমিক্যাল পদার্থই না ব্যবহার করি! কিন্তু আমাদের ঘরেই রয়েছে প্রাকৃতিক শ্যাম্পুর প্রধান উপাদান। হ্যাঁ, বেসন দিয়ে চুল ধোয়া যায়। পরিমাণমত বেসন ও জল নিয়ে একটি মসৃণ পেস্ট বানান। চুল ভিজিয়ে এই পেস্ট চুলে লাগিয়ে হাল্কা করে ম্যাসাজ করুন। কিছুক্ষনের পর জল দিতে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে দুদিন অন্তর এই পদ্ধতি প্রয়োগ করলে তাড়াতাড়িই স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুল পাবেন।
২) চুলের বৃদ্ধিতেঃ
বেসনে উপস্থিত প্রোটিন চুলকে বাড়তে সাহায্য করে। যেভাবে বেসন দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলা হল একই পদ্ধতিতে ব্যবহার করতে হবে। লম্বা মজবুত চুল পেতে হলে এই হেয়ার মাস্কটি অবশ্যই বাড়িতে প্রয়োগ করুন।
- কী কী লাগবে?
আমন্ড পাউডার, অলিভ অয়েল, ভিটামিন ই ক্যাপসুল, দই(আপনার পছন্দ মত)
বেসনের সাথে আমন্ড পাউডার, দই ও এক চা চামচ অলিভ অয়েল মিশিয়ে চুলে লাগান। যদি আপনার চুল খুব ড্রাই হয় সেক্ষেত্রে দুটো ভিটামিন ই ক্যাপসুল যোগ করুন। চুলে এই মিশ্রণটি লাগিয়ে রাখুন, শুকোতে দিন। এরপর ঠাণ্ডা জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে দুদিন এই হেয়ার প্যাকটি ব্যবহার করবেন। নতুন চুল গজাতে বেসনের এই হেয়ার মাস্ক খুব ভালো কাজ করে।
৩) খুশকি দূর করতেঃ
আপনি যদি মাথায় খুশকির সমস্যায় নাজেহাল? ঘরোয়া উপায়ে খুশকি দূর করতে চান? তার জন্য বেসন সঠিক উপাদান। আপনার জন্য রইল খুব সহজ একটি উপায়। ঘরে অন্তত ২-৪ সপ্তাহ নিয়মিত এই উপায় মেনে চললে খুশকি থেকে অনায়াসে নিস্তার পেতে পারেন।
৬ টেবিল চামচ বেসন আর প্রয়োজন মত জল নিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। এই মাস্ক চুলে লাগিয়ে হাল্কা করে ম্যাসাজ করুন। এরপর ১০ মিনিট রেখে ঠাণ্ডা জল দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন, এতে চুলের স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়।
৪) শুষ্ক চুলে পুষ্টি জোগাতেঃ
শুষ্ক চুলের পুষ্টি জোগাতে বেসন দিয়ে তৈরি একটি হেয়ার মাস্ক খুব ভালো কাজ করে। ২ টেবিল চামচ বেসন ও প্রয়োজন মত জল নিয়ে তাতে দুই চা চামচ মধু এবং এক চা চামচ নারকেল তেল মিশিয়ে মাস্ক তৈরি করুন। আপনি চাইলে কয়েক ফোঁটা এসেন্সিয়াল অয়েলও মিশিয়ে নিতে পারেন। এই মাস্ক ভেজা চুলে লাগিয়ে ১০ থেকে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। তারপর ঈষদুষ্ণ জল দিয়ে ধুয়ে নিন। সপ্তাহে দুই তিন দিন এই মাস্ক লাগান।
এই তো গেল বেসনের গুণাগুণের কথা। এবার জেনে নিই বেসনের পুষ্টি উপাদানগুলো সম্পর্কে। এছাড়াও কীভাবে বেসন কিনবেন এবং ব্যবহার করবেন তাও বলে দেওয়া হল। তাতে আপনারা উপকৃত হবেন।
বেসনের পুষ্টি গুণঃ
বেসনে উপস্থিত পরিপোষক উপাদান বেসনকে ‘ সম্পূর্ণ আহার’ বানায়। বেসনে কী কী পদার্থ কী পরিমাণে আছে নিচে ছকের সাহায্যে দেখানো হল। (১৭)
পরিপোষক উপাদান | পুষ্টিমূল্য |
---|---|
ক্যালোরি | ১৬৪ ক্যা্লোরি |
কার্বোহাইড্রেট | ২৭.৪২ গ্রাম |
বসা | ২.৫৯ গ্রাম |
প্রোটিন | ৮.৮৬ গ্রাম |
কোলেস্টেরল | ০ মিলিগ্রাম |
ফাইবার | ৭.৬ গ্রাম |
ভিটামিন
ফলেট | ১৭২ মাইক্রোগ্রাম |
নিয়াসিন | ০.৫২৬ মিলিগ্রাম |
রাইবোফ্লবিন | ০.০৬৩ মিলিগ্রাম |
থিয়ামিন | ০.১১৬ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন এ | ২৭ আই ইউ |
ভিটামিন ই | ০.৩৫ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন কে | ৪ মাইক্রোগ্রাম |
ইলেক্ট্রোলাইট
সোডিয়াম | ৭ মিলিগ্রাম |
পটাসিয়াম | ২৯১ মিলিগ্রাম |
খনিজ পদার্থ
ক্যালসিয়াম | ৪৯ মিলিগ্রাম |
আয়রন | ২.৮৯ মিলিগ্রাম |
ম্যাগনেসিয়াম | ৪৮ মিলিগ্রাম |
ফসফরাস | ১৬৮ মিলিগ্রাম |
জিঙ্ক | ১.৫৩ মিলিগ্রাম |
বেসন কীভাবে ও কী দেখে কিনবেন?
বেসন আপনার নিকটবর্তী যে কোনো মুদিখানা দোকানেই পেয়ে যাবেন। অনেক সময় গ্লুটন ফ্রি আটার সাথেই বেসন রাখা হয়। গুণমান বিচার করে বেসন কিনুন। আমাদের জানতে হবে উচ্চ গুণ মানের বেসন আমরা কীভাবে চিনবো? এই জন্য অবশ্যই সেই বেসনই কিনুন যেটা গ্লুটন ফ্রী।
আমরা এই লেখার মাধ্যমে বেসনের খাদ্য গুণ জেনে গেছি। বেসন খেলে আমরা সহজেই প্রোটিন গ্রহণ করতে পারি সেটাও এখন কারো অজানা নয়। বেসন শুধু দেহের ভেতরের উন্নতি ঘটায় না, দেহের বাইরে অর্থাৎ ত্বক ও চুলকে করে তোলে মসৃণ। বেসনকে কী কী ভাবে ব্যবহার করা হয়? তা জানতে আপনাদের জন্য রইল কিছু সহজ উপায়।
বেসনের ব্যবহারঃ
- গমের আটার সাথে মিশিয়ে বেসন ব্যবহার করতে পারেন। এতে পর্যাপ্ত পরিমাণে পরিপোষক পদার্থগুলো পেতে পারেন।
- স্যুপ ঘন করতে বেসন ব্যবহার করা যায়। বেসন দিয়ে তৈরি কারি ভারতের সুস্বাদু ব্যঞ্জনের মধ্যে অন্যতম বলে মনে করা হয়।
- বেসনের লাড্ডু একটি জনপ্রিয় খাবার যা প্রায় সবাই খুব খেতে ভালোবাসেন। পকোড়া বানাতেও বেসন একটি অত্যাবশ্যকীয় উপাদান। কোনো মুচমুচে খাবার তৈরিতে বেসন খুব দরকারী।
- বেকিং করতে বেসন খুব কাজে লাগে। ব্রেড অর্থাৎ পাউরুটি তৈরিতে, কুকিজ বানাতে বেসন কাজে লাগে।
- স্টিক গ্রিল করার সময় মুচমুচে করতে তেল ব্রাশ করার পর বেসন যোগ করা হলে ভালো স্বাদ আসে।
- বেসনের সাথে পরিমাণ মত জল মিশিয়ে স্বাদ অনুসারে লবণ যোগ করে একটা ব্যাটার তৈরি করে তাতে বেগুন, লঙ্কা, কুমড়ো জাতীয় সবজি ডুবিয়ে নিয়ে, কড়াইয়ে তেলে ডিপ ফ্রাই করলে চট জলদি স্ন্যাক্স তৈরি হয়ে যায়।
বেসনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াঃ
বেসনের ব্যবহার ও উপকারী দিকগুলো এখন আমাদের আর কারোরই অজানা নয়। বেসন কীভাবে ব্যবহার করবেন সেটাও জানা হয়ে গেল, কিন্তু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলোও তো আর উপেক্ষা করা যায় না। জেনে নেওয়া যাক বেসনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে।
১) হজম সংক্রান্ত সমস্যাঃ
অনেকেরই বেসনের তৈরি কিছু খাবার খাওয়ার পর পেটে ব্যথা ও নানা রকম হজম সংক্রান্ত সমস্যা দেখা যায়। গ্যাস্ট্রিকের সমস্যাও দেখা যায়। অতিরিক্ত পরিমাণে বেসন খেলে ডায়রিয়া, পেট ব্যথা ইত্যাদি দেখা যেতে পারে।
২) লেগিউম অ্যালার্জিঃ
অনেকেই খুব সেনসিটিভ প্রকৃতির হয়, লেগিউমে যাদের অ্যালার্জি থাকে তারা বেসন খাওয়া এড়িয়ে চলুন।
একদিকে নির্দিষ্ট অনুপাতে বেসনের ব্যবহার ঔষধির মত কাজ করে, অন্য দিকে প্রয়োজনের অতিরিক্ত বেসন উপকারের চেয়ে বেশি অপকার করে। তাই এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলো জানাও দরকার। এবারে বেসন সম্পর্কে যেসব প্রশ্ন প্রায়ই জিজ্ঞেস করতে দেখা যায় তার উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করা হল।
প্রায়শই জিজ্ঞাস্য প্রশ্নঃ
অর্শ রোগের জন্য কি বেসন খাওয়া ভালো?
হ্যাঁ, বেসনে থাকে প্রোটিন এবং কিছু মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট যেমন আয়রন, ফাইবার, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স। এইসব উপাদানগুলো অর্শ রোগের সমস্যা কমায়। বিশেষ করে ফাইবার থাকায় রোগীরা অনেকটা স্বস্তি পায়।
বেকিং -এর জন্য বেসন ব্যবহার করা যেতে পারে?
হ্যাঁ, বেকিং করতে বেসন খুব দরকারী। যদি আপনি ভেগান হন বা ডিমে যদি আপনার অ্যালার্জি থাকে অথবা আপনি নতুন নতুন খাবার রান্না করতে ভালোবাসেন বেসন ব্যবহার করে বেকিং শুরু করুন।
বেসনের বিকল্প কী?
না, স্বাদ এবং গুণের দিক দিয়ে বিচার করলে বাজারে বেসনের কোনো বিকল্প পাওয়া যায়নি। কিন্তু তাও যদি কারোর বেসনে অ্যালার্জি থাকে তাহলে চালের আটা এবং হলুদ পাউডার মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন।
বেসন কি ওজন বাড়ায়?
না, বরং বেসন ওজন কমাতে সাহায্য করে। গ্লাইসেমিক সূচক কম থাকায় বেসন তাড়াতাড়ি ক্যালোরি বার্ন করে এবং দেহের ওজন কমাতে কার্যকরী হয়। বেসনের খাবার খাওয়া মানে কম ক্যালোরি গ্রহণ করা।
বেসন কীভাবে তৈরি করা হয়?
পদ্ধতিটি খুব সহজ। পরিমাণ মত ছোলা নিয়ে, হাই স্পীড ব্লেন্ডারের সাহায্যে পিষে একদম পাউডারের মত করে নিন, যাতে এর মধ্যে কোনো দানাদার অংশ না থাকে। ছোলা গুলো সম্পূর্ণ গুঁড়ো হয়ে গেলে বেসন তৈরি হয়ে যাবে। এরপর তা অন্য পাত্রে রাখুন।
বেসন খুব সহজে এবং খুব কম দামেই বাজারে পাওয়া যায়। আমরা জানতে পড়লাম বেসন ত্বকের ক্ষেত্রে যেমন ম্যাজিকের মতো কাজ করে তেমনি স্বাস্থ্যের জন্যও এর উপকারিতা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তবে সঠিক পরিমাণ এবং সঠিক উপায়ে ব্যবহার করা কিন্তু খুব জরুরী। সীমিত মাত্রায় ব্যবহার করলেই লাভ পাওয়া যাবে। বেসনের উপকারী এবং অপকারী সব দিক নিয়েই বিস্তারিত আলোচনা করা হল। এছাড়াও বেসন সম্পর্কিত কোনো তথ্য অথবা এর কোনো উপকারিতা আপনাদের জানা থাকলে অবশ্যই কমেন্ট সেকশনে আমাদের জানান।
17 sources
- Lowering cholesterol by eating chickpeas, lentils, beans toand peas
https://www.utoronto.ca/news/lowering-cholesterol-eating-chickpeas-lentils-beans-and-peas - Dietary supplementation with chickpeas for at least 5 weeks results in small but significant reductions in serum total and low-density lipoprotein cholesterols in adult women and men
https://pubmed.ncbi.nlm.nih.gov/17191025/ - Chickpeas may influence fatty acid and fiber intake in an ad libitum diet, leading to small improvements in serum lipid profile and glycemic control
https://pubmed.ncbi.nlm.nih.gov/18502235/ - Dietary chickpeas reverse visceral adiposity, dyslipidaemia and insulin resistance in rats induced by a chronic high-fat diet
https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/17666145 - Consumption of a Legume-Enriched, Low-Glycemic Index Diet Is Associated with Biomarkers of Insulin Resistance and Inflammation among Men at Risk for Colorectal Cancer1,2
https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC2793121/ - Effects of long-term consumption and single meals of chickpeas on plasma glucose, insulin, and triacylglycerol concentrations
https://academic.oup.com/ajcn/article/79/3/390/4690125 - Diabetes and Pulses: A Current Review
https://www.ag.ndsu.edu/food/pulse-crops/research/diabetes-and-pulses-a-current-review - High-protein, low-fat diets are effective for weight loss and favorably alter biomarkers in healthy adults
https://pubmed.ncbi.nlm.nih.gov/14988451/ - Beans, Chickpeas May Help With Weight Loss
https://www.webmd.com/diet/news/20160330/beans-chickpeas-may-help-with-weight-loss-study - Cooked Chickpea Consumption Inhibits Colon Carcinogenesis in Mice Induced with Azoxymethane and Dextran Sulfate Sodium
https://pubmed.ncbi.nlm.nih.gov/28657468/ - Pulses: Dry Beans, Peas, and Lentils (Legumes)
https://www.aicr.org/cancer-prevention/food-facts/dry-beans-and-peas-legumes/?referrer=https%3A%2F%2Fwww.google.co.in%2F - Effect of cooking methods on selected physicochemical and nutritional properties of barlotto bean, chickpea, faba bean, and white kidney bean
https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC3550881/ - Nutrient and nonnutrient components of legumes, and its chemopreventive activity: a review
https://pubmed.ncbi.nlm.nih.gov/25710272/ - Legumes: Health Benefits and Culinary Approaches to Increase Intake
https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC4608274/#s4title - By eating a varied plant-based diet, you’ll get all the calcium you need to build strong bones without the added health risks of milk and other dairy products
https://www.pcrm.org/health-topics/healthy-bones - Vitamin B6 Fact Sheet for Health Professionals
https://ods.od.nih.gov/factsheets/VitaminB6-HealthProfessional/ - Food data central
https://fdc.nal.usda.gov/ndb/foods/show/16057

Latest posts by StyleCraze (see all)
- কাসুরি মেথির উপকারিতা এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া | Dried Fenugreek Leaves Benefits and Side Effects in Bengali - January 25, 2021
- লেমন বাম এর উপকারিতা, ব্যবহার এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া – Lemon Balm Benefits, Uses and Side Effects in Bengali - January 25, 2021
- বাঁধাকপির স্বাস্থ্যোপযোগীতা, গুণাগুণ, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, এবং ব্যবহার | All About Cabbage - January 22, 2021
- রোগা হওয়ার উপায় খুঁজছেন? জেনে নিন ৪ সপ্তাহের কিটো ডায়েট প্ল্যান, উপকারিতা এবং অন্যান্য টিপস | Keto Diet in Bengali - January 22, 2021
- অরিগ্যানোর ব্যবহার, উপকারিতা এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া – Oregano Benefits and Side Effects - January 21, 2021
