
কোষ্ঠ কাঠিন্যের জন্য ডায়েট চার্ট | Diet Chart For Constipation in Bengali
সকালে যদি পেট পরিষ্কার না হয় তাহলে সারাদিন গ্যাস, অম্বল, পেট ভার, মাথা ব্যথার মতো আরও কত কী সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। অধিকাংশ লোকের দিনের শুরু আজকাল এরকম করেই হয়ে থাকে। যদি পেট খারাপ থাকে, তাহলে কিন্তু আপনার গোটা দিনই মাটি। আর এটা আপনি অস্বীকার করতে পারেন না। আজকের দিনে কোষ্ঠ কাঠিন্যের সমস্যা প্রায় সব অসুখের মূলে রয়েছে। কখনও কখনও এই সমস্যা এতটাই গুরুতর হয়ে যায় যে জীবন নিয়ে টানাটানি পর্যন্ত হয়ে যায়। কোষ্ঠ কাঠিন্য দূর করতে খাওয়া দাওয়ার ওপর বেশি করে গুরুত্ব দিতে হবে। তার জন্য আপনাকে তৈরি করতে হবে একটা ডায়েট চার্ট। এই চার্ট অনুযায়ী খাবার খেলে আপনার সমস্যাগুলো তাড়াতাড়িই চলে যাবে। আসুন দেখে নেওয়া যাক সেই চার্ট।
Table Of Contents
কোষ্ঠ কাঠিন্যের ডায়েট চার্ট
ডায়েট চার্ট হল এমন একটি খাদ্য তালিকা যেখানে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ফাইবার, ভিটামিন, ফ্যাট, সব রকম খাদ্য উপাদানে ভরপুর খাবার থাকে। সেই তালিকা অনুযায়ী খাবার যদি আপনি নিয়মমাফিক খেতে থাকেন তাহলে আপনি সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হবেন। কোষ্ঠ কাঠিন্যের কষ্ট থেকে বাঁচতে নীচের চার্ট অনুযায়ী খাওয়া দাওয়া করুন।
সময় অনুযায়ী খাবার | কী কী খাবেন? |
ঘুম থেকে ওঠার পরের খাবার ( সকাল ৭ টা থেকে ৮ টা) | এক চামচ ফ্ল্যাক্স-সীড, ঈষদুষ্ণ জল, জলে ভেজানো ছোলা, চিনে বাদাম বা আমন্ড |
প্রাতরাশ (সকাল ৯ টা থেকে ১০ টা) | ওটস, ইডলি, রুটি, চাপাটি ( ডালের সাথে), উপমা, ডালিয়া, ডিমের পোচ |
মধ্য সকালের খাবার ( সকাল ১১ টা থেকে দুপুর ১২ টা) | ফল, ফলের রস, হার্বাল টি, ডাবের জল, নারকেল দুধ |
দুপুরের খাবার ( দুপুর ১ টা থেকে ২ টা) | চাপাটি, ভাত, সবজি, স্যালাড, ডাল, চিকেন ( সপ্তাহে একদিন) |
সন্ধ্যার খাবার (সন্ধ্যে ৬ টা থেকে ৭ টা) | হার্বাল টি, ভার্মিসিলি, স্যুপ, রোস্টেড ছোলা |
রাতের খাবার ( রাত ৮ টা থেকে ৯ টা) | চাপাটি, সবজি, ডাল |
কোষ্ঠকাঠিন্যে উপযুক্ত খাবার
খুব সাধারণভাবে ভাবলে জলের নালিতে যদি বর্জ্য পদার্থে আটকে যায়, তাহলে সমস্যা দেখা দেয়। ঠিক একইভাবে আমাদের শরীরের পাচন তন্ত্রের বর্জ্য পদার্থ শরীর মধ্যে আটকে থাকলে এবং বেরতে না পারলে অনেক সমস্যার শুরু হয়। কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য আপনি যদি বেশি চিকিৎসা করাতে শুরু করেন, ওষুধ খেতে শুরু করেন সেক্ষেত্রে সেটা অভ্যাসে দাঁড়িয়ে যেতে পারে। ফলে শরীরের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। তাই কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার সবচেয়ে ভাল উপায় হল ঘরোয়া টোটকা। তাছাড়া খাওয়া দাওয়া যদি ঠিকঠাক হয় তাহলে তাহলে অনেক রোগের হাত থেকেই বাঁচা যায়। এইজন্য যা খাবেন, ধুয়ে পরিষ্কার করে খাবেন। আসুন দেখে নেওয়া যাক কোষ্ঠ কাঠিন্য থেকে মুক্তি পেতে কোন কোন খাবার আপনার খাদ্য তালিকায় শামিল করবেন?(1)(2)
- ড্রাই ফ্রুটসঃ
কিসমিস, আখরোট, ডুমুর, খেজুর, বাদামের মতো শুকনো ফলে অধিক পরিমাণে ফাইবার থাকে। নিয়মিত এগুলি খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে।
- পপকর্ন
পপকর্ন ফাইবারের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। এটি একটি লো ক্যালোরি যুক্ত স্ন্যাক্স। জলখাবার হিসেবে পপকর্ন খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। ফ্লেভারড্ পপকর্নের থেকে সাধারণ পপকর্ন বেশি কার্যকরী হিসেবে জানা গেছে।
- ওটমিল
ওটমিলে বিটা গ্লুকোন নামক বিশেষ একটি ফাইবার থাকে। এছাড়া এতে আয়রন, প্রোটিন এবং ভিটামিন বি-১ও পাওয়া যায়। তাই কোষ্ঠ কাঠিন্যের সমস্যা থাকলে ওটমিল অবশ্যই ডায়েট চার্টে যোগ করুন।
- বিনস্
বিনসে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে অথচ কোলেস্টেরলের মাত্রা থাকে কম। দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় যোগ করুন বিনস, তবে মাথায় রাখবেন বিনস্ বেশি খাওয়াও ঠিক নয়, এতে গ্যাসের সমস্যা হতে পারে। স্যুপ হিসেবে এটি খেতে পারেন বা এর তরকারি রেঁধেও খেতে পারেন। পেট পরিষ্কার না হলে এর সেবন লাভদায়ক হয়।
- ফল
আমরা জানি ফল খাওয়া আমাদের দেহের জন্য খুবই জরুরী। ফল ভিটামিন ও মিনারেলের উৎস। কিউই, আপেল, কলা, আঙ্গুর কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য উপকারী। এগুলিতে প্রচুর মাত্রায় ফাইবার থাকে যা পেট পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। তবে ডায়াবেটিস যুক্ত রোগীরা এই ফলগুলি খাওয়ার আগে অবশ্যই একবার ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে নিন। বেরি যেমন ব্লুবেরি, স্ট্রবেরি ইত্যাদি ডায়েটরি ফাইবারের ভালো উৎস। তাই এগুলোও খাদ্য তালিকায় যোগ করলে উপকার পাবেন। মরশুমী ফল যেমন কমলালেবু, মুসম্বি এই সাইট্রাস ফলগুলোও কোষ্ঠ কাঠিন্যে খুব ভালো ফল দেয়। এই ফল গুলোতে আছে পেকটিন নামক একটা যৌগ যা কোষ্ঠ কাঠিন্যে আরাম দেয়। এনসিবিআই- এর এক গবেষণায় জানা গেছে যে এই পেকটিন কোষ্ঠ কাঠিন্য চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। তাই এই সাইট্রাস ফলগুলো কোষ্ঠ কাঠিন্যের উপাচার হিসেবে কাজে লাগে। এনসিবিআই – এর একটা গবেষণা থেকে জানা গেছে যে কিউই খেলে মল ত্যাগ করতে করা অনেক সুবিধে জনক হয়, মলত্যাগে অনেক কম সময় লাগে।(3)
- তরল পদার্থ
যদি আপনি কোষ্ঠ কাঠিন্যের সমস্যা থেকে সবসময় দূরে থাকতে চান তাহলে যতটা সম্ভব তরল পদার্থের সেবন করুন। দিনে কমপক্ষে আট গ্লাস জল অবশ্যই খাওয়া উচিৎ। এছাড়া ফলের রস খাদ্য তালিকায় যোগ করুন। বেশি পরিমাণে তরল পদার্থ গ্রহণ করলে হজমের সমস্যা থাকে না এবং শরীর হাইড্রেট থাকে।
- ত্রিফলা
ত্রিফলা একটি অতি প্রাচীন আয়ুর্বেদিক ঔষধি যা কোষ্ঠ কাঠিন্যে খুব উপকার দেয়। এটি বাদামি রঙের চূর্ণ যা আমলকি, হরীতকী ও বহেড়া এই তিন রকমের গাছ থেকে তৈরি করা হয়। হজম শক্তি বাড়াতে এই চূর্ণ খাওয়া হয়। পেট পরিষ্কার রাখতে এবং কোষ্ঠ কাঠিন্য থেকে মুক্তি পেতে ত্রিফলা খাওয়া হয় গরম জলে মিশিয়ে। এটি প্রাকৃতিক লাক্সাটিভ হিসেবে কাজ করে।
- আলুবোখারা
খাদ্য তালিকায় যোগ করুন আলুবোখারা যা কোষ্ঠ কাঠিন্যের উপাচার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আলুবোখারা পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবারে ভরপুর হাওয়ায় পেটের জন্য খুব উপকারী। মলের মাত্রা বাড়িয়ে পেট পরিষ্কার করে। এনসিবিআই – এর এক গবেষণায় জানা গেছে যে আলুবোখারা কোষ্ঠ কাঠিন্যের সমস্যায় খুব লাভজনক।
কোন কোন খাবার কোষ্ঠ কাঠিন্যে এড়িয়ে চলতে হবে?
আপনি কি জানেন কোষ্ঠ কাঠিন্যের সমস্যা আপনাকে বলে দেয় যে আপনি সঠিক খাবার গ্রহণ করছেন না। কোষ্ঠ কাঠিন্য থেকে মুক্তি পেতে আপনাকে যেমন কিছু স্বাস্থ্যকর খাবার খেতেও হবে, তেমনই কিছু কিছু খাবার যেগুলো কিনা কোষ্ঠ কাঠিন্যের কারণ সেগুলো খাওয়া বন্ধ করতে হবে বা এড়িয়ে চলতে হবে। যে যে খাবার গুলো কোষ্ঠ কাঠিন্যে খাওয়া ঠিক নয় সেগুলো নিয়ে আলোচনা করা হল।
১. কাঁচকলা
সাধারণত কলা খুব স্বাস্থ্যকর ফল কিন্তু দেখা গেছে কাঁচকলা কোষ্ঠ কাঠিন্যের কারণ। পেটের সমস্যায় কিন্তু এই কাঁচকলা ঘরোয়া টোটকা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। দেখা যায় কাঁচকলার ওজনের ৭০-৮০ শতাংশ থাকে রেসিসটেন্ট স্টার্চ। এটি ডায়েটরি ফাইবারে সমৃদ্ধ একটি জটিল কার্বোহাইড্রেট। আমরা জানি যে ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। কিন্তু এই বিশেষ ডায়েটরি ফাইবারটি হজম করা কষ্টকর। তাই, কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে কাঁচকলা না খাওয়াই ভালো।
২. চকোলেট
চকোলেট খেতে ভালোবাসে না এরকম লোক পৃথিবীতে খুব কমই আছে। বাচ্চা থেকে বুড়ো সবাই চকোলেট খেতে একপায়ে রাজি। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাতে হচ্ছে যে অতিরিক্ত চকোলেট খাওয়া কিন্তু শরীরের জন্য ভালো নয় এতে কোষ্ঠ কাঠিন্য হয়। বিশেষ করে মিল্ক চকোলেট কোষ্ঠ কাঠিন্যের জন্য দায়ী। এই চকোলেটে থাকে প্রচুর পরিমাণে ফ্যাট যা হজশক্তি কমায় এবং এই ধরনের চকোলেট পাচন নালী দিয়ে খাবার চলাচলেও ব্যাঘাত ঘটায়।
৩. ক্যাফিন
সদ্য প্রস্তুত কফির গন্ধ কার না ভালো লাগে? কিন্তু সত্যিটা আপনাদের জানা উচিৎ যে কফি কোষ্ঠ কাঠিন্য বাড়ায়। যে সব পানীয়তে ক্যাফিন থাকে যেমন ক্যাপাচিনো, ব্ল্যাক কফি, এনার্জি ড্রিংকস, কফি উইথ ক্রিম, হট চকোলেট, সেই সব পানীয় কিন্তু অতিরিক্ত মাত্রায় গ্রহণ করা উচিৎ নয়। দৈনন্দিন ক্যাফিন সেবনের মাত্রার বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। সীমিত মাত্রায় ক্যাফিন মল ত্যাগে সাহায্য করে কিন্তু বেশি মাত্রায় ক্যাফিন সেবন কোষ্ঠ কাঠিন্য সৃষ্টি করে।
৪. রেড মিট
অনেক রকমের রোগেই রেড মিট খেতে বারণ করে দেন ডাক্তাররা। কোষ্ঠ কাঠিন্যেও রেড মিট খাওয়া নৈব নৈব চ। রেড মিটে থাকে প্রচুর ফ্যাট, আয়রন, প্রোটিন ফাইবার যা শরীরের পক্ষে হজম করা কঠিন। তাই সবচেয়ে ভালো হয় যে গরুর মাংস, ভেড়ার মাংস, খাসির মাংস ইত্যাদি এড়িয়ে চলা।
৫. অ্যালকোহল ও তামাক
অ্যালকোহল সেবন দেহের জন্য কতটা ক্ষতিকর সেটা বলে শেষ করা যাবে না। ধূমপানও শরীরের প্রচন্ড ক্ষতি করে। ধূমপান ক্ষুদ্রান্ত্র এবং বৃহদ্রান্তের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে, যার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য হয়।(4)অন্যদিকে মদ্যপানও পাচন তন্ত্রের ক্ষতি করে। এর অধিক সেবনে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।(5)
৬. চিপস্
চিপস্ খেতে আপনি এতই ভালোবাসেন যে চোখের নিমেষে আপনি চিপস্ খেয়ে শেষ করে দিতে পারেন, তাই না? কিন্তু আপনি কি জানেন যে আপনার ওজন বাড়ানোর সাথে এটি কোষ্ঠ কাঠিন্যের সমস্যাও সৃষ্টি করে। তেলে ভাজা এই চিপস্ গুলোতে থাকে প্রচুর সোডিয়াম যা আপনার স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক।
৭. ফ্রায়েড আর ফাস্ট ফুড
ফাস্টফুড এতোটাই অস্বাস্থ্যকর হয় যে আমাদের সকলেরই উচিৎ ফাস্টফুডগুলো ইতিমধ্যে খাওয়া বন্ধ করে দেওয়া। কিন্তু আমরা ফাস্টফুডে এতোটাই আসক্ত যে সেটা করতে পারিনা। যার ফলে আমরা ডেকে নিয়ে আসি মেদ, স্থূলতা, হৃদপিণ্ডের বিভিন্ন রকমের রোগকে। ফ্রায়েড ফাস্ট ফুডগুলো সোডিয়ামে ভরপুর থাকে এবং কোষ্ঠ কাঠিন্য ঘটায়। এই খাবারগুলো অবশ্যই বর্জন করা উচিৎ।
৮. অতিরিক্ত ডেয়ারী প্রোডাক্টস্
ডেয়ারী দ্রব্য যেমন আইসক্রিম, চিজ, দুধ, দই, ঘি, ইত্যাদি অতিরিক্ত মাত্রায় গ্রহণ করলে কোষ্ঠ কাঠিন্য অবশ্যম্ভাবী। এতে উপস্থিত ল্যাকটোজ দেহে গ্যাসের সমস্যা তৈরি করে। চিজ বয়স্কদের ক্ষেত্রে কোষ্ঠ কাঠিন্য সৃষ্টি করে। ১১ থেকে ১৩ বছর বয়সী ইরানী বাচ্চাদের ওপর গবেষণা করে দেখা গেছে যে অতিরিক্ত পরিমাণে দুধ বা দুধের তৈরি জিনিস খেলে তাদের কোষ্ঠ কাঠিন্য হচ্ছে আবার সেগুলো খাওয়া বন্ধ করে দিলে ৮০% বাচ্চাদের হজম এবং মল ত্যাগের কোনো সমস্যা থাকছে না। তার মানে এই নয় যে দুধ বা দুধের জিনিস ডায়েট থেকে একেবারেই সরিয়ে ফেলতে হবে। তবে কোষ্ঠ কাঠিন্য এড়াতে এইসব খাবার একটা নির্দিষ্ট পরিমাণে খাওয়া উচিৎ।
৯. সংরক্ষিত হিমায়িত খাবার
খাবারকে অনেকদিন পর্যন্ত ঠিক রাখতে হিমায়িত ও সংরক্ষিত করা হয়, এটি সুবিধেজনক ঠিকই কিন্তু দেহের জন্য প্রচন্ড ক্ষতিকারক। সালামি, সসেজ, রেডি-টু-ইট খাবারগুলো বিভিন্ন কেমিক্যাল পদার্থ দিয়ে সংরক্ষিত করা হয়। এগুলো পরিপাক করা খুব সহজ নয়। এতে পরিপাক তন্ত্র দুর্বল হয়ে পড়ে এবং ফলস্বরূপ কোষ্ঠ কাঠিন্য দেখা যায়। তাই এই জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলাই বুদ্ধিমানের কাজ।
১০. ক্র্যাকার বিস্কুট
ক্র্যাকার বিস্কুট চায়ের সাথে খাওয়ার জন্য আদর্শ স্ন্যাক্স। এটি তৈরি হয় বেকিং ময়দা দিয়ে যা কোষ্ঠ কাঠিন্যকে আরও বাড়িয়ে দেয়। মলত্যাগে সমস্যা হয়। তাই যখন কোষ্ঠ কাঠিন্য হবে এই বিস্কুট খাবেন না।
কোষ্ঠ কাঠিন্যের জন্য দৈনন্দিন জীবনচর্যার পরিবর্তন
এখানে কিছু কাজের কথা বলা হল যেগুলো দৈনন্দিন জীবনচর্যায় যোগ করলে কোষ্ঠ কাঠিন্যের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
রুটিন মাফিক চলা :
সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠা এবং রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমোতে যাওয়া – এটাই হল কোষ্ঠ কাঠিন্যের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার প্রথম উপায়। সাথে তিনবার খাওয়ার মাঝে চার ঘণ্টার অন্তর রাখতে হবে। হালকা খাবার খেতে হবে। এই অভ্যাসগুলো তৈরি হলেই আপনি দেখবেন কোষ্ঠ কাঠিন্যও অনেকটাই সেরে উঠছে।
যাত্রাকালীন খাবার :
কোথাও গেলেও রাস্তায় থাকাকালীন হালকা খাবার খান। নিয়ম অনুসারে খেলে শরীরের কোনো সমস্যা হবে না। ফাস্ট ফুড, অতিরিক্ত তেল যুক্ত খাবার খেলে কিন্তু কোষ্ঠ কাঠিন্য বাড়বে।
বেড টি বর্জন :
আপনার কি ঘুম থেকে উঠে বেড টি খাওয়ার অভ্যাস আছে? যদি উত্তর হ্যাঁ হয়, তাহলে আপনাকে শীঘ্রই এই অভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে। সকালে চা বা কফির পরিবর্তে জল খাওয়ার অভ্যাস করুন। সকালে খালি পেটে ঈষদুষ্ণ জল পান করা শরীরের জন্য খুবই উপকারী।
নিয়মিত ব্যায়াম:
বসে বসে অনেকক্ষণ ধরে কাজ করলে কোষ্ঠ কাঠিন্যের সমস্যা দেখা যায়। এই জন্য ব্যস্ত জীবন থেকে কিছু সময় বের করে যদি নিয়মিত ব্যায়াম করুন বা জিমও করতে পারেন। যদি আপনার খেলাধূলোয় আগ্রহ থাকে তাহলে ক্রিকেট, ব্যাডমিন্টন বা ফুটবল খেলতে পারেন। প্রতিদিন সাইকেল চালানো বা সাঁতার কাটাও এর বিকল্প হতে পারে। কিছু যোগাসন আছে যেগুলো রোজ অভ্যাস করলে কোষ্ঠ কাঠিন্য কমে যায়। অর্ধ-মৎস্যেন্দ্রাসন, ময়ূরাসন, হলাসন, পবনমুক্তাসন, তিতলি মুদ্রা ইত্যাদি কোষ্ঠ কাঠিন্যের জন্য ভালো যোগাসন।(6)
নিয়মিত শৌচ কাজ:
আপনারা হয়তো জানেনই নিয়মিত মলত্যাগ না করলে বা মল আটকে রাখলে পরিপাক তন্ত্রের সমস্যা দেখা যায়। এতে কোষ্ঠ কাঠিন্য হয়। এই জন্য যখনই মলত্যাগ করা প্রয়োজন মনে হবে তখনই তাড়াতাড়ি শৌচ কাজ সেরে ফেলা উচিৎ।
আসলে কারও কারও সকালে উঠেই পেট পরিষ্কার হয়ে যায়, কেউ কেউ ভোগেন কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ৷ যাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা রয়েছে তারাই ভোগেন কষ্টটা৷ উপরে যে খাবারগুলোর কথা বলা হয়েছে সেগুলো যদি তালিকায় রাখেন তাহলে সকালে উঠে পেট পরিষ্কার হতে বাধ্য৷ তার পাশপাশি উল্লেখিত খাবারগুলো এড়িয়েও চলতে হবে। মনে রাখবেন প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ও মিনারেলের পাশাপাশি ফাইবারও নিয়মিত খেলে পেট পরিষ্কার থাকে৷ আজকাল বেশির ভাগ মানুষই এই সমস্যায় ভোগেন। সময় থাকতে এই সমস্যার নিয়ন্ত্রণ করা না হলে পুরো শরীরে অনেক ক্ষতি হয়ে যেতে পারেন। শরীরে দেখা দেবে অনেক রকমের অসুখ। তাই জন্য দরকার ডায়েট চার্ট অনুসরণ করে খাওয়া দাওয়া করা এবং রুটিন মাফিক চলা।
প্রায়শঃ জিজ্ঞাস্য প্রশ্ন :
কোন ভারতীয় খাবার কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য ভালো?
ওটস্, জোয়ার, বাজরা, রাগি, ডাল এইসব ভারতীয় খাবার কোষ্ঠ কাঠিন্যে খুব উপকারী। এই খাবার গুলোতে থাকে প্রচুর ফাইবার যা দেহের মলত্যাগ সহজ করে ।
কোষ্ঠ কাঠিন্য হলেও কি খেয়ে যাওয়া উচিৎ?
না, কোষ্ঠ কাঠিন্যের সমস্যা থাকলে খাওয়া দাওয়া নিয়ন্ত্রণ করা উচিৎ। পর্যাপ্ত ফাইবার ও জল খেলে কোষ্ঠ কাঠিন্য হবে না।
ফাইবার গ্রহণের পরেও কেন কোষ্ঠ কাঠিন্য হচ্ছে?
ফাইবার গ্রহণের পরেও কোষ্ঠ কাঠিন্য বারবার হওয়ার কারণ হল দৈনিক দিনচর্যার পরিবর্তন, দৈনন্দিন খাবারে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার না থাকা, পর্যাপ্ত জল না পান করা এবং ব্যায়াম না করা। তাই কোষ্ঠ কাঠিন্য যাতে বার বার না হয় তার জন্য খাওয়া দাওয়া এবং জীবনচর্যার রুটিন পালন করা উচিৎ।(7)
ডিম কি কোষ্ঠ কাঠিন্যের জন্য খারাপ?
হ্যাঁ, ডিমে থাকে প্রচুর প্রোটিন, তার সাথে ফাইবার থাকে খুব কম। তাই ডিম কোষ্ঠ কাঠিন্যে খাওয়া উচিৎ নয়।
কোষ্ঠ কাঠিন্যের জন্য কত পরিমাণ জল খাওয়া উচিৎ?
কোষ্ঠ কাঠিন্য দূর করতে জল খাওয়া খুবই প্রয়োজন। দিনে অন্তত পক্ষে ৮ গ্লাস জল অবশ্যই খেতে হবে।
কলা কি কোষ্ঠ কাঠিন্যের সমস্যায় ভালো?
পাকা কলা কোষ্ঠ কাঠিন্যে খুব উপকারী। কিন্তু কাঁচা কলা কোষ্ঠ কাঠিন্যের সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে দেয়। পাকা কলা ফাইবারের উৎস। তাই পাকা কলা কোষ্ঠ কাঠিন্যে আরাম দেয়।
গরম জল খাওয়া কি কোষ্ঠ কাঠিন্যের জন্য ভালো?
হ্যাঁ, সকালে উঠে হাল্কা গরম জল খেলে কোষ্ঠ কাঠিন্যের সমস্যা কমে যায়।
7 Sources

Latest posts by StyleCraze (see all)
- চা খাওয়ার উপকারিতা এবং অতিরিক্ত চায়ের নেশার অপকারিতা | Tea Benefits and Side Effects in Bengali - February 25, 2021
- অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যুক্ত খাদ্য সামগ্রী এবং তার গুণাবলী | Antioxidant Rich Foods in Bengali - February 22, 2021
- মূত্র নালীতে সংক্রমণের কারণ, লক্ষণ এবং ঘরোয়া উপায়ে চিকিৎসা পদ্ধতি | Home Remedies for UTI - February 18, 2021
- জিলাটিনের ব্যবহার, উপকারিতা ও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া | Gelatin Benefits and Side Effects in Bengali - February 17, 2021
- উইলসন রোগ – কারন, লক্ষন, চিকিৎসা | Wilson Disease in Bengali - February 17, 2021
