
ব্ল্যাক রাইস (কালো ভাত) এর স্বাস্থ্যোপযোগীতা, উপকার এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া | Forbidden Rice (Black Rice) in Bengali
বাঙালী মাত্রই ভাতের প্রতি একটা আলাদা টান রয়েছে। তবে শুধু বাঙালী বলেই নয় ভারতীয় উপমহাদেশে ভাত অন্যতম একটা প্রধান খাদ্য হিসেবে পরিগণিত হয়। কিন্তু অনেকেই আছেন যারা ভাত খেতে ভালোবাসলেও স্বাস্থ্য সচেতনতার কারণে ভাত খেতে ভয় পান। এইসব মানুষদের জন্য কালো ভাত বা ব্ল্যাক রাইস একটি ভালো বিকল্প। বিভিন্ন গবেষণা থেকে এই তথ্য পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট প্রবন্ধ থেকে আমরা জানতে পারবো কালো ভাত বা ব্ল্যাক রাইস আসলে কী, মানবদেহে এর উপকারীতা ঠিক কী, ব্যবহার পদ্ধতি কী। খাদ্য হিসেবে ব্ল্যাক রাইস গ্রহণের কোনো রকম পার্শ্ব প্রতিরক্রিয়া রয়েছে কি না ইত্যাদি।
Table Of Contents
ব্ল্যাক রাইস বা কালো ভাত আসলে কী?
বিভিন্ন ধরণের চালের মধ্যে একটি হলো কালো চাল বা ব্ল্যাক রাইস। ওরাইজা সাতিভা প্রজাতির অন্তর্ভূক্ত কালো চালের ঔষধী গুণ রয়েছে। খাদ্য হিসেবেও এটি অত্যন্ত পুষ্টিকর। চীন, শ্রীলঙ্কা এবং ভারতীয় উপমহাদেশে কালো চাল বা ব্ল্যাক রাইস উউৎপাদিত হয়। এছড়াও এতে রয়েছে একাধিক পুষ্টি উপাদান যেমন প্রোটিন, ভিটামিন, আয়রন। যা সুস্বাস্থ্য গঠনের জন্য খুবই কার্যকরী। (1) (2)
ব্ল্যাক রাইসের স্বাস্থ্যোপযোগীতা –
ব্ল্যাক রাইসের সুস্বাস্থ্য গঠনের জন্য খুবই উপকারী বলে মনে করা হয়। এখানে ব্ল্যাক রাইসের স্বাস্থ্যোপযোগীতার সম্পর্কে বিশদে আলোচনা করা হবে। তবে একথাও ঠিক যে ব্ল্যাক রাইস কোনো অসুখের পথ্য হতে পারেনা। তবে নিম্নে আলোচিত বেশ কিছু শারীরিক সমস্যা থেকে একটু হলেও উপকার পাওয়া যায় খাদ্য হিসেবে ব্ল্যাক রাইস গ্রহণের ফলে। এবার ব্ল্যাক রাইসের স্বাস্থ্যোপযোগীতা গুলির ব্যাপারে বিশদে জেনে নেওয়া যাক –
১। অ্যান্টি অক্সিডেন্টের উৎস – অ্যান্টি অক্সিডেন্ট মানুষের শরীরের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় একটি জিনিস। এটা শরীরকে ফ্রি র্যাডিক্যালস থেকে রক্ষা করে একাধিক কঠিন অসুখের সম্ভবনা হ্রাস করে। জেনে রাখা দরকার যে এই ফ্রি র্যাডিক্যালসের উপস্থিতিতে শরীরে একাধিক রোগ বিসুখ বাসা বাঁধার উপক্রম হয়। এইসব সমস্যা গুলির মধ্যে রয়েছে আর্থ্রাইটিস বা বাতজ বেদনা, হৃদরোগ, অ্যালজাইমারস বা স্মৃতি ভ্রংস ইত্যাদি (3)। যেহেতু ব্ল্যাক রাইস অ্যান্টি অক্সিডেন্টের একটি অন্যতম উৎস তাই খাদ্য হিসেবে ব্ল্যাক রাইস গ্রহণ করলে পূর্বোক্ত রোগ গুলির প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এবং স্মৃতি শক্তি উন্নত হয়ে ওঠে। (4)
২। ক্যান্সার প্রতিরোধক –ব্ল্যাক রাইস বা কালো চালের উপকারিতার প্রসঙ্গে কথা উঠলেই প্রথমে জানা যায় যে এটা ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে। ব্ল্যাক রাইসের অ্যান্টি অক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য নির্বিচারে র্যাডিক্যালসের প্রভাব হ্রাস করে। এবং একইসাথে অক্সিডেটিভ প্রভাব থেকে শরীরকে রক্ষা করে। এরফলে ক্যান্সারের ঝুঁকির সম্ভবনা অনেকটাই কমে যায়। বিভিন্ন গবেষণা সূত্রে জানা যায় যে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সম্পূরক ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস করে। এছাড়াও ব্ল্যাক রাইস ক্যান্সার প্রতিরোধক প্রতিরোধক বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন হয় তাই খাদ্য হিসেবে ব্ল্যাক রাইস গ্রহণ করলে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা কমে যায়। তবে ক্যান্সার প্রতিরোধে ব্ল্যাক রাইসের ভূমিকা সমদ্ধে জানার জন্য এখনও অনেক গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। ক্যান্সার প্রতিরোধে এই রাইস সহায়তা করলেও ক্যান্সারের চিকিৎসায় এর কোনো ভূমিকা নেই।
৩। প্রদাহ নাশক – প্রদাহ সংক্রান্ত সমস্যার ক্ষেত্রে ব্ল্যাক রাইস কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। বিভিন্ন গবেষণা সূত্রে এমনটাই জানা গিয়েছে। গবেষকরা দেখেছেন যে ব্ল্যাক রাইসের খোসা অ্যান্টি ইনফ্লেমেটারি বা প্রদাহ নাশক বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন হয় তাই শরীরের মধ্যস্থ দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ সমস্যা উপশম করতে সহায়তা করে। অবশ্য এই বিষয়ে এখনও অনেক গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। (5)
৪। ওজন হ্রাসক – ব্ল্যাক রাইস বা কালো চাল ওজন হ্রাসের ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এরফলে সহজেই দেহের ভারসাম্য বজায় থাকে। এই সম্পর্কে একটা নিশ্চিত ফলাফলে আসার জন্য ৪০ জন মহিলার ওপর একটি গবেষণা করা হয়। ২০-৩৫ বছর বয়সী মহিলাদের এই দলকে দুটি ভাগে ভাগ করে নেওয়া হয়। আনুমানিক ৬ সপ্তাহ ধরে এই দুটি দলের একটিকে সাদা চালের ভাত এবং অন্যটিকে কালো চালের ভাত খাওয়ানো হয়। নির্দিষ্ট সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পর দেখা যায় যে ব্ল্যাক রাইস গ্রহণ করা মহিলাদের ওজন সাদা চালের ভাত খাওয়া মহিলাদের থেকে অনেকটাই কম হয়ে গেছে। এই গবেষণার পরেই স্থির সিদ্ধান্তে আসা গেছে যে ব্ল্যাক রাইস ওজন হ্রাস করে। তবে ওজন কমানোর খাদ্য উপকরণের মধ্যে ব্রাউন রাইসের ও প্রচলন রয়েছে। সে যাইহোক শুধু খাদ্য তালিকায় পরিবর্তন করলেই ওজন কম হবে এমন নয় পাশাপাশি নিয়মিত ব্যায়ম করাও দরকার। (1)
৫। হার্টের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখে – হার্টের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার ক্ষেত্রেও ব্ল্যাক রাইস খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি ধমনীতে প্ল্যাক জমা প্রতিরোধ করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এই প্ল্যাক হলো এক ধরণের চটচটে আঠালো পদার্থ যা ধমনীতে জমা হওয়ার ফলে হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। খাদ্য তালিকায় ব্ল্যাক রাইস অন্তর্ভূক্ত করলে ধমনীতে প্ল্যাক জমার সম্ভবনা হ্রাস পায়। একইসাথে ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। তাই হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করতে খাদ্য তালিকায় ব্ল্যাক রাইস অন্তর্ভূক্ত করা দরকার। তবে তার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা আবশ্যক। (1)
৬। লিভার ডিটক্সিফিকেশন – লিভার ডিটক্সিফিকেশনে ব্ল্যাক রাইসের ভূমিকা অপরিহার্য। নিয়মিত ভাবে ব্ল্যাক রাইস খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করলে ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকির সম্ভবনাও কম হয়। একইসাথে ব্ল্যাক রাইসের অ্যান্ট অক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য লিভারকে ডিটক্সিফাই বা লিভার থেকে বিষাক্ত পদার্থ অপসারণ করে লিভারকে স্বাস্থ্যকর করে তুলতে পারে। তাই লিভারকে সুস্থ্য রাখার জন্য অবশ্যই ব্ল্যাক রাইস গ্রহণ করা দরকার। এছাড়াও চিকিৎসকের পরামর্শ মতন ফ্যাটি লিভারের সম্ভবনা হ্রাস করতে হলে ব্ল্যাক রাইস গ্রহণ করা যেতে পারে।
৭। মস্তিষ্কের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখে – ব্ল্যাক রাইস মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও উপযোগী। আসলে ব্ল্যাক রাইসে উপস্থিত অ্যান্থোসায়ানিন্স (এক ধরণের ফ্ল্যাভিনয়েড) এর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট প্রভাব মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য উপযোগী ভূমিকা পালন করে। তাহলে জানা যাচ্ছে যে ব্ল্যাক রাইস শুধুমাত্র স্মৃতি শক্তি উন্নত করে তাই নয় একইসাথে মানসিক চাপ, অ্যালঝাইমারস ইত্যাদি রোগের ঝুঁকিও অনেকটাই কমিয়ে দেয়।
৮। মধুমেহ বা ডায়বিটিস প্রতিরোধক – টাইপ ২ ডায়বিটিস প্রতিরোধে ব্ল্যাক রাইসের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আসলে ব্ল্যাক রাইসে উপস্থিত অ্যান্থোস্যায়ানিন্স রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রন করে। অ্যান্থোসায়ানিন্স ইনসুলিন রেজিস্টেনস করে ডায়বিটিস নিয়ন্ত্রন করে। ইনসুলিন রেজিস্টেন্স হলো এমন একটা অবস্থা যখন শরীরের কোষগুলি ইনসুলিনের প্রভাবে কোনোরকম প্রতিক্রিয়া করেনা। এছাড়াও অ্যান্থোসায়ানিন্স বিটা কোষ রক্ষা করে, ইনসুলিন ক্ষরণে সহায়তা করে, এবং ক্ষুদ্রান্ত্রে শর্করার পরিপাক কম করে রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রন করতে সহায়তা করে।
৯। পরিপাকে সহায়ক – ব্ল্যাক রাইস পরিপাকে সহায়তা করে। আসলে এই চালে ফাইবারের মাত্রা অধিক পরিমাণে থাকে। তাই সহজেই খাবার হজম হতে পারে। এই কারণে পেট সুস্থ্য রাখার জন্য ব্যবহৃত খাদ্য দ্রব্যের মধ্যে ব্ল্যাক রাইস কেও অন্তর্ভূক্ত করা হয়।
১০। প্রকৃতিগত ভাবে গ্লুটেইন মুক্ত – একটি গবেষণা সূত্রে জানা গিয়েছে যে প্রতি ৭ জন মানুষের মধ্যে ১জনের গ্লুটেইন সংবেদনশীলতা থাকে। প্রসঙ্গত বিভিন্ন দানা শষ্য যেমন গম, যব, রাই ইত্যাদি শষ্যে গ্লুটেইনের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। এই গ্লুটেইনের প্রভাবে কোষ্ঠ্য কাঠিন্য, ডায়রিয়া, পেট ফাঁপা, এবং লিকি গার্ড সিণ্ড্রোম ইত্যাদি শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি হয়। ব্ল্যাক রাইস গ্লুটেইন মুক্ত হওয়ার জন্য তা গ্রহণের ফলে শরীরে এইসব অসুখে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা হ্রাস পায়। এছাড়াও যারা গ্লুটেইন সংবেদনশীল অসুখ যেমন সেলিয়াক (গ্লুটেইন গ্রহণের ফলে সৃষ্ট অ্যালার্জি) এ আক্রান্ত তারা দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় ব্ল্যাক রাইস অন্তর্ভূক্ত করতে পারেন এতে ক্ররে শরীরে প্রোটিন এবং ফাইবারের চাহিদা পূরণ হয়।
১১। অ্যাজস্থমা বা হাঁপানি প্রতিরোধক – ব্ল্যাক রাইস অ্যাজস্থমা বা হাঁপানি প্রতিরোধের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রদাহের ফলে সৃষ্ট সমস্যা গুলির মধ্যে অ্যাজস্থমা। ব্ল্যাক রাইস বা কালো চালের অ্যান্টি ইনফ্লেমেটারি বৈশিষ্ট্য হাঁপানি বা অ্যাজস্থমা রোগের ঝুঁকি অনেকটাই কমিয়ে দেয়। অন্য একটি গবেষণা সূত্রে জানা গিয়েছে যে ব্ল্যাক রাইসে ফ্ল্যাভোনয়েড থাকে যা হাঁপানি প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। তাই মনে করা হয় খাদ্য তালিকায় ব্ল্যাক রাইস অন্তর্ভূক্ত করা হলে সহজেই হাঁপানির মতন সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। (1)
১২। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রক – ব্ল্যাক রাইস বা কালো চাল উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। আসলে ব্ল্যাক রাইস বা কালো চালে অধিক মাত্রায় ফাইবার সমৃদ্ধ হয়। যা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে সহায়তা করে। তবে যাদের রক্তচাপ স্বাভাবিক ভাবেই কম হয় তাদের চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত ব্ল্যাক রাইস গ্রহণ করা উচিৎ নয়।
১৩। চোখের জন্য উপকারী – ব্ল্যাক রাইস চোখের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী বলে মনে করা হয়। এনসিবিআই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ইঁদুরের ওপর করা একটি গবেষণা থেকে জানা যায় যে ব্ল্যাক রাইসে উপস্থিত অ্যান্থোসায়ানিন্স (উদ্ভিদ রঞ্জক) তীব্র আলোর প্রভাবে সৃষ্ট রেটিনার ক্ষতির সম্ভবনা প্রতিরোধ করে। অবশ্য এই বিষয়ে এখনও অনেক গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। (1)
তাহলে ব্ল্যাক রাইসের স্বাস্থ্যোপযোগীতার ব্যাপারে একটা সম্যক ধারণা পাওয়া গেলো।
ব্ল্যাক রাইসের পুষ্টি গুণ –
ব্ল্যাক রাইসের পুষ্টি গুণ গুলি হলো নিম্নরূপ –
পৌষ্টিক উপাদান | প্রতি ১০০ গ্রামে পরিমাণ |
---|---|
শক্তি | ৩৫৬ কিক্যাল |
প্রোটিন | ৮.৮৯ গ্রাম |
মোট লিপিড (ফ্যাট) | ৩.৩৩ গ্রাম |
ফাইবার | ২.২ গ্রাম |
কার্বোহাইড্রেট | ৭৫.৫৬ গ্রাম |
আয়রণ | ২.৪ মিলিগ্রাম |
ব্ল্যাক রাইসের ব্যবহারাদি –
ব্ল্যাক রাইস বা কালো ভাতের স্বাস্থ্যোপযোগীতা এবং পুষ্টি গুণ জানার পর এখন অনেকেই তাদের খাদ্য তালিকায় এটা অন্তর্ভূক্ত করতে চাইবেন। সেই কারণে এখন আমাদের ব্ল্যাক রাইসের ব্যবহার কী হতে পারে সেটা জেনে নেওয়া দরকার। ব্ল্যাক রাইসের ব্যবহার গুলি হলো যথা –
- সাদা ভাতের মতন স্বাভাবিক উপায়েই ব্ল্যাক রাইসও খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করা যায়।
- এটা ব্যারিটো (এক ধরণের রোল) এর মধ্যে পুড়ের মতন ভরে খাওয়া যেতে পারে।
- সাদা ভাতের মতন সবজি, তরকারি এবং ডাল সহযোগেও ব্ল্যাক রাইস খাওয়া যায়।
- স্যালাড বা স্যুপের সাথেও ব্ল্যাক রাইস গ্রহণের প্রচলণ রয়েছে।
ব্ল্যাক রাইস তৈরীর রন্ধন প্রণালী –
ব্ল্যাক রাইস তৈরীর রন্ধন প্রণালী হলো নিম্নরূপ –
- প্রথমে প্রয়োজন অনুসারে ব্ল্যাক রাইস নিন।
- এরপর একটা পাত্রের মধ্যে সারা রাত ধরে এই চাল জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে।
- যদি তাড়াতাড়ি তৈরী করার দরকার হয় তাহলে ঘন্টা দুয়েক জলে কালো চাল ভিজিয়ে রাখতে হবে।
- এরপর চাল ফুলে গেলে তা থেকে জল ঝরিয়ে নিন।
- এরপর পরিষ্কার জল দিয়ে ঐ চাল ৩ – ৪ বার ধুয়ে নিতে হবে।
- এরপর চালের পরিমাণের ঠিক দ্বিগুণ জল দিয়ে মাঝারি আঁচে রান্না করতে হবে।
- যদি সারারাত ধরে চাল জলে ভেজানো থাকে তাহলে আধ ঘন্টা ধরে ভাত ফোটাতে হবে আর যদি দু ঘন্টা সময়ের জন্য চাল ভেজানো থাকে তাহলে এক ঘন্টা সময় ফোটাতে হবে।
- ভাত ফোটানোর সময় মাঝে মাঝে হাড়ির ঢাকনা সরিয়ে জলের পরিমাণ ঠিক আছে কিনা দেখে নিতে হবে।
- ভাত রান্না হয়ে গেলে সেগুলো আঙুলে চাপ দিয়ে দেখে নিতে হবে যে ঠিক মতন সেদ্ধ হয়েছে কিনা।
- যদি ভাত নরম হয়ে যায় তাহলে তা সেদ্ধ হয়ে গেছে বলেই মনে হয়।
- হাড়ি ছাড়া প্রেসার কুকারেও ব্ল্যাক রাইস রান্না কর যায়।
ব্ল্যাক রাইস বেছে নেওয়ার এবং সংরক্ষণ করার পদ্ধতি –
এবার ব্ল্যাক রাইস বা কালো ভাত বেছে নেওয়ার উপায় এবং সংরক্ষণ করার পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করা হবে।
কোথায় কিনতে পাওয়া যায় – কালো চালের উপকারীতা এবং পৌষ্টিক গুরুত্বের কথা প্রচারিত হওয়ার পর বর্তমানে সাধারণ মুদি দোকান থেকে শুরু করে শপিং মল সর্বত্র কালো চালের অস্বিত্ব লক্ষ্য করা যায়। এছাড়াও ব্ল্যাক রাইস অনলাইনেও কিনতে পাওয়া যায়।
বেছে নেওয়ার পদ্ধতি – সাধারণ চালের মতন ব্ল্যাক রাইসও সরু বা মোটা দুরকম ভাবেই ব্যবহার করা যায়। যারা সরু বা চিকন চালের ভাত খেতে পছন্দ করেন তারা চিকন চাল বেছে নেবেন আর যারা মোটা চালের ভাত পছন্দ করেন তারা নিজেদের পছন্দ মতন চাল কিনবেন। এছাড়াও চাল নির্বাচনের জন্য দোকানদারের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে।
সংরক্ষণ করার পদ্ধতি – ব্ল্যাক রাইস বা কালো চাল এয়ার টাইট পাত্রে সংরক্ষণ করে রাখা যায়।
ব্ল্যাক রাইসের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া –
ব্ল্যাক রাইসের কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার সম্পর্কে এখনও জানা যা্যনি। তবে ব্ল্যাক রাইসের পৌষ্টিক গুরুত্বের পরিমাণ শরীরে কোনোভাবে বৃদ্ধি পেলে তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক হয়ে দাঁড়ায়। ব্ল্যাক রাইসের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া গুলির সম্পর্কে এবার জেনে নেওয়া যাক –
- যেহেতু ব্ল্যাক রাইস কার্বোহাইড্রেট সম্পন্ন তাই এই ভাত বেশি খাওয়ার ফলে এজন বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।
- গর্ভবতী মহিলাদের জন্য এই চাল উপকারী কিনা সেই সম্পর্কে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাই গর্ভবতী মহিলাদের ব্ল্যাক রাইস গ্রহণের পূর্বে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিৎ।
অতএব ওপরের প্রবন্ধ থেকে আমরা ব্ল্যাক রাইসের যাবতীয় গুণাবলী, উপকারীতা, বেছে নেওয়ার পদ্ধতি, পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ইত্যাদি বিষয়ে একটা বিস্তারিত ধারনা লাভ করেছি। আশা করা যায় এই সব তথ্যাবলী পাঠকঅকে প্রয়োজনীয় তথ্যের জোগান দেবে। একইসাথে এটাও মনে রাখা দরকার যে ব্ল্যাক রাইস কোনো কঠিন অসুখের পথ্য হতে পারেনা। তাই যে কোনো রকম শারীরিক সমস্যার জন্যই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা দরকার।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী
ব্ল্যাক রাইস এবং ওয়াইল্ড রাইস বা জঙ্গলী চাল কী একই বস্তু?
নাহ এই দুটি চাল সম্পূর্ণ আলাদা দুটি দ্রব্য।
কালো চালের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কত?
কালো চালের গ্লাইসেমিক ইন্ডেক্স সাদা চালের থেকে কম হয়। মনে করা হয় যে কালো চালের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স প্রায় ৪২ হয়।
ব্ল্যাক রাইস রান্না করতে কত সময় লাগে?
ওপরের প্রবন্ধে এই বিহশয়ে বিশদে আলোচনা করা হয়েছে।
যারা প্যালিও ডায়েট করছেন তারা কী খাদ্য হিসেবে ব্ল্যাক রাইস গ্রহণ করতে পারেন?
না ব্ল্যাক রাইস প্যালিও ডায়েটে ব্যবহার করা সম্ভব নয় কারণ প্যালিও ডায়েটে শষ্য গ্রহণ করা নিষিদ্ধ।
ব্ল্যাক রাইস কে সুপারফুড বলা হয় কেন?
কালো চালের পুষ্টিগত গুরুত্ব এবং একাধিক স্বাস্থ্যপযোগী বৈশিষ্ট্যের কারণে একে সুপার ফুড বলা হয়।
ব্ল্যাক রাইস স্বাদে কীরকম হয়?
ব্ল্যাক রাইস স্বাদে অনেকটা বাদামের মতন হয়ে থাকে।
ব্ল্যাক রাইসে কী আর্সেনিকের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়?
হ্যাঁ ব্ল্যাক রাইসে আর্সেনিকের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।
ব্রাউন রাইস না ব্ল্যাক রাইস কোনটা ভালো?
ব্রাউন রাইস এবং ব্ল্যাক উভয়েরই নিজস্ব সুবিধা রয়েছে। উভয়েই স্ব স্ব ক্ষেত্রে পুষ্টিকর।
ওয়াইল্ড রাইসের পরিবর্তে কী ব্ল্যাক রাইস ব্যবহার করা যায়?
এই দুই প্রকার চাল আলাদা বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন হয়। ওয়াইল্ড রাইস স্বাভাবিক শষ্য শ্রেনীতে রাখা হয়না।
রান্না করার আগে ব্ল্যাক রাইস কী ধোয়া জরুরী?
হ্যাঁ, রান্না করার আগে ব্ল্যাক রাইস ধুয়ে নেওয়া জরুরী।
10 Sources

Latest posts by StyleCraze (see all)
- চা খাওয়ার উপকারিতা এবং অতিরিক্ত চায়ের নেশার অপকারিতা | Tea Benefits and Side Effects in Bengali - February 25, 2021
- অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যুক্ত খাদ্য সামগ্রী এবং তার গুণাবলী | Antioxidant Rich Foods in Bengali - February 22, 2021
- মূত্র নালীতে সংক্রমণের কারণ, লক্ষণ এবং ঘরোয়া উপায়ে চিকিৎসা পদ্ধতি | Home Remedies for UTI - February 18, 2021
- জিলাটিনের ব্যবহার, উপকারিতা ও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া | Gelatin Benefits and Side Effects in Bengali - February 17, 2021
- উইলসন রোগ – কারন, লক্ষন, চিকিৎসা | Wilson Disease in Bengali - February 17, 2021
