ঝিঙের উপকারিতা এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া | Ridge Gourd Benefits and Side Effects in Bengali

আমাদের পরিচিত শাকসবজি গুলির মধ্যে অন্যতম একটি উপকারী সবজি হলো ঝিঙে। বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের শরীরকে সুস্থ সবল রাখার জন্য দৈনিক খাদ্য তালিকায় শাকসবজি রাখা বাধ্যতামূলক। ইতিমধ্যেই ডাক্তার এবং পুষ্টিবিদেরা পরামর্শ দিয়ে থাকে বিভিন্ন সবুজ শাক সবজি খাদ্য তালিকায় রাখার জন্য। সবুজ শাক সবজির মধ্যে অন্যতম একটি সবজি হল ঝিঙে। এটি শরীরকে স্বাস্থ্যকর করে তুলতে সহায়তা করে। আমাদের স্বাস্থ্য রক্ষায় সবুজ শাকসবজির প্রচুর উপকারিতা রয়েছে। ঝিঙে এক ধরনের পুষ্টি সমৃদ্ধ সবজি হওয়ায় এটি শরীরকে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান প্রদান করে থাকে। ঝিঙে গাছের পাতা, শিকর, ফল, বীজ সবকটি উপাদানই সমান কার্যকরী। আজকের নিবন্ধে আমরা ঝিঙে সম্পর্কে সব রকম তথ্য আপনাদের জানাবো। ঝিঙের কি কি উপকারিতা রয়েছে, কি কি অপকারিতা রয়েছে, কোন রোগ গুলি নিরাময়ে এটি সহায়তা করে এবং কিভাবে ঝিঙে কে দৈনিক খাদ্য তালিকায় ব্যবহার করবেন সবকটি বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করব। (১)
In This Article
ঝিঙের উপকারিতা
আসুন জেনে নিন স্বাস্থ্য রক্ষায় ঝিঙের কি কি উপকারিতা রয়েছে।
১) প্রদাহ বিরোধী উপাদান হিসেবে
ঝিঙে গাছের শুকনো পাতায় ইথানল নামক এক ধরনের যৌগ রয়েছে যা প্রদাহ বিরোধী উপাদান হিসেবে কাজ করে। এর প্রভাবে শরীরের বিভিন্ন টিস্যুগুলোতে তরল জমে থাকার কারণে ফোলা ভাব কম করতে এবং যেকোন প্রদাহের সংক্রমণ কমাতে সহায়তা করে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে ইথানল শরীরের প্রদাহজনিত সমস্যাগুলিকে কম করতে সহায়তা করে। সুতরাং বলা যেতে পারে ঝিঙ্গে যেকোন ক্ষেত্রে অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান হিসেবে কাজ করতে পারে। ঝিঙ্গের থেকে পাওয়া উপাদান গুলি অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন হওয়ায় এটি যে কোনো প্রদাহ কে কম করতে সহায়তা করে। ঝিঙের মধ্যে থাকা ফাইটোকেমিক্যাল জাতীয় উপাদান গুলি, যেমন ফ্ল্যাভোনয়েডস, ট্যানিনস এবং টারপোনয়েডস শরীরের যেকোনো প্রদাহের সংক্রমণকে কম করতে সহায়তা করে। (২)
২) মাথাযন্ত্রণা নিরাময়ে
শুনতে অবাক লাগলেও এটা সত্যি মাথা যন্ত্রণা কিংবা সাইনাসের কারণে হওয়া মাথাব্যথার সমস্যা কম করতে ঝিঙের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে ঝিঙে গাছের পাতা এবং বীজ থেকে নিষ্কাশিত হওয়া ইথানল যেকোনো ধরনের ব্যথা কম করতে সহায়তা করে। এছাড়াও ঝিঙের মধ্যে রয়েছে অ্যানালজেসিক এবং অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি বৈশিষ্ট্য যা মাথার টিস্যুগুলোকে স্বস্তি প্রদান করে মাথার যন্ত্রণা কে কম করতে সহায়তা করে। এছাড়াও মানুষের ওপরে করা গবেষণায় দেখা গিয়েছে, দৈনিক যারা খাদ্য তালিকায় ঝিঙে রাখেন তাদের শরীরে যেকোনো ব্যথা হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। (১)
৩) আলসার কমাতে
খাওয়া-দাওয়ার অনিয়ম, অত্যধিক মশলাযুক্ত খাবার গ্রহণের ফলে অনেকের মধ্যেই গ্যাস্ট্রিক আলসারের সমস্যা দেখা দেয়। এক্ষেত্রেও ঝিঙে পরিত্রাতা হিসাবে কাজ করে। পেটের আলসার এবং গ্যাস্ট্রিক আলসার নিরাময়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে থাকে ঝিঙে। ঝিঙের মধ্যে থাকা গ্যাস্ট্রো প্রোটেক্টিভ জাতীয় উপাদান গুলি আলসার গুলির প্রভাবকে কম করতে সহায়তা করে। ঝিঙের মধ্যে মিথেনলীক এবং বেশ কিছু জলীয় উপাদান রয়েছে, যা পেটের আলসারের ক্ষেত্রে শাস্তি প্রদান করে থাকে। এছাড়াও ঝিঙের মধ্যে থাকা উপাদান গুলি গ্যাস্ট্রিক আলসারের ক্ষেত্রে হওয়া পাকস্থলীতে গ্লাইকোপ্রোটিন এর স্তর গুলি কে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ঝিঙ্গার মধ্যে এমন কিছু মিথেনলীক উপাদান রয়েছে যার মধ্যে জলীয় উপাদান রয়েছে। এই উপাদানগুলি গ্যাস্ট্রিক আলসার নিরাময়ে সহায়তা করে থাকে। (১)
৪) ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে
প্রাচীনকাল থেকেই চিকিৎসা ব্যবস্থায় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ কারি সবজি হিসেবে পরিচিত ঝিঙে। ডায়াবেটিক রোগীরা তাদের খাদ্যতালিকায় ঝিঙে রাখলে তাদের শরীরে ডায়াবেটিসের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে ঝিঙের মধ্যে থাকা ইথানলিক, মিথানলিক এবং এর মধ্যে এক ধরনের হাইপোগ্লাইসেমিক প্রভাব রয়েছে, যা শরীরের গ্লুকোজের মাত্রাকে কম করতে সহায়তা করে। এই হাইপোগ্লাইসেমিক প্রভাবের কারণে ঝিঙে কে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে উপকারী সবজি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। অন্য একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ঝিঙের মধ্যে থাকা ইথানল, মিথেনলীক জাতীয় উপাদান গুলি এবং হাইড্রো অ্যালকোহলিক উপাদানগুলি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। যদিও মানুষের ওপরে এই নিয়ে গবেষণা করা আরো বাকি আছে। তবে একটি প্রাথমিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে ঝিঙের মধ্যে থাকা উপাদানগুলো মানব শরীরে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে প্রভাব বিস্তার করে থাকে। (১)
৫) আমাশয় রোগের ক্ষেত্রে
পেটের যেকোনো ধরনের সমস্যা, পেট খারাপ, আমাশয় এর মতন সমস্যাগুলি নিরাময়ের ক্ষেত্রেও ঝিঙে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ঝিঙের বীজে থাকা বিভিন্ন উপাদান গুলি আমাশয় রোগের উপশমকারী উপাদান হিসেবে পরিচিত। তাই আমাশয় হলে ঝিঙে খাদ্য তালিকায় রাখা যেতে পারে। প্রকৃতপক্ষে ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমনের কারণে আমাশয় যখন ডায়েরিয়ার রূপ ধারণ করে সেক্ষেত্রে ডায়েরিয়ার মত সমস্যাগুলি নিরাময়ের ক্ষেত্রেও ঝিঙে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ঝিঙের মধ্যে এক ধরনের অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা ব্যাকটেরিয়ার কারণে হওয়া পেটের অসুখ নিরাময়ে সহায়তা করে থাকে। বলা যেতে পারে, যেকোনো ধরনের পেটের রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রে ঝিঙে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে থাকে। (৩)
৬) জন্ডিস প্রতিরোধে
জন্ডিস প্রতিরোধের ক্ষেত্রে ও ঝিঙে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। মূলত শরীরে বিলিরুবিন নামক যৌগটির হঠাৎ করে বৃদ্ধির কারণে জন্ডিস রোগ দেখা দেয়। জন্ডিস রোগীদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে ঝিঙে গাছের ফল, বীজ সমস্ত কিছুই ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এছাড়াও চিকিৎসার ক্ষেত্রে ঝিঙে পাতার গুঁড়ো ব্যবহার করা হয়ে থাকে। মূলত ঝিঙে পাতার মধ্যে এক ধরনের হেপাটোপ্রটেক্টিভ জাতীয় উপাদান রয়েছে যা লিভারকে যেকোনো ধরনের সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করতে পারে। যার ফলে এই উপাদানটি শরীরে ক্রমশ বর্ধিত বিলিরুবিন এর পরিমাণকে কম করতে সহায়তা করে। শরীরে বিলিরুবিন এর নিষ্কাশন বাড়তে থাকলেই জন্ডিস মারাত্মক আকার ধারণ করতে থাকে। তাই এক্ষেত্রে ঝিঙের ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ। ঝিঙের মধ্যে এই প্রয়োজনীয় উপাদান গুলি থাকার কারণে এটিকে জন্ডিসের প্রশমনকারী ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। (৪) (৫)
৭) ক্যান্সার বিরোধী উপাদান হিসেবে
ক্যান্সার রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে বর্তমানে বহু উন্নত চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে। বলা যায় আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি দ্বারা ক্যান্সার রোগের নিরাময় করা সম্ভব। তবে মনে করা হয় ক্যান্সার রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রে ঝিঙের কিছু ভূমিকা রয়েছে। এনসিবিআইতে ইঁদুরের ওপর গবেষণা করে দেখা গিয়েছে, ঝিঙের মধ্যে থাকা মিথেনলিক এবং জলীয় উপাদানগুলি শরীরে টিউমার গঠনের সম্ভাবনা গুলিকে কম করে। এর পাশাপাশি মানুষের ওপর করা গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ঝিঙের মধ্যে বেশকিছু ক্যান্সার বিরোধী উপাদান রয়েছে যার ফলে ঝিঙে গ্রহণের ফলে শরীরে ক্যান্সারের সম্ভাবনা কম হতে পারে। যদিও গবেষণায় ঝিঙের মধ্যে ক্যান্সার বিরোধী উপাদান গুলির পরিমাণ সম্পর্কে এখনো যথাযথ তথ্য পাওয়া যায়নি, তবে খুব শীঘ্রই এর উত্তর পাওয়া যাবে। এজন্য ক্যান্সার রোগীরা কেবলমাত্র ঝিঙের উপর ভরসা করেই নয় বরং যথাযথ ক্যান্সার চিকিৎসার পাশাপাশি খাদ্যতালিকায় ঝিঙে গ্রহন করতে পারেন।
৮) কুষ্ঠ রোগ নিরাময়ে
প্রাচীন যুগ থেকেই কুষ্ঠ রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রে ঝিঙে ব্যবহার করা হয়ে আসছে। প্রাচীন বিশ্বাস অনুযায়ী কুষ্ঠ আক্রান্ত স্থানে যদি ঝিঙে পাতা বেটে নিয়ে লাগানো যায় সে ক্ষেত্রে কুষ্ঠ রোগের মাত্রা কম হয়। মূলত মাইক্রো ব্যাকটেরিয়াম দ্বারা সৃষ্ট এক ধরনের সংক্রামক রোগ হলো কুষ্ঠ। ইতিমধ্যেই আমরা জেনেছি ঝিঙের মধ্যে বেশকিছু অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান রয়েছে, যা শরীরের যেকোনো ধরনের ব্যাকটেরিয়া কে বিনাশ করতে সহায়তা করে। যদিও কুষ্ঠ রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রে ঝিঙের কোন বৈশিষ্ট্যটি সহায়তা করে গবেষণায় তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে কুষ্ঠ রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রে ঘরোয়া টোটকা হিসাবে এটি ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে এর পাশাপাশি অবশ্যই আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ নিয়ে যথাযথ কুষ্ঠ রোগের চিকিৎসা করা উচিত।
৯) দাদ-হাজা নিরাময়ের ক্ষেত্রে
শরীরের নরম স্থানগুলিতে হঠাৎ কোনো ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমনের ফলে কিংবা পোকা কামড় এর ফলে বিভিন্ন রকমের দাদ এবং হাজা এর সৃষ্টি হয়। এই দাদ-হাজা নিরাময়ের ক্ষেত্রেও ঝিঙে ব্যবহার করা যায়। মূলত ছত্রাকের কারণে এই দাদ- হাজার সম্ভাবনা দেখা দেয়। এক্ষেত্রে ঝিঙের মধ্যে বেশকিছু অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা দাদ-হাজা নিরাময়ের ক্ষেত্রে সহায়তা করে থাকে। যদিও গবেষণায় বিষয়টি স্পষ্ট নয়, তবে দাদ হাজা নিরাময়ের ক্ষেত্রে ঝিঙে পাতার রস ব্যবহার করা হয়ে থাকে। (৬)
ঝিঙের খাদ্যগুণ
ইতিমধ্যেই ঝিঙের বিভিন্ন উপকারিতা গুলি জানার পাশাপাশি আমরা জেনেছি ঝিঙের মধ্যে থাকা বেশ কিছু পুষ্টি উপাদান গুলি সম্পর্কে। আসুন এবার যথাযথভাবে জেনে নিন ঝিঙের মধ্যে কত পরিমাণে কোন পুষ্টি উপাদান রয়েছে। (৭)
প্রতি ১০০ গ্রাম ঝিঙের মধ্যে রয়েছে –
- জল ৯৩.৮৫ গ্রাম
- শক্তি ২০ কিলো ক্যালরি
- প্রোটিন ১.২ গ্রাম
- ফ্যাট ০.২ গ্রাম
- কার্বোহাইড্রেট ৪.৩৫ গ্রাম
- ফাইবার ১.১ গ্রাম
- চিনি ২.০২ গ্রাম
- ক্যালসিয়াম ২০ মিলিগ্রাম
- আয়রন ০.৩৬ মিলিগ্রাম
- ম্যাগনেসিয়াম ১৪ মিলিগ্রাম
- ফসফরাস ৩২ মিলিগ্রাম
- পটাশিয়াম ১৩৯ মিলিগ্রাম
- সোডিয়াম ৩ মিলিগ্রাম
- দস্তা ০.০৭ মিলিগ্রাম
- তামা ০.০৩৫ মিলিগ্রাম
- ম্যাঙ্গানিজ ০.০৯২ মিলিগ্রাম
- সেলেনিয়াম ০.২ গ্রাম
- ভিটামিন সি ১২ মিলিগ্রাম
- থিয়ামিন ০.০৫ মিলিগ্রাম
- রাইবোফ্লাভিন ০.০৬ মিলিগ্রাম
- নিয়াসিন ০.০৪ মিলিগ্রাম
- প্যানটোথেনিক অ্যাসিড ০.২১৮ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন বি সিক্স ০.০৪৩ মিলিগ্রাম
- ফোলেট ৭ গ্রাম।
ঝিঙে কিভাবে ব্যবহার করা যায়?
ঝিঙের বিভিন্ন গুনাগুন এবং এর উপকারিতা গুলি আমরা সকলেই জেনে গিয়েছি। এবার আমরা জানবো ঝিঙে কিভাবে, কখন, কত পরিমাণে খাওয়া যেতে পারে। কেননা ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, জন্ডিস, আলসারের মতন রোগগুলির ক্ষেত্রে ঝিঙে একটি ব্যবহারকারী সবজি। সেজন্য দৈনিক খাদ্যতালিকায় এর ব্যবহার কি রূপ হবে সেটি জেনে নেওয়া আমাদের প্রয়োজন। আসুন জেনে নিন কিভাবে ঝিঙে ব্যবহার করবেন।
- প্রতিদিন সকালে কিংবা রাতে ঝিঙে আলু দিয়ে সবজি করে রুটি দিয়ে খেতে পারেন।
- ঝিঙে এবং চিংড়ি মাছ দিয়ে সুন্দর করে রান্না করে খাওয়া যেতে পারে।
- ঝিঙে পাতা গুঁড়ো করে নিয়ে জলে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
- ঝিঙের বীজগুলি কে আলাদা করে বের করে নিয়ে সেগুলিকে ভেজে খাওয়া যেতে পারে।
- ঝিঙে দিয়ে স্যুপ তৈরি করে খাওয়া যেতে পারে।
- ভাতের মধ্যে ঝিঙে সিদ্ধ দিয়ে সরষে তেল দিয়ে মেখে খাওয়া যেতে পারে।
- ঝিঙে রোদে শুকিয়ে সেটি গায়ের খোসা হিসেবেও ব্যবহার করতে পারেন।
- যদিও ঝিঙে খাওয়ার নির্দিষ্ট কোনো পরিমাণ নেই, তবে প্রতিদিন পরিমিত পরিমাণে ঝিঙের তরকারি খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন।
- পাতলা মাছের ঝোল রান্না করার সময় তার মধ্যেও ঝিঙে দিয়ে দিতে পারেন। এটি খেতেও সুস্বাদু হবে পুষ্টিকর হবে।
- হাঁপানি আক্রান্ত ব্যক্তিরা দিনে দুবার অর্ধেক কাপ করে ঝিঙের রস খেতে পারেন, এতে উপকার পাবেন।
ঝিঙের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
ঝিঙের খুব বেশি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া না থাকলেও প্রত্যেকটি খাদ্য উপাদান ব্যবহারের ক্ষেত্রে তার পরিমাণটা মাথায় রেখে ব্যবহার করতে হবে। একনাগাড়ে এবং বেশি পরিমাণে যদি কোনও খাদ্য উপাদান ব্যবহার করা হয় সে ক্ষেত্রে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। তবে ঝিঙের ক্ষেত্রে খুব বেশি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া না থাকলেও সামান্য কয়েকটি দেখা গিয়েছে। সে গুলি সম্পর্কে জেনে নিন তাহলে ঝিঙে খাবার সময় এই বিষয়গুলো মাথায় রেখে চলবেন।
- গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে ঝিঙে খাদ্য তালিকায় রাখা নিরাপদ হিসেবে বিবেচিত হয় না। তাই গর্ভাবস্থায় ঝিঙে খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
- অনেকের ক্ষেত্রে ঝিঙে খাওয়ার ফলে এলার্জির সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে, সে ক্ষেত্রে ঝিঙে খেলে যদি এলার্জির সম্ভবনা হয় তবে ঝিঙে খাওয়া বন্ধ করে দিন।
আজকের নিবন্ধ থেকে ইতিমধ্যেই আপনারা ঝিঙের স্বাস্থ্য উপকারিতা গুলি সম্পর্কে জেনে গেছেন। এর পাশাপাশি ঝিঙের যে খুব বেশি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই তাও আপনারা জেনে গেছেন। এটি সহজলভ্য এবং সস্তার একটি সবজি, যার বহু স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। ঝিঙের স্বাদ খুব বেশি ভালো না হলেও এটি আপনার স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় একটি সবজি। যদি সরাসরি ঝিঙে সবজি হিসেবে খেতে ইচ্ছা না করে সে ক্ষেত্রে ঝিঙের রস খেতে পারেন। তবে ঝিঙে থেকে যদি কোনও প্রকারের এলার্জি দেখা যায় তাহলে তৎক্ষণাৎ তা খাওয়া বন্ধ করে দেবেন এবং ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন। তাহলে আজকের নিবন্ধ থেকে ঝিঙের সম্পর্কে আপনাদের একটা ধারণা তৈরি হয়েছে। এবার থেকে তাহলে খাদ্যতালিকায় ঝিঙে রাখুন এবং ঝিঙে দৈনিক গ্রহণের ফলে আপনার কি কি উপকারিতা হয়েছে সেটি আমাদের জানাতে ভুলবেন না।
প্রায়শই জিজ্ঞাস্য প্রশ্নাবলী :
ঝিঙে কি কাঁচা খাওয়া যায়?
ঝিঙে কাঁচা খাওয়া যায় না।
ঝিঙে কি চুলের জন্য ভালো?
ঝিঙের মধ্যে বেশকিছু পুষ্টি উপাদান রয়েছে যা চুলের স্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়তা করে।
ঝিঙে খাওয়ার ফলে কি গ্যাস হতে পারে?
না ঝিঙে খাওয়ার ফলে গ্যাস হতে পারেনা।
গর্ভাবস্থায় কি ঝিঙে খাওয়া যায়?
না, গর্ভাবস্থায় ঝিঙে খাওয়া যায় না।
ঝিঙের স্বাদ তিতা হয় কেন?
ঝিঙের মধ্যে কিউকারবিটাসিন নামক এক ধরনের যৌগ থাকে। এই যৌগের কারণে ঝিঙের মধ্যে অন্য স্বাদের তুলনায় তিতা ভাব বেশি থাকে।
Sources
- Therapeutic Potential of Luffa acutangula: A Review on Its Traditional Uses, Phytochemistry, Pharmacology and Toxicological Aspects
https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC6232903/ - Evaluation of Analgesic, Antipyretic and Antiinflammatory Effects of Ethanolic Leaves Extract of Luffa Acutangula (L.)
http://repository-tnmgrmu.ac.in/5312/ - Dysentery
https://www.researchgate.net/publication/268447338_4_Dysentery - Ethnopharmacological Approaches for Therapy of Jaundice: Part I
https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC5559545/ - Review on Luffa acutangula L.: Ethnobotany, Phytochemistry, Nutritional Value and Pharmacological Properties
https://www.researchgate.net/publication/304379555_Review_on_Luffa_acutangula_L_Ethnobotany_Phytochemistry_Nutritional_Value_and_Pharmacological_Properties - Ringworm
https://www.cdc.gov/fungal/diseases/ringworm/index.html - FoodData Central
https://fdc.nal.usda.gov/fdc-app.html#/food-details/168414/nutrients