কোলেস্টেরল বৃদ্ধির লক্ষণ এবং তা কমানোর উপায় | Cholesterol Symptoms and Remedies in Bengali

রোজকার ব্যস্ত জীবনযাপন এবং অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের কারণে আমাদের শরীর অনেক সময়ই অনেক জটিল সমস্যার মুখোমুখি হয়ে দাঁড়ায়। কোলেস্টেরলের মাত্রায় কম বেশি হলেও শরীরে নানা অস্বস্তিকর অবস্থা দেখতে পাওয়া যায়। কোলেস্টেরলের মাত্রা অনিয়ন্ত্রিত হলে পড়লেই বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা যেমন হৃদরোগ এবং রক্তচাপ দেখা দিতে পারে। কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য চিকিৎসকেরা অনেক রকম ওষুধ সেবনের পরামর্শ দিয়ে থাকেন ঠিকই কিন্তু কতক গুলি ঘরোয়া পদ্ধতি অনুসরণ করলে সহজেই কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়। এই প্রবন্ধ থেকে আমরা রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে বিশদে জানতে পারবো। আশা করা যায় এই প্রবন্ধ পাঠকদের নানাভাবে সহায়তা করবে।
In This Article
কোলেস্টেরল আসলে কী?
কম বেশি প্রত্যেকটা মানুষের মনেই প্রশ্ন আসে যে এই কোলেস্টেরল আসলে কী! সহজ ভাবে বললে শরীরের প্রতিটি কোষে পাওয়া মোমের মতন চর্বিযুক্ত পদার্থকে কোলেস্টেরল নামে অভিহিত করা হয়। এটি হাইপারকোলেস্টেরলেমিয়া, হাইপারলিপিডেমিয়া এবং হাইপারলিপ্রোটেনমিয়া নামেও পরিচিত। কোলেস্টেরল শরীরে হরমোন, ভিটামিন ডি এবং অন্যান্য ধরনের পদার্থ উৎপাদন করতে সাহায্য করে, এটি খাদ্য হজম সহজ করে তোলে। রক্তে উচ্চ মাত্রায় কোলেস্টেরল থাকলে তা ধমনী সংক্রান্ত রোগের ঝুঁকি অনেকটাই বাড়িয়ে তোলে।(1)
কোলেস্টেরলের প্রকারভেদ –
প্রধাণত দু ধরণের কোলেস্টেরল থাকলেও এখানে আমরা সব ধরণের কোলেস্টেরলের বিষয়েই বিশদে আলোচনা করবো।
১। লো –ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন (এলডিএল) – এটা খারাপ বা ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল নামেও পরিচিত। এলডিএল হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা বৃদ্ধি করে এবং একইসাথে স্ট্রোকের ঝুঁকিও বাড়িয়ে তোলে। এই ধরণের কোলেস্টেরল ধমনীতে রক্তের গতি রোধ করে। এই ধরণের কোলেস্টেরল বিভিন্ন প্রকারের রোগের সম্ভবনা এবং নানারকম শারীরিক সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
২। উচ্চ – ঘনত্বের লাইপোপ্রোটিন (এইচডিএল) – এই কোলেস্টেরল ভালো কোলেস্টেরল নামে পরিচিত। স্বাভাবিক এইচডিএল কোলেস্টেরলের মাত্রা হৃদরোগ এবং অন্যান্য শারীরিক সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে।
৩। মোট কোলেস্টেরল – এটি রক্তে উপস্থিত মোট কোলেস্টেরলের মাত্রা নির্দেশ করে। এতে লো ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন (এলডিএল) কোলেস্টেরল এবং উচ্চ ঘনত্বের লাইপোপ্রোটিন (এইচডিএল) কোলেস্টেরল উভয়ই রয়েছে।
৪। ট্রাইগ্লিসারাইড – এটা এক ধরণের চর্বি যা রক্তে দেখতে পাওয়া যায়। কিছু গবেষণা থেকে জানা যায় যে উচ্চ মাত্রায় ট্রাইগ্লিসারাইড মহিলাদের হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি করতে পারে।
৫। খুব কম ঘনত্বের লাইপোপ্রোটিন (ভিএলডিএল) – খুব কম ঘনত্বের লাইপোপ্রোটিন বা ভিএলডিএল হলো একটি খারাও ধরণের কোলেস্টেরল। রক্তে এই কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে ধমনীতে রক্ত প্রবাহ পথে বাধা সৃষ্টি হয়।
৬। নন– এইচডিএল – এটি একটি খুব কম ঘনত্বের কোলেস্টেরল। এর মধ্যে এইচডিএল ব্যতীত বাকি সব ধরণের কোলেস্টেরলই বর্তমান থাকে।
কোলেস্টেরলের কারণ কী –
রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার অন্যতম কারণ হলো অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন এবং অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস। এছাড়াও কয়েকটি কারণের জন্য কোলস্টেরলের মাত্রা ভারসাম্য হারায় বলে মনে করা হয়। যে যে কারণে কোলেস্টেরলের মাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় বৃদ্ধি পায় সেগুলি হলো যথাক্রমে-
- অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস – অতিরিক্ত তেল মশালাযুক্ত খাওয়ার, দুগ্ধজাত দ্রব্য, চকোলেট, মাংস, ভাজাভুজি ইত্যাদি খাদ্য শরীরে কোলেস্টেরল বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হতে পারে। এইসব চর্বিযুক্ত খাদ্যই শরীরে খারাপ কোলেস্টেরল বা এলডিএল এর মাত্রা বৃদ্ধি করে।
- শরীর চর্চার অভাব – দৈনন্দিনের জীবনে শারীরিক ক্রিয়াকলাপ, যোগ ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্যচর্চার অভাবে শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। এই ধরণের জীবনযাত্রা ভালো কোলেস্টেরল বা এইচডিএল এর মাত্রা হ্রাস করে।
- ধূমপান – ধূমপানের অভ্যাস ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস করে এবং খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে তোলে। বিশেষত মহিলাদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা বেশি মাত্রায় পরিলক্ষিত হয়।
- জেনেটিক কারণ – বংশগত কারণেও মানুহশের উচ্চ রক্ত চাপের সমস্যা দেখতে পাওয়া যায়। হাইপারকোলেস্টেরলেমিয়া এক ধরণের জেনেটিক এবং উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত উচ্চ মাত্রার কোলেস্টেরল।
এবার কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধির লক্ষণ গুলি সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক –
কোলেস্টেরল বৃদ্ধির লক্ষণ বা উপসর্গ –
কোলেস্টেরলের মাত্রা কোলেস্টেরল পরীক্ষা থেকে জানতে পারা যায়। কারণ উচ্চ মাত্রায় কোলেস্টেরল কোনো উপসর্গ বা লক্ষণ সৃষ্টি করে না। যদি কারোও দীর্ঘদিন ধরে কোলেস্টেরলের সমস্যা থাকে তাহলে তার হৃদরোগের ঝুঁকি বেশি থাকে। একইসাথে অ্যাঞ্জিনা বা বুকে ব্যথার সমস্যাও দেখতে পাওয়া যায়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আবার ব্যক্তির স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাকের পরে জানা যায় যে তার রক্তে উচ্চ মাত্রায় কোলেস্টেরল রয়েছে। তাই একটা বয়সের পর প্রত্যেক ব্যক্তিকেই নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ পরীক্ষা করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
কোলেস্টেরলের স্তর বা লেভেল –
কোলেস্টেরল সম্পর্কে এতো কিছু জানার পর খুব স্বাভাবিক ভাবেই এখন মানুহশের মনে প্রশ্ন আসতে পারে যে একজন সুস্থ্য মানুষের দেহে কতটা পরিমাণ কোলেস্টেরল থাকা দরকার। এখানে লিঙ্গ এবং বয়স অনুপাতে কোলেস্টেরলের মাত্রা সম্পর্কে আলোচনা করা হবে।(2)
বয়স | মোট কোলেস্টেরল | এলডিএল | এইচডিএল | নন – এইচডিএল |
১৯ বছর বা তার কম | ১৭০ মিলিগ্রাম | ১০০ মিলিগ্রাম | ৪৫ মিলিগ্রাম | ১২০ মিলিগ্রাম |
২০ বছরের বেশি বয়স্ক পুরুষ | ১২৫–২০০ মিলিগ্রাম | ১০০ মিলিগ্রাম | ৪০ মিলিগ্রাম | ১৩০ মিলিগ্রাম |
১৯ বছরের বেশি বয়স্ক মহিলা | ১২৫–২০০ মিলিগ্রাম | ১০০ মিলিগ্রাম | ৫০ মিলিগ্রাম | ১৩০ মিলিগ্রাম |
ঘরোয়া উপায়ে কোলেস্টেরল কমানোর চিকিৎসা পদ্ধতি –
চিকিৎসকের স্মরণাপন্ন না হয়েও ঘরোয়া উপায়ে চিকিৎসা করে কোলেস্টেরল কমানো সম্ভব। এখানে দেখে নেওয়া যাক কী কী উপায়ে কোলেস্টেরল এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
১। নারকেল তেল – কোলেস্টেরল কম করতে হলে ভার্জিন নারকেল তেল গ্রহণ খুবই জরুরী। কারণ এতে রয়েছে লরিক অ্যাসিড। যা ভালো কোলেস্টেরল অর্থাৎ এইচডিএল বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। অতএব এটা বলা যেতে বলা যেতে পারে যে নারকেল তেল কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। এটা রান্নার অন্যান্য তেলের পরিবর্তে ব্যবহার করা যেতেই পারে।(3)
২। আমলকি – আমলকির ব্যবহারের ফলে অনেক রোগের নিরাময়ের পাশাপাশি কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণেও সহায়তা করে। ভিটামিন সি এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন আমলকিতে রয়েছে হাইপোলিপিডেমিক গুণাবলী। এছাড়াও এনসিবিআই (ন্যাশানাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশন) প্রকাশিত একটি গবেষণা অনুসারে জানা যায় যে, আমলকির পুষ্টিগুণ খারাপ কোলেস্টেরল এবং মোট কোলেস্টেরল কমিয়ে দেয় এবং ভালো কোলেস্টেরল বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। তাই কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে আমলকির রস এবং গুঁড়ো গ্রহণ করা যেতে পারে।(4)
৩। পেঁয়াজ – পেঁয়াজ শুধু খাদ্যের স্বাদ বৃদ্ধি করে তাই নয় একইসাথে কোলেস্টেরল হ্রাস করতে সহায়তা করে। পেঁয়াজ অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এবং হাইপোলিপিডিক বৈশিষ্ট্য সমৃদ্ধ হয় যা ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে তোলে এবং খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে এবং নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। এছাড়াও লাল পেঁয়াজ কোলেস্টেরল হ্রাস করতে সহায়তা করে। শুকনো পেঁয়াজেও হাইপোলিপিডেমিক এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা কোলেস্টেরল কমাতে সহায়তা করে। বিভিন্ন রান্নায় সবজি হিসেবে অথবা স্যালাডে পেঁয়াজ ব্যবহার করা যেতে পারে।(5) (6)
৪। কমলালেবুর রস – আয়ুর্বেদ চিকিৎসাশাস্ত্র অনুসারে কমলালেবুর রস কোলেস্টেরলের চিকিৎসার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কমলালেবু ভিটামিন সি এবং ফোলেট পরিপূর্ণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন হয়। এছাড়াও কমলালেবু হাইপোলিপিডেমিক গুণাবলী সমৃদ্ধ। কমলালেবুতে উপস্থিত খাদ্য গুণ এবং ফ্ল্যাভোনয়েড যৌগ রক্তে উপস্থিত খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমাতে এবং ভালো কোলেস্টেরলের পরিমাণ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। কমলালেবুর রস প্রাতরাশের খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা যেতে পারে।(7)
৫। আপেল সিডার ভিনিগার – রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে আপেল সিডার ভিনিগার খুবই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বলে বিবেচিত হয়। আপেল সিডার ভিনিগারে রয়েছে অ্যাসিটিক অ্যাসিড যা কোলেস্টেরলের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। একইসাথে এটাও মনে করা হয় যে খাদ্য তালিকায় আপেল সিডার ভিনিগার অন্তর্ভূক্ত করলে হৃদরোগের সম্ভবনাওও কমে যায়। অবশ্য কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে আপেল সিডার ভিনিগারের গুরুত্ব জানতে এখনো অনেক গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। জলের সাথে আপেল সিডার ভিনিগার মিশিয়ে পান করা যেতে পারে। এছাড়াও স্যালাডের সাথে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। তবে মাথায় রাখা দরকার যে পরিমিত পরিমাণে আপেল সিডার ভিনিগার গ্রহণ করা জরুরী।(8)
৬। ধনে গুঁড়ো – ধনে গুঁড়ো খাদ্যের স্বাদ বৃদ্ধির পাশাপাশি স্বাস্থ্যের জন্যও অত্যন্ত উপকারী বলে মনে করা হয়। এতে উপস্থিত হাইপোলাইপিডেমিক, এন্টিহিপোক্লেসট্রারোলিক এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য রক্তের ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। পশুদের ওপর গবেষণায় দেখা গেছে যে ধনে নির্যাস ব্যবহার করলে কোলেস্টেরল কম হয়। বিভিন্ন তরকারী এবং স্যালাডের সাথে যোগ করে ধনে গুঁড়ো বা ধনে পাতা ব্যবহার করা যেতে পারে।(9)
৭। মাছের তেল – মাছের তেল অনেক ক্ষেত্রেই ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। মাছের তেলে রয়েছে ওমেগা ৩ পলি অ্যানস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড যা ক্ষতিকর কোলেস্টেরল হ্রাস করে একইসাথে ভালো কোলেস্টেরল বৃদ্ধি করে। কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করতে মাছের তেল একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বলে মনে করা হয়। মাছের তেল বিভিন্ন খাদ্য রান্নায় ব্যবহার করা যেতে পারে। অবশ্য যারা রান্নায় মাছের তেল ব্যবহার পছন্দ করেন না তারা বাজারে লব্ধ ক্যাপসুল গ্রহণ করতে পারেন। তবে ওষুধ গ্রহণের পূর্বে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা জরুরী।(10)
৮। রসুন – চাটনি বা তরকারীতে রসুন স্বাদ বৃদ্ধির জন্য ব্যবহার করা হয় ঠিকই কিন্তু রসুনে রয়েছে একাধিক পুষ্টি গুণ। শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সম্পন্ন রসুন কোলেস্টেরল হ্রাস করতে সহায়তা করে। একইসাথে মোট কোলেস্টেরল এবং কম ঘনত্বের লাইপোপ্রোটিন (ক্ষতিকর) কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। মনে করা হয় যে রসুনের ব্যবহার কোলেস্টেরল আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য খুবই উপকারী হয়ে থাকে।(11)
৯। গ্রীন টি – বেশ কিছু মানুষ কোলেস্টেরলের চিকিৎসার জন্য গ্রীন টি ব্যবহার করে থাকেন। গ্রীন টি তে উপস্থিত অ্যান্টি অক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে হলে নিয়মিত ২ কাপ গ্রীন টি পান করা উপকারী। তবে মনুষ্য ভেদে প্রতিদিন গ্রীন টি পানের পরিমাণ সম্পর্কে অবগতির জন্য একজন পুষ্টি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করা দরকার।(12)
১০। পাতিলেবুর রস – একাধিক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন পাতিলেবুর রসে কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাসক একাধিক গুণাবলী দেখতে পাওয়া যায় যা কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। পাতিলেবুর মতন সাইট্রাস ফলে ফ্ল্যাভোনয়েড যৌগের উপস্থিতি দেখতে পাওয়া যায় যা কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইড হ্রাস করতে সহায়তা করে। যদি পাতিলেবুর রস জলের সাথে মিশিয়ে তাতে মধু যোগ করে পান করা যায় তাহলে শরীরের ওজন হ্রাস পায় এবং তারসাথে কোলেস্টেরলের মাত্রাও নিয়ন্ত্রিত হয়। এটা সম্ভব হয় কারণ পাতিলেবুর রসে রয়েছে ভিতামিন সি এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট।(13)(14)
১১। ফ্লেক্স সীড – কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ফ্লেক্স সীড খুবই উপকারী বলে মনে করা হয়। এতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ফাইবার। যা মোট কোলেস্টেরল এবং ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। তাই কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য ফ্লেক্স সীডের গুঁড়ো ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়াও ফ্লেক্স সীডের গুঁড়ো দিয়ে স্যালাড সাজানোও যেতে পারে।(15)
১২। আঙুরের রস – আঙুরের রস কোলেস্টেরল বৃদ্ধির ঝুঁকি হ্রাস করে। আসলে এতে রয়েছে রেসভেরাট্রোল, ফেনোলিক অ্যাসিড, অ্যান্থোসায়ানিন নামক ফ্ল্যাভোনয়েড যৌগ। যা শরীরে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। আঙুরের রস রক্তের ক্ষতিকর কোলেস্টেরল হ্রাস করতে সহায়তা করে। দিনের যে কোনো সময়ে আঙুরের রস পান করা যেতে পারে। তবে আঙুরের রস পান করার পূর্বে একজন পুষ্টি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া দরকার।(16)
১৩। ডালিমের রস – ডালিমের রস কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ডালিমের রসে পলিফেনোলিক, ট্যানিন এবং অ্যান্থোসায়ানিন নামক অ্যান্টি অক্সিডেন্টের উপস্থিতি দেখতে পাওয়া যায়। এগুলি ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি করে এবং খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস করে। সরাসরি ডালিমের রস পান করা যেতে পারে অথবা অন্যান্য ফলের রসের সাথে মিশিয়েও ডালিমের রস পান করা যায়।(17)
১৪। দই – দইতে রয়েছে ল্যাক্টোব্যাসিলাস অ্যাসিডোফিলাস এবং বিফিডোব্যাক্টেরিয়াম ল্যাক্টিস। এই দুই উপাদানই রক্তে উপস্থিত ক্ষতিকর কোলেস্টেরল হ্রাসের ক্ষেত্রে উপকারী বলে মনে করা হয়। তাই দই কোলেস্টেরলের চিকিৎসায় ব্যবহার করা যেতে পারে। প্রতিদিন দিনের বেলায় ১ বাটি দই খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করা যেতে পারে।(18)
১৫। চিয়া সীড / বীজ – চিয়া বীজ ব্যবহারের ফলে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রিত হয় একইসাথে অনেক কার্ডিওভাস্কুলার রোগেরও উপশম হয়। চিয়া বীজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। যা রক্তে ক্ষতিকর কোলেস্টেরল হ্রাসে সহায়তা করে পাশাপাশি ভালো কোলেস্টেরল বৃদ্ধি করে। চিয়া বীজের তেল এবং গুঁড়ো কোলেস্টেরল হ্রাসে ব্যবহার করা হয়। এটা জলে ভিজিয়ে বা দই বা অন্যান্য খাবারের সাথে মিশিয়ে গ্রহণ করা যেতে পারে।(19)
১৬। সেলারি রস – সেলারি রস কোলেস্টেরলে নিয়ন্ত্রণে একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এটি অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সহ ফাইবার সমৃদ্ধ একটি উপাদান। যা রক্তে উপস্থিত খারাপ কোলেস্টেরল কমিয়ে ভালো কোলেস্টেরল বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এটা যে কোনো ধরণের স্যালাড এবং স্যুপে ব্যবহার করা যায়।(20)
১৭। ওটস – খাদ্য হিসেবে ওটস গ্রহণ করলে তা কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রন করে বলে মনে করা হয়। টস বিটা-গ্লুকান β নামে একটি উপাদান ধারণ করে। প্রতিদিন অন্তত ৩ গ্রাম বিটা-গ্লুকান গ্রহণ ক্ষতিকর (এলডিএল) কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস করে। একইসাথে এটা ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি করে। এটা দুধের সাথে, স্যুপ হিসবে এবং ওটমিল হিসেবে প্রাতরাশের সময় ব্যবহার করা যেতে পারে।(21)
১৮। এসেন্সিয়াল অয়েল – বাজারে একাধিক রকমের তেল পাওয়া যায়। তবে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রনে যে যে তেল কার্যকরী ভূমিকা পালন করে সেগুলি হলো যথাক্রমে অলিভ অয়েল, পাম অয়েল, স্পিয়ারমিন্ট অয়েল, নিম তেল, লেবু তেল এবং বাদাম তেল। অলিভ অয়েল ক্ষতিকর (এলডিএল) কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইড (এক ধরনের চর্বি) মাত্রা কমাতে পারে। এটি শরীরে ভাল (HDL) কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। পাম অয়েলে উপস্থিত টকোট্রিনোল যৌগ কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে। নিম ফুলের নির্যাস (তেল, গুঁড়া, রস) কোলেস্টেরল কমানোর প্রভাব আছে। তারা অন্ত্রে কোলেস্টেরল শোষণের ক্ষেত্রে বাধা দেয়। এটা কোলেস্টেরল হওয়া থেকে প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। প্রকৃতপক্ষে, নিম উপস্থিত হাইপোকোলেস্টেরলেমিক বৈশিষ্ট্য কোলেস্টেরল বৃদ্ধি প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে। লেবু তেল লিমোনেন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং গামা টার্পাইন যৌগ আছে। এই বৈশিষ্ট্যগুলি রক্তে উপস্থিত এলডিএল কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে এইচডিএল বাড়াতে সাহায্য করে। বাদাম তেলে উপস্থিত মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিড শরীরে ক্ষতিকর (এলডিএল) কোলেস্টেরল, মোট কোলেস্টেরল এবং প্লাজমা ট্রাইগ্লিসারাইড কমিয়ে দেয়। এছাড়াও, এই ফ্যাটি এসিড ভাল (HDL) কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধিতে উপকারী বলে মনে করা হয়।
১৯। ভিটামিন – উপরিল্লিখিত সব কটি উপাদান ছাড়াও ভিটামিন, কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে বলে মনে করা হয়। প্রকৃতপক্ষে, উচ্চ মাত্রার ভিটামিন বি শরীরে উপস্থিত কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইড লিপিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক বলে বিবেচনা করা হয়। কারণ ভিটামিন বি বা নিয়াসিন অ্যাথ্রোসক্লেরোটিক বৈশিষ্ট্যযুক্ত হয় যা উচ্চ ঘনত্ব লিপোপ্রোটিন (এইচডিএল) বৃদ্ধিতে উপকারী বলে মনে করা হয়। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত কখনই ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা উচিৎ নয়।
কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণের জন্য উপযুক্ত খাদ্য তালিকা / ডায়েট চার্ট –
সুস্বাস্থ্য রক্ষার জন্য কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে থাকা খুবই জরুরী। এখন আমরা দেখে নেবো খাদ্য তালিকায় কী কী বৈচিত্র্য আনলে সুস্বাস্থ্য রক্ষা করা এবং একইসাথে কোলেস্টেরলের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।(22)
- ফাইবারযুক্ত খাদ্য গ্রহণ – দ্রবণীয় ফাইবার সমৃদ্ধ খাদ্য কোলেস্টেরল হ্রাস করতে পারে। একইসাথে এটি কোলেস্টেরল শোষণে বাধা প্রদান করে। ফাইবার সমৃদ্ধ শস্য, যেমন ওটমিল এবং ওটস কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করতে পারে। ফলের মধ্যে রয়েছে আপেল, কলা, কমলা, নাশপাতি এবং শুকনো আলু ইত্যাদি কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রিত করা যেতে পারে। বিভিন্ন আনাজের মধ্যে কিডনি শিম, ডাল, ছানা, কালো মটরশুঁটি এবং লিমা শিম ইত্যাদিও কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- ফল এবং শাক সবজি – ফল এবং শাকসবজি কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এগুলি শরীরে কোলেস্টেরল কমানোর যৌগ বাড়াতে সাহায্য করে।
- ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাদ্য – ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করতে পারে এবং সেই সাথে ভাল কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। মাছের তেল, চিয়া বীজ, লিনসিড অয়েল, আখরোট, ক্যানোলা অয়েল, সয়া তেল, সয়াবিন এবং টফু ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের একটি অন্যতম উৎস বলে মনে করা হয়।
- কোলেস্টেরল সমৃদ্ধ খাদ্য এড়িয়ে চলা দরকার – দৈনিক ২০০ মিলিগ্রামের কম মাত্রায় কোলেস্টেরল গ্রহণ করা উচিৎ। মাংস, ডিমের কুসুম, চিংড়ি মাছ এবং দুগ্ধজাত পণ্যের মধ্যে কোলেস্টেরলের পরিমাণ অধিক হয়ে থাকে। তাই এইসব খাদ্য পরিমিত পরিমাণে গ্রহণ করা স্বাস্থ্যের পক্ষে জরুরী।
- মদ্যপান বর্জনীয় – অ্যালকোহল গ্রহণ শরীরে অতিরিক্ত ক্যালোরি বৃদ্ধি করতে পারে। এটি ওজন বাড়ায় এবং ফলস্বরূপ এলডিএল এর মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। মনে করা হয় যে অ্যালকোহল গ্রহণ কোলেস্টেরল এবং কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
- পরিমিত পরিমাণে লবণ গ্রহণ – লবণ মানে সোডিয়ামের পরিমাণ সীমিত করার চেষ্টা করা উচিত। দিনে ২,৩০০ মিলিগ্রাম (প্রায় ১ চা চামচ লবণ) এর অধিক খাওয়া উচিত নয়। নির্দিষ্ট পরিমাণে লবণ গ্রহণ করলে রক্তচাপ হ্রাসের মাধ্যমে কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি কমে যায়।
কোলেস্টেরল থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ –
কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য অবশ্য পালনীয় পদক্ষেপ গুলি হলো নিম্নরূপ-
- ওজন নিয়ন্ত্রন – কোলেস্টেরল থেকে রক্ষা পাওয়ার একটি সহজ উপায় হলো ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা। ক্রমবর্দ্ধমান ওজন কোলেস্টেরল বৃদ্ধি করে। এছাড়াও ওজন কমাতে চর্বিযুক্ত খাদ্য বর্জন করা উচিৎ।
- স্বাস্থ্য চর্চা বা ব্যায়ম – দৈনন্দিন জীবনে যোগব্যায়াম এবং ব্যায়াম এবং শারীরিক কার্যকলাপের প্রতি মনোযোগ দেওয়াও গুরুত্বপূর্ণ। স্বাস্থ্যচর্চার ফলে শরীরে মেদ বৃদ্ধির সম্ভবনা কমে যায় এবং কোলেস্টেরল বৃদ্ধির সম্ভবনা কমানো যায়।
- ধূমপান বর্জনীয় – ধূমপানের ফলে সুস্থ্য রক্ত কণিকার ক্ষতি হয় এবং এরফলে কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। তাই ধূমপানের অভ্যাস ত্যাগ করা উচিৎ।
- কোলেস্টেরল পরীক্ষা – শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা কতটা তা জানার জন্য সময়ে সময়ে কোলেস্টেরল পরীক্ষা করা প্রয়োজন।
তাহলে ওপরের প্রবন্ধ থেকে আমরা কোলেস্টেরল সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্যাদি লাভ করলাম। শুধু তাই নয় একইসাথে ঘরোয়া পদ্ধতিতে এবং সুস্থ্য এবং নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাসের ফলে কীভাবে সুস্থ্য স্বাভাবিক নিরোগ দেহের অধিকারী হওয়া যায় সেই সম্পর্কে একটা ধারণা লাভ করলাম। এখানে আমরা পরিষ্কার করে বলছি যে ক্রমবর্ধমান কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণের জন্য শুধুমাত্র ঘরোয়া প্রতিকারের উপর নির্ভর করা ঠিক নয়। এক্ষেত্রে অবিলম্বে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা দরকার।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী-
উচ্চ মাত্রায় কোলেস্টেরল থেকে রক্ষা পেতে হলে কোন কোন খাওয়ার গুলি অবিলম্বে বর্জন করা উচিৎ?
মাংস, ডিমের কুসুম, চিংড়ি মাছ এবং দুগ্ধজাত খাদ্য ইত্যাদিতে রয়েছে উচ্চ মাত্রায় কোলেস্টেরল। তাই এসব খাদ্য গ্রহণ করা উচিৎ নয়। এছাড়াও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে অ্যালকোহল এবং ধূমপান থেকে বিরত থাকা উচিৎ।
Sources
Articles on StyleCraze are backed by verified information from peer-reviewed and academic research papers, reputed organizations, research institutions, and medical associations to ensure accuracy and relevance. Read our editorial policy to learn more.
- Cholesterol
https://medlineplus.gov/cholesterol.html - Cholesterol Levels: What You Need to Know
https://medlineplus.gov/cholesterollevelswhatyouneedtoknow.html - A COCONUT EXTRA VIRGIN OIL-RICH DIET INCREASES HDL CHOLESTEROL AND DECREASES WAIST CIRCUMFERENCE AND BODY MASS IN CORONARY ARTERY DISEASE PATIENTS
https://pubmed.ncbi.nlm.nih.gov/26545671/ - A comparative clinical study of hypolipidemic efficacy of Amla (Emblica officinalis) with 3-hydroxy-3-methylglutaryl-coenzyme-A reductase inhibitor simvastatin
https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC3326920/ - Effects of raw red onion consumption on metabolic features in overweight or obese women with polycystic ovary syndrome: a randomized controlled clinical trial
https://pubmed.ncbi.nlm.nih.gov/24612081/ - High-cholesterol diet enriched with onion affects endothelium-dependent relaxation and NADPH oxidase activity in mesenteric microvessels from Wistar rats
https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC4413540/ - Long-term orange juice consumption is associated with low LDL-cholesterol and apolipoprotein B in normal and moderately hypercholesterolemic subjects
https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC3750609/ - Apple cider vinegar attenuates lipid profile in normal and diabetic rats
https://pubmed.ncbi.nlm.nih.gov/19630216/ - Effects of Different Levels of Coriander (Coriandrum sativum) Seed Powder and Extract on Serum Biochemical Parameters, Microbiota, and Immunity in Broiler Chicks
http://citeseerx.ist.psu.edu/viewdoc/download?doi=10.1.1.796.5529&rep=rep1&type=pdf - Effects of 12-week supplementation of marine Omega-3 PUFA-based formulation Omega3Q10 in older adults with prehypertension and/or elevated blood cholesterol
https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC5745982/ - Effect of garlic on serum lipids: an updated meta-analysis
https://pubmed.ncbi.nlm.nih.gov/23590705/ - Antioxidative activity of green tea polyphenol in cholesterol-fed rats
https://pubmed.ncbi.nlm.nih.gov/12033827/ - Does short-term lemon honey juice fasting have effect on lipid profile and body composition in healthy individuals?
https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC4910284/ - Citrus fruits as a treasure trove of active natural metabolites that potentially provide benefits for human health
https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC4690266/ - Flaxseed dietary fibers lower cholesterol and increase fecal fat excretion, but magnitude of effect depend on food type
https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC3307491/ - Cardioprotective actions of grape polyphenols
https://www.sciencedirect.com/science/article/abs/pii/S0271531708001917 - Pomegranate for Your Cardiovascular Health
http://citeseerx.ist.psu.edu/viewdoc/download?doi=10.1.1.781.3076&rep=rep1&type=pdf - Cholesterol-lowering effect of probiotic yogurt in comparison with ordinary yogurt in mildly to moderately hypercholesterolemic subjects
https://pubmed.ncbi.nlm.nih.gov/19229114/ - Nutritional and therapeutic perspectives of Chia (Salvia hispanica L.): a review
https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC4926888/ - The effect of hydro-alcoholic celery (Apiumgraveolens) leaf extract on cardiovascular parameters and lipid profile in animal model of hypertension induced by fructose
https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC4469955/ - Processing of oat: the impact on oat’s cholesterol lowering effect
https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC5885279/ - How to Lower Cholesterol with Diet
https://medlineplus.gov/howtolowercholesterolwithdiet.html
- Cholesterol