লো ব্লাড প্রেসারের সমস্যা ও তার প্রতিকার – Low BP in Bengali

আপনি কি বিছানা থেকে বা চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ানোর সময় হালকা বমি বমি ভাব ও চোখে অন্ধকার দেখছেন বেশ কয়েকদিন ধরে? হতে পারে আপনার লো ব্লাড প্রেসার বা কম রক্তচাপ জনিত সমস্যা দেখা দিচ্ছে । তাই দেরি না করে শীঘ্রই ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। হাই ব্লাড প্রেসারের মতো লো ব্লাড প্রেসারেও নানা রকম বিপদের সম্মুখীন হতে হয়। কিন্তু আমাদের মধ্যে অনেকেরই এই সম্পর্কে সঠিক ধারণা নেই। আমাদের এই প্রতিবেদনে আমরা আপনাকে জানাবো লো প্রেসার সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য।
In This Article
লো ব্লাড প্রেসার হওয়ার কারণগুলি কি কি ?
যেসব কারণের জন্য কম রক্তচাপ জন্য সমস্যা দেখা দেয়, সেগুলি নিচে উল্লেখ করা হল।
- শরীরে জলের পরিমান কম হয়ে গেলে
- বেশি রক্তপাত হলে
- হার্ট সংক্রান্ত সমস্যা থাকলে
- শরীরে ভিটামিন বি ১২ বা ফোলেটের কমতি হলে
- অ্যালকোহল বা ড্রাগ সেবন করলে
- অ্যাড্রিনালিন হরমোনের পরিমান শরীরে কম পড়লে
- সেপ্টিসেমিয়া হলে।
এবার জেনে নেওয়া যাক লো ব্লাড প্রেসারের উপসর্গগুলি কি কি।
ব্লাড প্রেসারের উপসর্গ
- মাথা ঘুরে পরে যাওয়া
- ক্লান্তি ভাব অনুভব করা
- অজ্ঞান হয়ে যাওয়া
নিচে ব্লাড প্রেসারের চার্ট দেওয়া হল যার দ্বারা সহজেই বোঝা যাবে যে আপনি রক্তচাপ জনিত কোনো সমস্যায় ভুগছেন নাকি।
ব্লাড প্রেসার চার্ট
ব্লাড প্রেসারের বিভাগ | সিস্টোলিক (উপরেরটি) | ডায়াস্টোলিক (নিচেরটি) |
---|---|---|
নিম্ন রক্তচাপ | ১০০-র থেকে কম | ৬০-এর থেকে কম |
নরমাল | ১২০-র থেকে কম | ৮০-র থেকে কম |
এলিভেটেড | ১২০-১২৯ | ৮০-র থেকে কম |
উচ্চ রক্তচাপ (হাইপারটেনশন) স্টেজ ১ | ১৩০-১৩৯ | ৮০-৮৯ |
উচ্চ রক্তচাপ (হাইপারটেনশন) স্টেজ ২ | ১৪০ বা তার বেশি | ৯০ বা তার বেশি |
হ্যাপেরটেনসিভ ক্রাইসিস | ১৮০-র বেশি | ১২০-র বেশি |
লো ব্লাড প্রেসারের সমস্যা দূর করার ঘরোয়া উপায়
১. কফি
এক থেকে দু টেবিল চামচ কফি নিয়ে এক কাপ গরম জলে ফুটিয়ে নিন। তারপর ঠান্ডা করে পান করুন। দিনে দুবার করে এটি খেতে পারেন কারণ কফিতে ক্যাফিন থাকে যা শরীরের রক্তচাপ বাড়াতে সক্ষম (1) ।
২. নুন জল
এক গ্লাস জলে হাফ চামচ নুন দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে পান করে নিন। যখনই ব্লাড প্রেসার কম হতে শুরু করবে তখনই এটি পান করুন। নুনে থাকে সোডিয়াম যা রক্তচাপ বাড়াতে সাহায্য করে। তবে এই প্রতিকারটি বেশি ব্যবহার না করাই ভালো, কারণ অতিরিক্ত নুন স্বাস্থ্যের পক্ষে একদমই ভালো নয় (2)।
৩. তুলসী পাতা
দশ থেকে পনেরোটি তুলসী পাতা নিয়ে তার থেকে রস বার করে নিয়ে, সেই রসের সাথে মধু মিশিয়ে খেয়ে নিন। প্রত্যেকদিন সকালবেলা উঠে এটি খাওয়ার অভ্যেস করুন কারণ এতে থাকে
ভিটামিন সি, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম। এগুলি সব মিলিয়ে নিম্ন রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে (3)।
৪. রোজমেরি অয়েল
ছয় ফোঁটা রোজমেরি অয়েল ও এক টেবিল চামচ নারকেল তেল নিয়ে দুটিকে মিশিয়ে সারা শরীরে মেখে ফেলুন। রোজমেরি অয়েলে কর্পূর রয়েছে যা আপনার শ্বাসযন্ত্রের পাশাপাশি রক্ত সঞ্চালনকে উদ্দীপিত করে। সুতরাং, রোজমেরি অয়েল অ্যান্টিহাইপোটেনসিভ প্রকৃতির হওয়ার কারণে নিম্ন রক্তচাপের চিকিত্সার জন্য উপযোগী (4) ।
৫. গ্রীন টি
এক কাপ গরম জলে প্রয়োজন মতো গ্রীন টি দিয়ে কিছুক্ষন ভিজিয়ে রেখে তা ছেঁকে নিয়ে পান করুন। দিনে দু থেকে তিনবার এটি পান করুন। এতেও ক্যাফিন উপস্থিত থাকে। এটি লো ব্লাড প্রেসারের সমস্যা দূর করে বলে জানা যায়।
৬. জিনসেং
জিনসেং চাইনিজ ভেষজ হিসেবে পরিচিত। এক কাপ জলের মধ্যে এক চামচ জিনসেং চা দিয়ে তা হালকা ভাবে ফুটিয়ে নিন। তারপর ছেঁকে নিয়ে ঠান্ডা করে পান করে নিন (5)। দিনে দু থেকে তিনবার খেতে পারেন। এটি লো ব্লাড প্রেসার সঠিক করতে উপযোগী ।
৭. ভিটামিন
ভিটামিন বি ১২ এবং ভিটামিন ই নিম্ন রক্তচাপের সমস্যাকে দূর করতে পারে (6), (7) । তাই আমন্ড, পালং শাক, রাঙালু, দুধ, মাছ, ডিম ইত্যাদিতে ভিটামিন থাকার কারণে এটি নিয়মিত ডায়েটে রাখার চেষ্টা করুন। এছাড়া ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট ও খেতে পারেন।
৮. কিশমিশ
অনেকেই বলে থাকেন কিশমিশ খেলে নাকি শরীর গরম থাকে। তবে যাই হোক, গবেষণায় জানা গেছে কিশমিশ রক্তচাপ বাড়াতে উপযোগী। নিম্ন রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কিশমিশ অনেকদিন থেকেই ব্যবহার হয়ে আসছে। এক কাপ জলে সারা রাত বেশ কয়েকটি কিশমিশ ভিজিয়ে রাখুন। পরের দিন সকালে খালি পেটে সেটি খান। কিশমিশের সাথে কিশমিশ ভেজানো জলটাও কিন্তু খাবেন ।
কখন ডাক্তার দেখাতে হবে ?
উপরে উল্লেখিত উপসর্গ গুলি দেখা দিলেই শীঘ্রই ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করুন। কারণ শুধু লো ব্লাড প্রেসারের নয়, অন্য কোনো রোগের সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
লো ব্লাড প্রেসারের চিকিৎসা
প্রেসারে বাড়ানোর নানা রকম ওষুধ পাওয়া যায়, সেগুলিই ডাক্তার খেতে বলবেন। তার সাথে সাথে সঠিক ডায়েট ও লাইফস্টাইলের প্রয়োজন লো ব্লাড প্রেসারের সমস্যা কমাতে গেলে। উপরে উল্লেখিত ঘরোয়া উপায়গুলি কিন্তু ব্যবহার করতে ভুলবেন না।
লো ব্লাড প্রেসারের সমস্যা থাকলে কি ডায়েট হওয়া উচিত ?
কি কি খাবেন ?
- ভিটামিন বি ১২ যুক্ত খাবার
- ফোলেটে পরিপূর্ণ খাবার
- নুন জাতীয় খাবার যেমন কটেজ চিজ, অলিভ ইত্যাদি
- ক্যাফিন জাতীয় খাবার।
কি কি খাবেন না ?
- আলু
- পাস্তা
- সাদা ভাত
- ময়দার পাউরুটি
- অ্যালকোহোল
- চিনি
- কেক
লো ব্লাড প্রেসার প্রতিরোধ করার টিপস
- খালি পেটে থাকবেন না
- খাবারে যেন সঠিক পরিমানে ভিটামিন থাকে
- নিয়মিত যোগব্যায়াম করুন
- উপরে উল্লেখিত উপসর্গ গুলির মধ্যে কোনো উপসর্গ সামান্য দেখা দিলেই ডাক্তারের সঙ্গে শীঘ্রই যোগাযোগ করুন।
আশা করি, উপরের ঘরোয়া উপায়গুলি আপনাদের লো ব্লাড প্রেসারের সমস্যা দূর করার সাহায্য করবে। নিজের যত্ন করুন ও সুস্থ থাকুন।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী :
যদি হঠাৎ করে ব্লাড প্রেসার কমে যায় তাহলে কি করবেন ?
যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাকে নুন জল খাওয়ান।
নিম্ন রক্তচাপের জন্য শরীর কেন ক্লান্ত হয়ে পড়ে ?
সাধারণত নিম্ন রক্তচাপের জন্য শরীর কেন ক্লান্ত হয়ে পড়ে না। তবে শরীরে অন্য কোনো সমস্যা থাকলে এটি হতে পারে।
নিম্ন রক্তচাপের জন্য কি হার্ট অ্যাটাক হতে পারে ?
সাধরণত নিম্ন রক্তচাপের জন্য কি হার্ট অ্যাটাক হয় না।
ব্লাড প্রেসার কমে গেলে কি ঘাম হতে পারে ?
সাধারণত ব্লাড প্রেসার কমে গেলে ঘাম হয় না , তার পরিবর্তে হাত পা ঠান্ডা হয়ে পারে।
Sources
- The effect of caffeine on postprandial hypotension in the elderly
https://pubmed.ncbi.nlm.nih.gov/1898434/ - A comprehensive review of the salt and blood pressure relationship
https://pubmed.ncbi.nlm.nih.gov/1599633/ - To Study the Effect of Holy Basil Leaves on Low Blood Pressure (Hypotension) Women Aged 18-30 years
http://www.ipcbee.com/vol55/016-ICFAS2013-G2028.pdf - Effect of coffee and tea drinking on postprandial hypotension in older men and women
https://pubmed.ncbi.nlm.nih.gov/8800584/ - The Potential Benefit of Complementary/Alternative Medicine in Cardiovascular Diseases
https://www.hindawi.com/journals/ecam/2012/595271/ - Impact of Vitamin E Supplementation on Blood Pressure and Hs-CRP in Type 2 Diabetic Patients | doi: 10.5681/hpp.2012.009
https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC3963652/ - Vitamin B12 deficiency
https://pubmed.ncbi.nlm.nih.gov/12643357/