পেয়ারার উপকারীতা, পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া এবং ব্যবহার | All About Guava

একাধিক পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ পেয়ারা স্বাস্থ্যের পক্ষে খুবই উপযোগী একটি ফল। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োজনীয় পুষ্টিলাভের জন্য পেয়ারার অপরিসীম গুরুত্ব রয়েছে। এই নিবন্ধে পেয়ারা সংক্রান্ত যাবতীয় প্রয়োজনীয় তথ্যাদি নিয়ে বিশদে আলোচনা করা হবে। জানা যাবে পেয়ার উপকারীতা, পৌষ্টিক গুরুত্ব, পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া একইসাথে পেয়ারা সংরক্ষণের উপায় ইত্যাদি। প্রধাণত গ্রীষ্মমণ্ডলের এই ফলে রয়েছে ভিটামিন সি এবং লাইসোপিন সহ অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মতন কার্যকরী পৌষ্টিক উপাদান। যা সুস্বাস্থ্য গঠনের জন্য বিশেষ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
In This Article
পেয়ারার ঔষধি গুণ
পেয়ারায় রয়েছে একাধিক ঔষধি গুণ। পেয়ারা এবং এই গাছের অন্যান্য উপাদানগুলি অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল, অ্যান্টিফ্যাঙ্গাল, অ্যান্টিডায়াবেটিক, এবং অ্যান্টিডায়রিয়াল বৈশিষ্ট্যযুক্ত হয়।
গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টাইনল ইনফেকশন বা সংক্রমণ, ওরাল ইনফেকশন বা মুখবিবরে এবং দাঁতের সংক্রমণ, ত্বকের সংক্রমণ, মধুমেহ বা ডায়াবেটিস, হৃদযন্ত্র বা হার্টের সমস্যা এবং সর্বোপরি অপুষ্টিজনিত সমস্যার জন্য পেয়ারা খুবই উপকারী পথ্য হিসেবে বিবেচিত হয়। শুধু তাই নয় অনেক বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার মাধ্যমে দেখা গেছে মহিলাদের স্বাস্থ্য সমস্যা, কিডনি এবং ক্যান্সারের জন্য পেয়ারা খুবই উপাদেয় একটি ফল (1) । সব মিলিয়ে দেখতে গেলে দৈনন্দিন জীবনে খাদ্য হিসেবে পেয়ারার গুরুত্ব অপরিসীম।
পেয়ারার উপকারীতা
পেয়ারার একাধিক উপকারীতার কথা আমরা অনেকেই জানি। তবে সেগুলি ঠিক কী কী এবার সেগুলো জেনে নেওয়া যাক। পেয়ারার উপকারিতা গুলি হলো নিম্নরূপ-
১. ডায়বেটিস বা মধুমেহর জন্য পেয়ারার উপকারীতা
মধুমেহ রোগাক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য পেয়ারা খুবই উপকারী একটি ফল। খোসা ছাড়ানো পেয়ারা রক্তে শর্করার পরিমাণ হ্রাস করতে সাহায্য করে (2)। একইসাথে একটি গবেষণা থেকে আরোও জানা যায় যে, পেয়ারাতে উপস্থিত পলিস্যাকারাইড উপাদান গুলি টাইপ ২ ডায়বেটিস হ্রাস করতে পারে (3)। অন্যদিকে পেয়ারা পাতার নির্যাসে অ্যান্টি-হাইপারগ্লাইসেমিক প্রভাবও রয়েছে, যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রন করতে সহায়তা করে (4)। এই কারণে মধুমেহ রোগীদের খাবারের তালিকায় পেয়ারা অন্তর্ভূক্ত করা জরুরী।
২. ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে
ক্যান্সার প্রতিরোধে পেয়ারার গুরুত্ব অপরিসীম। একটি গবেষণা থেকে জানা গেছে পেয়ারা প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে। পেয়ারাতে রয়েছে লাইকোপিন নামক একটি উপাদান যা প্রোস্টেট ক্যান্সারের কোষগুলির বিরুদ্ধে গিয়ে কেমোপ্রেনভেটিভ প্রভাব প্রদর্শন করে (5)। তবে পাঠকদের একথা মনে রাখতে হবে যে পেয়ারা কোনোভাবেই ক্যান্সারের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ঔষধাদি নয়। ক্যান্সার আক্রান্ত মানুষদের অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিৎ।
৩. ওজন কমাতে সহায়ক
ওজন কম করার জন্য ফল একটি গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য। তবে ওজন কমানোর ক্ষেত্রে অন্যসব ফলের মধ্যে পেয়ারা একটি অতি কার্যকরী নাম। একজন সুস্থ্য মানুষের উচ্চতা অনুয়ারী কত ওজন হওয়া উচিৎ তা নির্ধারণ করা হয় তার বডি মাস ইনডেক্স (বিএমআই) এর মাধ্যমে। এই বডি মাস ইনডেক্স এর আধিক্য মেদ বৃদ্ধিকে ইঙ্গিত করে (6)। এনসিবিআই (ন্যাশানাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি) ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি সমীক্ষা থেকে জানা যায় যে খোসা সমেত পাকা পেয়ারাতে উপস্থিত পরিপূরক গুলি শরীরের ভর সূচক হ্রাস করতে পারে (7)। তবে শরীরের ওজন সূচক এবং মেদ হ্রাস করার জন্য পেয়ারা কীভাবে আরোও উপকারী হয়ে উঠতে পারে সেই বিষয়ে আরো গবেষণা দরকার।
৪. পরিপাকে সহায়ক
পাচনতন্ত্রকে সক্রিয় করে পেয়ারা পরিপাকে সহায়তা করে। একটি গবেষনা থেকে জানা গেছে পেয়ারা এবং পেয়ারার গুঁড়ো ডায়টারি ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ার কারণে কোষ্ঠ্য কাঠিণ্যের সমস্যা দূর করে। শরীরে ফাইবারের অভাব অধিকাংশ সময়েই কোষ্ঠ্য কাঠিন্যের সৃষ্টি করে (8) (9)। এই কারণে হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে এবং কোষ্ঠ্য কাঠিন্যের সমস্যা দূর করতে চাইলে অবশ্যই পেয়ারা খাওয়া দরকার।
৫। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বর্দ্ধক
পেয়ারায় উপস্থিত ভিটামিন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে (10)। এছাড়াও পেয়ারা স্থিত ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং রোগ সৃষ্টিকারী জীবানুদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য শরীরকে শক্তি জোগায় (11)। তাই পেয়ারা খাওয়া রোগ জীবানু প্রতিরোধ করে সুস্বাস্থ্য গঠনের জন্য খুবই উপকারী বলে বিবেচিত হয়।
৬. হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্যোন্নতিতে সহায়ক
হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্যোন্নতির ক্ষেত্রে পেয়ারা খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। পেয়ারাতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমানে পটাসিয়াম যা রক্ত নালীকে শিথিল করে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে সহায়তা করে (12)। একইসাথে পেয়ারাতে রয়েছে ফাইবার যা খারাপ কোলেস্টেরল হ্রাস করতে পারে। অনেকসময় এই খারাপ কোলেস্টেরল হৃদরোগের কারণ হয়ে ওঠে (13)। এইভাবে পেয়ারা হৃদরোগের সম্ভবনা হ্রাস করে।
৭. দৃষ্টি শক্তি বর্দ্ধক
এখন অল্প বয়স থেকেই শিশুদের চোখের দৃষ্টি দুর্বল হতে দেখা যায়। কম আলোতে টিভি দেখা, পড়াশুনা করা এগুলি তো রয়েছেই একইসাথে পুষ্টিকর খাদ্যের অভাব। সব মিলিয়ে ছোট বয়স থেকেই শিশুদের দৃষ্টি শক্তি ক্ষীণ হয়ে যায়। এই কারণ গুলিকে প্রতিহত করার জন্যই খাদ্য তালিকায় পেয়ারা অন্তর্ভূক্ত করা উচিৎ। কারণ পেয়ারাতে রয়েছে ভিটামিন সি, ভিটামিন এ এবং তামা ও জিঙ্ক ইত্যাদি পৌষ্টিক উপাদান। এইসব ভিটামিন এবং খনিজ উপাদানগুলি চোখের স্বাস্থ্যোন্নতিতে ভীষণভাবে সহায়তা করে। ছোট বয়স থেকেই বাচ্চাদের খাদ্য তালিকায় পেয়ারা যুক্ত করলে তাদের চোখের নানারকম সমস্যা সম্ভবনাওও অনেক কমে যায় (14) ।
৮. গর্ভাবস্থায় উপকারী পথ্য
পেয়ারা ভিটামিন সি সমৃদ্ধ হওয়ার কারণে তা শরীরে আয়রণের পর্যাপ্ত জোগান দেয়। শরীরে আয়রনের ঘাটতি হলে রক্তাল্পতা দেখা যায়। তাই গর্ভাবস্থায় শরীরে আয়রণের জোগান নিয়ন্ত্রনে রাখার জন্য খাদ্য তালিকায় পেয়ারার উপস্থিতি একান্ত ভাবে প্রয়োজনীয়। এছাড়াও ভিটামিন সি অক্সিডেটিভ স্ট্রেস প্রতিরোধ করতে সহায়ক বলে মনে করা হয়। গর্ভাবস্থায় অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের ফলে প্রিক্লেম্পসিয়া ( গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপ ) এবং নির্ধারিত সময়ের পূর্বে শিশুর জন্ম ইত্যাদি সম্ভবনা সৃষ্টি করে। সেই কারণেই এইসময় ভিটামিন সি গ্রহণ পূর্বোল্লিখিত সমস্যা গুলির বিরুদ্ধে প্রতিবন্ধকতা তৈরী করে(15)। শুধু তাই নয় পেয়ারায় রয়েছে ফলেট যা একটি অপরিহার্য পৌষ্টিক উপাদান। এটা গর্ভস্থ শিশুর স্নায়বিক ত্রুটির (মস্তিষ্ক এবং মেরুদ্বণ্ড সম্পর্কিত জন্মগত ত্রুটি) ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে (16)।
৯. মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রক
ম্যাগনেসিয়াম মানসিক চাপ কমাতে ভীষণভাবে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। একটি গবেষণা থেকে আরও জানা গিয়েছে যে ম্যাগনেসিয়াম ব্যক্তির উদ্বেগ কমাতেও সাহায্য করে(17)। তাই মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ থেকে শরীরকে মুক্ত রাখার জন্য পেয়ারা খাওয়া দরকার। অবশ্য এই বিষয়ে এখনও অনেক গবেষণা প্রয়োজন আছে।
১০. উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রক
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) এর মতে উচ্চ রক্তচাপের কারণে হৃদরোগ, চোখের দৃষ্টি শক্তি ক্ষীণ হয়ে যাওয়া, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে (18)। তাই উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে রাখার জন্য খাদ্য তালিকায় পেয়ারা উপস্থিতি একান্তভাবেই কাম্য। আমরা আগেই জেনেছি যে পেয়ারাতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমানে পটাশিয়াম এবং এই পটাশিয়াম রক্তনালিকে শিথিল করে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে নিয়ে আসে।
১১. থাইরয়েড প্রতিরোধক
থাইরয়েড এমন একটি গ্রন্থি যা মানুষের গলায় থাকে। এই গ্রন্থি থেকে হরমোন ক্ষরিত হয় যা শরীরে বিপাকক্রিয়া নিয়ন্ত্রন করে। এই হরমোনের ক্ষরণে ভারসাম্যহীনটা দেখা দিলেই আমাদের হাইরয়েডের সমস্যা দেখা যায়(19)। একটি গবেষণা থেকে জানা গিয়েছে যে পেয়ারা খেলে থাইরয়েডের ক্ষরণ নিয়ন্ত্রনাধীন থাকে। যদিও এই বিষয়ে এখনও প্রয়োজনীয় গবেষণার যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে।
১২. সর্দি গর্মি নাশক
পেয়ারার উপকারীতা গুলির মধ্যে অন্যতম একটি হলো এটা সর্দি গর্মি নাশ করে। পেয়ারা ভিটামিন সি এবং আয়রন সমৃদ্ধ হওয়ার কারণে তা ফুসফুসের স্বাভাবিক কার্যে সাহায্য করে একইসাথে মিউকাস তৈরী হওয়ার ক্ষেত্রে বাধা প্রদান করে। ভিটামিন সি ব্যাক্টেরিয়া এবং ভাইরাস আক্রমনের ফলে সৃষ্ট সর্দি কাশি উপশম করতে সাহায্য করে।
১৩. কোষ্ঠ্য কাঠিন্য নাশক
পেয়ারা অত্যাধিক ফাইবার সমৃদ্ধ হয়। তাই খাদ্য হিসেবে পেয়ারা গ্রহণের ফলে কোষ্ঠ্য কাঠিন্যের সমস্যা অনায়াসেই দূর হয়ে যায়। সেই কারণে কোষ্ঠ্য কাঠিন্যের সমস্যায় জর্জরিত মানুষদের অবিলম্বে খাদ্য তালিকায় পেয়ারা অন্তর্ভূক্ত করার প্রয়োজন রয়েছে (20)।
১৪. মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যোন্নতিতে সহায়ক
এখনও পর্যন্ত পেয়ারার বেশ কিছু উপকারীতার বিষয়ে আমরা জানতে পেরেছি। সেই তথ্য থেকে জানা গেছে যে পেয়ারাতে লাইকোপেন নামক একটি উপাদান রয়েছে। বিভিন্ন গবেষণা সূত্রে জানা যায় যে লাইকোপেন যুক্ত খাদ্য বহু স্নায়বিক অসুখ যেমন অ্যালজাইমার এবং পারকিন্সস (এক ধরণের ব্রেন ডিসঅর্ডার) প্রভৃতি রোগের সম্ভবনা হ্রাস করতে সহায়তা করে। উপরন্তু লাইকোপেন মস্তিষ্কের কোষের সুরক্ষা জোগায় (20)।
১৫. পেয়ারায় উপস্থিত ভিটামিন সমূহ
শরীরে একাধিক ভিটামিনের জোগান দেয় পেয়ারা। পেয়ারাতে উপস্থিত ভিটামিন গুলি হলো যথা – ভিটামিন এ, সি, কে , এবং বি ৬ ।
- ভিটামিন এ চোখ, পাকস্থলী, ত্বক এবং শ্বাসনালীর সুস্বাস্থ্য রক্ষার জন্য খুবই উপকারী (21) ।
- ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে (22) ।
- ভিটামিন কে ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস করে। এছাড়াও হাড়ের ক্ষয় রোধ করে হাড় ভেঙে যাওয়ার সম্ভবনা লাঘব করে। এবং সর্বোপরি কার্ডিওভাস্কুলার অসুখের সম্ভবনাও অনেকাংশেই কমিয়ে দেয় (23) ।
- ভিটামিন বি ৬ মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য অপরিহার্য। বিশেষ করে ভ্রূণের মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য এই ভিটামিনের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই গর্ভবতী মহিলাদের ভিটামিন বি ৬ গ্রহণ খুবই জরুরী (24) ।
১৬. ঋতুস্রাব জনিত সমস্যার নিরামায়ক
ঋতুস্রাব বা পিরিয়ড কম বেশি প্রত্যেক মহিলার জীবনেই একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। এইসময় মহিলারা মুড সুইং, পেটে ব্যথা, মাথা ব্যথা, খিঁচুনি, এবং অন্যান্য একাধিক শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন হন (25)। এই সময় পেয়ারা খাওয়া খুবই উপাদেয় বলে বিবেচিত হয়। একটি গবেষণা থেকে জানতে পারা গেছে যে ঋতুস্রাব চলাকালীন ১৯৭ জন মহিলা যারা পেটে ব্যাথার সমস্যায় ভুগছেন তাদের প্রতিদিন ৬ মিলিগ্রাম পেয়ারার নির্যাস সমন্বিত একটি ওষুধ খাওয়ানো হয় যা তাদের জন্য খুবই উপকারী হয়েছে বলে জানা যায় (26)। দক্ষিণ আফ্রিকার আরেকটি গবেষণা থেকে জানা গেছে পেয়ারা পাতার নির্যাস থেকে ক্র্যাম্প দূর করার ঔষধী পাওয়া যায়(27)। সব মিলিয়ে ঋতুস্রাব চলাকালীন সময়ে মহিলাদের জন্য পেয়ারা একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য বলে বিজ্ঞানসম্মত ভাবেই জানা গেছে।
১৭. দাঁত ব্যথা প্রতিরোধক
পেয়ারা অ্যান্টিপ্লাক এজেন্ট হিসেবে পরিচিত। প্লাকের ওপর জমা হওয়া ব্যাক্টেরিয়া সমন্বিত একটি স্তর থেকে পেয়ারা দাঁত কে রক্ষা করে। এই প্লাক কে পিরিয়ডেন্টাল অসুখ বা মাড়ির সংক্রমন বলা যেতে পারে। পেয়ারাতে জীবানুনাশক হয় যার প্রধান কারণ এতে রয়েছে ফ্ল্যাভোনয়েড, গ্যাজাইরইন, এবং কুয়েরসেটিন নামক উপাদান। পেয়ারা খোসায় ট্যানিনের উপস্থিতির কারণে এটা রোগ জীবানু সৃষ্টিকারক ব্যাক্টেরিয়া থেকে শরীরকে মুক্ত রাখে। এছাড়াও পেয়ারা পাতার নির্যাস মুখ বিবরের মধ্যে ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমন প্রতিহত করে (28) ।
১৮. ত্বকের পরিচর্যায়ক
পেয়ারা ত্বকের পরিচর্যার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পেয়ারা পাতার মিথানলিক নির্যাস সূর্যের অতি বেগুনী রশ্মি দ্বারা সৃষ্ট পিগমেন্টেশনের বিরুদ্ধে অ্যান্টিমেলানোজেনেসিস ক্রিয়ায় সহায়তা করে অর্থাৎ এটি মেলানিন উৎপাদন হ্রাস করতে পারে। মেলানিন ত্বকের দাগছোপ তৈরী করে যা পেয়ারা পাতার প্রভাবে অনায়াসেই দূরীভূত হয় (29)। অবশ্য এই বিষয়ে যথেষ্ট গবেষণার অভাব রয়েছে।
পেয়ারার পুষ্টিগুণ
পৌষ্টিক উপাদান | প্রতি ১০০ গ্রামে |
---|---|
শক্তি | ৬৮ ক্যালোরি |
জল | ৮০.৮ গ্রাম |
কার্বোহাইড্রেট | ১৪.৩২ গ্রাম |
ফ্যাট | ০.৯৫ গ্রাম |
প্রোটিন | ২.৫৫ গ্রাম |
মোট কার্বোহাইড্রেট | ২৩.৬ গ্রাম |
ডায়টারি ফাইবার | ৫.৪ গ্রাম |
শর্করা | ৮.৯২ গ্রাম |
ভিটামিন এ আরএই | ৩১ মাইক্রোগ্রাম |
ভিটামিন সি | ২২৮.৩ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন ই (আলফা টোকোফেরল) | ০.৭৩ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন কে | ২.৬ মাইক্রোগ্রাম |
থিয়ামিন | ০.০৬৭ মিলিগ্রাম |
রাইবোফ্লেবিন | ০.০৪ মিলিগ্রাম |
নিয়াসিন | ১.০৮৪ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন বি ৬ | ০.১১ মিলিগ্রাম |
ফলেট | ৪৯ মাইক্রোগ্রাম |
কোলিন | ৭.৬ মিলিগ্রাম |
ক্যালসিয়াম | ১৮ মিলিগ্রাম |
আয়রণ | ০.২৬ মিলিগ্রাম |
ম্যাগনেশিয়াম | ২২ মিলিগ্রাম |
ফসফরাস | ৪০ মিলিগ্রাম |
পটাশিয়াম | ৪১৭ মিলিগ্রাম |
সোডিয়াম | ২ মিলিগ্রাম |
জিঙ্ক | ০.২৩ মিলিগ্রাম |
কপার | ০.২৩ মিলিগ্রাম |
সেলেনিয়াম | ০.৬ মাইক্রোগ্রাম |
সূত্র – ( 30 )
পেয়ারার ব্যবহার –
অনেক উপায়ে পেয়ারা খাওয়া যেতে পারে। এবার দেখে নেওয়া যাক পেয়ারা খাওয়ার পদ্ধতি গুলি কী কী –
- সবার আগে ভালো পেয়ারা বেছে নেওয়া দরকার। খেয়াল রাখা উচিৎ পেয়ারা গুলি যেনো নরম এবং পাকা ধরণের হয়।
- পেয়ারা যেনো আবার বেশি পাকা না হয় সেটাও লক্ষ্য রাখা দরকার কারণ বেশি পাকা পেয়ারা তাড়াতাড়ি পচে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে।
- খাওয়ার আগে পেয়ারা ভালো করে ধুয়ে নেওয়া দরকার যাতে গায়ে কোনো ধুলো, ময়লা বা মাটি লেগে না থাকে।
- পেয়ারা সবসময় কেটে খাওয়া উচিৎ কারণ অনেক সময় পেয়ারার মধ্যে পোকা থাকতে দেখা যায়।
- পাকা পেয়ারা ছোটো ছোটো করে কেটে নুন দিয়ে খাওয়া যেতে পারে একইরকম ভাবে কাচা পেয়ারাও খাওয়া যায়।
- হজম শক্তি বৃদ্ধির জন্য পাকা পেয়ারা কালো নুন সহযোগে খেলে উপকার পাওয়া যায়।
- কোষ্ঠ কাঠিন্যের সমস্যা থাকলে রোজ সকালে পাকা পেয়ারা খাওয়া উচিৎ।
- পেয়ারা কেটে তা সস এর সাথেও খাওয়া যায়।
- পেয়ারার রস এবং স্মুথি বানিয়েও খাওয়া যায় অথবা পেয়ারা দিয়ে আইসক্রিমও তৈরী করা যেতে পারে।
- পেয়ারা রান্নার কাজেও ব্যবহার করা যেতে পারে।
তবে আমাদের একথা ভুলে গেলে চলবেনা যে পেয়ারার যেমন উপকারীতা রয়েছে এর অপকারিতাও অনেক রয়েছে।
কী পদ্ধতি অবলম্বন করলে বেশ কিছুদিন সময় পর্যন্ত পেয়ারা সংরক্ষণ করা যায়
কয়েকটি বিষয় একটু নজরে রাখলেই বেশ কিছুদিন সময় পর্যন্ত পেয়ারা সংরক্ষণ করা যায় –
- ফ্রিজে অন্য ফলের সাথে যাতে পেয়ারা রাখা না হয় সেইদিকে খেয়াল রাখা দরকার। কারণ অন্য ফলের সাথে পেয়ারা রাখলে সেটা সহজেই নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।
- পেয়ারা কাটার কিছু সময় পর সেটা খেতে চাইলে, পেয়ারা কাটার সাথে সাথেই তাতে পাতিলেবুর রস মাখিয়ে নেওয়া দরকার।
- পেয়ারাকে হিমায়িত করেও রাখা যায় তবে তার আগে ভালো করে পেয়ারা ধুয়ে শুকিয়ে তারপর কেটে নিতে হবে। এবং কাটা টুকরো গুলিকে এয়ারটাইট কৌটোর মধ্যে ভরে রাখতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে ঐ কৌটোয় ভেতর পেয়ারার টুকড়ো রাখার পর একটু হলেও যেনো ফাঁকা জায়গা থাকে। এমন করলে বেশ কিছুদিন পর্যন্ত পেয়ারা টাটকা থাকবে।
- এয়ারটাইট কৌটোর মধ্যে ঠাণ্ডা করা চিনির রস ঢেলে তার মধ্যে পেয়ারা ডুবিয়ে রেখেও খাওয়া যায়। তবে এক্ষেত্রে কৌটোর ঢাকনা যেনো খুব ভালো করে বন্ধ করা হয় সেটা লক্ষ্য রাখতে হবে।
পেয়ারার রস তৈরীর পদ্ধতি
পেয়ারার রস বানানো খুবই সহজ আর এটা স্বাদেও উত্তম। পেয়ারা রসের পৌষ্টিক গুরুত্বও অনেক। তাহলে এবার দেখে নেওয়া যাক পেয়ারার রস তৈরীর পদ্ধতি কী –
উপকরণ
- ২ টি পেয়ারা
- ১ টা কাঁচালঙ্কা
- ১ টুকরো আদা
- ৪-৫ টা গোল মরিচ
- ১ চামচ পাতিলেবুর রস
- পুদিনা পাতা (সাজানোর জন্য)
- নুন (স্বাদ অনুসারে)
তৈরীর পদ্ধতি
- সবার প্রথমে পেয়ারা ভালো করে ধুয়ে ছোট ছোট করে টুকরো করে নিতে হবে।
- পেয়ারার রস করার জন্য ওপরে উল্লিখিত সব কটি উপাদান ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে।
- পেয়ারা পেসাই করার পর সেটাকে ছেঁকে রস বের করে নিতে হবে।
- অবশ্য এই রস না ছেঁকেও স্মুথির মতন করে পান করা যেতে পারে।
- ইচ্ছে করলে পেয়ারা রসের সাথে বরফের টুকরো যোগ করা যেতে পারে।
- গ্লাসে করে সার্ভ করার সময় পুদিনা পাতা সাজিয়ে দিলে দেখতে ভালো লাগবে।
পেয়ারার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
পেয়ারায় খুব একটা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই ঠিকই, তবু পেয়ারা খাবার আগে কয়েকটা বিষয় মনে রাখা দরকার। এছাড়াও অতিরিক্ত পরিমাণে পেয়ারা খাওয়ার ফলে যাতে শরীর খারাপ না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখা উচিৎ। পেয়ারার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া গুলি হলো নিম্নরূপ –
- ইতিমধ্যে আমরা জানতে পেরেছি যে পেয়ারায় রয়েছে অত্যধিক পরিমাণে ফাইবার। এই অতিরিক্ত ফাইবার সমৃদ্ধ পেয়ারা তাই অনেকসময় পেটে ব্যথা এবং গ্যাসের সমস্যা সৃষ্টি করে।
- পেয়ারাতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে পটাসিয়াম। তাই যদি কারো কিডনি বা সেই সংক্রান্ত কোনো সমস্যা থেকে চিকিৎসকরা তাদের পেয়ারা খেতে নিষেধ করে থাকেন। তাই কিডনি সমস্যায় যারা ভুগছেন তারা পেয়ারা খাওয়ার আগে চিকিৎসকের সাথে আলোচনা করে নেওয়াই ভালো।
- গর্ভবতী মহিলা এবং স্তনদায়ী মায়েদের জন্য পেয়ারা আদৌ নিরাপদ কিনা সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় বৈজ্ঞানিক প্রমাণের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। তাই কোনো রকম ঝুঁকি না নিয়ে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিৎ।
বিভিন্ন বয়সের মানুষের কাছে খুবই জনপ্রিয় একটা ফল হলো পেয়ারা। সহজ লভ্য এবং দামেও খুব বেশি নয় অথচ সারা বছর পাওয়া যায় পেয়ারা। পেয়ারায় উপস্থিত পৌষ্টিক গুণাগুন মানুষের সুস্বাস্থ্য গঠনের জন্য খুবই উপকারী। তবে যে কোনো মানুষের জন্যই একটা নির্দিষ্ট পরিমাণে পেয়ারা খাওয়া দরকার। পরিমাণের তারতম্য অনেক সময়ই অস্বাস্থ্যকর হয়ে ওঠে। তাই সুষম পরিমাণে পেয়ারা খাওয়া শরীর সুস্থ্য রাখার জন্য দরকার। উপরিক্তো নিবন্ধ থেকে পেয়ারা সম্বদ্ধীয় সমস্ত তথ্যাদি পাঠকের উপকারে লাগবে বলে মনে করা হয়।
প্রায়শই জিজ্ঞাস্য প্রশ্নাবলী :
পেয়ারা কী ধরণের ফল শীতল প্রকৃতির নাকি উষ্ণতা বৃদ্ধিকারক ?
পেয়ারা সাধারণত শীতল প্রকৃতির হয়ে থাকে।
সর্বাধিক কটা পেয়ারা খাওয়া যেতে পারে ?
পেয়ারার সঠিক ডোজ বেশ কয়েকটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে যথা খাদকের বয়স, স্বাস্থ্য এবং অন্যান্য আনুসঙ্গিক বিষয় সমূহ। অবশ্য এখনও পর্যন্ত খাদ্য হিসেবে পেয়ারা গ্রহণের সঠিক পরিমান সম্পর্কিত কোনো বৈজ্ঞানিক তথ্যাদি পাওয়া যায়নি।
সকালে খালি পেটে পেয়ারা খাওয়া কী স্বাস্থ্যকর ?
খালি পেটে পেয়ারা খাওয়া উপকারী। অবশ্য বেশ কিছু মানুষের সকালে খালি পেটে পেয়ারা খেলে পেট সংক্রান্ত যাবতীয় সমস্যা দেখা যায়। তাই সকালে খালি পেটে পেয়ারা খাওয়ার আগে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা দরকার।
ভর্তি পেটে কী পেয়ারা খাওয়া যেতে পারে ?
ভর্তি পেটে পেয়ারা খাওয়া যেতে পারে। তবে এই ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিৎ।
পেয়ারার রস পান করার জন্য সঠিক সময় কখন ?
সারাদিনের যে কোনো সময় পেয়ারার রস পান করা যেতে পারে। তবে সকালে জলখাবার খাওয়ার সময় এই রস পান করার জন্য আদর্শ সময় বলে মনে করা হয়।
খালি পেটে,খাদ্য বা পানীয় হিসেবে পেয়ারা বা পেয়ারার রস গ্রহণ কী স্বাস্থ্যসম্মত?
পেয়ারা জাতীয় ফলে শক্ত বা কঠিন ফাইবার থাকে যা হজম করা বেশ কঠিন। এবং এই ফাইবার আমাদের হজম শক্তিকে অনেক মন্থর করে দেয়। এইসব কারণেই খালি পেটে পেয়ারা গ্রহণ করা উচিৎ নয়।
পেয়ারার বীজ খাওয়া কী সঠিক ?
হ্যাঁ পেয়ারার বীজ খাওয়া যেতে পারে। এতে সমস্যার কিছু নেই।
কেনো কিছু পেয়ারার রঙ সাদা আবার কিছু পেয়ারার রঙ গোলাপী হয়ে থাকে ?
গোলাপী রঙের পেয়ারায় থাকে ক্যারোটিনয়েড, যার স্বভাবজ বৈশিষ্ট্যের জন্য এই ধরণের পেয়ারার রঙ গোলাপী হয়ে থাকে এবং সাদা রঙের পেয়ারায় এইরকম কোনো পদার্থ থাকেনা।
অন্যান্য ভাষায় পেয়ারা কী নামে ডাকা হয় ?
ইংরিজি ভাষায় পেয়ারাকে গ্যুয়াভা, হিন্দিতে আমরুত, এবং মারাঠী ভাষায় পেরু বলা হয়।
খাদ্য হিসেবে পেয়ারা গ্রহণ করলে কী কোনো এনার্জি পাওয়া যায় ?
হ্যাঁ। একাধিক পুষ্টিগুণযুক্ত উপাদান রয়েছে পেয়ারায়। এবং সেখান থেকেই প্রয়োজনীয় এনার্জি পাওয়া যায়।
কিডনির স্বাস্থ্যের পেয়ারা খাওয়া কী উপকারী ?
এখনও পর্যন্ত এই বিষয়ে খুবই কম গবেষণা হয়েছে। পেয়ারায় রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমানে পটাসিয়াম। তাই যাদের ইতিমধ্যে কিডনি বা সেই সংক্রান্ত সমস্যা রয়েছে তাদের পেয়ারা খাওয়া স্বাস্থ্যের কারণেই ঠিক নয়। তবে কিডনির যে কোনো রকম সমস্যা থাকলেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ মতন খাদ্য তালিকা নির্ধারণ করে নেওয়া দরকার।
রাতের বেলায় পেয়ারা খাওয়া কী নিরাপদ ?
হ্যাঁ রাতের বেলায় পেয়ারা খাওয়া যেতে পারে। একাধিক পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ পেয়ারা সহজেই হজম হয়ে যায় এবং পরিদিন সকালে সহজেই পেট পরিষ্কার হয়ে যায়।
পেয়ারা খাওয়ার পর কী জল পান করা যেতে পারে?
হ্যাঁ জল পান করা যেতে পারে। পেয়ারা খাওয়ার পর জল পান হজম শক্তিকে সহজ করে তোলে।
পেয়ারা পাতা কী উপকারী?
পেয়ারা এবং পেয়ারা পাতা দুটোই খুব উপকারী বলে মনে করা হয়। পেয়ারায় রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টিইনফ্লেমেটারি বা প্রদাহনাশক উপাদান। এছাড়াও পেয়ারা পাতায় রয়েছে পলিফেনল, ক্যারোটিনয়েড, ফ্ল্যাভোনয়েড, এবং ট্যানিন যা বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। তবে উভয়ের মধ্যে কোনটা বেশি উপকারী সেই বিষয়ে প্রয়োজনীয় গবেষণা এখনও হয়নি।
Sources
- Psidium guajava: A Single Plant for Multiple Health Problems of Rural Indian Population
https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC5628524/ - Effect of Guava in Blood Glucose and Lipid Profile in Healthy Human Subjects: A Randomized Controlled Study
https://pubmed.ncbi.nlm.nih.gov/27790420/ - Consumption of guava may have beneficial effects in type 2 diabetes: A bioactive perspective
https://pubmed.ncbi.nlm.nih.gov/28347786/ - Anti-hyperglycemic and anti-hyperlipidemic effects of guava leaf extract
https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC2831039/ - The Potential Role of Lycopene for the Prevention and Therapy of Prostate Cancer: From Molecular Mechanisms to Clinical Evidence
https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC3742263/ - Body Mass Index (Obesity, BMI, and Health): A Critical Review
https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC4890841/ - Effect of Guava in Blood Glucose and Lipid Profile in Healthy Human Subjects: A Randomized Controlled Study
https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC5071920/ - Guava, raw
https://fdc.nal.usda.gov/fdc-app.html#/food-details/786690/nutrients - Psidium guajava: a review of its traditional uses, phytochemistry and pharmacology
https://pubmed.ncbi.nlm.nih.gov/18353572/ - Bioactive Compounds of Guava (Psidium guajava L.)
https://link.springer.com/referenceworkentry/10.1007%2F978-3-030-30182-8_37 - Vitamin C and immune function
https://pubmed.ncbi.nlm.nih.gov/19263912/ - A review on medicinal properties of Psidium guajava
https://www.researchgate.net/publication/326914138_A_review_on_medicinal_properties_of_Psidium_guajava - Fiber and cardiovascular disease risk: how strong is the evidence?
https://pubmed.ncbi.nlm.nih.gov/16407729/ - Nutrients for the aging eye
https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC3693724/ - Macronutrient and Micronutrient Intake during Pregnancy: An Overview of Recent Evidence
https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC6413112/ - Folate for pregnant women
https://www.betterhealth.vic.gov.au/health/healthyliving/folate-for-pregnant-women - The Effects of Magnesium Supplementation on Subjective Anxiety and Stress—A Systematic Review
https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC5452159/ - Raised blood pressure
https://www.who.int/gho/ncd/risk_factors/blood_pressure_prevalence_text/en/ - Thyroid Diseases
https://medlineplus.gov/thyroiddiseases.html - Guava (Psidium guajava L.) Powder as an Antioxidant Dietary Fibre in Sheep Meat Nuggets
https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC4093245/ - What is vitamin A and why do we need it?
https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC3936685/ - Vitamin C in Disease Prevention and Cure: An Overview
https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC3783921/ - The health benefits of vitamin K
https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC4600246/ - Vitamin B6 Deficiency
https://www.ncbi.nlm.nih.gov/books/NBK470579/ - Premenstrual syndrome
https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC4548199/#:~:text=A%20woman%20has%20premenstrual%20syndrome,of%20women%20of%20reproductive%20age. - Effect of a Psidii guajavae folium extract in the treatment of primary dysmenorrhea: a randomized clinical trial
https://pubmed.ncbi.nlm.nih.gov/17112693/ - Spasmolytic effect of Psidium guajava Linn. (Myrtaceae) leaf aqueous extract on rat isolated uterine horns
https://pubmed.ncbi.nlm.nih.gov/19377271/ - Psidium guajava: A review on its potential as an adjunct in treating periodontal disease
https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC4127827/#:~:text=Guava%20as%20an%20antiplaque%20agent&text=aureus%20and%20Escherichia%20coli%20(E.&text=%5B41%5D%20Guava%20extract%20has%20demonstrated,homeostasis%20of%20the%20oral%20cavity. - Skin protective effect of guava leaves against UV-induced melanogenesis via inhibition of ORAI1 channel and tyrosinase activity
https://pubmed.ncbi.nlm.nih.gov/27488812/ - USDA
https://fdc.nal.usda.gov/fdc-app.html#/food-details/786690/nutrients