বদহজমের উপসর্গ এবং ঘরোয়া পদ্ধতিতে চিকিৎসায় নিরাময় | Indigestion Symptoms and Home Remedies

আধুনিক যন্ত্রনির্ভর সভ্যতায় মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় যেমন গতি এসেছে তেমনি এসেছে একাধিক সমস্যাও। বদহজম হলো এমনি এক সমস্যা যা শরীরে একটা বিশৃঙ্খল অবস্থা সৃষ্টি করে। হঠাৎ করেই পেটে ব্যথা এবং খাদ্য পরিপাকে অসুবিধার জন্যই এমন হয়। এইরকম হজম সংক্রান্ত সমস্যার জন্যই বহু মানুষই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করেন আবার অনেকে ঘরোয়া পদ্ধতি অনুসরণ করে বদহজমের সমস্যার প্রতিকার খোঁজেন। এই নিবন্ধ থেকে কতকগুলি ঘরোয়া পদ্ধতি অনুসরণ করে এই শারীরিক সমস্যা থেকে সহজে মুক্তি লাভের বিষয়ে জানা যাবে। যা পাঠককে নানাভাবেই সহায়তা করবে বলে মনে করা হয়।
In This Article
বদহজম আসলে কী?
বদহজম বা ইনডাইজেশান একটি শারীরিক অবস্থা। এটা ডিসপেপেসিয়া নামেও পরিচিত। এই অবস্থায় প্রায়শই পেটে ব্যথা সাথে একটা অস্বস্তিকর অবস্থা সৃষ্টি করে। পরিপাকজনিত সমস্যা বা বদহজমের জন্যই মূলত এই অবস্থা দেখা যায়। এই বদহজমের ফলে গা বমি ভাব, পেট ফাঁপা, এবং পেট জ্বালা ইত্যাদি উপসর্গ দেখা যায়। বদহজম বড় কোনো রোগ নাহলেও অনেক সময় আবার কোনো বড় শারীরিক সমস্যার লক্ষণ হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে হজমের সমস্যা হতে দেখা যায় (1)।এই নিবন্ধে বদহজম সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয় গুলি সম্পর্কে আলোচনা করা হবে।
বদহজমের কারণ সমূহ
অস্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণই বদহজমের প্রধাণ কারণ। এছাড়াও বদহজমের নানাবিধ কারণ রয়েছে।
সেগুলি হলো নিম্নরূপ (2) –
- অতিরিক্ত পরিমাণ খাদ্য গ্রহণ
- তেল মশালাযুক্ত খাদ্য গ্রহণ
- খাদ্য গ্রহণের অল্প সময়ের মধ্যেই শুয়ে পরা
- বেশি ফাইবারযুক্ত খাদ্য গ্রহণ
- ধূমপান
- মদ্য পান
- অত্যধিক ক্যাফাইন সেবন
- প্রয়োজনের অতিরিক্ত সোডা গ্রহণ
- অত্যাধিক মানসিক চাপ
- অ্যাসপ্রিন বা আইব্রুফেন জাতীয় ওষুধ সেবন
- অ্যাসিড ক্ষরণ, গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সার, পেপ্টিক আলসার ইত্যাদি শারীরিক সমস্যা।
বদহজমের উপসর্গ সমূহ
বদহজমের একাধিক উপসর্গ দেখা যায়। সেগুলি হলো যথা (2) –
- পেট ব্যথা
- ওপরের পেটে অস্বস্তি
- পেট ফাঁপা
- বমি বমি ভাব
- অল্প খাওয়ার পরই পেট ভার ভাব
বদহজমের সমস্যা গুরুতর হলে অন্যান্য অনেক উপসর্গ দেখা যায়। সেইরকম কিছু হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন।
- বমির সাথে রক্তপাত
- ওজন হ্রাস
- খাওয়ার গিলতে অসুবিধা
- কালো বর্ণের মলত্যাগ
ইত্যাদি।
বদহজমের ঘরোয়া প্রতিকার
যে কোনো ধরণের শারীরিক সমস্যার ক্ষেত্রেই মানুষ প্রথমে ঘরোয়া পদ্ধতিকে তা প্রতিকারের উপায় খোঁজে। অনেকসময়ই ঘরোয়া পদ্ধতিতে করা এই প্রতিকারগুলি কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। অবশ্য কারো যদি কোনোরকম কোনো দ্বিধা থাকে তাহলে তার অবধারিতভাবেই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিৎ। বদহজমের ঘরোয়া প্রতিকার গুলি নিম্নে বিশদে আলোচনা করা হলো –
১. বেকিং সোডা
বেকিং সোডাকে প্রাকৃতিক অ্যান্টাসিড বলে মনে করা হয়। স্টমাক বা পাকস্থলীর অ্যাসিডকে নিস্ক্রিয় বা প্রশমিত করে বদহজম প্রতিরোধ করে বেকিং সোডা। যদিও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কোনো বৈজ্ঞানিক গবেষণা নেই (3)।
উপরকরণ
- ১/২ চা চামচ বেকিং সোডা
- ১/২ গ্লাস ঈষদোষ্ণ জল
ব্যবহার পদ্ধতি
- উপরিক্তো দুটি উপকরণকে ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে।
- এরপর এই মিশ্রনকে পান করতে হবে।
কতবার ব্যবহার করা যায়
প্রতিদিন ২-৩ বার করে ২ সপ্তাহ
সতর্কতা
খাওয়ার খাবার অন্তত ১-২ ঘন্টা পর এই মিশ্রণটি পান করা উচিৎ।
২. আপেল সাইডার ভিনিগার
অ্যাপেল সাইডার ভিনিগারে রয়েছে অ্যাসেটিক অ্যাসিড। অ্যাসেটিক অ্যাসিড তুলনামূলকভাবে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিডের থেকে কম শক্তিশালী হয়। এই অ্যাপেল সাইডার ভিনিগার পাকস্থলীতে উপস্থিতি অ্যাসিডের আম্লিকতার মাত্রা নিয়ন্ত্রন করে। এনসিবিআই (ন্যাশানাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশন) প্রকাশিত একটি গবেষণা থেকে জানা গেছে খাদ্য গ্রহণের প্রায় ৩০ মিনিট আগে অ্যাপেল সাইডার ভিনিগার এবং জলের এই মিশ্রন পান করলে দ্রুত খাদ্য হজম হয় এবং বদহজমের চিকিৎসায় কার্যকরী ভূমিকা পালন করে (4)। যদিও এই বিষয়ে এখনও গবেষণা এবং প্রয়োজনীয় তথ্যের অভাব রয়েছে।
উপকরণ
- ১-২ চা চামচ অ্যাপেল সাইডার ভিনিগার
- ১ গ্লাস জল
ব্যবহার পদ্ধতি
- নির্দিষ্ট পরিমাণ অ্যাপেল সাইডার ভিনিগারের সাথে পরিমাণ মতন জল মেশাতে হবে।
- মিশ্রণে স্বাদ বৃদ্ধির জন্য তাতে মধু মেশানো যেতে পারে
- মিশ্রণ তৈরী হলে তা পান করতে হবে।
কতবার ব্যবহার করা যায়
প্রতিদিন ১-২ বার
৩. দারুচিনি
দারুচিনিতে রয়েছে অ্যান্টি প্যাস্মোডিক উপাদান (5)। যা পরিপাক নালীর পেশিকে শিথিল করতে সাহায্য করে। এছাড়াও দারুচিনি প্রদাহনাশক বা অ্যান্টি ইনফ্লেমেটারি উপাদান সমৃদ্ধ (6)। যা বদহজমের ফলে সৃষ্ট জ্বালাভাব নিবারণ করে। এইসব গুণের জন্যই দারুচিনি ঘরোয়া পদ্ধতিতে চিকিৎসার কাজে ব্যবহৃত হয়।
উপকরণ
- ১ ইঞ্চি দারুচিনি স্টিক
- ১ কাপ গরম জল
- মধু
ব্যবহার পদ্ধতি
- ১ ইঞ্চি দারুচিনি স্টিককে ১ কাপ গরম জলের মধ্যে ডুবিয়ে রাখতে হবে।
- এরপর ৫-১০ মিনিট স্টিক টিকে জলে ডোবানো অবস্থায় রেখে দিয়ে ছেঁকে নিতে হবে।
- মিশ্রণটি ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়ার পর তাতে একটু মধু মিশিয়ে তা পান করে নিতে হবে।
কতবার ব্যবহার করা যায়
দিনে ২-৩ বার।
৪. ক্যামোমাইল চা
ক্যামোমাইল চা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান সমৃদ্ধ। এই উপাদান বদহজমের ফলে সৃষ্ট প্রদাহ নাশ করে। একইসাথে হজম শক্তিকে উন্নত করে পরিপাক নালীকে শিথিল করে তোলে (7)।
উপকরণ
- ১ চা চামচ ক্যামোমাইল চা
- ১ কাপ গরম জল
- মধু
ব্যবহার পদ্ধতি
- ১ চা চামচ ক্যামোমাইল চা কে ১ কাপ গরম জলের মধ্যে মেশাতে হবে।
- ৫-১০ মিনিট পর্যন্ত চা পাতা ভিজিয়ে রাখা দরকার।
- এরপর চা ছেঁকে নিয়ে তাতে মধু মিশিয়ে পান করতে হবে।
কতবার ব্যবহার করা যায়
দিনে ২-৩ বার
৫. লেবু এবং আদা চা
লেবু এবং আদা শক্তিশালী প্রদাহনাশক উপাদান সমৃদ্ধ। এই উপদান গুলি পাকস্থলীতে বদহজমের ফলে সৃষ্ট প্রদাহ নাশ করে একইসাথে অ্যাসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রন করে (8)।
উপকরণ
- ১ ইঞ্চি আদা
- ১ চা চামচ পাতিলেবুর রস
- ১ কাপ গরম জল
- মধু
ব্যবহার পদ্ধতি
- ১ ইঞ্চি আদা ১ কাপ গরম জলের মধ্যে ডোবাতে হবে
- ১ চা চামচ পাতিলেবুর টাটকা রস এরসাথে মেশাতে হবে
- ৫-১০ মিনিট ভিজিয়ে রাখার পর ছেঁকে নিতে হবে।
- এই মিশ্রণের সাথে অল্প পরিমাণ মধু মিশিয়ে নিলে তা পান করা যাবে।
কতবার ব্যবহার করা যাবে
দিনে ২-৩ বার অথবা যখনই বদহজমের সমস্যা দেখা যাবে।
৬. জিরে
ওজন কমানো জন্য জিরের ভূমিকার বিষয়ে আমরা অনেকেই জানি। কিন্তু ঘরোয়া পদ্ধতিতে বদহজমের চিকিৎসায় জীরার প্রয়োজনীয়তা অনেকেরই অজানা। এনসিবিআই প্রকাশিত একটি প্রবন্ধে জানা গেছে যে জীরাতে রয়েছে গ্যাস্ট্রোপ্রোটেক্টিভ প্রপাটিস বা হজম শক্তি নিয়ন্ত্রক উপাদান সমূহ। যা পেট এবং হজম শক্তি সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যা যেমন বদহজম, গ্যাস, বুক জ্বালা, বমি ইত্যাদি নিরাময় করে (9)।
উপকরণ
- ২ চামচ জিরে
- ১ গ্লাস জল
ব্যবহার পদ্ধতি
- ১ গ্লাস জলে ২ চামচ জীরা সারারাত ভিজিয়ে রাখতে হবে।
- সকালে ঐ জল ছেঁকে নিয়ে তাতে এক চিমটে নুন (প্রয়োজন হলে) মিশিয়ে পান করা যাবে।
কতবার ব্যবহার করা যাবে
প্রতিদিনই ব্যবহার করা যেতে পারে।
৭. পুদিনা বা মিন্ট
ঘরোয়া পদ্ধতিতে বদহজম ঠিক করার জন্য একটি অন্যতম উপাদান হলো মিন্ট বা পুদিনা। গ্যাস, অম্বল, বুক জ্বালা, বমি ভাব ইত্যাদি বদহজমের লক্ষণ দূর করার কাজে পুদিনার গুরুত্ব অনস্বীকার্য। জার্নাল অফ ফার্মাসিউটিক্যাল অ্যাণ্ড রিসার্চ এর একটি গবেষণা থেকে জানতে পারা গেছে পুদিনাতে রয়েছে অ্যান্টি স্পামোডিক উপাদান যা পেটে ব্যথা কমাতে সাহায্য করে (10) ।
উপকরণ
- ১/২ চামচ পিপারমেন্ট / পুদিনা চা
- ১ কাপ জল
- মধু (ইচ্ছানুসারে)
ব্যবহার পদ্ধতি
- ১ কাপ জল গরম করে নিতে হবে
- জল গরম হয়ে গেলে তাতে ১/২ চামচ পুদিনা চা দিয়ে সেটা আরোও কিছুক্ষণ ফুটিয়ে নিতে হবে।
- ভালো করে ফুটিয়ে নেওয়ার পর সেটা ছেঁকে নিতে হবে।
- এরপর প্রয়োজন মতন মধু মিশিয়ে ঐ চা পান করা যেতে পারে।
কতবার ব্যবহার করা যাবে
প্রতিদিন অথবা দরকার মতন ব্যবহার করা যেতে পারে।
৮. জোয়ান
বদহজম কমানোর জন্য জোয়ান একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। পরিপাক তন্ত্রের পেশি শিথিল করার ক্ষেত্রে জোয়ান একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে বলে মনে করা হয়। জোয়ানে উপস্থিত উপাদান হজম শক্তি বৃদ্ধি করে। এছাড়াও এর অ্যান্টিস্পামোডিক প্রভাব পেট ব্যথা নাশ করে। যকৃৎ বা লিভার থেকে নিঃসৃত তরল হলো পিত্ত যা ক্ষুদ্রান্ত্রে লিপিড পরিপাকে সহায়তা করে(11)।
উপকরণ
- ১/২ চামচ জোয়ান
- ১/২ গ্লাস গরম জল
ব্যবহার পদ্ধতি
উপরিক্তো দুটি উপাদানকে একসাথে মিশিয়ে পান করতে হবে।
কতবার ব্যবহার করা যাবে
প্রয়োজন হলেই ব্যবহার করা যাবে।
৯. দুধ
দুধে রয়েছে ল্যাক্টিক অ্যাসিড, যা খুবই দুর্বল প্রকৃতির হয়। যার পি এইচ পরিসীমা ৬.৫ – ৬ .৭ এর মধ্যে হয়ে থাকে। দুধ পাকস্থলীর অ্যাসিড নিস্ক্রিয় করতে এবং বদহজমের চিকিৎসায় কার্যকরী ভূমিকা পালন করে (12)।
সতর্কতা
মনে রাখা দরকার ফুল ক্রীম বা বেশি মাঠা যুক্ত দুধ পাকস্থলীতে অতিরিক্ত অ্যাসিড উওৎপাদন করে। তাই হজম শক্তিকে সুস্থ সবল রাখার জন্য ফ্যাট ফ্রি স্কীমড দুধ পান করা উচিৎ (13)।
উপকরণ
- ১ কাপ মাঠা বিহীন / ফ্যাট ফ্রি স্কীমড মিল্ক।
ব্যবহার পদ্ধতি
ফ্যাট ফ্রি স্কীমড মিল্ক পান করতে হবে।
কতবার ব্যবহার করা যায়
প্রতিদিন ১-২ বার।
১০. মধু
মধুতে রয়েছে প্রদাহনাশক উপাদান। আমরা জানি যে বদহজমের ফলে পেট জ্বালা করে। আর মধুতে উপস্থিত উপাদান সহজেই পেটের জ্বালাভাব কমিয়ে হজম শক্তিকে বৃদ্ধি করে (14) ।
উপকরণ
- ১ চা চামচ অর্গানিক মধু
- ১ গ্লাস জল (ঐচ্ছিক)
ব্যবহার পদ্ধতি
- জল এবং মধুকে একসাথে মিশিয়ে নিতে হবে।
- খাদ্য গ্রহণের অন্তত ১ ঘন্টা আগে এই মিশ্রন পান করতে হবে।
- শুধু শুধুও ১ চামচ মধু খাওয়া যেতে পারে।
কতবার ব্যবহার করা যায়
প্রতিদিন খাওয়ার খাবার ১ ঘন্টা আগে এবং রাতে শুতে যাওয়ার আগে।
১১. মৌরি
ঘরোয়া পদ্ধতিতে বদহজমের চিকিৎসার জন্য মৌরি খুবই উপকারী উপাদান। এতে রয়েছে মাইরসিন, ফেনথোন, চ্যাভিকোল এবং সিনেওল নামক উদ্বায়ী যৌগ। এইসব যৌগ খাদ্য পরিপাক করে এবং পেট ফাঁপার সম্ভবনা খর্ব করে (15)।
উপকরণ
- ১ টেবিল চামচ মৌরি
- ১ কাপ জল (ঐচ্ছিক)
ব্যবহার পদ্ধতি
- ১ চা চামচ মৌরি প্রতিদিন খাবার পর খাওয়া যেতে পারে।
- এছাড়া ও গরম জলে মৌরি ভিজিয়ে কিছুক্ষণ রাখার পর সেটা ছেঁকে নিয়ে খাদ্য গ্রহণের পর পান করা যেতে পারে।
কতবার ব্যবহার করা যায়
দিনে ৩ বার।
১২. নারকেল তেল
লক্রিক অ্যাসিড এবং ক্যাপক্রিক অ্যাসিড নামক স্যাচুরেটেড ফ্যাট সমৃদ্ধ নারকেল তেল। নারকেল তেলস্থিত উপাদান গুলি পাকস্থলীর মধ্যস্থ জীবানু নিস্ক্রিয় করে এবং পরিপাক নালীকে শিথিল করে তোলে। শুধু তাই নয় একইসাথে নারকেল খুবই সহজ পাচ্য। তাই বদহজমের চিকিৎসায় নারকেল ব্যবহৃত হয় (16)।
উপকরণ
- ১-২ টেবিল চামচ ১০০% খাঁটি নারকেল তেল
ব্যবহার পদ্ধতি
- খাদ্যের সাথে নির্দিষ্ট পরিমান নারকেল তেল মিশিয়ে নিতে হবে।
- একইসাথে রোজকার খাদ্যে ব্যবহৃত তেলের পরিবর্তন করে নারকেল ব্যবহার করা যেতে পারে।
কতবার ব্যবহার করা যায়
দিনে ২-৩ বার ।
১৩. অ্যালোভেরা রস
অ্যালোভেরা রসে রয়েছে অ্যান্টি আলসার প্রপার্টি। যা ডিসপেপসিয়া নিবারণ করে। একটি গবেষণা থেকে জানা গিয়েছে অ্যালোভেরা রস গ্যাস্ট্রোফ্যাজিল রাইফ্লাক্স ডিসিস এর নিরাময়ের ক্ষেত্রে খুবই কার্যকর এবং নিরাপদ (17)।
উপকরণ
- ১/৪ কাপ অ্যালোভেরা রস
ব্যবহার পদ্ধতি
নির্দিষ্ট পরিমাণ অ্যালোভেরা রস সেবন করতে হবে।
কতবার ব্যবহার করা যায়
প্রতিদিন ১-২ বার, খাদ্য গ্রহণের আগে।
বদহজম হলে কী কী খাদ্য গ্রহণ করা যেতে পারে
বদহজমের চিকিৎসার ক্ষেত্রে সবথেকে প্রয়োজনীয় জিনিস হলো খাদ্যাভাসের প্রতি সচেতন হওয়া। এই সময় যেসব খাদ্য গুলি গ্রহণ করা যায় সেগুলি হল (18) –
- কম ফ্যাট বা একদম ফ্যাট বিহীন ডেয়ারীজাত দ্রব্য
- রান্না করা বা হিমায়িত শাক সবজি
- ফল এবং শাক সব্জির রস
- পাউরুটি বা হাতে তৈরী আটার রুটি
- কম চর্বিযুক্ত মুরগির মাংস, গ্রিলড হোয়াইট ফিশ বা শেল ফিস
- ক্রিমি পিনাট বাটার
- পুডিং বা কাস্টার্ড
- ডিম
- টফু
- স্যুপ।
বদহজমে যেসব খাদ্য গুলি বর্জন করা উচিৎ
- সুরা বা সংশ্লিষ্ট আরোও পানীয়
- কার্বোনেটেড পানীয় বা সোডা
- ক্যাফাইনযুক্ত খাদ্য এবং পানীয়
- বেশি অ্যাসিড যুক্ত খাদ্য যেমন টমেটো এবং কমলালেবু
- বেশি তেল এবং মশালাদার খাদ্য
বদহজমের চিকিৎসা সমূহ
বদহজমের জন্য একাধিক চিকিৎসা রয়েছে। নিম্নে সেগুলি সম্বদ্ধে আলোচনা করা হল –
- অ্যান্টি ডিপ্রেসেন্ট – শুনলে হয়ত অবাক লাগবে যে বদহজমের চিকিৎসায় অ্যান্টি ড্রিপেসেন্ট ড্রাগও ব্যবহার করা হয়। এই চিকিৎসা পদ্ধতিতে ফ্লুফেনথিসোল এবং মেলেট্রাকেইন নামক দুটি ওষুধ ব্যবহার করা হয়। এই ওষুধের ব্যবহারে বদহজমের সমস্যা অনেকটাই কমে যায় বলে জানা গিয়েছে।
- প্রোকিনেটিক্স – বদহজমের সমস্যা দূর করার ক্ষেত্রে প্রোকিনেটিক্স ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়াও মেটোক্লোপ্রামাইড, ডোম্পারিডোন, সিকাপ্রাইড, এরিথ্রোমাইসিন এবং টেগসেরোডে ব্যবহার করা যেতে পারে। এই ওষুধগুলি গ্যাস, বদহজম সহ বদহজম সংক্রান্ত অন্যান্য সমস্যা দূর করে। তবে এইসব ওষুধ গুলিতে একাধিক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এগুলি সেবন করা উচিৎ নয়।
- অ্যান্টিবায়োটিক – পাকস্থলীতে ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমনের ফলে বদহজম দেখা গেলে বা ডায়রিয়া এবং পেটে ব্যাথার জন্য অ্যান্টিবায়োটিকের সাহায্য নেওয়া হয়। সেক্ষেত্রে রেফ্যাক্সিসিন, টেট্রাসাইক্লিন, সিপ্রোপ্রোলোক্সাসিন এই ওষুধ গুলি ব্যবহৃত হয়।
- থেরাপি – মানসিক চাপের কারণেও অনেক সময় হজমের সমস্যা দেখা যায়। এইসব ক্ষেত্রে বদহজম দূরীকরণের জন্য সবার প্রথম মানসিক চাপ কমানো দরকার। আর মানসিক চাপ কম করার জন্য এবং প্রয়োজনীয় থেরাপির পরামর্শ গ্রহণের জন্য একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা দরকার।
বদহজম থকে অনায়াসে মুক্তির উপায় সমূহ
কয়েকই সহজ পদ্ধতি অনুসরণ করলেই বদহজমের সমস্যাকে এড়িয়ে চলা যায়। যেমন –
- খাদ্য গ্রহণের সাথে সাথে স্বাস্থ্যচর্চা করা উচিৎ নয়
- খাবার ভালো করে চিবিয়ে তবেই তা গিলে নেওয়া উচিৎ
- ওজন নিয়ন্ত্রনে রাখা দরকার
- মাঝরাতে খাদ্য গ্রহণ না করাই বাঞ্ছনীয়
- ধূমপান এবং মদ্যপান থেকে বিরত থাকা দরকার
- দুশ্চিন্তা ত্যাগ করা উচিৎ
- খাদ্য গ্রহণের অন্তত ২-৩ ঘন্টা পর ঘুমানো দরকার।
উপরের আলোচনা করা উপকরণ গুলির সাহায্যে এবং পদ্ধতি গুলি অনুসরণ করলে খুব সহজেই বদহজমের সমস্যা থেকে আরাম পাওয়া যায়। তবে সমস্যা গুরুতর হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিৎ।
প্রায়শই জিজ্ঞাস্য প্রশ্নাবলী :
পেট জ্বালা এবং বদহজমের মধ্যে পার্থক্য কী?
উঃ – এই দুরকম শারীরিক সমস্যাই একে অপরের সাথে সম্পর্কিত। যখন গ্রহীত খাদ্য পুনরায় খাদ্য নালীর (ফুড পাইপ) মধ্যে উঠে আসে তখন পেট জ্বালা করে। অন্যদিকে খাদ্য সম্পূর্ণ রূপে হজম নাহলে বদহজম হয়। এই দুটি সমস্যাই একে অপরের জন্য হতে পারে।
বদহজমের সমস্যা কতদিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়?
উঃ – এটা সম্পূর্ণটাই নির্ভর করে বদহজমের নির্দিষ্ট কারণ এবং তার প্রকারের ওপর। কারোর ক্ষেত্রে অল্প সময়ের মধ্যে এই সমস্যা দূর হয়ে যায় কারো ক্ষেত্রে আবার দীর্ঘদিন যাবৎ এই সমস্যা স্থায়ী হয়।
Sources
- Indigestion
https://medlineplus.gov/indigestion.html - Indigestion
https://medlineplus.gov/ency/article/003260.htm#:~:text=Indigestion%20(dyspepsia)%20is%20a%20mild,lower%20part%20of%20the%20breastbone - Sodium Bicarbonate
https://medlineplus.gov/druginfo/meds/a682001.html - Naturopathic Treatment of Gastrointestinal Dysfunction in the Setting of Parkinson’s Disease
https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC6469461/ - Anti-ulcer effects of cinnamon and chamomile aqueous extracts in rat models
https://www.researchgate.net/publication/290486301_Anti-ulcer_effects_of_cinnamon_and_chamomile_aqueous_extracts_in_rat_models - Cinnamon from the selection of traditional applications to its novel effects on the inhibition of angiogenesis in cancer cells and prevention of Alzheimer’s disease, and a series of functions such as antioxidant, anticholesterol, antidiabetes, antibacterial, antifungal, nematicidal, acaracidal, and repellent activities
https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC4488098/ - Chamomile: A herbal medicine of the past with bright future
https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC2995283/ - Anti-inflammatory effect of lemon mucilage: in vivo and in vitro studies
https://pubmed.ncbi.nlm.nih.gov/16435583/ - Gastrointestinal effects of Nigella sativa and its main constituent, thymoquinone: a review
https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC4884214/ - Therapeutic Uses of Peppermint –A Review
https://www.jpsr.pharmainfo.in/Documents/Volumes/vol7Issue07/jpsr07071524.pdf - Carum copticum L.: A Herbal Medicine with Various Pharmacological Effects
https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC4096002/ - Chemical Composition of Raw Milk and Heavy Metals Behavior During Processing of Milk Products
http://citeseerx.ist.psu.edu/viewdoc/download?doi=10.1.1.559.9242&rep=rep1&type=pdf - Lifestyle changes as a treatment of gastroesophageal reflux disease: a survey of general practitioners in North Queensland, Australia
https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC1661628/ - Traditional and Modern Uses of Natural Honey in Human Diseases: A Review
https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC3758027/ - Herbal Medicines: Possible Risks and Benefits
http://citeseerx.ist.psu.edu/viewdoc/download?doi=10.1.1.677.7426&rep=rep1&type=pdf - Fatty Acid Composition, Oxidative Stability, and Radical Scavenging Activity of Vegetable Oil Blends with Coconut Oil
https://aocs.onlinelibrary.wiley.com/doi/abs/10.1007/s11746-009-1435-y - Efficacy and safety of Aloe vera syrup for the treatment of gastroesophageal reflux disease: a pilot randomized positive-controlled trial
https://www.sciencedirect.com/science/article/pii/S0254627215301515 - Bland diet
https://medlineplus.gov/ency/patientinstructions/000068.htm