গমের ভুসির উপকারীতা এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া | Wheat Bran Benefits and Side Effects

সুস্বাস্থ্য বজায় রাখলে হলে সব সময় পুষ্টিকর খাবার খাওয়া জরুরী। অনেকে এই কথা খুবই গুরুত্ব সহকারে পালন করে আবার অনেকে স্বাদিষ্ট খাবারের দিকে বেশি নজর দিতে গিয়ে অনেক পুষ্টিকর খাদ্যকেই অবহেলা করে ফেলে। ধরুন যদি গমের কথায় বলা হয় তাহলে দেখা যাবে গমের থেকে যে আটা পাওয়া যায় সেটা বর্তমানে মানুষের প্রয়োজন মতন সাধারণত দুভাগে ভাগ করা যায়। ভুসিযুক্ত বা উইথ ব্র্যান আটা আর ভুসিহীন বা মিহি মসৃণ আটা। এই মিহি মসৃণ আটা এবং ভুসিযুক্ত আটার তুলনামূলক আলোচনা করলে দেখা যাবে যে ভুসিযুক্ত আটা অনেক বেশি পুষ্টিকর। একাধিক শারীরিক সমস্যার অনায়াসেই লাঘব করে এই ভুসিযুক্ত আটা। সংশ্লিষ্ট প্রবন্ধে গমের ভুসির উপকারীতা, পুষ্টিগুন এবং একইসাথে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্বদ্ধে বিশদে আলোচনা করা হবে। আর সেখানেই আমরা উপরিক্তো বিষয় গুলি যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাদি পাবো। তবে একটা কথা মাথায় রাখতে হবে যে এই গমের ভুসি প্রাথমিক ভাবে কিছু স্বাস্থ্য সমস্যার সমাধান করে ঠিকই কিন্তু গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার উপশমের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা দরকার।
গমের ভুসির উপকারীতা গুলির ব্যাপারে এবার জেনে নেওয়া যাক।
গমের ভুসির স্বাস্থ্যপযোগীতা গুলি হলো নিম্নরূপ-
১. পরিপাক বা হজমে সহায়ক
গমের ভুসি খাবার পরিপাক বা হজমের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ইন্টারন্যাশানাল জার্নাল অফ ফুড সায়েন্সস অ্যাণ্ড নিউট্রিশান কর্তৃক পরিচালিত একটি গবেষণা থেকে একথা প্রমাণিত হয়েছে। গবেষণা সূত্রে জানা গিয়েছে যে গমে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার যা হজমে সহায়তা করে একইসাথে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যাও লাঘব হয়ে যায়। এটি খাদ্যে উপস্থিত কিছু বিষাক্ত পদার্থ যা স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর সেগুলিকে পৃথক করতে পারে। অন্যদিকে বেশ কয়েকটি পেট সংক্রান্ত শারীরিক সমস্যা যেমন ব্যথা বা যন্ত্রনা, পেট ফাঁপা, গ্যাসের সমস্যা ইত্যাদির উপশম ঘটায়। (1)
২. ক্যান্সার নিয়ন্ত্রক
গমের ভুসি ক্যান্সার নিয়ন্ত্রকও বটে। অকল্যাণ্ড ক্যান্সার সোসাইটি রিসার্চ সেন্টার এবং অকল্যাণ্ড মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক পরিচালিত একটি গবেষণা থেকে জানা গিয়েছে যে গমের ভুসিতে উপস্থিত ডায়টারি ফাইবার ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। এছাড়াও জানা গেছে যে গমের ভুসি পাকস্থলী এবং স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়া গমের আটায় তৈরী রুটিতে ভুসির পরিমান খুবই অল্প থাকে। তাই মনে করা হয় শুধু গমের ভুসি বলেই নয় গমের মধ্যস্থ অন্যান্য উপাদানও ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। তবে ক্যান্সার প্রতিরোধে গমের ভুসির ভূমিকার বিষয়ে আরোও বেশি গবেষণার প্রয়োজন আছে। একইসাথে এটাও মনে রাখা দরকার যে একমাত্র গমের ভুসিই ক্যান্সার প্রতিরোধক বা ক্যান্সারের নিরামায়ক এমন ভাবার কোনো কারণ নেই। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে ক্যান্সারের চিকিৎসা করা উচিৎ। (2)
৩. হার্টের স্বাস্থ্যোন্নতি করে
হার্টের স্বাস্থ্যোন্নতির জন্য কিছু হলেও গমের ভুসির একটা কার্যকরী ভূমিকা রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতানুসারে গমের ভুসির মধ্যস্থিত ডায়ট্রি ফাইবার মূলত এই জন্য দায়ী। এছাড়াও এতে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রভাবযুক্ত ফাইটোকেমিক্যালস হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়। এই ফাইটোকেমিক্যাল ভালো কোলেস্টেরল এবং প্লেটলেটের ( অনুচক্রিকা, চোট আঘাতের স্থান থেকে নিরবিচ্ছিন্ন রক্তপাত প্রতিরোধ করে।) পরিমাণ নিয়ন্ত্রন করে থাকে। শুধু তাই নয় এটা হার্টের জন্য ক্ষতিকর ট্রাইগ্লিসারাইড (এক ধরণের চর্বি) কমাতে সাহায্য করে। এইসব বৈশিষ্ট্যের জন্য বলা হয় গমের ভুসি হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপাদেয়।
৪. পেট সংক্রান্ত যাবতীয় সমস্যা প্রতিরোধক
ইতিমধ্যে পরিপাক ক্রিয়ায় গমের ভুসির উপকারীতার ব্যাপারে আমরা জানতে পেরেছি। একথাও জেনেছি যে গমের ভুসি ফাইবারের একটি প্রধান উৎস। এই ফাইবারের উপস্থিতির কারণেই কোষ্ঠ্য কাঠিন্য, পেটে ব্যাথা, খিঁচুনী, পেট ফাঁপা ইত্যাদি সমস্যার লাঘব হয়। তাই একথা বললে কিছু ভুল হবেনা যে পেট সংক্রান্ত অনেক সমস্যারই অনায়াসে উপশম করে গমের ভুসি।
In This Article
গমের ভুসির পুষ্টিগুণ
গমের ভুসির পুষ্টিগুণ গুলি হলো নিম্নরূপ –
পৌষ্টিক উপাদান | প্রতি ১০০ গ্রামে পরিমাণ |
---|---|
জল | ৯.৮৯ গ্রাম |
শক্তি | ২১৬ কিক্যাল |
প্রোটিন | ১৫.৫৫ গ্রাম |
মোট লিপিড (ফ্যাট) | ৪.২৫ গ্রাম |
কার্বোহাইড্রেট | ৬৪.৫১ গ্রাম |
মোট ডায়ট্রি ফাইবার | ৪২.৮ গ্রাম |
শর্করা | ০.৪১ গ্রাম |
মিনারেলস | |
ক্যালসিয়াম | ৭৩ মিলিগ্রাম |
আয়রণ | ১০.৫৭ মিলিগ্রাম |
ম্যাগনেশিয়াম | ৬১১ মিলিগ্রাম |
ফসফরাস | ১০১৩ মিলিগ্রাম |
পটাশিয়াম | ১১৮২ মিলিগ্রাম |
সোডিয়াম | ২ মিলিগ্রাম |
জিঙ্ক | ৭.২৭ মিলিগ্রাম |
কপার | ০.৯৯৮ মিলিগ্রাম |
ম্যাঙ্গানিজ | ১১.৫ মিলিগ্রাম |
সেলেনিয়াম | ৭৭.৬ মাইক্রোগ্রাম |
ভিটামিন | |
ভিটামিন সি | ০০ মিলিগ্রাম |
থিয়ামিন | ০.৫২৩ মিলিগ্রাম |
রাইবোফ্লাবিন | ০.৫৭৭ মিলিগ্রাম |
নিয়াসিন | ১৩.৫৭৮ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন বি৬ | ১.৩০৩ মিলিগ্রাম |
ফলেট | ৭৯ মাইক্রোগ্রাম |
ভিটামিন এ | ৯ আইইউ |
ভিটামিন ই | ১.৪৯ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন কে | ১.৯ মাইক্রোগ্রাম |
লিপিড | |
স্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড | ০.৬৩ গ্রাম |
মনোঅ্যানস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড | ০.৬৩৭ গ্রাম |
পলি স্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড | ২.২১২ গ্রাম |
সূত্র – (USDA)
গমের ভুসি ব্যবহারের পদ্ধতি
বিশেষজ্ঞদের মতে স্বাস্থ্যোপযোগী সুবিধা পেতে হলে দৈনিক ৩.৫ গ্রাম গমের ভুসি খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করা উচিৎ। গমের ভুসি খাদ্যে অন্তর্ভূক্ত করার একাধিক পদ্ধতি রয়েছে। যেগুলির ব্যাপারে নিম্নে আলোচনা করা হবে। (3)
- গম ভাঙ্গার পর তা থেকে তৈরী আটা ছাঁকনিতে না ঝেঁকে সরাসরি রুটি তৈরী করে সেটা খাওয়া যেতে পারে।
- প্রাতরাশে গম থেকে প্রস্তুত ডালিয়া খাওয়া যেতে পারে। এটি ডালিয়া হিসেবেই বাজারে পাওয়া যায়।
- আটা ঝাঁকনিতে ঝেঁকে যে গমের যে ভুসি পাওয়া যায় সেটার সাথে দই মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
- গমের ভুসি স্যুপে মিশিয়েও খাওয়া যেতে পারে।
- বাড়িতে কুকিস তৈরী করতে চাইলে তাতে গমের ভুসি যোগ করা যেতে পারে।
গমের ভুসি ব্যবহারেরনেক গুলি উপায় সম্বদ্ধে জানা গেলো। এবার আমরা দেখবো গমের ভুসির পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া গুলি কী কী।
গমের ভুসির পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
গমের ভুসির একাধিক স্বাস্থ্যোপযোগীতা আছে ঠিকই, কিন্তু একটা নির্দিষ্ট পরিমাণের থেকে বেশি পরিমান ডায়টারী ফাইবার খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করলে তা স্বাস্থ্যের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকারক বলে মনে করা হয়। গমের ভুসির পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া গুলি কী এবার জেনে নেওয়া যাক – (4)
- পেটে অসহ্য ব্যথা এবং পেট কামড়ানোর সমস্যা দেখা যায়।
- পেট ফাঁপা বা গ্যাসের সম্ভবনা তৈরী হয়।
- এইসব সমস্যা গুলি ছাড়াও পেট সংক্রান্ত আরোও একাধিক সমস্যার জন্ম হতে পারে।
ওপরের এই প্রবন্ধটি পড়ার পর আশা করা যায় গমের ভুসির উপকারীতা সম্বদ্ধে পাঠকের একটা সম্যক ধারণা হয়েছে। এখন থেকে আটা বা ময়দা ঝাঁকনির সাহায্যে ঝেঁকে ভুসি বাদ দিয়ে খাওয়ার আগে শরীরে এর প্রয়োজনীতার ব্যাপারে একটু চিন্তা করে নেবেন। গমের ভুসি খাদ্য হিসেবে গ্রহণের পরবর্তীতে যে কোনো রকম শারীরিক সমস্যা দেখা দিলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী :
ওটের ভুসি, গমের ভুসির থেকে কী বেশি স্বাস্থ্যকর?
গমের ভুসি, ওটের ভুসির থেকে বেশি উপকারী।
ওটের ভুসি নিয়মিত খাদ্য হিসেবে গ্রহণ কী স্বাস্থ্যকর?
প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণে গ্রহণ করলে তা স্বাস্থ্যকর হতে পারে।
Sources
Stylecraze has strict sourcing guidelines and relies on peer-reviewed studies, academic research institutions, and medical associations. We avoid using tertiary references. You can learn more about how we ensure our content is accurate and current by reading our editorial policy.
- Wheat bran: its composition and benefits to health, a European perspective
https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC3507301/ - Protection against cancer by wheat bran: role of dietary fibre and phytochemicals
https://pubmed.ncbi.nlm.nih.gov/10091039/ - Short Term (14 Days) Consumption of Insoluble Wheat Bran Fibre-Containing Breakfast Cereals Improves Subjective Digestive Feelings, General Wellbeing and Bowel Function in a Dose Dependent Manner
https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC3705356/ - Position of the Academy of Nutrition and Dietetics: Health Implications of Dietary Fiber
https://jandonline.org/article/S2212-2672%2815%2901386-6/fulltext