
পেয়ারা পাতার গুণাগুণ, ব্যবহার ও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া | Guava Leaves Benefits and Side Effects in Bengali
আমরা ছোটবেলা থেকেই জানি পেয়ারা ফল আমাদের স্বাস্থ্যের পক্ষে খুব উপকারী। এই স্বাস্থ্যকর ফলের গুণাগুণ সম্পর্কে সবাই জানেন। কিন্তু আপনি কি জানেন পেয়ারা পাতায়ও আছে প্রচুর ঔষধি গুণ? সতেজ-টাটকা পেয়ারা পাতায় থাকে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এজেন্ট, যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে৷ প্রাকৃতিকভাবে ব্যাথা উপশমেও পেয়ারা পাতা খুব কার্যকরী। এছাড়া এতে রয়েছে ক্যারোটিনয়েডস, পলিফেনলস্, ফ্ল্যাবোনয়েডস্, ট্যানিনের মত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যা বিভিন্ন অসুখ দূর করতে সাহায্য করে৷ (১)
মেডিক্যাল সায়েন্সে গবেষকরা দেখছেন যে বিভিন্ন ওষুধ ব্যবহার করলে অনেক রকমের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকে কিন্তু ঔষধি পাতা ব্যবহার করলে সেই সমস্যা দেখা যায় না। ফলে ঔষধি গাছের পাতার ব্যবহার উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। পেয়ারা পাতায় এত রকমের গুণ থাকায় আজকাল ক্যাপসুল আকারেও বাজারে পাওয়া যায়, এছাড়াও পাওয়া যায় পেয়ারা পাতার চা। যার ফলে খুব সহজেই পেয়ারা পাতা সেবন করতে পারবেন।
চলুন জেনে নেওয়া যাক পেয়ারা পাতা আমাদের দেহের জন্য কেন প্রয়োজনীয়? আমাদের কোন কোন শারীরিক সমস্যা দূর করতে কিভাবে সাহায্য করে? আপনাদের জন্য রইল সে সব তথ্য।
Table Of Contents
পেয়ারা পাতার উপকারিতাঃ
পেয়ারা পাতা প্রচুর ঔষধি গুণে ভরপুর। বিভিন্ন প্রকার রোগের চিকিৎসায় ও স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সমস্যায় পেয়ারা পাতার ব্যবহার উল্লেখযোগ্য। পেয়ারা পাতা এমন একটি হার্বাল উপাচার যা শরীরের কোনো রকম ক্ষতি না করে আপনার দেহকে সুস্থ সতেজ রাখতে সাহায্য করে। নীচে পেয়ারা পাতার স্বাস্থ্য সম্পর্কিত উপকারিতা এবং চুল ও ত্বকের যত্নে এর ব্যবহার নিয়ে আলোচনা করা হল।
১. ওজন কমাতেঃ
পেয়ারা পাতায় থাকে অনেক রকমের বায়োঅ্যাকটিভ যৌগ যা শরীরে কার্বোহাইড্রেটের শোষণ রোধ করে। দেহে সুগার লেভেল কমায়। ক্যালোরির মাত্রাও কম রাখে। যার ফলে দেহের ওজন বেশি হয়ে গেলে পেয়ারা পাতা ওজন কমাতে খুব সাহায্য করে। (২)
২. ডায়াবেটিস রোধেঃ
পেয়ারা পাতায় উপস্থিত ফেনোলিক যৌগ ব্লাড সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য করে। পেয়ারা পাতা সেবনে লিপিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। পেয়ারা পাতা সেবনে প্রোটিন গ্লাইকেশনও কম করা যায় অর্থাৎ দেহে উপস্থিত সুগারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তাই বলা হয় পেয়ারা পাতায় অ্যান্টি ডায়াবেটিক গুণ থাকে।
৩. কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতেঃ
পেয়ারা পাতা সেবনে প্লাজমা কোলেস্টেরল লেভেল কম হয়ে যায়। পেয়ারা পাতায় উপস্থিত পদার্থ গুলি হাইপারগ্লাইসেমিয়া অর্থাৎ সুগারের উচ্চ মাত্রাকেও কম করতে সাহায্য করে। এছাড়া উচ্চ কোলেস্টেরল বা হাইপার কোলেস্টেরোলেমিয়ার জন্য অক্সিড্যান্ট স্ট্রেসও কম করা যায়। হাইপোলিপিডেমিক গুণের জন্য শরীরে লিপিডের পরিমাণ কম করতে সাহায্য করে পেয়ারা পাতা।
৪. ডেঙ্গু জ্বরেঃ
ডেঙ্গু রোগে পেয়ারা পাতা খুব লাভদায়ক মানা হয়। পেয়ারা পাতা সেবনে প্লেটলেট বাড়ে এবং রক্ত ক্ষরণ থেকে বাঁচায়। পেয়ারা পাতায় কোরেসেটিন থাকে যা ভাইরাস আক্রমনের সময় এনজাইম এমআরএন গঠনে বাধা দেয়। এইভাবে পেয়ারা পাতা সেবন ডেঙ্গু জ্বরের জন্য লাভজনক মনে করা হয়। (৩)
৫. ডায়রিয়ায়ঃ
ডায়রিয়া হলে পেয়ারা পাতার নির্যাস খুব উপকারী। ই. কোলি ব্যাকটেরিয়ার জন্য যে ডায়রিয়া হয় সেটি রোধ করার সঙ্গে সঙ্গে এর জন্য যে অন্য সমস্যাগুলো হয় তারও সমাধান করে। এর কারণ হিসেবে মনে করা হয় পেয়ারা পাতার হেলমিনিথিক গুণ যা পেটের সমস্যা গুলো কমিয়ে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ায়।
৬. শুক্রাণু উৎপাদনেঃ
পেয়ারা পাতার সাহায্যে স্পার্ম কাউন্ট বাড়ানো যায়। এর পাশাপাশি প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধি করতেও পেয়ারা খুব কার্যকরী মানা হয়। এক গবেষণায় জানা গেছে যে পেয়ারা পাতার অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান শুক্রাণু বিষাক্ততার ওপর লাভজনক প্রভাব ফেলে যার ফলে পুরুষদের দেহে প্রজনন ক্ষমতা আরও বৃদ্ধি পায়। (৪)
৭. ক্ষত এবং ইনফেকশনের চিকিৎসায়ঃ
পেয়ারা পাতার ঔষধি গুণ ক্ষত নিরাময়ে সাহায্য করে। পেয়ারা পাতায় উপস্থিত অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল ধর্মের জন্য এটি ইনফেকশনের চিকিৎসায় সাহায্য করে। এটি ত্বকের ইনফেকশনে দায়ী ব্যাকটেরিয়ার সঙ্গে লড়াই করে এবং এর ফলে ক্ষত তাড়াতাড়ি নিরাময় হয়।
৮. হজমেঃ
পেয়ারা পাতা হজমেও সাহায্য করে। পাচন তন্ত্রের জন্য এটি খুব ভালো। পেয়ারা পাতা অনেক রকম গ্যাস্ট্রিক উৎসেচক উৎপাদনে সাহায্য করে যেগুলো হজম শক্তি বাড়ায়। গ্যাস্ট্রিক আলসার নিরাময় করতে সাহায্য করে এই পেয়ারা পাতা। পেয়ারা পাতায় উপস্থিত ফ্ল্যাভোনাইডস গ্যাস্ট্রিক পি এইচ বাড়িয়ে পেটে আলসার হওয়া থেকে রক্ষা করে।
৯. ব্রঙ্কাইটিসের চিকিৎসায়ঃ
ব্রঙ্কাইটিসের মত রোগের চিকিৎসায় পেয়ারা পাতা সাহায্য করে। এই রোগে যে শ্বাসনালীর প্রদাহ হয় তা নাশ করে পেয়ারা পাতা। পেয়ারা পাতার প্রদাহ নাশক গুণ অ্যাস্থমা বা ফাংগাসের কারণে হওয়া যে কোনো রোগ থেকে আপনাকে প্রতিরক্ষা করে। পেয়ারা পাতা দিয়ে চা বানিয়ে পান করলে বারবার কাশি হয় না তার ফলে ব্রঙ্কাইটিস রোগীদের আরাম হয়। (৫)
১০. দাঁতে ব্যথা, গলা ব্যথা ও মাড়ির জন্যঃ
বেদনানাশক ও প্রদাহ নাশক গুণের জন্য পেয়ারা পাতার জুড়ি মেলা ভার। এছাড়াও পেয়ারা পাতায় থাকে অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল গুণ। এই গুণ গুলোর জন্য দাঁতের ব্যাথায় পেয়ারা পাতা প্রচণ্ড ভালো কাজ করে। মাড়ির সমস্যায় পেয়ারা পাতা ব্যবহার করা হয়। টুথপেস্ট ও মাউথ ফ্রেশনারের উপাদান হিসেবেও পেয়ারা পাতা ব্যবহৃত হয়। পেয়ারা পাতা দিয়ে বাড়িতেই পেস্ট তৈরি করা যায় যা দিয়ে দাঁত মাজা হলে তা খুব উপকার দেয়। গার্গল করার সময় পেয়ারা পাতা ব্যবহার করলে গলা ব্যথা থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়।
১১. ক্যান্সার চিকিৎসায়ঃ
পেয়ারা পাতায় ক্যান্সার প্রতিরোধী গুণও পাওয়া যায়। প্রস্টেট ক্যান্সার চিকিৎসায় পেয়ারা পাতা খুব উপকারী। প্রস্টেট গ্রন্থির বৃদ্ধির চিকিৎসায় এই পাতা খুব কাজে দেয়। যদি প্রতিদিন ১০০ গ্রাম পেয়ারা পাতার রস বানিয়ে ওষুধ হিসেবে খাওয়া হয়, তাহলে পেটের ও ফুসফুসের ক্যান্সার থেকে অনেকটায় বাঁচা যায়। তাছাড়া পেয়ারা পাতা ব্যবহার করে ক্যান্সার রোগীদের ডি এন এ বা অন্যান্য কোষকে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করা যায়। (৬)
১২. অ্যালার্জি কমাতেঃ
পেয়ারা পাতায় অ্যান্টি অ্যালার্জিক গুণ উপস্থিত। পেয়ারা পাতা হিস্টামিন নিঃসরণ প্রতিরোধ করে। এছাড়াও পেয়ারা পাতায় উপস্থিত বিভিন্ন যৌগ অ্যালার্জি কমাতে খুব কার্যকর। একটি গবেষণা থেকে জানা গেছে যে পেয়ারা পাতায় মজুদ অ্যান্টি অ্যালার্জিক গুণ অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি সাইটোকাইনিন ( এক ধরনের প্রোটিন ) উৎপাদন রোধ করে।
১৩. ত্বকের যত্নেঃ
বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার সমাধানে পেয়ারা পাতা যেমন ম্যাজিকের মতো কাজ করে ঠিক তেমনই ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্যকেও সুন্দর করে তোলে।
- অ্যাকনে ও কালো ছোপ দূর করতেঃ
মুখে অ্যাকনে ও কালো দাগ ছোপ হয় তার আমাদের চিন্তাকে বাড়িয়ে দেয়। এর থেকে মুক্তি পেতে পেয়ারা পাতা ব্যবহার করতে পারেন। পেয়ারা পাতায় থাকে ভিটামিন সি, যা আপনার ত্বকের হাইপার পিগমেন্টেশন দূর করে ত্বককে করে তোলে উজ্জ্বল। (৭) এতে উপস্থিত প্রদাহ নাশক পদার্থগুলো অ্যাকনে সমস্যার সমাধানে সাহায্য করে।
- কীভাবে ব্যবহার করবেন?
৮-১০ টি পেয়ারা পাতা একটু জলের সাথে মিশিয়ে ব্লেন্ডারে সাহায্যে ব্লেন্ড করে পিষে নিন। এই পেস্ট ত্বকে লাগিয়ে রেখে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন। শুকিয়ে গেলে জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই পদ্ধতিতে রোজ পেয়ারা পাতার পেস্ট ত্বকে লাগালে অ্যাকনে ও দাগ ছোপ দূর হয়।
- অ্যান্টি এজিং উপাদানঃ
পেয়ারা পাতা স্কিনের টনিক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ত্বকের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম এই পেয়ারা পাতা। প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর হওয়ার জন্য পেয়ারা পাতায় থাকে অ্যান্টি এজিং গুণ। এটি আপনার ত্বককে মসৃণ করে এবং ত্বকে বার্ধক্য আসতে দেয় না।
- কীভাবে ব্যবহার করবেন?
প্রথমে একটু পেস্ট তৈরি করার জন্য একটা পাত্রে এক মুঠো পেয়ারা পাতা আর জল নিন। ব্লেন্ডারের সাহায্যে পিষে নিয়ে একটা পেস্ট তৈরি করুন। এই পেস্ট রোজ আপনি মুখে মাখতে পারেন।
তাছাড়া টোনার হিসেবেও ব্যবহার করতে পারেন। পেয়ারা পাতা জলে ফুটিয়ে ঠাণ্ডা করে ছেঁকে নিয়ে একটা ছোট বোতলে ভরে রাখুন। তুলোর সাহায্যে মুখে লাগান। ১০ মিনিট পর পরিষ্কার জল দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন আর পান তরতাজা ত্বক।
- চুলকানি কমাতেঃ
ইনফেকশনের ফলে চামড়ায় চুলকানি হয়। আমরা উপরিউক্ত লেখাতে বলেছি যে পেয়ারা পাতায় অ্যান্টি ইনফেকশনের গুণ আছে যা ইনফেকশন রোধ করতে সাহায্য করতে পারে। এটা ব্যবহারে ত্বকের চুলকানি থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
- কীভাবে ব্যাবহার করবেন?
পেয়ারা পাতাটিকে মসৃণ ভাবে বেটে নিন। এরপর তৈরি হওয়া পেস্ট টি চুলকানি হওয়া স্থানে লাগান। চুলকানি ঠিক না হওয়া পর্যন্ত এটি রোজ ব্যবহার করতে থাকুন।
- ব্ল্যাকহেডস দূর করতেঃ
ত্বকের ব্ল্যাকহেডস দূর করতে পারেন পেয়ারা পাতা দিয়ে। এই পাতা বেটে এর পেস্ট মুখে লাগিয়ে স্ক্র্যাবিং করুন।
- কীভাবে ব্যবহার করবেন?
পেয়ারা পাতা এবং জল একটি ব্লেন্ডারে নিয়ে পেস্ট করে নিতে হবে। এইভাবে পেস্ট করতে হবে যেনো এটি একটু দানাদার রকমের হয়। এবারে এটি আপনি সকাল এবং সন্ধ্যে মুখে লাগান।
১৪. চুলের যত্নেঃ
শুধুমাত্র ত্বকের জন্য নয় চুলের জন্যও পেয়ারা পাতা যথেষ্ট উপকারী। প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টঅক্সিডেন্ট থাকায় পেয়ারা পাতা চুল গজাতে এবং চুল বাড়াতে খুবই ভালো কাজ করে। চুলকে করে তোলে মজবুত ও উজ্জ্বল। চুল পড়া আজকের দিনের বেশির ভাগ লোকেরই একটা সাধারণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই চুল পড়াও রোধ করে পেয়ারা পাতা।
- কীভাবে ব্যবহার করবেন?
পেয়ারা পাতাকে জলে ফুটিয়ে ছেঁকে নিন। এই জল চুলে লাগিয়ে ম্যাসাজ করুন। স্ক্যাল্পে লাগান। এই জল দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলতে পারেন। এভাবে পেয়ারা পাতা চুলের জন্য ব্যবহার করা যায়। চুলে পেয়ারা পাতা পেস্ট করে লাগালে চুলের স্বাস্থ্য ভালো হয় বলে অনেকে মনে করেন।
- পেয়ারা পাতার পুষ্টিগুণঃ
পেয়ারা পাতার উপকারিতা সম্পর্কে জানার পর এক নজরে পেয়ারা পাতায় উপস্থিত পরিপোষক উপাদান ও তার পরিমাণ সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। (৮)
পোষক উপাদান | ১০০ গ্রামে মাত্রা |
---|---|
কার্বোহাইড্রেট | ৭ মিলিগ্রাম |
স্টার্চ | ৬>.৩ মিলিগ্রাম |
প্রোটিন | ১৬>.৮ মিলিগ্রাম |
অ্যামিনো অ্যাসিড | ৮ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন সি | ১০৩>.০ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন বি | ১৪>.৮০ মিলিগ্রাম |
ক্যালশিয়াম | ১৬৬০>.০ মিলিগ্রাম |
আয়রন | ১৩>.৫০ মিলিগ্রাম |
ম্যাগনেশিয়াম | ৪৪০ মিলিগ্রাম |
পটাসিয়াম | ৩৬০ মিলিগ্রাম |
ফসফরাস | ৪১৭ মিলিগ্রাম |
এই তো গেল পেয়ারা পাতা মধ্যে কী কী উপস্থিত এবং তার পরিমাণ কতটা – তার হিসেব। এবার জেনে নেব কী কী ভাবে পেয়ারা পাতা ব্যবহার করা যেতে পারে?
পেয়ারা পাতার ব্যবহারঃ
পেয়ারা পাতার ব্যবহার স্বাস্থ্য ও ত্বকের জন্য করতে পারেন। পেয়ারা পাতার গুণাগুণ সম্পর্কে তো জানলেনই, এখন এই সব গুণ পাওয়ার জন্য পেয়ারা পাতা কীভাবে ব্যবহার করা যায় সেই সম্পর্কে আপনাদের বলবো।
- পেয়ারা পাতার রস খেতে পারেন।
- চা বানানোর সময় পেয়ারা পাতা ব্যবহার করতে পারেন। পেয়ারা পাতার চা পান করলে তা দেহের খারাপ কোলেস্টেরল হ্রাস করতে সাহায্য করবে৷ যার ফলে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দূরে থাকে।
- পেয়ারা পাতার পেস্ট বানিয়ে ত্বকে মাখতে পারেন।
- পেয়ারা পাতার পেস্টের সাথে তেল মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন।
- পেয়ারা পাতার টনিক তৈরি করে খেতে পারেন যেটা খুবই উপকারী।
- পেয়ারা পাতা ফুটিয়ে সেটা ছেঁকে সেই রস ব্যবহার করেন অনেকে। পেয়ারা পাতার ব্যবহার যে কোনো সময় করতে পারেন।
পেয়ারা পাতার উপযোগিতা জানা হল, এবার জানা যাক পেয়ারা পাতার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে।
পেয়ারা পাতার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াঃ
একগুচ্ছ ঔষধি গুণে ভরপুর থাকায় পেয়ারা পাতার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া খুব কমই আছে। খেয়াল রাখুন আপনি এর ব্যবহার যাতে বেশি মাত্রায় না করেন। অধিক মাত্রায় যে কোনো কিছু সেবনই ক্ষতিকারক।
- পেয়ারা পাতায় হাইপোগ্লাইসেমিক প্রভাব থাকে যা উচ্চ রক্তচাপের স্তর কমাতে সাহায্য করে। (৯) তাই যদি আপনি পেয়ারা পাতার বেশি মাত্রায় সেবন করেন তাহলে রক্তচাপ প্রয়োজনের তুলনায় বেশি পরিমাণে কমে যেতে পারে। যার ফলে আপনি দুর্বলতা অনুভব করতে পারেন।
- গর্ভবতী মহিলারা পেয়ারা পাতা সেবন করতে পারেন কি না সেই বিষয়ে স্পষ্ট মতামত পাওয়া যায় নি। তাই গর্ভবতী মহিলারা পেয়ারা পাতা সেবনের আগে অবশ্যই ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে নেবেন।
পেয়ারা পাতার ভেষজ গুণ , তার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হল। এখন যদি বলা হয় পেয়ারার যে গুণের কথা আমরা জানি তার থেকেও পেয়ারা পাতায় আরও অনেক বেশি গুণ রয়েছে – তাহলে হয়তো ভুল বলা হবে না। নির্দ্বিধায় আপনি রোজ পেয়ারা পাতা ব্যবহার করতে পারেন। কারণ প্রচুর পুষ্টি উপাদানে ভরপুর পেয়ারা পাতায় কোনো রকম ক্ষতিকারক উপাদান থাকে না। এখানে যে ভাবে বলা হয়েছে সেইভাবে পেয়ারা পাতা ব্যবহার করুন, সেবন করুন এবং সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হন। আশা করি পেয়ারা পাতা সম্পর্কে অনেক তথ্য জেনেছেন এবং তা দৈনন্দিন জীবনে অনেক কাজে লাগবে।
সচরাচর জিজ্ঞাস্য প্রশ্নঃ
নিচে সচরাচর জিজ্ঞাস্য প্রশ্নগুলোর উত্তর দেওয়া হল।
কীভাবে পেয়ারা পাতা পান করা যেতে পারে?
পেয়ারা পাতার রস বানিয়ে, টনিক হিসেবে এবং পেয়ারা পাতা দিয়ে চা বানিয়ে পান করা যায়।
কখন পেয়ারা পাতার চা পান করা উচিৎ?
দিনের যে কোনো সময় পেয়ারা পাতা দিয়ে চা বানিয়ে পান করতে পারেন। ব্রঙ্কাইটিস রোগীদের জন্য পেয়ারা পাতার চা খুব আরামদায়ক।
কোন কোন রোগ পেয়ারা পাতা সেবনে সারে?
ডায়াবেটিস, ব্রঙ্কাইটিস, ডায়েরিয়া, ডেঙ্গু, অ্যালার্জি, গলা ব্যথা, দাঁতে ব্যথা ইত্যাদি রোগের উপশমে পেয়ারা পাতা ব্যবহার করা হয়।
গর্ভ ধারণের ক্ষেত্রে কি পেয়ারা সাহায্য করে?
না, গর্ভবতী মহিলাদের গর্ভের জন্য পেয়ারা পাতার উপকারিতা সম্পর্কে স্পষ্টভাবে জানা যায়নি। তাই পেয়ারা পাতা সেবনের আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
ওজন কমাতে পেয়ারা পাতা কীভাবে ব্যবহার করা যায়?
দেহের ওজন কমানোর জন্য পেয়ারা পাতার রস খাওয়া হয়। এছাড়া ওষুধ হিসেবে ক্যাপসুল আকারেও পেয়ারা পাতা উপলব্ধ।
শুক্রাণু উৎপাদনে কি পেয়ারা পাতা সহায়ক?
হ্যাঁ, শুক্রাণু উৎপাদন ও তার কাউন্ট বাড়াতে পেয়ারা পাতা সাহায্য করে।
9 sources
- Health Effects of Psidium guajava L. Leaves: An Overview of the Last Decade- https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC5412476/
- Antimicrobial Activities of Leaf Extracts of Guava (Psidium guajava L.) on Two Gram-Negative and Gram-Positive Bacteria
https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC3817707/ - Potential anti-dengue medicinal plants: a review
https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC3765846/ - Spermatoprotective activity of the leaf extract of Psidium guajava Linn
https://pubmed.ncbi.nlm.nih.gov/18163132/ - Guava extract (Psidium guajava) alters the labelling of blood constituents with technetium-99m*
https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC1474003/ - Psidium guajava: A Single Plant for Multiple Health Problems of Rural Indian Population
https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC5628524/ - Vitamin C in dermatology
https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC3673383/ - Biochemical and mineral analysis of the undervalued leaves – Psidium guajava L
http://webcache.googleusercontent.com/search?q=cache:gSfMNPSC0BkJ:www.allsciencejournal.com/download/128/2-2-49-436.pdf+&cd=3&hl=en&ct=clnk&gl=in - Hypoglycemic and hypotensive effects of Psidium guajava Linn. (Myrtaceae) leaf aqueous extract
https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/16395418

Latest posts by StyleCraze (see all)
- উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন নিয়ন্ত্রণের জন্য খাদ্য তালিকা | High Blood Pressure (Hypertension) Diet Chart in Bengali - March 26, 2021
- মাড়ি ফোলার নিরাময় এবং ঘরোয়া উপায়ে চিকিৎসা পদ্ধতি | Swollen Gums Remedies - March 24, 2021
- টাইফয়েড হলে কি কি খাবেন , জেনে নিন | Diet for Typhoid - March 24, 2021
- ঘরোয়া উপায়ে পেটের অসুখ (লুস মোশন) প্রতিকারের উপায় এবং চিকিৎসা পদ্ধতি | How to Control Loose Motion (Dast) - March 23, 2021
- মাথা ঘোরার কারণ, চিকিৎসা পদ্ধতি এবং ঘরোয়া উপায়ে এর প্রতিকার | What is Dizziness in Bengali - March 22, 2021
