নিম তেলের উপকারিতা, ব্যবহার এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া | Neem Oil Benefits, Uses and Side Effects in Bengali

নিম হল ঔষধি গাছগুলির মধ্যে একটি অন্যতম প্রধান গাছ, যার সমস্ত অংশই ঔষধি গুণে সমৃদ্ধ। ফল থেকে শুরু করে বীজ, পাতা থেকে বাকল এবং শিকড় থেকে ফুল – নিমের সব অংশই প্রাচীন কাল থেকে স্বাস্থ্যের জন্য আয়ুর্বেদিক ওষুধে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। যখন মুড়ি-মুড়কির মতো ওষুধ খাওয়ার এত চল ছিল না বা বলা ভালো অ্যালোপ্যাথি, হোমিওপ্যাথি ওষুধের এত রমরমা হয়নি, তখন আয়ুর্বেদিক ওষুধ হিসেবে নিমের নিয়মিত ও পরিমিত ব্যবহারই ছিল বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যার অতুলনীয় প্রতিকার। বর্তমানে আমরা বিভিন্ন ধরনের ওষুধ, কসমেটিক বা প্রসাধনী সামগ্রী হাতের কাছে পাই ঠিকই, তবুও নতুন যুগের পণ্য ও ওষুধের উদ্ভাবনে এবং চিকিৎসা ও সুস্থতার ক্ষেত্রে নিমের স্থান এখনও অনেক ওপরে।
স্টাইলক্রেজের এই নিবন্ধে আজকে আমরা নিম তেলের বহুমুখী ব্যবহার এবং উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করব। পাশাপাশি জানতে পারবেন, শরীরের কোন কোন সমস্যার জন্য আপনি নিম তেল ব্যবহার করতে পারেন।
ভূমিকা
তার আগে জেনে নিন, নিম তেল সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য যেমন – নিম তেল আসলে কী, কীভাবে বানানো হয়, কীভাবে ভালো নিম তেল নির্বাচন এবং সংরক্ষণ করবেন এবং সর্বোপরি বাজারজাত নিম তেল কেনার আগে কোন কোন বিষয়ে নজর রাখবেন। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।
In This Article
নিম তেল কী?
নিম তেল হল চিরসবুজ নিম গাছের ফল থেকে প্রাপ্ত এক ধরণের উদ্ভিজ্জ তেল। এর বিজ্ঞানসম্মত নাম আজাদিরছতা ইন্ডিকা (Azadirachta Indica)। নিম গাছ মূলত ভারতীয় উপমহাদেশেই পাওয়া যায়। এই নিম তেলের দুই প্রধান উপাদান হল আজাদিরচটিন (Azadirachtin) এবং ট্রাইটারপেনয়েড (Triterpenoid)। এদের অ্যান্টিসেপটিক, অ্যান্টিফাঙ্গাল, অ্যান্টিপাইরেটিক এবং অ্যান্টিহিস্টামাইন বৈশিষ্ট্য বহু রোগের বিরুদ্ধে মানুষকে লড়াই করতে সাহায্য করে। এই দুই ফাইটোকেমিক্যালস- এর জন্যই নিমের স্বাদ এত তেতো হয়। নিমের যে বহুমুখী ঔষধি গুণাগুণ, সেক্ষেত্রেও এই দুটি ফাইটোকেমিক্যালই প্রধান অবদানকারী। যদিও খাঁটি নিম তেলে ক্যাম্পেস্টেরল, বিটা-সিটোস্টেরল এবং স্টিগমাস্টেরলের মতোো স্টেরল উপাদান ও প্রচুর পরিমাণে ফ্যাটি অ্যাসিড এবং অ্যালকালয়েড থাকে, যা বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে এবং দৈহিক সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। (১)
নিম তেলের গুণ অতুলনীয়। বলা হয়ে থাকে নিমতেল, নিমের বাকল ও পাতার নির্যাসের ব্যবহারে ক্যান্সার, টিউমার, স্কিন ক্যান্সারের মতো গুরুতর রোগও ভালো হয়ে যায়। রোগ নিরাময়, রূপচর্চার পাশাপাশি নিম তেলকে প্রাকৃতিক কীটনাশক হিসাবে ব্যবহার করার চলও রয়েছে। নিম তেলের উপাদানগুলির মিশ্রণ গাছ ও পশুপাখির বিভিন্ন রোগও নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল করে এবং কীটপতঙ্গদের নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ করে। তেলটি কেবল মানুষই নয়, সবরকমের স্তন্যপায়ী প্রানী, গাছপালা, পাখি এবং মৌমাছির জন্যও একেবারেই নিরাপদ এবং উপকারী। নিম তেল প্রকৃতির ক্ষেত্রে খুব একটা ক্ষতিকারক নয়, তবে নিম তেলে উপস্থিত আজাদিরচটিন (Azadirachtin) নামক উপাদানটি জলজ প্রাণীদের ক্ষেত্রে কখনও কখনও বিষাক্ত হতে পারে। (২)
নিম তেল কীভাবে বানানো হয়?
প্রসাধনী সামগ্রী নির্মাণে ও রূপচর্চায়, জীবাণুনাশক হিসেবে, প্রাকৃতিক কীটনাশক হিসেবে, যক্ষ্মা ও ডায়বেটিক রোগের ওষুধ নির্মাণে নিম তেলের ব্যবহার অনস্বীকার্য। সাধারণত নিম ফলের বীজ থেকেই নিম তেল তৈরী করা হয়। যদিও নিম পাতা নারকেল তেলে ফুটিয়ে আমরা মাথায় লাগাই। এতে দ্রুত মাথা ধরা ও খুসকি কিংবা চুল পড়ার হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায়। তবে বাজারে যে নিম এক্সট্রাক্ট ওয়েল বা নিম তেল পাওয়া যায়, সেই তেল নিম বীজের নির্যাস বের করেই বানানো হয়।
যান্ত্রিক চাপ প্রয়োগ পদ্ধতি (mechanical pressing method), জটিল তরল নিষ্কাশন পদ্ধতি (fluid extraction method), দ্রাবক নিষ্কাশন পদ্ধতি (solvent extraction method) – এর মতো বিভিন্ন পদ্ধতি প্রয়োগে বীজ থেকে নির্যাস বার করে নিম তেল বানানো হয়। (৩) তাই তেলের রঙও হয় বিভিন্ন ধরনের। যেমন – স্টার্ক লাল, সবুজ-বাদামী, হলুদ-বাদামি, সোনালি-হলুদ এবং গাঢ় বাদামী। নিম তেলের প্রক্রিয়াজাতকরণ পদ্ধতির উপর নির্ভর করে তেলের রঙ, গুণাগুণ এবং দাম কেমন হবে। যান্ত্রিক চাপ প্রয়োগ পদ্ধতিতে বানানো নিম তেলই বহুল ব্যবহৃত, কারণ এর দামও হয় কম। তবে, তরল নিষ্কাশন পদ্ধতিতে বানানো নিম তেলের দাম সামান্য কিছু বেশী হলেও এর বিশুদ্ধতা এবং গুণাগুণ বেশী। প্রসাধনী সামগ্রী নির্মাণে দ্রাবক নিষ্কাশন পদ্ধতিতে বানানো তেল ব্যবহৃত হয়। তাই, নিম তেলের গুণমান নিশ্চিত করতে অবশ্যই কেনার সময় এর প্রক্রিয়াজাতকরণ পদ্ধতি কী তা দেখে কিনবেন।
কীভাবে নিম তেল নির্বাচন করবেন এবং সংরক্ষণ করবেন?
নিম তেল কোনও অন্ধকার এবং শীতল জায়গায় বা ফ্রিজে সংরক্ষণ করতে হবে। তেলটির উৎপাদন তারিখের পর দুই বছরের মধ্যে ব্যবহার করা ভালো নচেৎ এর গুণমান নষ্ট হয়ে যেতে পারে। নিম তেল নির্বাচন করার সময়, আপনি প্যাকেজিংয়ের তারিখটি দেখে তা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে নিন। যান্ত্রিক চাপ প্রয়োগ পদ্ধতিতে বানানো জৈব নিম তেল বেছে নিন, বেশী উপকার পাবেন। আপনার নিম তেলের বোতলটি সংরক্ষণ করার আগে যথাযথভাবে লেবেল করতে ভুলবেন না। নিম তেল কম তাপমাত্রায় কনডেন্স বা জমে যেতে পারে, তেলের পাত্রটি গরম জলে রেখে তাকে তরল আকারে ফিরিয়ে আনতে পারেন সহজেই। তবে জল খুব গরম করবেন না। খুব বেশী তাপ হলে তা নিম তেলের সর্বাধিক মূল্যবান উপাদান আজাদিরচটিনকে ধ্বংস করে দেবে এবং নিম তেলের কার্যকারীতা অনেকাংশে কমে যেতে পারে।
নিম তেল কেনার সময় কী কী মনে রাখবেন?
বাজারজাত নিম তেল কেনার সময় নিশ্চিত হয়ে নিন যে আপনি লেবেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়েছেন, বিশেষত উপাদানগুলির তালিকা এবং প্যাকেজিংয়ের তারিখ।
নিম তেল কেনার সময় অবশ্যই খেয়াল করবেন বোতলের প্যাকেজিং ভালোভাবে সম্পন্ন হয়েছে কি না। বোতলের শিল খোলা থাকলে বা লেবেল ট্রেডমার্ক বা না থাকলে বা অপ্রাসঙ্গিক কিছু দেখলে অবশ্যই সেটি কিনবেন না। কারণ, এখন বাজারে নকল দ্রব্যের আধিক্য বেড়ে গেছে।
বাজারে বিভিন্ন রঙের, বিভিন্ন দামের এবং বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাত পদ্ধতিতে বানানো নিম তেল কিনতে পাওয়া যায়। আপনি যে তেলটি কিনছেন তা হলুদ, মেঘলা এবং রসুন এবং সালফারের মতো তীব্র গন্ধযুক্ত হওয়া উচিত। অবশ্যই ১০০ শতাংশ জৈব নিম তেল বেছে নিন। এটি নিশ্চিত করে যে তেলটি দ্রাবক বা পেট্রোকেমিক্যালগুলির সাথে দূষিত নয় যা প্রায়শই পরিশোধন প্রক্রিয়াতে ব্যবহৃত হয়।
নিম তেলের স্প্রেগুলিতে পরিশোধিত নিম তেলের নিষ্কাশন থাকে। খাঁটি নিম তেলের তুলনায় এগুলির গন্ধ সূক্ষ্ম হয়।
নিম তেলের উপকারিতা
বহু বছর ধরে নিম আয়ুর্বেদিক ওষুধ হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। অনেক রোগের চিকিত্সার জন্য নিম গাছের পাতা, বাকল, ডাল, ফলের বীজ ও অন্যান্য অংশ ব্যবহার করা হয়। নিমের মধ্যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতোা বাড়ানোয়, বিভিন্ন রোগের ওষুধ প্রস্তুতিতে নিম তেল ব্যবহার করা হয়। এর জীবাণু ধ্বংসকারী গুণের জন্য শরীরে জ্বলাপোড়া, এলার্জি, একজিমা, স্ক্যাবিস, খুসকিসহ বিভিন্ন জটিল চর্মরোগ নির্মূলে, ব্রণ, ফুসকুড়ি বা ফোঁড়া ছাড়াও ত্বকের অনেক সমস্যার চিকিৎসায় নিম তেলের ভূমিকা অনস্বীকার্য। নিমের মধ্যে থাকা ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ভিটামিন ত্বকে বার্ধক্যের প্রভাব হ্রাস করে মুখ ও সমগ্র ত্বককে সতেজ রাখে। নিম তেলে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য ত্বকের দাগ দূর করে, ত্বককে উজ্জ্বল ও দাগহীন করে তোলে।
নিম তেলের স্বাস্থ্যগুণ
নিম তেলের অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন উপকারিতা রয়েছে। নিম তেল দিয়ে বানানো ওষুধ খেলে যেরকম বিভিন্ন রোগ সারে, তেমনি নিম তেলের সরাসরি ব্যবহারে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান হয়। যেমন –
১. স্ট্রোইনটেস্টাইনাল রোগ নিরাময়ে সাহায্য করেঃ
কোষ্ঠকাঠিন্য, হজমের সমস্যা, অম্বল, পেট জ্বালা বা পেট ফাঁপার মতো যাবতীয় গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যার সমাধানে নিম তেল ব্যবহার করা হয়। কারণ, এই সমস্যাগুলি মূলত পেট এবং অন্ত্রের pH স্তরের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার কারণে ঘটে। নিমের নির্যাস পরিপাক তন্ত্রের অভ্যন্তরে pH স্তরের ভারসাম্য বজায় রাখতে, বা তা পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করে। নিমের গুণাগুণ হজম শক্তি বৃদ্ধি করে এমনকী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতোা বাড়াতেও সহায়তা করতে পারে। তাই, গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্র্যাক্টে জ্বালা, গ্যাস্ট্রিক আলসার, অ্যাসিডিটি এবং অন্ত্রের রোগের ক্ষেত্রে যেসব ওষুধ খাওয়া হয় তার বেশীরভাগেই নিম তেলের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যার কারণে হওয়া যাবতীয় প্রদাহ বা যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতেও নিম তেল ব্যবহার করা হয়।
২. দাঁতের সমস্যার অত্যন্ত কার্যকরী প্রতিকারঃ
দাঁতের ও মাড়ির বিভিন্ন রকম সমস্যার জন্য নিম তেল খুব উপকারী। দাঁতে ব্যথা, মাড়ি থেকে রক্তপাত, মাড়ি ফুলে গিয়ে হওয়া জিংজিভাইটিস (Gingivitis) নামক রোগ, প্যারোডোয়েন্টাইটিস (Periodontitis) এর মতো মাড়ির রোগের চিকিৎসায় নিম তেলের ভূমিকা অনস্বীকার্য। (৪) নিমের অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্যের জন্যই ডেন্টাল কেয়ারের অনেক পণ্যতে নিম তেল ব্যবহার করা হয়। মুখে দুর্গন্ধ বা পাইরিয়ার মতো সমস্যার ক্ষেত্রেও নিম তেল ব্যবহার করা হয়। দাঁত মজবুত রাখতে অনেকে তাই প্রত্যেকদিন সকালে নিম ডাল দিয়ে ব্রাশ করেন সকালে।
৩. ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেঃ
নিম তেলকে প্রাকৃতিক মশা তাড়ানোর ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা যায়। আমেরিকান মসকো কন্ট্রোল অ্যাসোসিয়েশনের জার্নালে প্রকাশিত একটি সমীক্ষা অনুসারে গবেষকরা ২ শতাংশ নিম বীজের তেলকে এক বাটি নারকেল তেলের সাথে মিশিয়ে স্বেচ্ছাসেবীদের দেহের অনাবৃত অংশে লাগিয়েছেন। এটি সমস্ত anopheline প্রজাতির কামডরের হাত থেকে তাদের ১২ ঘন্টা সম্পূর্ণ সুরক্ষা দিয়েছিল। (৫) নিম তেলের প্রয়োগ আমাদের ত্বক এবং স্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ। তাই, ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু – র মতো মশাবাহিত রোগের থেকে সুরক্ষার জন্য নিম তেল ব্যবহার করা যেতে পারে।
ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে নিম তেল ব্যবহার করা যেতে পারে। গবেষণা অনুসারে নিমের নির্যাস ম্যালেরিয়া ছড়ায় এমন মশার হাত থেকে রক্ষা করতে পারে তাই নিম তেলকে অনেকে কীটনাশক হিসেবে ব্যবহার করে। তাই, ঘরে মশার প্রাদুর্ভাব এড়াতে আপনিও নিম থেকে তৈরী রুম তেল ব্যবহার করতে পারেন।
জমা জলে মশা জন্মায় এবং রোগ ছড়ায়। তাই, যেসব পাত্রে বা জায়গায় জল জমে আছে, জমা জলে কয়েক ফোঁটা নিম তেল মিশিয়ে দিলেই দেখবেন দুর্গন্ধ দূর হবার পাশাপাশি মশা জন্মাচ্ছেও না। তাই বলাই যায়, নিম তেল ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৪. ভাইরাসজনিত রোগের প্রতিকার ও প্রতিরোধে সাহায্য করেঃ
নিম তেল চিকেন পক্স এবং ছোট পক্সের মতো মারাত্মক ভাইরাসের সংক্রমণজনিত রোগের চিকিৎসার জন্য একটি নির্ভরযোগ্য ঘরোয়া প্রতিকার। নিমের অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্যগুলি শুধুমাত্র ভাইরাসটি ধ্বংস হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে না, ক্ষত নিরাময় করে এবং দাগ দূর করতেও সাহায্য করে। হার্পিস এবং হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য একটি বিশ্বস্ত নিরাময় হল এই নিম। নিম তেলে নিমের অ্যান্টিভাইরাল বৈশিষ্ট্য রয়েছে, তাই নিয়মিত এই তেলের ব্যবহারে চুলকানি বা ফাংগাস সংক্রমণ এর মতো ত্বকের সংক্রমণজনিত বিভিন্ন সমস্যায় উপকৃত হতে পারেন। (৬)
৫. আলসার নিরাময়ে সাহায্য করেঃ
পেট তথা পরিপাক তন্ত্র মূলত অন্ত্রে অম্লতা বৃদ্ধি পেলে, pH স্তরের ভারসাম্য বিঘ্নিত হলে গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্র্যাক্টে জ্বালা, বা আলসারের সৃষ্টি হয়। তবে, একটি গবেষণায় দেখা গেছে নিম ব্যবহার করে আলসার নিরাময় করা যায়। নিমের ছালের নির্যাসে এক প্রকার গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল এবং অ্যান্টি আলসার বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যার কারণে এটি পেট সম্পর্কিত অনেক সমস্যার সমাধান করতে পারে। (৭) নিম তেল সরাসরি আলসার নিরাময়ে কীভাবে কাজ করে সে সম্পর্কে বর্তমানে কোনও সঠিক বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই ।
৬. বিভিন্ন রোগের ওষুধ তৈরীতে ব্যবহার করা হয়ঃ
প্রাচীন কাল থেকেই নিম বিভিন্ন ধরনের আয়ুর্বেদিক ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হচ্ছে। বিশেষত নিম তেল ত্বকের সমস্যাগুলির (অ্যালার্জি, সোরিয়াসিস, একজিমা, দাদ ইত্যাদি) চিকিত্সার জন্য বিভিন্ন ধরনের ওষুধে ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও, হজমের সমস্যা, ক্যান্সার, রক্ত সম্পর্কিত বিভিন্ন রোগ, ডায়াবেটিস এবং বাত এর মতো রোগের ওষুধ উৎপাদনে নিম ব্যবহৃত হয়। (৮) নিমে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরে ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস করে, খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করে। ডায়াবেটিসের চিকিত্সায় নিমের নির্যাস কতটা কার্যকর তা পরিষ্কার নয়, তবে এটি নিশ্চিত যে নিমের মধ্যে এমন কিছু রাসায়নিক রয়েছে যা ইনসুলিনকে সক্রিয় করে দেহে ইনসুলিনের মাত্রা বাড়ায় এবং ডায়াবেটিস এর মতো জটিল রোগ প্রতিরোধ করে। নিম তেলে উপস্থিত নিমের অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য বাতের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
৭. নিম তেলের অ্যান্টিসেপটিক বৈশিষ্ট্যঃ
আমাদের প্রতিদিনের জীবনে ব্যবহৃত অনেক পণ্যগুলির মধ্যে নিম বীজ তেল অন্যতম প্রধান উপাদান। নিমের অ্যান্টিসেপটিক বৈশিষ্ট্যের কারণে নিম তেল ওষুধ তৈরিতে, বিভিন্ন রকম কসমেটিক ও স্কিন কেয়ার বা ডেন্টাল কেয়ার পণ্য উৎপাদনে নিম তেল ব্যবহার করা হয়।পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণে কীটনাশক হিসেবেও নিম তেলের ব্যবহার অনস্বীকার্য।
ত্বক ও চুলের যত্নে নিম তেলের ব্যবহারটা একেবারেই ব্যহ্যিক এবং ভীষণভাবে কার্যকারী। রূপচর্চা থেকে শুরু করে ত্বকের বিভিন্ন রোগ সারাতে নিম তেল যেরকম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, চুলের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি করতে এবং সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতেও নিম তেলের জুড়ি মেলা ভার। এবার, সবিস্তারে জেনে নিন, ত্বক ও চুলের ক্ষেত্রে নিম তেলের উপকারিতা এবং ব্যবহার।
৮. ত্বকের যত্নে নিম তেলের ভূমিকাঃ
নিয়মিত নিম তেলের ব্যবহারে ত্বকের ফর্সাভাব, আর্দ্রতা বজায় থাকে, অ্যালার্জি ও চুলকানির মতো ত্বকের বিভিন্ন রকমের সমস্যা দূর হয়। বলা যায়, নিম তেল ত্বকের একাংশে ভেষজ কন্ডিশনার ও অন্যদিকে প্রাকৃতিক ময়শ্চারাইজার।
- শুষ্ক ত্বকের সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়ঃ
ত্বকের আর্দ্রতা কম হলে ত্বক শুষ্ক হতে শুরু করে এবং ত্বক সম্পর্কিত অনেক রোগ এরকম পরিস্থিতিতে দেখা দিতে পারে। শুকনো ত্বকের সমস্যা কাটিয়ে উঠতে নিম তেল ব্যবহার করা যেতে পারে। নিম তেল শুকনো ত্বকের যাবতীয় অস্বস্তি দূর করে এবং সকল সমস্যার সমাধান করে। গবেষণায় দেখা গেছে, নিমে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-ই, অ্যামিনো অ্যাসিড এবং অত্যাবশ্যকীয় ফ্যাটি অ্যাসিড (EFAs) পাওয়া যায় যা ত্বককে পুষ্টি জোগায়। বিশেষত ভিটামিন-ই ত্বকে আর্দ্রতা বজায় রাখতে সহায়তা করে।
কীভাবে ব্যবহার করবেনঃ
- আধা চা চামচ নারকেল / বাদাম তেলের সাথে কয়েক ফোঁটা নিম তেল দিন। (৯)
- তারপরে এটি সাধারণ তেলের মতো ত্বকে লাগান।
- এই প্রতিকারটি সপ্তাহে দু’বার করা যেতে পারে।
- একজিমা এবং সোরিয়াসিস রোগের হাত থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করেঃ
নিম তেল ত্বকের ছত্রাক সংক্রমণ হলে বা ত্বকের নীচে উপস্থিত রোগজীবাণুগুলির সাথে লড়াই করে। নিম তেল একজিমা এবং সোরিয়াসিস রোগের ফলে হওয়া জ্বালাভাব বা চুলকানি সমস্যা কমায় নিমেষের মধ্যে। যেমনটি আমরা আগেই বলেছি, নিম তেল ভিটামিন-ই, অ্যামিনো অ্যাসিড এবং ফ্যাটি অ্যাসিডের মতোো গুরুত্বপূর্ণ সব পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধ। এই কারণে, নিম তেল একজিমা এবং সোরিয়াসিসের মতো ত্বকের সমস্যাগুলি দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে। কীভাবে তেল ব্যবহার করবেন তা নীচে জানুন –
কীভাবে ব্যবহার করবেনঃ
- আধা চা চামচ অলিভ অয়েলে ৮ থেকে ১০ ফোঁটা নিম তেল মেশান।
- তারপরে এটি আক্রান্ত ত্বকে লাগিয়ে তুলো দিয়ে রেখে দিন।
- রোগটি সম্পূর্ণ না সারা পর্যন্ত এই প্রতিকারটি প্রতিদিন পুনরাবৃত্তি করুন।
- চুলকানি এবং ছত্রাকের সংক্রমণ থেকে মুক্তি দেওয়াঃ
প্রকৃতপক্ষে, নিম তেলের অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ফাংগাল বৈশিষ্ট্য চুলকানি এবং ছত্রাকের সংক্রমণ থেকে মুক্তি দিতে কাজ করতে পারে। এটি প্রমাণিত যে, নিম তেলে উপস্থিত দুটি উপাদান গেগডুনিন (gedunin) ও নিমবিডল (nimbidol)- ছত্রাককে ধ্বংস করে যা ত্বকের সংক্রমণ ঘটায়। এক্ষেত্রে, নিম তেল কীভাবে ব্যবহার করবেন তা নীচে জেনে নিন।
কীভাবে ব্যবহার করবেনঃ
- কিছুটা নিমের তেল নিয়ে ত্বকের আক্রান্ত অংশে ভালো করে লাগিয়ে নিন।
- এই প্রতিকারটি দিনে দু’বার করা যেতে পারে।
- ত্বকের অ্যান্টি এজিং সিরামঃ
ত্বক থেকে বয়সের ছাপ দূর করতে এবং ত্বকে পড়তে থাকা বয়সের প্রভাব ধীর করতে নিম তেল দিয়ে বানানো অ্যান্টি এজিং সিরাম ব্যবহার করা যেতে পারে। নিমের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা ত্বকে পড়তে থাকা বয়সের প্রভাবকে হ্রাস করতে পারে। তবে এটি নিশ্চিত করার জন্য বৈজ্ঞানিক প্রমাণ পাওয়া যায় না। যদিও, নিম তেল ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ, ও এতে থাকা ভিটামিন-ই, অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্যগুলি ত্বককে পরিবেশগত ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। এছাড়াও নিমে ক্যারোটিনয়েড রয়েছে যা ফ্রি র্যা ডিকালগুলির বিরুদ্ধে লড়াই করে। সুতরাং, এটি বিশ্বাস করা যায় যে নিম তেলের ব্যবহার বার্ধক্যজনিত প্রভাব কমাতে সহায়ক হতে পারে।
এটি ত্বককে মসৃণ রাখে এবং বয়সের সাথে সাথে ত্বককে কুঁচকে যাবার হাত থেকে রক্ষা করে, রিংকেলস ও ফাইন লাইনস দূর করে। নিম তেল ব্যবহার করা হলে ত্বক সুন্দর হয়ে ওঠে এবং বার্ধক্যের প্রভাব হ্রাস পায়। নিম ত্বকে কোলাজেন উৎপাদন ও সংশ্লেষণ প্রক্রিয়াকে বৃদ্ধি করে যা ত্বকের বার্ধক্য প্রক্রিয়াটি ধীর করে দেয়।
কীভাবে ব্যবহার করেঃ
- সুতির সাহায্যে নিম তেল প্রায় ১৫ থেকে ২০ মিনিটের জন্য ত্বকে লাগান।
- তারপরে হালকা গরম জলে ত্বক ধুয়ে ফেলুন।
- ত্বক থেকে ব্রণ, ফুসকুড়ি – র মতো সমস্যা দূর করেঃ
আপনার মুখে ব্রণ থাকলে নিম তেল আপনার পক্ষে উপকারী হতে পারে। এটি অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি-ফাংগাল এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্যগুলির সাথে সমৃদ্ধ, যা পিম্পলগুলি দূর করতে সহায়তা করতে পারে এবং পরবর্তীতেও ব্রণ হয় না। এছাড়াও নিম তেলের ফ্যাটি অ্যাসিডগুলি ব্রণ-র ফলে হওয়া ক্ষতচিহ্নগুলি দূর করে, ত্বকের লালভাবও হ্রাস করে এবং এতে স্বাস্থ্যকর আভা ফিরিয়ে আনে।
কীভাবে ব্যবহার করবেনঃ
- এক চা চামচ নিম তেল এক চা চামচ অলিভ অয়েলের সাথে মেশান।
- ব্রণর স্থানে এই মিশ্রণটি লাগান।
- লাগানোর এক ঘন্টা পরে হালকা গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
- দাদ দূর করেঃ
প্রকৃতপক্ষে নিম তেলের অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়া এবং অ্যান্টি-ফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য দাদের সমস্যা দূর করে। আক্রান্ত স্থানে নিম তেল লাগালে শুধু জ্বালাভাব প্রশমণ হয় তাই না, যে ব্যক্টেরিয়া সংক্রমণের ফলে এই রোগ হয়েছে সেই ব্যাক্টেরিয়া ও ছত্রাককে ধ্বংস করে রোগ নিরাময় করে।
কীভাবে ব্যবহার করবেনঃ
- নিম তেল কিছুটা গরম করুন।
- এর পরে, দাদ হয়েছে যে অংশে সেখানে ভালোভাবে লাগিয়ে রাখুন বেশ কিছুটা সময়।
- দাদ নিরাময় না হওয়া পর্যন্ত এই প্রতিকারটি প্রতিদিন দুবার করা যেতে পারে।
- স্ক্যাবিস (Scabies) রোগের চিকিৎসা করেঃ
নিম তেল দিয়ে স্ক্যাবিস রোগের চিকিৎসাও করা যেতে পারে। নিমের অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি-ফাংগাল এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্যগুলিই চুলকানিভাব ও জ্বালাভাব কমায় নিমেষের মধ্যে এবং সমস্যা নির্মূল করে ধীরে ধীরে।
কীভাবে ব্যবহার করবেনঃ
- আস্তে আস্তে আক্রান্ত স্থানে নিম তেলটি ছড়িয়ে দিন।
- ১৫ মিনিটের জন্য এটি ত্বকে রেখে দিন।
- এটি নিয়মিত করলে রোগটি নির্মূল হবে এবং এর ফলে হওয়া দাগছোপও দূর হবে।
- স্কিন টোনার হিসেবে নিম তেলের ব্যবহার অনস্বীকার্যঃ
টোনার ময়লা ত্বক পরিষ্কার করতে ব্যবহৃত হয়। এক্ষেত্রে নিম তেল টোনার হিসাবে ব্যবহার করা যায়। নিম তেল ত্বকের হারানো আর্দ্রতা পুনরুদ্ধার করে এবং ত্বকের পৃষ্ঠের নীচে পাওয়া প্যাথোজেনগুলির সাথে লড়াই করে। তাই স্কিন টোনার হিসাবে নিম তেল ব্যবহার করলে এটি ত্বককে তরুণ, স্বাস্থ্যকর এবং মসৃণ রাখবে। এছাড়াও, এতে থাকা অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্যগুলি আরো বেশী উপকার দেয় সুন্দর ত্বক পেতে।
কীভাবে ব্যবহার করবেনঃ
- তুলোর সাহায্যে নিম তেল দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করুন।
- পরে হালকা গরম জলে ত্বক ধুয়ে ফেলুন।
- পিগমেন্টেশন প্রতিরোধ করেঃ
সূর্যের ক্ষতিকারক ইউভি রশ্মির ফলে ত্বকে পিগমেন্টেশন দেখা দেয়। নিম তেলে থাকা ভিটামিন-ই হাইপার পিগমেন্টেশন রোধ করতে পারে। তবে এই বিষয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন। এছাড়াও, নিম তেল ত্বকের মেলানিনের উৎপাদনকে ধীর করে দেয়, ফলে ফর্সাভাবও ফিরে আসে। নিয়মিত নিম তেল মাখলে ত্বক হয়ে ওঠে সুন্দর, উজ্জ্বল, দাগহীন ও দিপ্তীময়।
কীভাবে ব্যবহার করবেনঃ
- নিম তেল মুখে লাগান এবং ১৫ মিনিটের জন্য রেখে দিন।
- তারপরে হালকা গরম জলে ধুয়ে ফেলুন।
- ব্ল্যাকহেডস দূর করেঃ
নিম মিশ্রিত তেলের নিয়মিত প্রয়োগ ব্ল্যাকহেডসকে সরিয়ে দেয় এবং ত্বক হয়ে ওঠে দাগহীন ও সুন্দর।
কীভাবে ব্যবহার করবেনঃ
- খাঁটি নিম তেল সরাসরি মুখে লাগাবেন না।
- জলে ২-৩ ফোঁটা তেল যোগ করুন এবং তারপরেই মিশ্রণটি মুখে লাগান।
- ব্ল্যাকহেডস থেকে মুক্তি পেতে নিম তেলের এই পাতলা দ্রবণটি নিয়মিত একবার ব্যবহার করুন।
এবার জেনে নিন, চুলের যত্নে কীভাবে ব্যবহার করবেন নিম তেল।
৯. চুলের যত্নে নিম তেলের ভূমিকাঃ
চুল সম্পর্কিত নানারকম সমস্যার হাত থেকে মুক্তি পেতে, চুলের গঠন উন্নত করতে আপনি আপনার নিয়মিত ব্যবহারের শ্যাম্পুতে আপনি কয়েক ফোঁটা নিম তেল ব্যবহার করতে পারেন। এতে চুলের গোড়া মজবুত হবে ফলে চুল পড়বে কম, চুল হয়ে উঠবে শক্তিশালী। নিম তেল মাথার ত্বকে এবং চুলের প্রয়োজনীয় পুষ্টি যোগায়। এছাড়াও –
- চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করেঃ
নিমের তেল দ্রুত চুল বাড়ানোর সাথে সাথে চুল আরও ঘন এবং শক্তিশালী করতে ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে লিনোলিক, ওলিক এবং স্টেরিক অ্যাসিড সহ বিভিন্ন ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে, যা মাথার ত্বকে এবং চুলের পুষ্টি সরবরাহ করে (১০)।
কীভাবে ব্যবহার করবেনঃ
- এক চামচ বাদাম বা নারকেল তেল দুই চামচ নিম তেল মিশ্রিত করুন।
- ঘুমানোর আগে চুলের উপর ভালো করে লাগান।
- এটি সপ্তাহে একবার ব্যবহার করুন।
- মাথার উকুনের চিকিৎসায়ঃ
নিমের তেলকে মাথার উকুন থেকে মুক্তি পাওয়ার সবচেয়ে নিরাপদ এবং সবচেয়ে কার্যকর উপায় বলে মনে করা হয়। নিমের তেল মাখলে মাথার উকুন এবং উকুনের ডিমগুলি ধ্বংস হয় এবং উকুনের সমস্যা দূর হয়। অবশ্যই, উকুন মারার অনেক তেল বা ওষুধ পাওয়া যায় তবে নিম তেল সর্বোত্তম এক্ষেত্রে। (১১)
কীভাবে ব্যবহার করবেনঃ
- রাতে শুতে যাওয়ার আগে হালকা করে চুলে নিম তেল লাগান।
- তারপরে যেকোনও ঢাকনা বা টুপি দিয়ে চুল সারা রাত ঢেকে রেখে দিন।
- পরেরদিন সকালে একটি পাতলা চিরুনি দিয়ে আঁচড়ালে চুল থেকে সব উকুন ঝরে পড়বে।
- তারপর, চুলে শ্যাম্পু করে নিন।
- সমস্যাটি সম্পূর্ণরূপে নির্মূল না হলে আপনি এই প্রতিকারটি পুনরাবৃত্তি করতে পারেন।
- খুশকির সমস্যা দূর করেঃ
মাথায় খুশকি? ড্রাই স্ক্যাল্প হবার ফলে মাথায় চুলকানি অনুভব করছেন? নিম তেল আপনার একমাত্র কার্যকারী প্রাকৃতিক প্রতিকার! নিম তেল ব্যবহার করে খুশকির সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারেন সহজেই। নিমের অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল, এবং অ্যান্টি-ফাংগাল বৈশিষ্ট্যগুলিই খুশকি দূর করবে, স্ক্যাল্পের হারানো আর্দ্রতা পুনরুদ্ধার করে চুলকানির সমস্যা দূর করবে। তাই, অনেক অ্যান্টি-ড্যানড্রাফ শ্যাম্পুতে নিম তেলকে প্রধান উপাদান হিসাবে ব্যবহার করে। নিম চুলের তেল কেবল আপনার মাথার ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে না তবে ত্বকের pH স্তরও বজায় রাখে।
কীভাবে ব্যবহার করবেনঃ
- এক চামচ নারকেল তেল দুই চামচ নিম তেলের সাথে মিশিয়ে হালকা গরম করুন।
- তারপরে এই মিশ্রণটি চুলে লাগান এবং কয়েক মিনিট ম্যাসাজ করুন।
- ২৫ থেকে ৩০ মিনিটের পরে আপনার চুল শ্যাম্পু করুন।
- স্প্লিট এন্ডস বা চুলের ডগা ফাটা রোধ করেঃ
চুলের অতিরিক্ত রুক্ষতা ও শুষ্কতা, চুলে পুষ্টির অভাব, দীর্ঘদিন চুল না কাটলে, অতিরিক্ত ধুলো ময়লায় এবং অতিরিক্ত চুল আঁচড়ালে চুলের ডগা ফেটে যেতে পারে। চুলের ডগা ফেটে গেলে চুল তো বাড়েই না, চুল হয়ে ওঠে ভঙ্গুর, নিস্প্রাণ ও দিপ্তীহীন। নিম তেল যেমন চুল ঘন এবং শক্তিশালী করতে করতে পারে, খুশকি ও উকুনের সমস্যার সমাধান করতে পারে, তেমনি এক্ষেত্রে নিম তেল চুল এবং মাথার ত্বকে পুষ্টি যোগায়। ফলে, দু মুখের চুলের সমস্যা কমে এবং চুল বৃদ্ধি পায় তাড়াতাড়ি এবং চুল হয়ে ওঠে মজবুত। তবে এটি নিশ্চিত করার মতোো কোনও বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই।
কীভাবে ব্যবহার করবেনঃ
- নিম তেল এবং কয়েক ফোঁটা নারকেল তেল মিশ্রিত করুন।
- তারপরে এটি চুলে ভালো করে লাগান।
- এক থেকে দুই ঘন্টা পর শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
- নিষ্প্রাণ চুলের যত্নেঃ
নিম তেল নিস্তেজ, প্রাণহীন চুলকে গভীরভাবে কন্ডিশানিং করে চুলের হারানো উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনে এবং চুল করে তোলে চকচকে।
কীভাবে ব্যবহার করবেনঃ
- যখনই শ্যাম্পু করবেন, আপনার শ্যাম্পুর সাথে কয়েক ফোঁটা নিম তেল মেশান এবং ব্যবহার করুন।
- নিম তেল এক্ষেত্রে চুলের জন্য প্রাকৃতিক কন্ডিশানারের কাজ করে।ফলে চুল হয়ে ওঠে আর্দ্র, মসৃণ এবং উজ্জ্বল।
- স্বাস্থ্যকর চুল ও মাথার ত্বকের জন্যঃ
নিম তেলের ব্যবহার চুলের পাশাপাশি মাথার ত্বকের পুষ্টির যোগানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। প্রকৃতপক্ষে নিম তেলে বিভিন্ন ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে যা চুলের সাথে মাথার ত্বকে পুষ্টি জোগাতে পারে। মাথার ত্বক যদি আর্দ্র থাকে এবং সঠিক পুষ্টি পায়, তবে চুল ঝড়ে পড়বে কম এবং স্ক্যল্পে চুলকানি বা খুশকির মতো সমস্যাও হবে না।
কীভাবে ব্যবহার করেঃ
- অর্ধেক চা চামচ ইউক্যালিপটাস তেল, এক চা চামচ নারকেল তেল এবং আধা চা-চামচ নিম তেল মিশ্রণ করুন।
- এই মিশ্রণটি পুরোপুরি চুলে এবং মাথার ত্বকে লাগান এবং ১০ থেকে ১৫ মিনিটের জন্য হালকাভাবে ম্যাসাজ করুন।
- সেরা ফলাফলের জন্য, এটি ঘুমানোর আগে এটি করুন এবং পুরো রাত ধরে রেখে দিন।
- পরেরদিন যখন স্নান করবেন তখন চুল চুলে শ্যাম্পু করুন।
এছাড়াও বিভিন্ন উপায়ে নিম তেল ব্যবহার করা যায়। জেনে নিন, আর কীভাবে ব্যবহার করবেন –
- নিম তেলের ব্যবহারঃ
নিম তেলের অধিকাংশ ব্যবহারই বাহ্যিক। যদিও নিম তেল দিয়ে অনেক ওষুধ তৈরি হয়, সেক্ষেত্রে নিম তেল দেহের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে কাজ করে। নিম তেল শরীরের যে কোনও অংশে প্রয়োগ করা যেতে পারে।তবে, মুখে সরাসরি নিম তেল না লাগিয়ে নারকোল তেল বা অন্য কোনো ভেষজ তেলের সাথে মিশিয়ে বা জলের সাথে মিশিয়ে লাগালে উপকার বেশী পাওয়া যায়। জেনে নিন, কোথায় কীভাবে নিম তেল ব্যবহার করতে পারেন –
- মশার কামড় থেকে বাঁচতে নিম তেল ত্বকে লাগাতে পারেন।
- মশা এবং পোকামাকড় দূরে রাখতে ঘরে নিম তেল স্প্রে করতে পারেন।
- জমা জলে কয়েক ফোঁটা নিম তেল স্প্রে করলে মশা ও পোকামাকড় জন্মাতে পারে না।
- চাটাইয়ের উপরে নিম তেল স্প্রে করে রাখলে বা কার্পেটের শ্যাম্পুতে নিম তেল যুক্ত করলে ধূলিকণাকে ঘরের মধ্যে বেশী ওড়ে না এবং বাড়ি পরিষ্কার থাকে।
- নিম তেলে ক্যারোটিনয়েড এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা বার্ধক্যজনিত প্রভাব কমাতে, ত্বক সম্পর্কিত নানারকম সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে নিম তেল ত্বকে লাগাতে পারেন।
- দাঁত এবং মাড়ির সমস্যাগুলি দূরে রাখতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নিম তেল দাঁতেও ব্যবহার করা যেতে পারে। নিম তেল মাড়ির রোগ, দাঁতের সংক্রমণ এবং মুখের দুর্গন্ধের বিরুদ্ধে লড়াই করে।
- খুশকি, উকুন দূর করতে, সুন্দর ও শক্তিশালী চুল পেতে নিয়মিত নিম তেল চুলে ও মাথায় লাগিয়ে ম্যাসাজ করতে পারেন। শ্যাম্পু করার সময় শ্যাম্পুর সাথেও নিম তেল মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন।
- কোথাও কেটে গেলে ক্ষত স্থান পরিষ্কার করে নিম তেল লাগাতে পারেন। এতে ক্ষত স্থাণের প্রদাহ ও জ্বালাভব কমবে, সংক্রমণের ভয় থাকবে না, এমনকী কাটার দাগও দূর হবে ধীরে ধীরে।
- পোষ্যের শ্যাম্পুতে নিম তেল যুক্ত করলে এদের লোমে উকুন ও ছত্রাক সংক্রমণের সমস্যা হয় না। পোষ্যর ত্বকের সংক্রমিত অংশে নিম তেল স্প্রে করলে তা সেরে যায় কিছুদিনের মধ্যেই। অনেক পেট কেয়ার পণ্যে তাই নিম তেলের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়।
- নিম তেলের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াঃ
নিম তেলের উপযুক্ত ডোজ কোনও ব্যক্তির স্বাস্থ্য, বয়স এবং চিকিত্সার অবস্থার উপর ভিত্তি করে। নিম তেল ব্যবহার করার আগে আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করার পরামর্শ নেওয়া একান্ত প্রয়োজন, বিশেষত শিশু এবং গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে। কোনও প্রমাণিত পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া না থাকলেও, মুখের বা শরীরে নিম তেল লাগানোর আগে প্যাচ পরীক্ষা করে নেওয়া ভালো। নিম তেল ভিত্তিক পণ্য ব্যবহার করার আগে লেবেল এবং ব্যবহারের নির্দেশগুলি পড়া গুরুত্বপূর্ণ। যদি চিকিত্সার জন্য নিম তেল খাওয়া হয় তবে সম্ভাব্য ঝুঁকি এবং সুবিধা সম্পর্কে আপনার চিকিৎসকের সাথে অবশ্যই আলোচনা করে নেবেন। নিম তেল যেমন উপকারী, তেমনি এর কিছু অসুবিধাও হতে পারে, যা নিম্নরূপঃ
- কিছু লোকের সংবেদনশীল ত্বক থাকে, যার কারণে নিম তেল ব্যবহারের ফলে অ্যালার্জির ত্বক হতে পারে।
- অনেক নকল নিম তেলও বাজারে পাওয়া যায়। এগুলি ব্যবহারে দেহের ক্ষতি হতে পারে।
- নিম তেল যদি ভুল করে কেউ খেয়ে নেয় তবে এটি শরীরে ভাইরাস সৃষ্টি করতে পারে, বমি বমিভাব, এবং মাথাব্যথা এর মতো সমস্যা সৃষ্টি করে। (১২)
- নিম বীজ তেল মাছ এবং অন্যন্য জলজ প্রাণীদের জন্য কিছুটা বিষাক্ত হতে পারে।
- উপসংহারঃ
এতক্ষণ জানলেন কীভাবে নিম তেল ত্বক, চুল ও শরীর সম্পর্কিত সমস্যাগুলির জন্য উপকারী হতে পারে। নিম তেলের কয়েক ফোঁটা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য একটি বরদান হিসাবে গণ্য করতে পারেন। নিম তেলের উপকারিতার তালিকা কেবল দীর্ঘ নয়, বিভিন্ন গবেষণা এবং গবেষণার দ্বারা প্রমাণিতও। নিবন্ধে উল্লিখিত কোনও সমস্যায় যদি আপনি ভুগছেন তবে আপনি নিম তেল ব্যবহার করতে পারেন। তবে, নিয়মিত এই তেল ব্যবহার শুরু করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ অবশ্যই নেবেন। যাদের ত্বক সংবেদনশীল, তারা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া একেবারেই এটি ব্যবহার করবেন না। সুতরাং, স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যগ্রহণ এবং নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের মতো এখন থেকে নিম তেল আপনার জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠতেই পারে।
প্রায়শই জিজ্ঞাস্য প্রশ্নাবলীঃ
এবার চলুন দেখে নিই এই বিষয়ক কিছু প্রায়শই জিজ্ঞাস্য প্রশ্ন।
প্রতিদিন নিম তেল কি ব্যবহার করা যায়?
হ্যাঁ, প্রয়োজনে নিম তেল প্রতিদিন এক বা একাধিকবার ব্যবহার করা যায়।
সারা রাত নিম তেল কী মুখে লাগিয়ে রাখা যায়?
মুখে সরাসরি নিম তেল লাগানো উচিৎ না। জল বা অন্য তেলের সাথে মিশিয়ে নিম তেল লাগানো হয় মুখে। প্রত্যেকদিন একবার ১ বা ২ ঘন্টার জন্য নিম তেল মুখে লাগানো উচিৎ। সারা রাত মুখে নিম তেল লাগিয়ে রাখলে বা দিনে একাধিকবার নিম তেল মুখে লাগালে মুখের ত্বকে অস্বস্তি, জ্বালাভাব বা চুলকানি অনুভব করতে পারেন।
Sources
Stylecraze has strict sourcing guidelines and relies on peer-reviewed studies, academic research institutions, and medical associations. We avoid using tertiary references. You can learn more about how we ensure our content is accurate and current by reading our editorial policy.
- Review On Neem : Thousand problems one solution
http://www.irjponline.com/admin/php/uploads/730_pdf.pdf - Neem Oil
http://npic.orst.edu/factsheets/neemgen.html - EXTRACTION OF NEEM OIL : STUDIES OF OIL QUALITY, KINETIC AND THERMODYNAMIC
http://citeseerx.ist.psu.edu/viewdoc/download?doi=10.1.1.613.7721&rep=rep1&type=pdf - To evaluate the antigingivitis and antipalque effect of an Azadirachta indica (neem) mouthrinse on plaque induced gingivitis
https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC3283940/ - Mosquito repellent action of neem (Azadirachta indica) oil
http://europepmc.org/article/med/8245950 - Neem: A Tree For Solving Global Problems
https://www.ncbi.nlm.nih.gov/books/NBK234637/ - The use of neem for controlling gastric hyperacidity and ulcer
https://pubmed.ncbi.nlm.nih.gov/19140119/ - Neem (Azadirachta indica): Prehistory to contemporary medicinal uses to humankind
https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC3695574/ - Neem Oil From Neem Seeds and Applications
https://www.academia.edu/33209303/Neem_Oil_From_Neem_Seeds_and_Applications - Pharmacological and Therapeutical overview of neem (Azadirachta indica): A nature’s drugstore
https://www.academia.edu/37597362/Pharmacological_and_Therapeutical_overview_of_neem_Azadirachta_indica_A_natures_drugstore - Neem Lotion With Combing for Lice
https://clinicaltrials.gov/ct2/show/NCT02974088 - Neem oil poisoning: Case report of an adult with toxic encephalopathy
https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC3841499/