মাশরুম বা ছত্রাকের উপকারীতা, ব্যবহার এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া | Mushroom Benefits, Uses and Side Effects

বিভিন্ন রকম উদ্ভিদের আকারে প্রকৃতি আমাদের নানান খাদ্য সামগ্রীর জোগান দেয়। এইরকমই একটি উপাদান হলো মাশরুম। সারা বিশ্বে একাধিক রকমের মাশরুম বিদ্যমান। আপনি হয়ত জানেনই না যে আকারে ছোটো এই উদ্ভিদ নানাবিধ পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ। শুধু তাই নয় এই পুষ্টিগুণ আমাদের সুস্বাস্থ্য গঠনের জন্য অনেকাংশেই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এই প্রবন্ধে আমরা মাশরুমের গুণাবলী এবং একাধিক স্বাস্থ্যোপযোগীতা সম্পর্কে আলোচনা করবো। জানা যাবে মাশরুম আমাদের শরীর সুস্থ্য রাখতেই শুধু সাহায্য করেনা পাশাপাশি অনেক জটিল অসুখের আরোগ্য লাভের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে এতো কিছুর পরেও আমাদের একথা মাথায় রাখতে হবে যে গুরুতর অসুখের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত মাশরুম গ্রহণ করা উচিৎ নয়।
এবার মাশরুমের প্রকারভেদ গুলি সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
In This Article
মাশরুমের প্রকারভেদ
সারা বিশ্বে একাধিক রকমের মাশরুমের প্রজাতি রয়েছে। তবে আমরা এখানে মাত্র কয়েক প্রকার মাশরুমের কথা উল্লেখ করবো। সেগুলি হলো যথাক্রমে – (1)
- বাটন মাশরুম বা বোতাম মাশরুম
- শিটেক মাশরুম
- অয়েস্টার মাশরুম
- প্লুরেটাস ওস্ট্রিটাস
- অ্যাগরিকাস বিসপোরাস
মাশরুমের উপযোগীতা
প্রতিদিনের জীবনের খাদ্য হিসেবে মাশরুমের গুরুত্ব অপরিসীম। অনেক প্রকার মাশরুম খাদ্য এবং ওষুধ হিসেবে দীর্ঘ সময় যাবত ব্যবহার করা হয়। এনসিবিআই (ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশন) প্রকাশিত গবেষণায় দেখা গেছে যে মাশরুমে পলিফেনল, পলিস্যাকারাইড, ভিটামিন এবং অনেক খনিজ পদার্থ থাকে। এছাড়াও আছে বিভিন্ন জৈব সক্রিয় যৌগ। মাশরুম অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি, অ্যান্টি-ক্যান্সার, ইমিউনোমডুলেটরি, এন্টিমাইক্রোবিয়াল, হেপাটোপ্রোটেকটিভ এবং এন্টিডায়াবেটিক ইত্যাদি বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন হওয়ার কারণে এটি ক্যান্সার, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস এবং নিউরোডিজেনারেটিভ (2) মত রোগ প্রতিরোধ করতে সহায়তা করতে পারে।
মাশরুমের স্বাস্থ্যোপযোগীতা
ইতিমধ্যে মাশরুমের উপযোগীতা সম্পর্কে অল্প বিস্তর ধারণা পাওয়া গেছে। এবার এই বিষয়ে বিশদে আলোচনা করা হবে –
১. কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাসক
এনসিবিআই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি পরীক্ষা থেকে জানা যায় যে, ৪৬ বছর বয়সী কিছু মানুষের খাদ্য তালিকায় অয়েস্টার মাশরুম অন্তর্ভূক্ত করে ২৪ দিন ব্যাপী একটি গবেষণা করা হয়। এবং গবেষণা শেষে দেখতে পাওয়া যায়, খাদ্য হিসেবে মাশরুম গ্রহণের ফলে কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত হয়েছে। তাই কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রনের ক্ষেত্রে নিঃসঙ্কোচেই মাশরুম গ্রহণ করা যেতে পারে (3)। তবে মাশরুম কোন বৈশিষ্ট্যের কারণে কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস পায় তা এখনও গবেষণাধীন বিষয়।
২. স্তন এবং প্রোস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধক
বৈজ্ঞানিকরা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে একাধিক গবেষণা করেছেন। পরবর্তীকালে সেই গবেষণাটি, গবেষণাপত্র হিসেবে এনসিবিআই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়। এই গবেষণা থেকে জানা যায় যে স্তন এবং প্রস্টেট ক্যান্সারের প্রতিবন্ধক হিসেবে মাশরুম অনবদ্য। মাশরুম অ্যান্টি-টিউমার, ইমিউনোমড্যুলেশন এবং ক্যান্সার প্রতিরোধক বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন। মাশরুমের এইসব বৈশিষ্ট্য ছাড়াও এতে রয়েছে ফেনোলিক যৌগ যা স্তন বা ব্রেস্ট ক্যান্সার এবং প্রস্টেট ক্যান্সারের সকল সম্ভবনা প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে। উপরন্তু মাশরুম ক্যান্সার বৃদ্ধিকারী কোষের বিকাশে বাধা প্রদান করে (4)। তবে একথা স্পষ্টভাবে পাঠককে জানানো হচ্ছে যে, ক্যান্সার একটি মারাত্মক অসুখ। যদি কেউ ইতিমধ্যে এই অসুখে আক্রান্ত হন তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত মাশরুম গ্রহণ করা উচিৎ নয়। এবং একজন ক্যান্সার আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে যথাযথ চিকিৎসার প্রয়োজন।
৩. মধুমেহ অসুখের জন্য সুষম আহার
মধুমেহ রোগের জন্য মাশরুম কে একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য হিসেবে মনে করা হয়। এনসিবিআই প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্র থেকে এই তথ্যের প্রমাণ পাওয়া যায়। ঐ গবেষণাপত্র থেকে আরোও জানা যায় যে বেশ কিছু প্রকারের মাশরুম রয়েছে যেগুলি মধুমেহ প্রতিরোধক গুণ সম্পন্ন হয়। এই ধরণের মাশরুম রক্তে শর্করার মাত্রা হ্রাস করে মধুমেহ নিয়ন্ত্রন করে। একইসাথে মধুমেহ অসুখের নিয়ন্ত্রক ওষুধের সাথে যদি আক্রান্ত ব্যক্তিকে খাদ্য হিসেবে মাশরুম দেওয়া হয় তাহলে তা শরীরে ইনসুলিনের স্তর সুরক্ষিত রাখতে পারে (5)। তবে একথাও মাথায় রাখতে হবে যে যদি কেউ ইতিমধ্যে মধুমেহ আক্রান্ত হন তাহলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে তার নির্দিষ্ট ওষুধ সেবন করা দরকার।
৪. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
যদি কেউ সব সময় দুর্বল এবং অসুস্থ্য বোধ করেন তাহলে তার কারণ হিসেবে অনাক্রমতা বা দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকেই দায়ী করা হয়। এনসিবিআই প্রকাশিত গবেষণা থেকে জানা যায় যে খাদ্য হিসেবে মাশরুম গ্রহণ করলে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। মাশরুম স্থিত পলিস্যাকারাইড মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে তোলে এবং শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টি জোগায় (6)। এছাড়াও মাশরুমে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ডি এর উপস্থিতি হাড়ের সুস্বাস্থ্য গঠনের জন্য উপযোগী বলে মনে করা হয়।
৫. ওজন হ্রাসে সহায়ক
হঠাৎ করে ওজন বৃদ্ধি স্বাভাবিকভাবেই সকলের চিন্তার কারণ হয়ে ওঠে। ওজন নিয়ন্ত্রক হিসেবে এবং মেদ হ্রাসক হিসেবে মাশরুম একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক বিকল্প হিসেবে পরিচিত। একটি চীনা গবেষণা প্রতিষ্ঠান অনুসারে, মাশরুমে বেশ কিছু জৈব সক্রিয় যৌগ আছে যেমন পলিস্যাকারাইড, টারপেন, পলিফেনল, ফ্ল্যাভোনয়েড, ফাইবার সহ, যা স্থূলতা দ্বারা সৃষ্ট কার্ডিওভাসকুলার সমস্যা কমাতে সাহায্য করতে পারে। এছাড়াও মাশরুমের ওবেসিটি নাশক বৈশিষ্ট্য ওজন হ্রাসের ক্ষেত্রে সাহায্য করে (7)। কম ফ্যাট, উচ্চ ফাইবার, এবং উচ্চ মানের প্রোটিন সমৃদ্ধ মাশরুম একটি সুষম আহার হিসেবে গণ্য হয়। তবে মেদ হ্রাসের জন্য শুধু মাশরুম গ্রহণই একমাত্র উপায় তা নয়। পরিমিত আহার গ্রহণ, নিয়মিত স্বাস্থ্য চর্চা এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তনও জরুরী।
৬. হার্টের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখে
খাদ্য তালিকায় মাশরুমের উপস্থিতি হার্টের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখে। এনসিবিআই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি গবেষণা থেকে জানা যায় যে মাশরুমে রয়েছে হাই ফাইবার, অ্যানস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড, সোডিয়াম এবং ইরিটেডেনিন, ফেনলিক যৌগ এবং স্টেরল ইত্যাদি। মাশরুমস্থিত এইসব উপাদান গুলি কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রন করে এবং ক্ষতিকর কোলেস্টেরল হ্রাস করে। এছাড়াও এইসব উপাদান গুলি রক্তচাপ, অক্সিডেটিভ স্ট্রেস এবং প্রদাহ নিয়ন্ত্রন ইত্যাদি সম্ভবনার প্রতি ইতিবাচক প্রভাব দেখায়। মাশরুমের এইসব গুণাবলী হার্টের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখে এবং নানাবিধ অসুখের সম্ভবনা থেকে শরীরকে রক্ষা করে। (8)
৭. বিপাকীয় হার বৃদ্ধি করে
দুর্বল বিপাকীয় হার বা দুর্বল মেটাবলিজমের জন্য অনেকরকম শারীরিক সমস্যা দেখতে পাওয়া যায়, যেমন হৃদরোগ, মেদ বৃদ্ধি, ক্যান্সার এবং ডায়বিটিস বা মধুমেহ ইত্যাদি। খাদ্য হিসেবে মাশরুম এইসব শারীরিক সমস্যা থেকে অনায়াসে মুক্তি দিতে পারে। এছাড়াও মাশরুমে রয়েছে এমন কতকগুলি পৌষ্টিক উপাদান যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি ইনফ্লেমেটারি বা প্রদাহনাশক হিসেবে কাজ করে।
৮. পেটের সমস্যা নাশক
বিশ্বাস করতে মুশকিল হলেও একথা ঠিক যে খাদ্য হিসেবে মাশরুমের গ্রহণ করলে আলসার নিরাময় করা সহজ হয়। মাশরুমের নির্যাস আলসার নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এনসিবিআই এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে এই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। ইঁদুরের ওপর একটি গবেষণা করে মাশরুমের আলসার প্রতিরোধক বৈশিষ্ট্যের সম্পর্কে ধারণা পাওয়া গেছে। এছাড়াও অন্য একটি গবেষণা থেকে জানা যায় মাশরুমে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমানে ফাইবার যা কোষ্ঠ্যকাঠিণ্যের সমস্যার অনায়াস সমাধান করতে পারে। একইসাথে বৈজ্ঞানিক গবেষণা থেকে আরোও জানা গেছে যে কোষ্ঠ্যকাঠিণ্যের সমস্যায় খাদ্য হিসেবে মাশরুমের ব্যবহার উপকার ছাড়া অপকার করেনা। (9) (10)
৯. ভিটামিন সমৃদ্ধ
শুনলে হয়ত অবাক লাগবে কিন্তু একথা সত্যি যে মাশরুম পর্যাপ্ত পরিমান ভিটামিন সমৃদ্ধ হয়। এনসিবিআই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি গবেষণা অনুসারে জানা যায় যে এতে রয়েছে ভিটামিন বি ১, বি ২, বি ৯, বি ১২, ভিটামিন সি এবং ভিটামিন ডি ২। এই সব ভিটামিন গুলি নানাভাবেই আমাদের সুস্বাস্থ্য গঠনের ক্ষেত্রে উপযোগী ভূমিকা পালন করে। যেমন রক্তাল্পতা দূর করে, গর্ভবতী মহিলা এবং গর্ভস্থ শিশু সুজনের জন্যই উপকারী হিসেবে মনে করা হয়, কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রন করে, ত্বকের পরিচর্যা করে ইত্যাদি। (11)
১০. ত্বকের পরিচর্যায়ক
ত্বকের পরিচর্যার ক্ষেত্রে মাশরুমের গুরুত্ব অপরিসীম। ত্বকের স্বাস্থ্যোন্নতির ক্ষেত্রে মাশরুম এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। খাদ্য হিসেবে মাশরুম গ্রহণ করলে ত্বকের আর্দ্রতা বজায় থাকে, নানা রকম ভাইরাসঘটিত সংক্রমন থেকে ত্বক সুরক্ষিত রাখে। মাশরুম অ্যান্টিএজিং বৈশিষ্ট্যযুক্ত হওয়ার জন্য ত্বকের বলিরেখা দূর করে। প্রাকৃতিক উপায়ে ত্বক উজ্জ্বল করে রাখে। জীবানু ঘটিত বিভিন্ন সংক্রমন থেকে ত্বক নিরাপদে থাকে।
১১. চুলের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখে
অন্যান্য শারীরিক উপযোগীতার পাশাপাশি মাশরুম সেবন চুলের সুস্বাস্থ্য বজ্য রাখার ক্ষেত্রে সহায়তা করে। খাদ্য হিসেবে মাশরুম গ্রহণ করলে চুল পড়া কমে যায়, চুলের স্বাভাবিক দৈর্ঘ্য দ্রুত বৃদ্ধি করে। শুধু তাই নয় মাশরুমে উপস্থিত সেলেনিয়াম চুল পড়া হ্রাস করে চুলের ঘনত্ব বৃদ্ধি করে। (12)
মাশরুমের পুষ্টি গুণ
মাশরুমের পুষ্টি গুণগুলি হলো নিম্নরূপ –
পৌষ্টিক উপাদান | পুষ্টি গুণ |
জল | ৮৯.৬১ গ্রাম |
শক্তি | ৩১ কিক্যালোরি |
কার্বোহাইড্রেট | ৫.১০গ্রাম |
ফ্যাট | ০.৫৭ গ্রাম |
প্রোটিন | ৩.১২গ্রাম |
শর্করা | ০.৬০গ্রাম |
ফাইবার | ২.৮গ্রাম |
ভিটামিন | |
নিয়াসিন | ২.২৫২মিলিগ্রাম |
রাইবোফ্লাবিন | ০.২০৫মিলিগ্রাম |
থিয়ামিন | ০.০৬৯মিলিগ্রাম |
ফলেট | ৯ মাইক্রোগ্রাম |
ভিটামিন বি৬ | ০.১৩৬মিলিগ্রাম |
ভিটামিন ডি (ডি২+ডি৩ ) | ৫.১মাইক্রোগ্রাম |
ভিটামিন ডি | ২০৬ আই.ইউ |
ইলেক্ট্রোলাইট | |
সোডিয়াম | ২১ মিলিগ্রাম |
পটাশিয়াম | ৪১১মিলিগ্রাম |
মিনারেলস | |
ক্যালসিয়াম | ৪৩মিলিগ্রাম |
আয়রন | ১২.১৮মিলিগ্রাম |
ম্যাগনেশিয়াম | ১৯ মিলিগ্রাম |
ফসফরাস | ১৯৪ মিলিগ্রাম |
জিঙ্ক | ২.০৩ মিলিগ্রাম |
লিপিড | |
মোট স্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড | ০.০৬৫গ্রাম |
মোট মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড | ০.০৫২গ্রাম |
মোট পলি অ্যানস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড | ০.৪৩৩ গ্রাম |
সূত্র – USDA
মাশরুম ব্যবহারের পদ্ধতি
মাশরুম নানারকম ভাবেই ব্যবহার করা যেতে পারে। এখানে কতগুলি সহজ উপায় সম্পর্কে আলোচনা করা হবে।
- বিভিন্ন ধরণের মাশরুম, খাবারের বিভিন্ন পদে ব্যবহার করা যেতে পারে।
- মাশরুম মাখন সহযোগে গ্রিল করে খাওয়া যেতে পারে।
- মাশরুমের ব্রথ, স্যুপে ব্যবহার করা যেতে পারে।
- মাশরুম পাওডার বিভিন্ন প্রকার স্যুপ তৈরীর ক্ষেত্রে বা সস তৈরীর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যায়।
- মাশরুম স্যাণ্ডুইচ তৈরীর সময় পাঁউরুটির স্বাদ বৃদ্ধি করে সুস্বাদু করে তোলে।
- মাশরুম পিৎজা তৈরীর সময় টপিংস হিসেবে ব্যবহৃত হয়। পিৎজা তৈরীর সময় মাশরুম, পণির এবং অন্যান্য সব্জির সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
পরিমান – প্রতিদিন ১০০ -১৫০ গ্রাম মাশরুম খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করা যেতে পারে। তবে আপনার স্বাস্থ্য অনুপাতে সঠিক পরিমাণ মাশরুম গ্রহণের ধারণা পেতে হলে একজন পুষ্টিবিদের পরামর্শ গ্রহণ করা দরকার। একমাত্র তিনিই এই বিষয়ে সঠিক তথ্য পরিবেশন করতে পারবেন। (13)
মাশরুমের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া –
যতক্ষণ অবধি মাশরুম পরিমিত পরিমাণে গ্রহণ করা যায়, এর উপযোগীতা পাওয়া যায়। তবে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পরিমান মাশরুম গ্রহণের ফলে বেশকিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হয়। মাশরুমের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া গুলি হলো নিম্নরূপ –
- বেশ কিছু প্রকার মাশরুমে কিছু বিষাক্ত উপাদান রয়েছে, যা অনেক সময়ই প্রাণঘাতী হতে পারে।
- ফাংগাস ধরে যাওয়া মাশরুম খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করা কখনই উচিৎ নয়। তা স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর প্রমাণিত হয়।
- বেশ কিছুদিনের পুরোনো মাশরুম খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করা উচিৎ নয়। কারণ একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর মাশরুমে পোকা এবং ফাংগাসের বাসস্থান হয়ে ওঠে।
উপরিক্ত প্রবন্ধ থেকে মাশরুমের ব্যবহার, স্বাস্থ্যোপযোগীতা, পুষ্টিগুণ এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে সম্যক ধারণা পাওয়া গেলো। এটি শরীরের জন্য উপযোগী হলেও বেশ কিছু সময় মাশরুমের সুফলের পাশাপাশি কুফলের পরিচয়ও পাওয়া যায়।তাই, আপনি যদি আপনার খাদ্যতালিকায় মাশরুম অন্তর্ভুক্ত করার কথা চিন্তা করেন, তাহলে এই বিষয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা জরুরী। মাশরুমের ব্যাপারে আপনার বন্ধু এবং পরিচিত মহলে সচেতনতা তৈরী করতে চাইলে সংশ্লিষ্ট প্রবন্ধটির সম্পর্কে জানান।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী –
আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য মাশরুম ভালো না খারাপ?
পরিমিত পরিমাণে গ্রহণ করলে মাশরুম আমাদের স্বাস্থ্যে জন্য উপকারী হিসেবে কাজ করে, অন্যথায় পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।
মাশরুম কী এক ধরণের সবজি?
নাহ মাশরুম কোনো আনাজ বা সবজি নয়। এটা এক ধরণের ছত্রাক।
মাশরুম বিষাক্ত কিনা, সেটা জানার উপায় কী?
সাদা রঙের ফুলকোর মতন দেখতে মাশরুম গুলি বেশিরভাগ সময়ই বিষাক্ত বলে মনে করা হয়। এছাড়াও সাদা রঙের কান্ড বিশিষ্ট ও লাল রঙের টুপির মতন দেখতে মাশরুম গুলিকে বিষাক্ত হিসেবেই সনাক্ত করা হয়।
ওজন হ্রাসের ক্ষেত্রে মাশরুম কী কার্যকরী হয়?
হ্যাঁ ওজন হ্রাসের ক্ষেত্রে মাশরুম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে খাদ্য হিসেবে মাশরুম গ্রহণই ওজন কমানোর ক্ষেত্রে একমাত্র উপায় নয়। পরিমিত পরিমিত খাদ্য গ্রহন, নিয়মিত শরীরচর্চা, এবং নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনকেও ওজন কমানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়।
খাদ্য হিসেবে অতিরিক্ত পরিমান মাশরুম গ্রহণ কী ক্ষতিকারক?
একটা নির্দিষ্ট পরিমানের অতিরিক্ত মাশরুম খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করলে তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে বলে মনে করা হয়।
Sources
- A Review of Mushrooms as a Potential Source of Dietary Vitamin D –
https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC6213178/ - Bioactivities and Health Benefits of Mushrooms Mainly from China –
https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC6274515/ - Oyster mushroom reduced blood glucose and cholesterol in diabetic subjects –
https://pubmed.ncbi.nlm.nih.gov/17344789/ - Recent developments in mushrooms as anti-cancer therapeutics: a review –
https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC3339609/ - Effect of medicinal mushrooms on blood cells under conditions of diabetes mellitus –
https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC5437617/ - A Critical Review on Health Promoting Benefits of Edible Mushrooms through Gut Microbiota –
https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC5618583/ - Anti-Obesity Effects of Medicinal and Edible Mushrooms –
https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC6278646/ - Edible mushrooms: role in the prevention of cardiovascular diseases –
https://pubmed.ncbi.nlm.nih.gov/20550954/ - Gastroprotective Effects of Lion’s Mane Mushroom Hericium erinaceus (Bull.:Fr.) Pers. (Aphyllophoromycetideae) Extract against Ethanol-Induced Ulcer in Rats –
https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC3835629/ - [Effect of ear mushroom (Auricularia) on functional constipation] –
https://pubmed.ncbi.nlm.nih.gov/15266131/ - Influence of the Culture Substrate on the Agaricus blazei Murrill Mushrooms Vitamins Content –
https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC6783847/ - Nutrition of women with hair loss problem during the period of menopause –
https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC4828511/ - Immune Benefits of Mushroom consumption –
https://clinicaltrials.gov/ct2/show/NCT01398176