
ঘরোয়া উপায়ে পেটের অসুখ (লুস মোশন) প্রতিকারের উপায় এবং চিকিৎসা পদ্ধতি | How to Control Loose Motion (Dast)
পেট সংক্রান্ত যে কোনো সমস্যার মধ্যে পেটের অসুখ বা পেট খারাপ অন্যতম। এটি এমন এক শারীরিক অবস্থা যখন স্বাভাবিকের তুলনায় মলের প্রকৃতি অনেক পাতলা ধরণের অনেক সময় একেবারে জলের মতন তরলাকারে হয়ে থাকে। এই পরিস্থিতিতে রোগীকে বারবার মলত্যাগ করতে হয়। পেটের অসুখ বা পেট খারাপ ডাইরিয়া বা লুস মোশন নামেও পরিচিত। এই অসুখে শরীরের সব জল বের হয়ে যায় ফলে রোগী খুবই দুর্বল অনুভব করেন। প্রসঙ্গত এই পেট খারাপ সাধারণত দু ধরণের হয় প্রথম ক্ষেত্রে অসুখ ১ – ২ দিন স্থায়ী হয় এবং দ্বিতীয় ক্ষেত্রে অসুখ দীর্ঘস্থায়ী হয়ে ওঠে। স্বভাবতই এই অসুখে আক্রান্ত রোগীর কাছে এটা চিন্তার বিষয় হয়ে ওঠে যে কী করে এই অসুখের নিরাময় হবে। আলোচ্য প্রবন্ধে বিভিন্ন গবেষণার ওপর ভিত্তি করে পেট খারাপ বা ডাইরিয়া প্রতিরোধের ঘরোয়া প্রতিকার সম্বদ্ধে বিশদে আলোচনা করা হবে। তবে একথাও মাথায় রাখা দরকার যে সমস্যা গুরুতর আকার ধারণ করলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিৎ। কারণ এই অসুখ অবহেলা করলে তা প্রাণঘাতীও হয়ে উঠতে পারে।
Table Of Contents
পেটের অসুখের কারণ
এই পরিস্থিতি স্ট্যাফিলোকক্কাস এবং এসচেরিচিয়া কোলি ব্যাক্টেরিয়া এবং ভাইরাসের সংস্পর্শে এলেই সৃষ্টি হয়। এছাড়াও এটি দূষিত এবং অত্যধিক তেল মশলাযুক্ত খাদ্য, জাঙ্ক ফুড ও অ্যালকোহল পানের ফলে হয়ে থাকে। এছাড়াও যে যে কারণ গুলিকে এই সমস্যার জন্য অন্যতম কারণ হিসেবে দায়ী করা যায় সেগুলি হলো নিম্নরূপ – (1)
- ফ্লু, নরোভাইরাস বা রোটাভাইরাসের মতন ভাইরাসের কারণে পেট খারাপ হয়ে থাকে। আর শিশুদের ক্ষেত্রে পেট খারাপের প্রধাণ কারণ হিসেবে রোটাভাইরাসকেই দায়ী করা হয়।
- দূষিত খাদ্য গ্রহণ করলে বা জলের মধ্যস্থিত পরজীবিদের সংক্রমণে হয়।
- অ্যান্টিবায়োটিক্স, ক্যান্সার প্রতিরোধক ওষুধ এবং অ্যান্টাসিড জাতীয় ওষুধ ইত্যাদি যাতে ম্যাগনেসিয়াম থাকে সেগুলি সেবনের কারণে।
- হজম হতে সমস্যা হয় এমন খাদ্য পদার্থ গ্রহণের ফলে।
- এমন কিছু রোগ যা পাকস্থলী এবং ক্ষুদ্রান্ত্রকে প্রভাবিত করে, সেই অসুখে আক্রান্ত হলে।
- কিছু মানুষ আবার পেটের অস্ত্রপ্রচারের পরেও পেট খারাপের সমস্যায় ভোগেন।
পেটের অসুখের উপসর্গ বা লক্ষণ
পেটের অসুখে যে যে লক্ষণ গুলি দেখতে পাওয়া যায় যেগুলি হলো যথাক্রমে – (2)
- পেটে খিঁচুনী সহ ব্যথা যন্ত্রনা।
- বারবার শৌচালয়ে যাওয়ার পরিস্থিতি।
- অন্ত্রের স্বাভাবিক কার্যপ্রক্রিয়া দূর্বল করে দেওয়া।
* যদি ভাইরাস বা ব্যাক্টেরিয়ার কারণে পেট খারাপ হয় তাহলে সেক্ষেত্রে জ্বর, সর্দি এমনকি রক্তাক্ত মল অবধি নির্গিত হতে পারে।
পেট খারাপের ঘরোয়া উপায়ে প্রতিকার
পেট খারাপের বিষয়ে যখন আলোচনা হচ্ছে তখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠবে যে কীভাবে এই শারীরিক সমস্যার প্রতিকার করা যায়। পেট খারাপ নিরামায়ক ওষুধ সেবন করলে এই অসুখের উপশম হয়। তবে অনেক সময় এমনও দেখা যায় যে ওষুধ সেবনের ফলে বেশ কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার জন্ম হচ্ছে। তাই সেইসব সমস্যা এড়াতে ঘরোয়া উপায়ে প্রতিকারের পথ বেছে নেওয়াই ভালো। সেক্ষেত্রে যে যে উপাদান গুলি গুরুত্বপূর্ণ সেগুলি সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো –
১। নারকেল জল
উপকরণ –
- ১ – ২ গ্লাস নারকেল জল
ব্যবহার পদ্ধতি
- দিনে ১ – ২ বার নারকেল জল পান করতে হবে।
- ১ সপ্তাহ যাবত এই অভ্যাস বজায় রাখতে হবে।
কিভাবে কাজ করে
ঘরোয়া উপায়ে পেটের অসুখের সমস্যা প্রতিকারে নারকেল জলের গুরুত্ব অপরিসীম। পেটের অসুখের ফলে শরীরে গ্লুকোজ বা শর্করা এবং জলের ঘাটতি তৈরী হয়। নারকেলের জল এই ঘাটতি পূরণ করতে সহায়তা করে। এনসিবিআই (ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশন) ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি গবেষণা অনুসারে জানা যায় যে নারকেল জল, গ্লুকোজ ইলেক্ট্রোলাইট দ্রবণ আকারে স্বল্পস্থায়ী পেটের অসুখ নিরাময় করে থাকে। সারা বিশ্বে গ্লুকোজ ইলেক্ট্রোলাইট হিসেবে নারকেল জলকে মৌখিক হাইড্রেটিং পাণীয় হিসেবেও ব্যবহার করা হয়। তাই পেট খারাপের ফলে ডিহাইড্রেশানে আক্রান্ত রোগীদের পাণীয়ের ঘাটতি দূর করার জন্য নারকেল জল খুবই উপকারী পাণীয় হিসেবে পরিগণিত হয়। তবে পেট খারাপ তীব্র মাত্রায় দেখা দিলে এবং তারসাথে যদি আক্রান্ত ব্যক্তি কিডনির সমস্যা ভোগেন তাহলে নারকেলের জল ক্ষতিকারক হয়ে উঠতে পারে। সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা জরুরী। (3)
২। দই
উপকরণ –
- ১ কাপ দই
ব্যবহার পদ্ধতি –
- খাদ্য গ্রহণের শেষে দই গ্রহণ করা যেতে পারে।
- প্রতিদিন ২ বার ১ বাটি করে দই খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করা যেতে পারে।
কিভাবে কাজ করে –
ঘরোয়া উপায়ে পেট খারাপের চিকিৎসায় দই খুবই উপকারী পথ্য হিসেবে মনে করা হয়। দই স্থিত ব্যাক্টেরিয়া অন্ত্র সুস্থ্য রাখতে সহায়তা করে। এনসিবিআই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত গবেষণা সূত্রে জানা যায় যে দইতে রয়েছে প্রোবায়োটিক ল্যাক্টিক অ্যাসিড ব্যাক্টেরিয়া (ল্যাক্টোবাসিলি)। এই ব্যাক্টেরিয়া পেট খারাপ সৃষ্টিকারী ব্যাক্টেরিয়া নির্মূল করে। এবং শরীরকে পেট খারাপের প্রবণতা থেকে মুক্ত রাখে। (4)
৩। জিরা ভেজানো জল
উপকরণ –
- ১ চামচ জিরা
- ১ গ্লাস জল
ব্যবহার পদ্ধতি –
- জলে জিরা মিশিয়ে প্রায় ১০ মিনিট সময় ধরে ভালো করে ফোটাতে হবে।
- এবার ঐ জল ছেঁকে নিয়ে তা ঠাণ্ডা করে ধীরে ধীরে পান করতে হবে।
- দিনে ৩ – ৪ বার এই পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে।
কিভাবে কাজ করে –
জিরা এমন একটি পুষ্টিকর মশলা যা ঘরোয়া উপায়ে পেট খারাপ নিরাময়ের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিভিন্ন গবেষণা থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে জিরা একটি প্রাচীনতম ভেষজ। জিরা দানা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং হজম শক্তি উন্নত করতে সহায়তা করে। এছাড়াও জিরা স্থিত পুষ্টিগুণ পেট খারাপের যন্ত্রণাদায়ক পরিস্থিতির অবসান ঘটায়। জিরার উপকারীতার ভিত্তিতে বলা যেতে পারে যে জিরা পেট ব্যথা নির্মূল করতে এবং পেট খারাপের চিকিৎসায় কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। অবশ্য জিরার গুণগত মান পেট খারাপকে কিভাবে প্রভাবিত করে সেই বিষয়ে প্রয়োজনীয় গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। (5)
৪। পাতিলেবুর রস
উপকরণ –
- ১/২ পাতিলেবু
- ১ গ্লাস জল
- চিনি স্বাদ অনুসারে
ব্যবহার পদ্ধতি –
- ১ গ্লাস জলে ১/২ পাতিলেবুর রস বের করে নিতে হবে।
- এবার স্বাদ অনুসারে চিনি মিশিয়ে সেটা পান করতে হবে।
- প্রতি ২ ঘন্টা অন্তর এই সরবত পান করা দরকার।
কিভাবে কাজ করে –
পেট খারাপ বা ডাইরিয়া প্রতিরোধক ঘরোয়া প্রতিকার হিসেবে পাতিলেবুর জল বা লেমোনেড একটি খুবই জনপ্রিয় এবং স্বাস্থ্যকর উপায়। পাতিলেবু অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এবং অ্যালকেমিক বৈশিষ্ট্যযুক্ত হয় যা আক্রান্ত অন্ত্রের জন্য আরামদায়ক হয় এবং একইসাথে এসচেরিয়াকোলি নামক পেট খারাপ সৃষ্টিকারী ব্যাক্টেরিয়া নির্মূল করতে সহায়তা করে। যদিও পাতিলেবুর উপকারীতা সম্বদ্ধে এখনও অনেক গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। (6) (7)
৫। ক্যামোমাইল টি
উপকরণ –
- ১ – ২ চামচ ক্যামোমাইল টি
- ১ কাপ জল
- মধু
ব্যবহার পদ্ধতি –
- ১ – ২ চামচ ক্যামোমাইল চা জলে দিয়ে ভালোভাবে ফুটিয়ে নিতে হবে।
- একটু ঠাণ্ডা করে সেটা ছেঁকে নিতে হবে।
- এবার ঐ চা তে মধু মিশিয়ে পান করা যাবে।
- এইভাবে প্রতিদিন ৩ বার ক্যামোমাইল টি পান করা যেতে পারে।
কিভাবে কাজ করে –
ক্যামোমাইল টি এমন একপ্রকার পথ্য যাতে রয়েছে ডায়রিয়া প্রতিরোধক বৈশিষ্ট্য। শুধু তাই নয় ক্যামোমাইলে রয়েছে এমন কিছু পুষ্টি গুণ যা হজম শক্তি উন্নত করে, বদহজমের প্রবণতা হ্রাস করে, মোশন সিকনেসের সম্ভবনা কম করে, বমি ভাব সহ সকল প্রকার পেটের সমস্যার উপশম করে। এইসব কারণে পেটের সমস্যা এবং পেট খারাপ নিরাময়ের জন্য ক্যামোমাইল টি এর ওপর নির্ভর করা যেতেই পারে। একইসাথে ঘরোয়া উপায়ে পেট খারাপ নিরাময়ের জন্য ক্যামোমাইল টি অন্তর্ভূক্ত করা যায়। (8) (9)
৬। মেথি দানা
উপকরণ –
- ২ চামচ মেথি দানা
- ১ গ্লাস জল
ব্যবহার পদ্ধতি –
- মেথি দানা গুলিকে ১৫ মিনিট ভিজিয়ে রাখতে হবে।
- এরপর জলে ভেজানো মেথি দানা গুলিকে গুঁড়ো করে জলে মিশিয়ে নিতে হবে।
- এবার ঐ মিশ্রিত জল পান করতে হবে।
- দিনে ২ – ৩ বার এই পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে।
কিভাবে কাজ করে –
মেথি দান এবং মেথি তেল অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল বা ব্যাক্টেরিয়া নাশক বৈশিষ্ট্যযুক্ত হয়। এছাড়াও এসচেরিয়া কোলাই নামক ব্যাক্টেরিয়া নির্মুল করতে সহায়তা করে। ইতিমধ্যেই বলা হয়েছে যে এসচেরিয়া কোলাই নামক ব্যাক্টেরিয়া পেট খারাপের অন্যতম একটি কারণ। তাই যে কোনো ধরণের পেটের সমস্যায় বিশেষত পেট খারাপ বা ডায়রিয়ার ক্ষেত্রে মেথি বীজ গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়। (10)
৭। আপেল সিডার ভিনিগার
উপকরণ –
- ২ চামচ আপেল সিডার ভিনিগার
- ১ গ্লাস গরম জল
- ১ চামচ মধু
ব্যবহার পদ্ধতি –
- ১ গ্লাস জলে ভালো ভাবে আপেল সিডার ভিনিগার মিশিয়ে নিতে হবে।
- এরপর এতে ১ চামচ মধু মিশিয়ে নিতে হবে।
- এবার এই পাণীয় ধীরে ধীরে পান করতে হবে।
- দিনে ১ – ২ বার এই পানীয় পান করা যেতে পারে।
কিভাবে কাজ করে –
পেট খারাপের চিকিৎসায় আপেল সিডার ভিনিগারের ভূমিকা অতুলনীয়। আপেল সিডার ভিনিগার অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্যযুক্ত হয় এবং একইসাথে এটি একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিক। আপেল সিডার ভিনিগারের এইসব বৈশিষ্ট্য গুলি ব্যাক্টেরিয়া সংক্রমণের ফলে সৃষ্ট পেটের অসুখের চিকিৎসায় কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। উল্লেখ্য পেটের অসুখের সংক্রমণের জন্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এসচেরিয়া কোলাই অথবা সালমোনেলা নামক ব্যাক্টেরিয়াকে দায়ী করা হয়। যদিও এই বিষয়ে এখনও অনেক গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। (11)
৮। আদা
উপকরণ –
- ১ – ২ চামচ আদার রস
- ১/২ চামচ মধু
ব্যবহার পদ্ধতি –
- আদার রস মধুর সাথে মিশিয়ে নিতে হবে।
- এবার এই মিশ্রণ টি পান করতে হবে।
- দিনে ২ – ৩ বার এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে।
কিভাবে কাজ করে –
পেটের অসুখ প্রতিরোধে আদা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভেষজ দ্রব্য হিসেবে পরিচিত। আদা ব্যাক্টেরিয়া নাশক এবং অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্যযুক্ত হয়। এই কারণে আদা সহজেই পরিপাক তন্ত্র এবং অন্ত্রের সংক্রমণ হ্রাস করে ঐসমস্ত অঙ্গকে শিথিল করে দেয়। বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা যায় যে আয়্রুর্বেদ শাস্ত্র মতে আদা পেট সম্বদ্ধীয় যাবতীয় সমস্যা অনায়াসে প্রতিকার করে এবং হজমের সমস্যা এবং কোষ্ঠ্য কাঠিন্যের সমস্যারও নিরাময় করে। আদার মধ্যস্থিত সক্রিয় জৈব যৌগ এসচেরিয়া কোলাই এবং হিট লোবাইল নামক ব্যাক্টেরিয়া নাশ করে ডায়রিয়ার সংক্রমণ প্রতিহত করে। (12)
৯। মধু এবং পুদিনা
উপকরণ –
- ১ চামচ পুদিনার রস
- ১ চামচ পাতিলেবুর রস
- ১ চামচ মধু
- ১ কাপ গরম জল
ব্যবহার পদ্ধতি –
- উপরিক্তো উপাদান গুলি একসাথে মিশিয়ে নিতে হবে।
- এরপর এই মিশ্রণ টিকে ১ কাপ গরম জলের সাথে মিশিয়ে নিতে হবে।
- এবার এই পানীয় ধীরে ধীরে পান করতে হবে।
- এই প্রক্রিয়া দিনে ২ বার অনুসরণ করা যেতে পারে।
কিভাবে কাজ করে –
পুদিনা বা পিপারমেন্ট পেট খারাপের ঘরোয়া উপায়ে চিকিৎসার ক্ষেত্রে খুবই উপকারী একটি পথ্য। এবসিবিআই এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত গবেষণা থেকে তা জানা যায়। গবেষণা সূত্রে আরোও জানা যায় যে পেটের খারাপের সমস্যা নিরাময়ে পুদিনা তেল খুবই উপাদেয়। পথ্য হিসেবে পুদিনা ব্যবহার করলে পেটের ব্যথার উপশম হয়। পাতিলেবুর সাথে, মধু সহযোগে পুদিনা পাতা মিশ্রণ গ্রহণ করলে তা পেটের সুস্বাস্থ্য রক্ষার জন্য খুবই কার্যকরী হয়ে ওঠে। মধুর অ্যান্টি ব্যাক্টেরিয়াল বৈশিষ্ট্য এবং অ্যান্টি ইনফ্লেমেবল বৈশিষ্ট্য পাকস্থলীর সংক্রমণ নিরাময় করে ব্যাক্টেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করে। তবে এক্ষেত্রে পরিমিত পরিমাণে পুদিনা গ্রহণ জরুরী। (13)
১০। দারচিনি এবং মধু
উপকরণ –
- ১/২ চামচ দারচিনি গুড়ো
- ১ চামচ মধু
- ১ গ্লাস অল্প গরম জল
ব্যবহার পদ্ধতি –
- ১ গ্লাস অল্প গরম জলে দারচিনি গুড়ো এবং মধু মিশিয়ে ভালো করে গুলে নিতে হবে।
- এবার এই পাণীয় অল্প অল্প করে পান করতে হবে।
- এই পানীয় দিনে ২ – ৩ বার পান করা যেতে পারে।
কিভাবে কাজ করে –
দারচিনি পেটের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। এটি অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি ইনফ্লেমেটারি বৈশিষ্ট্য যুক্ত হয়। এই অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য ই কোলাই নামক ব্যাক্টেরিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এই ব্যাক্টেরিয়া ডায়রিয়া রোগের সৃষ্টি করে। ইউনাইটেড স্টেটস ন্যাশানাল লাইইব্রেরি অফ মেডিসিন দ্বারা পরিচালিত একটি গবেষণা থেকে জানা যায় যে দারচিনি ডায়রিয়ার চিকিৎসায় কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এর সাথে মধু যুক্ত হলে এই মিশ্রণ আরোও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। (14)
১১। দালিয়া
উপকরণ –
- ১ কাপ দালিয়া
- ২ – ৩ কাপ জল
- ১/২ – ১ চামচ তেল
- লবণ (স্বাদ অনুসারে)
ব্যবহার পদ্ধতি –
- প্রথমে কুকারে তেল ঢালতে হবে।
- তেল গরম হয়ে গেলে তাতে দালিয়া দিয়ে নেড়ে চেড়ে নিতে হবে।
- এরপর এতে জল ঢেলে কুকারের ঢাকনা বন্ধ করে দিতে হবে।
- ২ – ৩ টি সিটি বাজার পর, গ্যাসের আঁচ কম করে দিতে হবে।
- ২ – ৩ মিনিট এইভাবে কম আঁচে রান্না করতে হবে।
- রান্না সম্পূর্ণ হয়ে গেলে সেটা খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করতে হবে।
কিভাবে কাজ করে –
ওট ব্রান বা দালিয়া ডায়রিয়ার চিকিৎসায় খুবই কার্যকরী হিসেবে প্রমাণিত হতে পারে। এই ব্যাপারে এইচআইভি আক্রান্ত ৫১ জন রোগীকে ২ সপ্তাহ ধরে পরীক্ষা করা হয়। পরবর্তীতে রোগীদের থেকে তাদের অভিজ্ঞতা জানতে চাইলে জানা যায় যে খাদ্য হিসেবে দালিয়া গ্রহণের ফলে তাদের স্বাস্থ্যোন্নতি ঘটেছে। এই গবেষণা সম্বদ্ধে এনসিবিআই ওয়েবসাইটে বিস্তারিত জানা যায়। অবশ্য দালিয়ার গুরুত্ব সম্বদ্ধে এখনও অনেক গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। (15)
১২। মরিঙ্গা বা সজনে পাতা
উপকরণ –
- ২ – ৪ টি সজনে পাতা
- ১ গ্লাস জল
ব্যবহার পদ্ধতি –
- সজনে পাতা গুলি ১৫ মিনিট ধরে জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে।
- এরপর সজনে পাতা গুলি বেটে, ঐ কাথ ১ গ্লাস জলের সাথে মিশিয়ে নিতে হবে।
- এবার এই মিশ্রিত জল পান করে নিতে হবে।
- এই তরল দিনে ২ – ৩ বার পান করা যেতে পারে।
কিভাবে কাজ করে –
সজনে প্রজাতিকে প্রজাতিকে ড্রাম স্টিক গাছ বলা হয়। এটি স্বাস্থ্যোন্নতিতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। বিভিন্ন ধরণের সংক্রমণ বিশেষত জ্বর এবং পেটের অসুখ নিরাময়ের ক্ষেত্রে এটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও সজনে পাতার নির্যাস অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্যযুক্ত হয় যা ডায়রিয়া সৃষ্টিকারী কলিফর্ম ব্যাক্টেরিয়া নাশ করে। (16)
১৩। লিকার চা এবং পাতিলেবু
উপকরণ –
- ১ চামচ চা পাতা
- ১ চামচ পাতিলেবুর রস
- ১ গ্লাস জল
ব্যবহার পদ্ধতি –
- জলে চা পাতা দিয়ে কিছুক্ষণ সময় ফুটিয়ে নিতে হবে।
- ৫ মিনিট ফোটানোর পর ঐ চা ছেঁকে নিয়ে তাতে পাতিলেবুর রস মিশিয়ে নিতে হবে।
- এরপর এই মিশ্রন টি পান করতে হবে।
- এই পদ্ধতি দিনে ২ বার অনুসরণ করা যেতে পারে।
কিভাবে কাজ করে –
কালো চা পানের অভ্যাস সারা বিশ্বে প্রচলিত রয়েছে। এনসিবিআই ওয়েবসাইটে ডায়রিয়া রোধে কালো চায়ের ভূমিকা সম্বদ্ধে গবেষণা পত্র প্রকাশিত হয়েছে। কালো চা ইরানীয় চিকিৎসা শাস্ত্রেও ডায়রিয়া রোধে ব্যবহার করার উল্লেখ রয়েছে। (17)
পেট খারাপের সময় যে যে খাদ্য গুলি গ্রহণ করা উচিৎ
পেট খারাপ বা ডায়রিয়ার সময় শরীরে শক্তি এবং পুষ্টির যথেষ্ট ঘাটতি দেখতে পাওয়া যায়। তাই এইসময় সঠিক খাদ্য গ্রহণের প্রয়োজন। তেল মশলাযুক্ত খাদ্য বিশেষত জাঙ্ক ফুড এড়িয়ে চলাই শ্রেয়। এই পরিস্থিওতিতে যে যে খাদ্য গুলি গ্রহণ করা দরকার এখানে সেগুলি সম্পর্কে বিশদে আলোচনা করা হলো। (18)
কলা – পেট খারাপ প্রতিকারের খাদ্য তালিকায় কলা একটি উল্লেখযোগ্য ফল। পটাশিয়াম সমৃদ্ধ কলা বারবার মল ত্যাগের পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রিত করে পরিপাক ক্রিয়াকে মজবুত করে তোলে।
ডালিম – ডায়রিরার সময় ডালিম গ্রহণ করা যেতে পারে। অ্যাস্ট্রিন্যান্ট বৈশিষ্ট্য যুক্ত ডালিম পেট খারাপের সময় বারবার মলত্যাগের গতি রোধ করে। এবং একইসাথে দূর্বল শরীরে শক্তি জোগায়।
স্ট্রবেরী – উপরিল্লিখিত দুটি ফল ছাড়াও আক্রান্ত ব্যক্তি স্ট্রবেরী গ্রহণ করতে পারেন। এতে উপস্থিত ফাইবার মল কে স্বাভাবিক করে এবং এরফলে বারবার মলত্যাগের সম্ভবনা কমে যায়।
ব্রাউন রাইস –: ডায়রিয়ার সময় ব্রাউন রাইসও খাওয়া যেতে পারে। এটি ভিটামিন বি সমৃদ্ধ, যা শরীরের ক্লান্তি রোধ করে। ।
গাজর – ডায়রিয়া বা পেটের অসুখ নিয়ন্ত্রনে গাজর ও খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করা যেতে পারে। গাজরে উপস্থিত পেক্টিন বারবার মলত্যাগের গতি রোধ করে। গাজর ছাড়া এই সময় পেয়েরা গ্রহণ করাও শরীরের জন্য উপাদেয়।
ও আর এস – পেট খারাপের সময় শরীরে প্রয়োজনীয় তরলের অভাব দেখা যায়। ও আর এস এবং এর সাথে চিনি জলে গুলে নির্দিষ্ট অনুপাতে পান করলে ডায়রিয়ার ঘরোয়া পদ্ধতিতে চিকিৎসায় ভীষণভাবে কার্যকরী হয়ে ওঠে।
পেট খারাপ সংক্রান্ত ঝুঁকি
পেট খারাপের সমস্যা শিশু থেকে প্রাপ্ত বয়স্ক সকলের ক্ষেত্রেই ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে। (19)
- ডায়রিয়ার সমস্যা বয়স এবং লিঙ্গ ভেদে সকলকেই প্রভাবিত করতে পারে।
- যা অশুদ্ধ পানীয় জল পান করেন তাদের ক্ষেত্রে ডায়রিয়ার সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হয়।
- বেশি দিন ধরে সংরক্ষিত খাদ্য গ্রহণের ফলে পেট খারাপ হওয়ার সম্ভবনা দেখা যায়।
- এছাড়া যেসব ব্যক্তি ইতিমধ্যে ইরিটেবল বাওয়েল সিণ্ড্রোম, সেলিয়াক ডিজিস, ক্রোনের রোগ, এবং হাইপারথাইরয়েডিজমে আক্রান্ত তাদের ক্ষেত্রেও ডায়রিয়ার সমস্যা থাকতে পারে।
- শিশুদের ক্ষেত্রে সর্বদা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন বোতলে দুধ পান করানো দরকার। নাহলে পেট খারাপের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
পেট খারাপের চিকিৎসা
পেট খারাপের চিকিৎসায় সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো ইলেক্ট্রোলাইট, যা পেট খারাপের সময় শরীর থেকে নির্গত হয়ে যায়। ডায়রিয়ার চিকিৎসায় নিম্নলিখিত উপায় গুলি অবলম্বণ করা যেতে পারে।
- রোগীদের ফলের রস পান করতে হবে যাতে শরীরে তরলের অভাব না হয়।
- কম ফাইবারযুক্ত খাদ্য গ্রহণ করা উচিৎ।
- বারবার মলত্যাগের সম্ভবনা কম করার জন্য অ্যান্টি সেক্রেটারী এবং অ্যান্টি মেটালিটি ওষুধের সাথে অ্যান্টি ডিরিয়াল থেরাপি যুক্ত করা যেতে পারে।
- প্রোবায়োটিক সাপ্লিমেন্ট তীব্র পর্যায়ের পেটের অসুখের চিকিৎসার ক্ষেত্রে উপকারী হতে পারে।
- ক্রনিক ডায়রিয়ার চিকিৎসার ক্ষেত্রে কোলোনোস্কপি বা এণ্ডোস্কোপি পরীক্ষার সাহায্য নেওয়া যেতে পারে।
পেট খারাপের সমস্যা প্রতিকারের জন্য উপায়
পেট খারাপ বা ডায়রিয়ার সমস্যার ক্ষেত্রে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়। সেগুলি হলো নিম্নরূপ –
- ডায়রিয়ার সমস্যা এড়াতে হলে প্রচুর পরিমাণে জল পান করা দরকার।
- খাদ্য গ্রহণের প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া দরকার কারণ খাওয়া দাওয়ার অনিয়ম এবং অস্বাস্থ্যকরে খাদ্য গ্রহণ করলে ডায়রিয়ার সম্ভবনা বৃদ্ধি পায়।
- মদ্যপান থেকে বিরত থাকা উচিৎ কারণ, মদ্যপানের ফলে পেটের নানারকম সমস্যা দেখা যায়।
- খাদ্য গ্রহণের পূর্বে এবং পরে ভালো করে মুখ গহ্বর পরিষ্কার করা দরকার।
ওপরের প্রবন্ধে পেটের অসুখ সম্বদ্ধে যাবতীয় তথ্য প্রদান করা হয়েছে। তবে একথা মাথায় রাখা দরকার যে সময় মতন চিকিৎসা নাহলে পেটের অসুখ মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। তাই পেটের অসুখের সমস্যা থেকে নিরাপদে থাকতে হলে স্বাস্থ্যকর খাদ্য এবং পাণীয় গ্রহণ করা জরুরী। আশা করা যায় ওপরিক্তো প্রবন্ধ পাঠকদের প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদানের ক্ষেত্রে সহায়তা করেছে।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী
১। অতি দ্রুত পেট খারাপের সমস্যা কমানোর উপায় কী?
উঃ – দ্রুত সমস্যার সমাধানের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা জরুরী।
২। পেট খারাপের সমস্যায় কী ধরণের পাণীয় পান করা উচিৎ?
উঃ – বিভিন্ন ধরণের ফলের রস, বিশুদ্ধ পানীয় জল , ও আর আর মিশ্রিত জল ইত্যাদি পান করা যেতে পারে।
৩। ঘরোয়া উপায়ে কী করে পেটের অসুখ সারানো যেতে পারে?
উঃ – ঘরোয়া পদ্ধতিতে পেট খারাপ কমানোর উপায় গুলি ওপরের প্রবন্ধে বিশদে ব্যখ্যা করা হয়েছে।
৪। পেট খারাপের চিকিৎসার ক্ষেত্রে কলা কী উপাদেয়?
উঃ – হ্যাঁ কলা উপাদেয়।
৫। পেট খারাপের চিকিৎসায় পাতিলেবু কী স্বাস্থ্যকর?
উঃ – হ্যাঁ, স্বাস্থ্যকর।
17 Sources

Latest posts by StyleCraze (see all)
- ঠোঁটের উপর আবাঞ্ছিত লোম? দূর করুন ঘরোয়া উপায়ে | How to Remove Upper Lip Hair at Home in Bengali - April 21, 2021
- সোনা পাতার উপকারিতা এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া | Senna Leaf Benefits and Side Effects in Bengali - April 14, 2021
- বজ্রাসন কীভাবে করবেন এবং এর উপকারিতা কী কী ? জানুন | Benefits of Vajrasana in Bengali - April 9, 2021
- মিছরির উপকারিতা এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া | Mishri Benefits and Side Effects in Bengali - April 9, 2021
- রেড ওয়াইন খাওয়ার উপকারিতা, এর ব্যবহার এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া । Red Wine Benefits and Side Effects in Bengali - April 9, 2021
