
পালং শাকের উপকারিতা এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া | Spinach Benefits and Side Effects
সবুজ শাক সব্জির মধ্যে এক অতি পরিচিত নাম হলো পালং শাক। বেশ কয়েক বছর আগে পর্যন্ত শুধুমাত্র শীতের শাক সব্জির তালিকায় পালং শাক অন্তর্ভূক্ত থাকলেও বর্তমান সময়ে প্রায় সারা বছরই পালং শাক বাজারে পাওয়া যায়। পালং শাক হিন্দিতে পালাক এবং ইংরিজিতে স্পিনাচ নামে পরিচিত। পালং শাকের বিজ্ঞানসম্মত নাম স্পিনাসিয়া ওলেরাসিয়া। আলোচ্য প্রবন্ধে পালং শাকের বিভিন্ন গুণাগুণ, খাদ্য হিসেবে প্রয়োজনীয়তা, পালং শাকের বিভিন্ন ধরণ, পৌষ্টিক গুরুত্ব এবং সর্বোপরি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানতে পারবো।
Table Of Contents
পালং শাকের বিভিন্ন ধরণ
মূলত তিন ধরণের পালং শাক দেখতে পাওয়া যায়। সেগুলি হলো যথা – স্যাভোয় পালং, আংশিক স্যাভোয় পালং, মসৃণ পাতা পালং শাক।
- স্যাভোয় পালং শাক – এটি বিশেষ এক ধরণের পালং শাক। এর পাতা সংকুচিত এবং এবং গাঢ় সবুজ হয়। এই স্যাভোয় শাকের একটি প্রজাতি ব্লুমসডেল পালং নামে পরিচিত। এই ধরণের শাক খুবই স্বাদিষ্ট হয়।
- আংশিক স্যাভোয় পালং শাক – পালং শাকের এই প্রজাতি খুবই জনপ্রিয়। এই শাকের পাতা স্যাভোয় পালং শাকের পাতার তুলনায় কম সংকুচিত হয়। এই শাক বসত বাড়ির উঠোনেও চাষ করা যেতে পারে। পালং শাকের পৌষ্টিক গুণাগুণ ভরপুর মাত্রায় পাওয়া যায় এই শাকে।
- মসৃণ পাতা শাক – পূর্বোক্ত দুটি শাকের পাতার তুলনায় এই শাকের পাতা অনেক বেশি চওড়া এবং মসৃণ হয়। এই শাক সহজেই ধুয়ে ফেলা যায়। এই শাক বাজারে ব্যাগে ভরে বা খোলা চুপড়িতে করে বিক্রি করা হয়।
পালং শাকের স্বাস্থ্য উপকারিতা
পালং শাকে নানা প্রকারের স্বাস্থ্যপোযোগীতা রয়েছে। একাধিক পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ পালং শাক শরীর স্বাস্থ্যের উন্নতিতে বিভিন্ন ভাবে কাজে লাগে। পালং শাকের স্বাস্থ্যপযোগীতা গুলি হলো নিম্নরূপ –
১. ওজন হ্রাস করে
বাড়তি ওজন যদি আপনার দুশ্চিন্তার একটি কারণ হয়ে ওঠে তাহলে একথা জোর দিয়েই বলা যেতে পারে যে পালং শাক খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করলে বাড়তি ওজন থেকে আপনাকে সহজেই মুক্তি দিতে পারে। এই কথা এই কারণেই বলা যেতে পারে কারণ মেদ হ্রাসক সব রকম বৈশিষ্ট্য পালং শাকে দেখতে পাওয়া যায়। ওজন কমানোর জন্য যেটা সব থেকে দরকার সেটা হলো কম ক্যালোরিযুক্ত খাদ্য গ্রহণ। আর পালং শাকে ক্যালোরির পরিমাণ খুবই কম থাকে। তাই খাদ্য তালিকায় পালং শাক সংযুক্ত করলে ওজন নিয়ন্ত্রিনে রাখা সহজ হয়ে যায় (1)। এছাড়াও একটি বৈজ্ঞানিক গবেষনা থেকে জানা যায় যে নির্দিষ্ট মাপের ওজন বজায় রাখার জন্যও পালং শাক গ্রহণ করা যেতে পারে (2)।
২. ক্যান্সার নিয়ন্ত্রক
পালং শাক ক্যান্সারের ক্ষেত্রে উপযোগী বলে মনে করা হয়। আসলে পালং শাকে বিটা ক্যারোটিন এবং ভিটামিন সি সমৃদ্ধ হয়। এই দুই উপাদানে উপস্থিত পৌষ্টিক উপাদান ক্যান্সার প্রবণ কারসিনোজেনিক কোষের বৃদ্ধি প্রতিরোধ করে এবং শরীরকে সুরক্ষিত রাখে। এছাড়াও পালং শাকে একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর মতন ফ্রি র্যাডিক্যাল এবং কার্সিনোজেন প্রতিরোধ করতে পারে (3) ।
৩. চোখের সুস্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক
চোখের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার ক্ষেত্রেও পালং শাক খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। চোখের দৃষ্টি শক্তির সুস্থ্যতা বজায় রাখার জন্য খাদ্য হিসেবে প্রচুর পরিমাণে সবুজ শাক সবজি গ্রহণ করা দরকার। সবুজ শাক সব্জির মধ্যে অন্যতম হলো পালং শাক (4)। পালং শাকে রয়েছে ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি। এই দুইয়ের উপস্থিতি বিভিন্ন প্রকার চোখের অসুখ বিশেষত ম্যাকুলার ক্ষয়ের ঝুঁকি হ্রাস করে। এছাড়াও পালং শাকে উপস্থিত ল্যুটেইন এবং জেক্সানন্থিন যৌগ শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মতন কাজ করে যা ম্যাকুলা (রেটিনার কেন্দ্রবিন্দু) এর পিগমেন্ট ডেনসিটি নিয়ন্ত্রণে রাখার ক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে (5)।
৪. হাড়ের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখে
হাড়ের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য ক্যালসিয়ামকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি পৌষ্টিক উপাদান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। হাড়ের পুষ্টি, বৃদ্ধি, এবং হাড়কে শক্তিশালী করে রাখার জন্য ক্যালসিয়াম খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পালং শাকে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়াম। আর তাই হাড়ের সুস্থ্যতা বজার রাখার জন্য খাদ্য তালিকায় পালং শাকের উপস্থিতি একান্ত ভাবেই কাম্য (6)।
৫. মস্তিষ্ক এবং স্নায়বিক কার্যাবলী
ইতিমধ্যেই জানতে পারা গেছে যে পালং শাকে পর্যাপ্ত পরিমানে ক্যালসিয়ামের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। ক্যালসিয়াম হাড় এবং স্নায়ুতন্ত্রের কার্যাবলীর মধ্যে সমতা বজায় রাখে।
এছাড়াও পালং শাকে রয়েছে ভিটামিন কে, ল্যুটেইন, ফলেট, বিটা ক্যারোটিন যা মস্তিষ্ক সুস্থ্য রাখার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শুধু তাই নয় খাদ্য হিসেবে পালং শাক গ্রহণ করলে স্মৃতি শক্তি শক্তিশালী হয় (7)।
৬. হার্ট অ্যাটাকের সম্ভবনা হ্রাস করে
হার্ট অ্যাটাক বা হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা এড়ানোর জন্য পালং শাক গ্রহণ খুবই জরুরী। নাইট্রোজেন সমৃদ্ধ শাক সব্জির তালিকায় পালং শাক অন্যতম একটি নাম। এই নাইট্রোজেন সমৃদ্ধ শাক সবজি স্ট্রোক এবং হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সম্ভবনা অনেকটাই কমিয়ে দেয় (8)।
৭. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রক
খাদ্য তালিকায় পালং শাক অন্তর্ভূক্ত করলে রক্তচাপ বৃদ্ধির ফলে সৃষ্ট যাবতীয় শারীরিক সমস্যা হ্রাস করে দেয়। পালং শাকে নাইট্রোজেন যুক্ত থাকে যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে রাখার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। একইসাথে রক্তচাপ নিয়ত্রনে থাকার ফলে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনাও একেবারেই কমে যায় (9) ।
এছাড়াও পালং শাকে প্রোটিন (এক প্রকারের এনজাইম) রয়েছে যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে রাখতে সহায়তা করে (10) ।
৮. রক্তাল্পতা বা অ্যানিমিয়া নাশক
গর্ভাবস্থায় থাকাকালীন সময়ে, শরীরে অ্যানিমিয়া (শরীরে লোহিত রক্ত কনিকার ঘাটতি) এর প্রকোপ সর্বাধিক দেখতে পাওয়া যায়। শরীরে আয়রনের ঘাটতির কারণেই মূলত রক্তাল্পতা দেখা যায়। তাই রক্তাল্পতার সম্ভবনা কম করার জন্য শরীরে পর্যাপ্ত পরিমানে আয়রনের উপস্থিতি জরুরী। খাদ্য হিসেবে পালং শাক গ্রহণের মাধ্যমে শরীরে আয়রনের প্রয়োজনীয় মাত্রা বজায় থাকে (11)।
৯. প্রদাহ নাশক
পালং শাক শরীরের সুস্থ্যতা বজায় রাখার জন্য প্রদাহ নাশক হিসেবে কাজ করে। আসলে প্রদাহ নাশক বা অ্যান্টি ইনফ্লেমেটারি বৈশিষ্ট্য ক্ষতস্থানের দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা এবং ফোলা ভাবের সহজে উপশম করে। তাই প্রদাহ নাশক খাদ্য তালিকায় পালং শাককে অনায়াসেই অন্তর্ভূক্ত করা যেতে পারে (12)।
১০. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
শরীর রোগ মুক্ত রাখার জন্য শরীরে অনাক্রম্যতা বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা মজবুত থাকা জরুরী। পালং শাকে পর্যাপ্ত পরিমান ভিটামিন ই রয়েছে, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে (13)।
১১. পরিপাক ক্রিয়ায় সহায়তা করে
পাচনতন্ত্র যকৃৎ বা লিভার, প্যাঙ্ক্রিয়াস বা অগ্ন্যাশয়, এবং পিত্তাশয় বা গলব্লাডার ইত্যাদির সমন্বয়ে গঠিত। পাচনতন্ত্র খাদ্য গ্রহণ থেকে শুরু করে খাদ্য সম্পূর্ণ রূপে হজম হওয়া পর্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। খাদ্য পরিপাকের ক্ষেত্রে পালং শাকের ভূমিকা অনস্বীকার্য কারণ এতে রয়েছে ভরপুর মাত্রায় ফাইবার। এই ফাইবার খাদ্য হজম করার ক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করে। এছাড়াও ফাইবার গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টাইন ট্রাক বা পরিপাক নালিকার সুস্থ্যতা বজায় রাখার জন্য কোলন ক্যান্সার এবং কোষ্ঠ্যকাঠিন্যের সমস্যা প্রতিরোধ করতে পারে (14) ।
১২. ক্যালসিফিকেশনের চিকিৎসায়
ক্যালসিফিকেশন হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যখন শরীরের কোষে অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম জমা হয়ে কোষগুলিকে কঠিন করে তোলে। এই প্রক্রিয়া শরীরের পক্ষে ভালো বা মন্দ দুই রকম প্রভাব ফেলতে পারে। ক্যালসিফিকেশন প্রতিরোধে পালং শাক খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বলে মনে করা হয়। কারণ পালং শাক আয়রন সমৃদ্ধ হওয়ার কারণে আয়রন সহজেই ক্যালসিফিকেশন প্রক্রিয়া বন্ধ করতে সহায়তা করে (15) ।
১৩. আয়রণের ঘাটতি পূরণ করে
সাধারণত আয়রণ সমৃদ্ধ শাক সব্জির কথা বললে প্রথমেই পালং শাকের নাম উঠে আসে। পালং শাকের পূর্বোক্ত উপকারীতা গুলির মধ্যে আগেই জানা গেছে যে শরীরে আয়রণের অভাব হলে রক্তাল্পতা দেখা যায়। তাই শরীরে আয়রনের মাত্রা বজায় রাখার জন্য পালং শাক গ্রহণ করা খুবই জরুরী।
১৪. শরীরের ক্লান্তি নাশক
সারাদিন অক্লান্ত পরিশ্রমের পর দিনের শেষে ক্লান্তি খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। তাই অতিরিক্ত কাজের চাপে শরীর যাতে সহজে ভেঙে না পরে সেই জন্য খাদ্য হিসেবে পালং শাক গ্রহণ করা জরুরী। কারণ পালং শাকে রয়েছে ক্যালসিয়াম যা অনায়াসেই পেশির ক্লান্তি দূর করে। বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক গবেষণা থেকে এই তথ্য জানতে পারা গেছে।
১৫. গর্ভাবস্থায় পালং শাকের প্রয়োজনীয়তা
গর্ভাবস্থায় মহিলাদের সুষম আহার গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরী। সুষম আহারের তালিকায় পালং শাকের উপস্থিতি খুবই দরকার। এই সময় মহিলাদের শরীরে ফোলেট নামক পৌষ্টিক উপাদানের প্রয়োজন হয় যা গর্ভস্থ শিশুর স্নায়বিক ত্রুটির ( জন্মগত শারীরিক ত্রুটি ) ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। গর্ভবতী মায়েদের শরীরে ফলেটের পরিমাণ বজার রাখার জন্য পালং শাক গ্রহণ খুবই জরুরী। এছাড়াও গর্ভবতী মহিলাদের শরীরে রক্তাল্পতা কমাতে এবং কোষ্ঠ্য কাঠিন্যের সমস্যা দূর করার জন্য পালং শাক গ্রহণ দরকার (16) ।
১৬. পেশীর শক্তি বর্দ্ধক
পেশী শক্তি বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও পালং শাকের গুরুত্ব অপরিসীম বলে মনে করা হয় কারণ পালং শাকে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ আয়রন। একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণা থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে জানা যায় যে পালং শাক পেশি শক্তি বৃদ্ধি এবং পেশীর সুস্থ্যতা বজায় রাখতে খুবই উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে (17)।
১৭. ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি
পালং শাক আয়রন সমৃদ্ধ হয় যা ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সহায়তা করে। আয়রন পেরিওরবিটাল হাইপারপিগমেন্টেশান বা চোখের তলার কালো দাগ দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও পালং শাকে উপস্থিত ভিটামিন সি ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখে, অ্যামাইনো অ্যাসিড অ্যান্টিএজিং এর সমস্যা দূর করে, সূর্যের ক্ষতিকারক অতিবেগুনী রশ্মির প্রভাব থেকে ত্বককে রক্ষা করে। এমনকি পালং শাক খাদ্য হিসেবে গ্রহণের ফলে ত্বকের অবাঞ্চিত দাগ ছোপের সমস্যা থেকেও অনায়াসেই মুক্তি পাওয়া যায়।
১৮. চুলের সৌন্দর্য বর্দ্ধক
চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধির ক্ষেত্রে খনিজ পদার্থ বা মিনারেলসের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পালং শাকে উপস্থিত খনিজ উপাদানের মধ্যে জিঙ্ক এবং ম্যাগনেশিয়াম চুলের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সহায়তা করে। এছাড়াও এই দুই খনিজ উপাদান চুল ঝরে যাওয়ার সম্ভবনাও অনেকটাই কমিয়ে দেয়।
পালং শাকের পৌষ্টিক উপাদান
পালং শাকের পৌষ্টিক উপাদান গুলি হলো নিম্নরূপ –
পৌষ্টিক উপাদান | প্রতি ১০০ গ্রামে |
---|---|
জল | ৯১.৪০ গ্রাম |
শক্তি | ২৩ কিক্যালোরি |
প্রোটিন | ২.৮৬ গ্রাম |
মোট লিপিড | ০.৩৯ গ্রাম |
কার্বোহাইড্রেট | ৩.৬৩ গ্রাম |
মোট ডায়টারী ফাইবার | ২.২ গ্রাম |
মোট শর্করা | ০.৪২ গ্রাম |
মিনারেলস | |
ক্যালসিয়াম | ৯৯ মিলিগ্রাম |
আয়রন | ২.৭১ মিলিগ্রাম |
ম্যাগনেশিয়াম | ৭৯ মিলিগ্রাম |
ফসফরাস | ৪৯ মিলিগ্রাম |
পটাশিয়াম | ৫৫৮ মিলিগ্রাম |
সোডিয়াম | ৭৯ মিলিগ্রাম |
জিঙ্ক | ০.৫৩ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন | |
ভিটামিন সি, মোট অ্যাসকরবিক অ্যাসিড | ২৮.১ মিলিগ্রাম |
থায়ামিন | ০.০৭৮ মিলিগ্রাম |
রাইবোফ্লাবিন | ০.১৮৯ মিলিগ্রাম |
নিয়াসিন | ০.৭২৪ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন বি ৬ | ০.১৯৫ মিলিগ্রাম |
ফলেট, ডীপফাই | ১৯৪ মাইক্রোগ্রাম |
ভিটামিন বি ১২ | ০০ মাইক্রোগ্রাম |
ভিটামিন এ, আরএই | ৪৬৯ মাইক্রোগ্রাম |
ভিটামিন এ , আইইউ | ৯৩৭৭ আই ইউ |
ভিটামিন ই (আলফা টোকোফেরল) | ২.০৩ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন ডি (ডি২+ডি৩) | ০০ মাইক্রোগ্রাম |
ভিটামিন ডি | ০ আইইউ |
ভিটামিন কে, ফ্যাইলোক্যুইনন | ৪৮২.৯ মাইক্রোগ্রাম |
লিপিড | |
মোট স্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড | ০.০৬৩ গ্রাম |
মোট মনো আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড | ০.০১০ গ্রাম |
মোট, পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড | ০.১৬৫ গ্রাম |
সূত্র – (USDA)
পালং শাক খাওয়ার সঠিক সময় এবং পদ্ধতি
খাদ্য হিসেবে যে যে উপায়ে পালং শাক গ্রহণ করা যায়। সেগুলি হলো যথাক্রমে –
- তরকারী হিসেবে পালং শাক খাওয়া যেতে পারে।
- সবুজ স্যালাডে পালং শাক ব্যবহার করা হয়।
- পালং শাকের রস বা জুস বানিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
- ডালের মধ্যে পালং শাক দিয়ে রান্না করে খাওয়া যায়।
- পালং শাকের পরোটা তৈরী হয়, যা খুবই সুস্বাদু হয়।
- পালং শাকের সাথে পনির সহযোগে পালং পনির রান্না করে খাওয়া হয়।
খাদ্য হিসেবে পালং শাক গ্রহণের সঠিক সময় –
- পালং শাকের রসের উপযোগীতার দিকে লক্ষ্য রেখে, এই রস সকালবেলা পান করা যেতে পারে।
- পালং শাকের তরকারী দিনে অথবা রাতে যে কোনো সময়ই গ্রহণ করা যায়।
- পালং শাক সহযোগে স্যালাড দিনের বেলায় গ্রহণ করা যেতে পারে।
পালং শাক বেছে নেওয়ার এবং মজুত করে রাখার সঠিক উপায় কী ?
পালং শাক বেছে নেওয়ার সঠিক উপায় গুলি হলো নিম্নরূপ –
- পালং শাক বেছে নেওয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেনো শাকের রং প্রাকৃতিক উপায়ে স্বাভাবিক সবুজ হয়।
- শাক কেনার সময় যদি তা থেকে কোনো রকম দুর্গন্ধ বের হয় তবে তা না কেনাই বাঞ্ছনীয়।
- পালং শাক কেনার সময় আরোও একটি জিনিসে নজর দিতে হবে শাকের গায়ে যেনো ধূলো, বালি, মাটি লেগে না থাকে।
- সবসময় টাটকা পালং শাক কেনা উচিৎ।
পালং শাক মজুত রাখার সঠিক উপায় –
- পালং শাক এয়ারটাইট ব্যাগে ভরে ৩-৫ দিন পর্যন্ত ফ্রিজে রাখা যায়।
- এছাড়া আনাজের ঝুড়ির মধ্যে করে খোলা হাওয়াতেও রাখা যায়।
- পালং শাকের সতেজতা বজায় রাখার জন্য ভিজে কাপড়ে জড়িয়েও রাখা যেতে পারে।
পুনশ্চঃ – এয়ার টাইট প্যাকেটে রাখা পালং শাক নির্দিষ্ট সময়সীমার শেষ দিন অবধি ব্যবহার করা যায়।
পালং শাকের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
খাদ্য হিসেবে পালং শাক গ্রহণের যেমন একাধিক উপকারীতা হয়েছে ঠিক একই রকম ভাবে রয়েছে বহু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া। পালং শাকের উপকারীতা গুলি জেনে নেওয়ার পর এবার অপকারীতা বা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্বদ্ধে জেনে নেওয়া যাক –
- পালং শাকে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমান ক্যালসিয়াম। শরীরে অধিক পরিমান ক্যালসিয়ামের উপস্থিতি অনেক সময় হৃদরোগ বা হার্ট সংক্রান্ত একাধিক শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি করে।
- পালং শাকে রয়েছে ফাইবার। কিন্তু অতিরিক্ত ফাইবার গ্রহণের ফলে পেট ফাঁপা, গ্যাস, এমনকি হজমের সমস্যা পর্যন্ত দেখা দিতে পারে (18)।
- পালং শাকে উপস্থিত বিটা ক্যারোটিন ( ফল এবং শাক সব্জির মধ্যস্থিত ভিটামিন এ এর একটি প্রকারভেদ), ধূমপায়ী মানুষদের শরীরে ক্যান্সার বা কর্কট রোগের সম্ভবনা তৈরী করে।
- পালং শাকে অতিরিক্ত পরিমান পটাশিয়ামের উপস্থিতি দেখতে পাওয়া যায়। শরীরে অতিরিক্ত পটাসিয়ামের উপস্থিতি বমি, ডায়রিয়া ইত্যাদি সমস্যারও সৃষ্টি করতে পারে (19) ।
ওপরের প্রবন্ধটি থেকে পালং শাকের যাবতীয় উপকারীতা, স্বাস্থ্য গুণ, পৌষ্টিক উপাদান, পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ইত্যাদি সম্পর্কে পাঠকের সম্যক ধারণা হয়েছে বলে আশা করা যায়। তবে খাদ্য হিসেবে পালং শাক গ্রহণের ফলে ওপরে বর্ণিত শারীরিক সমস্যা সহ অন্যান্য যে কোনো রকম শারীরিক অস্বস্তির সম্মুখীন হলেই অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা দরকার।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী
খাদ্য হিসেবে পালং শাক গ্রহণ কাদের জন্য ক্ষতিকর?
যেহেতু পালং শাকে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন এ(বি ক্যারোটিন) পাওয়া যায় যা ধূমপায়ী ব্যক্তিদের ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা প্রবণ করে তোলে, তাই ধূমপায়ী ব্যক্তিদের পালং শাক গ্রহণ না করাই বাঞ্ছনীয়। এছাড়াও গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে খাদ্য হিসেবে পালং শাক গ্রহণ গর্ভস্থ শিশুর জন্য ক্ষতিকারক বলে মনে করা হয়।
প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় পালং শাক অন্তর্ভূক্ত করা কী সঠিক?
পালং শাক মানুষের সুস্বাস্থ্য গঠনের জন্য উপকারী ঠিকই, তবেই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় পালং শাকের উপস্থিতি শরীরে উপকারের বদলে বেশি অপকার করতে পারে বলে মনে করা হয়।
কাঁচা পালং শাক খাওয়া কী স্বাস্থ্যকর?
কাঁচা পালং শাকের পৌষ্টিক গুরুত্ব বেশি হলেও, এটা গ্রহণের ফলে পরিপাকজনিত একাধিক শারীরিক সমস্যা দেখা যায়। তাই খাদ্য হিসেবে কাঁচা পালং শাক গ্রহণ না করাই শ্রেয়।
পালং শাককে সুপার ফুড বলে মনে করা হয় কেনো?
এর কারণ হলো পালং শাকে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি ইনফ্লেমেটারি উপাদান যা আমাদের শরীরকে নানাবিধ অসুখের হাত থেকে অনায়াসেই রক্ষা করতে পারে।
পালং শাক কী ওজন কমাতে সাহায্য করে?
পালং শাকে রয়েছে কম ক্যালোরি আর বেশি ফাইবার। তাই পালং শাক ওজন কমানোর ক্ষেত্রে সরাসরি সাহায্য না করলেও কম ক্যালোরিযুক্ত খাদ্যের তালিকায় পালং শাক যোগ করলে ওজন কমানোর ক্ষেত্রে কাজে আসে।
19 sources
- How to Use Fruits and Vegetables to Help Manage Your Weight –
https://www.cdc.gov/healthyweight/healthy_eating/fruits_vegetables.html - Maintaining a Healthy Weight On the Go A Pocket Guide –
https://www.nhlbi.nih.gov/files/docs/public/heart/AIM_Pocket_Guide_tagged.pdf - Cut Cancer Risks with Spinach –
https://extension.psu.edu/cut-cancer-risks-with-spinach - Keep Your Eyes Healthy –
https://www.nei.nih.gov/learn-about-eye-health/healthy-vision/keep-your-eyes-healthy - Top foods to help protect your vision –
https://www.health.harvard.edu/staying-healthy/top-foods-to-help-protect-your-vision - Calcium and bones –
https://medlineplus.gov/ency/article/002062.htm - Foods linked to better brainpower –
https://www.health.harvard.edu/mind-and-mood/foods-linked-to-better-brainpower - A salad a day keeps stroke away?
https://www.health.harvard.edu/heart-health/a-salad-a-day-keeps-stroke-away - Flavonoid-rich apples and nitrate-rich spinach augment nitric oxide status and improve endothelial function in healthy men and women: a randomized controlled trial –
https://pubmed.ncbi.nlm.nih.gov/22019438/ - Antihypertensive properties of spinach leaf protein digests –
https://pubmed.ncbi.nlm.nih.gov/15080624/ - Anemia –
https://medlineplus.gov/anemia.html - Foods that fight inflammation –
https://www.health.harvard.edu/staying-healthy/foods-that-fight-inflammation - Vitamin E –
https://medlineplus.gov/ency/article/002406.htm - High Fiber Diets: Their Role in Gastrointestinal Disorders –
https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC2153876/ - Calcification –
https://medlineplus.gov/ency/article/002321.htm - Pregnancy & Diet –
https://www.betterhealth.vic.gov.au/health/healthyliving/pregnancy-and-diet - Healthy Muscles matters –
https://www.niams.nih.gov/health-topics/kids/healthy-muscles#tab-id-2 - Fiber –
https://medlineplus.gov/ency/article/002470.htm - Potassium –
https://medlineplus.gov/druginfo/meds/a601099.html

Latest posts by StyleCraze (see all)
- সোনা পাতার উপকারিতা এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া | Senna Leaf Benefits and Side Effects in Bengali - April 14, 2021
- বজ্রাসন কীভাবে করবেন এবং এর উপকারিতা কী কী ? জানুন | Benefits of Vajrasana in Bengali - April 9, 2021
- মিছরির উপকারিতা এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া | Mishri Benefits and Side Effects in Bengali - April 9, 2021
- রেড ওয়াইন খাওয়ার উপকারিতা, এর ব্যবহার এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া । Red Wine Benefits and Side Effects in Bengali - April 9, 2021
- রামবুটান এর উপকারিতা, ব্যবহার এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া | Rambutan Benefits, Uses and Side Effects in Bengali - April 9, 2021
