
পাইন বাদামের উপকারিতা, ব্যবহার ও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া | Pine Nuts in Bengali
বাদামে অ্যালার্জি নেই, তাও বাদাম খান না এরকম মানুষ বোধহয় পাওয়াই মুশকিল। দুপুরে বা বিকেলে ট্রেনে বাসে যেতে যেতে পাওয়া মনের খিদে মেটানোর সঙ্গে সঙ্গে পেট ভরানো খাবারের মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য খাবার হল বাদাম। পাইন নাট বা পাইন বাদামও এর ব্যতিক্রম নয়। ছোট্ট ছোট্ট এই বাদামগুলি খাবারে যোগ করলে এর মুচমুচে ভাব আর মিষ্টি গন্ধ খাবারটিকে করে তোলে আরোও মজাদার এবং পুষ্টিকর।
হ্যাঁ, আকারে ছোট হলেও এর মধ্যে লুকিয়ে আছে বিভিন্ন পুষ্টিগুণ যা সুস্বাস্থ্য পাওয়ার জন্য অত্যন্ত জরুরি। আজকের এই প্রবন্ধে আমরা জানাব, পাইন বাদাম খাওয়া কেন জরুরি?
Table Of Contents
পাইন বাদাম কী?
পাইন বাদাম হল মূলতঃ পাইন গাছের বীজ। হাজার হাজার বছর ধরে পাইন বাদাম খাদ্যাভাসের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ হিসেবে পরিচিত। গ্রেট বেসিনে বসবাসকারী স্থানীয় আমেরিকানরা প্রায় দশ হাজার বছর ধরে এই বাদামের চাষ করে এসেছে। ইউরোপ এবং এশিয়াতে বিখ্যাত হওয়ার আগে থেকেই অস্তিত্ব রয়েছে এই বাদাম চাষের। খ্রিস্টপূর্বাব্দ দশ হাজার বছর সময়কালে নর্মাডিক শিকারিরা যে এই পাইন বাদাম চাষ করতেন, তার ঐতিহাসিক প্রমাণ পাওয়া যায় এখনও। বর্তমানে এই গাছ আফগানিস্তান, পাকিস্তান, এবং উত্তর-পশ্চিম ভারতে সমুদ্র থেকে প্রায় ১৮০০ মিটার থেকে ৩৩৫০ মিটার উচ্চতার মধ্যে দেখতে পাওয়া যায়।
পাইন গাছের বিজ্ঞানসম্মত নাম ‘পাইনাস জেরার্ডিয়ানা’। পাইন গাছকে ফ্রেঞ্চ, স্প্যানিশ, জার্মান এবং গ্রীক ভাষায় যথাক্রমে ‘পিগনন্’, ‘পাইনোনেস’, ‘পাইনিয়েনকারনেন্’ এবং ‘কৌকৌনারি’ বলে ডাকা হয়। দুনিয়া জুড়ে মোট ২০ প্রজাতির পাইন গাছ দেখা যায়। তবে মূলতঃ ‘মেক্সিকান পাইনন’, ‘কলোরাডো পাইনন’, ‘চাইনিজ নাট পাইন’ এবং ‘ইটালিয়ান স্টোন পাইন’- এই চার প্রজাতির পাইন গাছের বীজ থেকেই পাইন বাদাম বানানো হয়।
বছর বছর ধরে পাইন বাদামের বিখ্যাত হওয়ার একটাই কারণ- এর পুষ্টিগুণ।
পাইন বাদামের উপকারিতা
খিদে বোধ দূর করতে এবং অতিরিক্ত ওজন কমানোর জন্য পাইন বাদাম খুবই উপকারী। কারণ এতে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন ধরণের ফ্যাটি অ্যাসিড। এর বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান দেহের শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এছাড়াও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, যেমন- ম্যাগনেসিয়াম এবং প্রোটিন হার্ট অ্যাটাক ও ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সাহায্য করে।
সর্বোপরি, এই বাদামে রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট উপাদান যা রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বাড়ায়, দৃষ্টিশক্তি ভালো করে, এবং তা ত্বক এবং চুলের স্বাস্থ্যর জন্যও বেশ উপকারী। গর্ভাবস্থায় পাইন বাদাম খাওয়াও ভীষণ জরুরি, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে।
নীচে পাইন বাদামের কিছু উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা রইল-
১. ডায়াবেটিস রোগের জন্য উপকারী
গবেষণা থেকে জানা যায় যে ‘টাইপ টু ডায়াবেটিস’ রোগের ক্ষেত্রে প্রতিদিন একটি করে পাইন বাদাম খাওয়া খুব উপকারী। (১) টাইপ টু ডায়াবেটিস রোগীরা প্রত্যেকদিন এই বাদাম খেলে তাঁদের রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকবে এবং খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমবে। এছাড়াও, স্ট্রোক বা দৃষ্টিশক্তির সমস্যার মতোো এই রোগের আনুষাঙ্গিক নানা ধরনের সমস্যা প্রতিরোধ করবে।
ডায়বেটিক রোগীদের নিয়ম করে উদ্ভিজ্জ তেল ও প্রোটিন যুক্ত খাবার খাওয়া অত্যন্ত জরুরি। পাইন বাদামে রয়েছে উদ্ভিজ্জ তেল ও প্রোটিনের সেইসব গুণ যা ওজন বাড়ায় না কিন্তু এই রোগের সমস্ত উপসর্গ হ্রাস করে এবং রোগীকে সুস্থ রাখে (২)।
২. হৃৎপিণ্ড সুরক্ষিত রাখে
নিত্যদিন এই বাদাম খাবার অভ্যাস হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমায়। (৩) এতে থাকা মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট, ম্যাগনেশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ – এর মতো মতো গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উপাদান এবং ভিটামিন ই ও ভিটামিন- কে হৃদযন্ত্রের নানা সমস্যা প্রতিরোধ করে।
রক্তচাপ কম থাকলেও পাইন বাদাম খাওয়া জরুরি। এতে থাকা ভিটামিন-ই লোহিত রক্ত কণিকা তৈরিতে সহায়তা করে। ফলে দেহের সর্বত্র অক্সিজেন সরবরাহ স্বাভাবিক থাকে। এমনকি কোনও স্থানে আঘাত পেয়ে কেটে গিয়ে রক্তপাত হলে ভিটামিন-কে রক্ততঞ্চনে সহায়তা করে।
৩. হাই-কোলেস্টেরল রোগের জন্য উপকারী
হাই-কোলেস্টেরলের সমস্যা থাকলে পাইন বাদাম খেলে উপকার পাওয়া যায়। এতে থাকা পাইনোলিক অ্যাসিড শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে ভালো কোলেস্টেলের মাত্রা বৃদ্ধি করে। শরীরে এই খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কম হলে ওজন বৃদ্ধির সমস্যা বা হৃদরোগের আশঙ্কা কমে।
৪. ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে
ওজন কমানোর জন্য ডায়েটেশিয়ানের দেওয়া ডায়েট চার্টে নিশ্চয়ই কম ক্যালোরিযুক্ত খাবার ও স্যাচুরেটেড ফ্যাট সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার কথা উল্লেখ আছে। সঙ্গে করতে হয় অনেক এক্সারসাইজ। বাড়তি মেদ ঝড়াতে চাইলে এসবের পাশাপাশি খান পাইন বাদাম (৪)।পাইন বাদামে থাকা পাইনোলিক অ্যাসিড ক্ষুধা দমন করে বাড়তি ওজন কমাতে সাহায্য করে। সর্বোপরি, এতে থাকা স্বাস্থ্যকর ফ্যাটি অ্যাসিডগুলি পেটের চর্বি ঝড়ায়।
৫. ক্যান্সার প্রতিরোধক
পাইন বাদামে আছে এক গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উপাদান – ম্যাগনেশিয়াম। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রত্যেকদিন সিরাম ম্যাগনেশিয়ামের মাত্রা যদি ১০০ মিলিগ্রাম করে হ্রাস পায় তবে অগ্ন্যাশয়ে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা ২৪ শতাংশ বেড়ে যায়। (৫) এছাড়াও পাইন বাদামে থাকা বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান ও ফ্যাটি অ্যাসিড শরীরে ক্যান্সারের কোষ গঠনে বাধা প্রদান করে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি কমায়।
৬. ব্রেন অর্থাৎ স্নায়ু ও মস্তিষ্কের জন্য উপকারী
আমাদের অনেকের বিশেষত কিশোর কিশোরীদের মধ্যে যাদের হতাশা ও উদ্বেগজনিত রোগ দেখা যায়, তাদের প্রত্যেকদিন পাইন বাদাম খাওয়া অত্যন্ত জরুরি। গবেষণায় দেখা গেছে, পাইন বাদামে থাকা পুষ্টি উপাদান এবং ম্যাগনেশিয়ামের মতো গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উপাদান স্ট্রেস, অ্যাংজাইটি, ও ডিপ্রেশন কমায়। এছাড়াও আয়রনে সমৃদ্ধ পাইন বাদাম মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে। ফলে ব্রেনে অক্সিজেন সরবরাহ ঠিকঠাক হয় (৬)।
৭. হাড় মজবুত করে
পাইন বাদাম খেলে হাড় মজবুত হয়। এতে থাকা ভিটামিন-কে ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান উপাদান হাড়ের খনিজ ঘনত্ব বৃদ্ধি করার পাশাপাশি অল্পতেই হাড়ে চিড় খাওয়া বা ভেঙে যাওয়া অর্থাৎ ফ্র্যাকচারের হার কমায় (৭) (৮)।
আমাদের দেহে ভিটামিন-কে এর অভাব হওয়ার সাধারণ কারণ হল কোলেস্টেরল কমানোর ওষুধ খাওয়া। (৯) মজার বিষয় হল, পাইন বাদামে রয়েছে খারাপ কোলেস্টেরল কমানোর ক্ষমতা, ফলে প্রতিদিন পাইন বাদাম খেলে আমাদের আর ওষুধ খাওয়ার দরকার হয় না। তাই, ভিটামিন-কে এর অভাব তো হয়ই না, উলটে এই ভিটামিনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়।
৮. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি
পাইন বাদামে যে ম্যাঙ্গানিজ ও জিঙ্ক আছে, তা দেহের রোগ প্রতিরোধ করতে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। ম্যাঙ্গানিজ হরমোনের ভারসাম্য রক্ষা করে আর জিঙ্ক যে কোনও রকমের ক্ষত সারিয়ে তোলে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। একটি রিপোর্টে জানা গেছে, ডায়েটে অতিরিক্ত জিঙ্ক যোগ করলে তা বয়স্ক ব্যক্তিদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। জিঙ্ক আমাদের দেহের টি- কোষের কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে আক্রমণকারী প্যাথোজেনদের ধ্বংস করে।
৯. চোখের দৃষ্টিশক্তি
পাইন বাদামে প্রচুর পরিমাণে লুটিন আছে যা একটি অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান। এটিকে চোখের ভিটামিনও বলা হয়। সমীক্ষা চালিয়ে দেখা গেছে, বেশিরভাগ আমেরিকাবাসীর স্ট্যান্ডার্ড আমেরিকান ডায়েট প্ল্যানে পর্যাপ্ত পরিমাণ লুটিন থাকে না। আমাদের দেহের ৬০০টি ক্যারোটিনয়েডের মধ্যে ২০টি আমাদের চোখে রয়েছে। এর মধ্যেও মাত্র দুটি অনেক বেশি পরিমাণে আছে যার মধ্যে একটা লুটিন। এটি চোখের ম্যাকুলার অবক্ষয়, গ্লুকোমা ইত্যাদি চোখের সমস্যা প্রতিরোধে সহায়তা করে। এইভাবে পাইন বাদাম চোখকে ভালো রাখে।
১০. অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান
অ্যান্টি অক্সিডেন্ট আমাদের কোষকে বিভিন্ন ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। এটি দেহের একটি অতি প্রয়োজনীয় উপাদান। পাইন বাদামে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকার জন্য এই বাদাম খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে খুব ভালো।
১১. খিদে মেটানো
গবেষণায় জানা গেছে, যে পাইন বাদামে থাকা নির্দিষ্ট কিছু ফ্যাটি অ্যাসিড খিদে নিয়ন্ত্রণ করে। (১০) পাইন বাদামের এই ফ্যাটি অ্যাসিড (বিশেষত কোরিয়ান পাইন বাদাম) কোলেসাইসটোকাইনিন নামক এক হরমোন নিঃসরণে সাহায্য করে যা খিদে মেটাতে সাহায্য করে। (১১) মানুষের উপরে সমীক্ষা করে দারুণ ফলাফল পাওয়া গেছে। আর একটি গবেষণায় জানা গেছে, পাইন বাদাম ৪ ঘণ্টা পর্যন্ত ৬০ শতাংশ খিদে দমিয়ে রাখতে পারে। (১২) পিনোলেনিক অ্যাসিড কোরিয়ান বাদামের গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাটি অ্যাসিড যা একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
১২. ত্বকের পরিচর্যা
পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন, মিনারেল, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হওয়ায় ত্বকের যত্নে পাইন বাদামের উপকারিতা প্রচুর। ভিটামিন- ই এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট বয়সের ছাপ কমায়। ত্বককে করে তোলে বাচ্চাদের মতো কোমল। পাইন বাদাম ত্বককে পুষ্টি জোগায়। সেনসিটিভ ত্বকের জন্য তো পাইন বাদাম তেল খুবই ভালো। পাইন বাদাম তেল ম্যাসাজের জন্য ব্যবহার করা হয়। অনেক রকমের ত্বকের সমস্যা যেমন – চুলকানি, এগজিমা, স্ক্যাবিস, সোরিয়াসিস, ব্রণ ইত্যাদি কমাতে সাহায্য করে। পাইন বাদাম তেল ত্বককে পুনরুজ্জীবিত করে তোলে।
কাঁচা পাইন বাদাম আর নারকেল তেল দিয়ে তৈরি বডি স্ক্র্যাব ত্বকের মৃত কোষগুলো দূর করে ত্বককে তরতাজা করে। আর ময়েশ্চারাইজিং এফেক্ট থাকায় এটি শুষ্ক ত্বকের জন্য খুব ভালো।
১৩. চুলের স্বাস্থ্য রক্ষা
পাইন বাদামে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন-ই। এই ভিটামিন-ই চুলকে করে তোলে অনেক লম্বা আর ঘন। অর্থাৎ চুলকে বাড়তে সাহায্য করে ভিটামিন-ই। চুলের স্ক্যাল্পকে ভালো রাখে। চুল পড়ে যাওয়ার সমস্যার সমাধান করে পাইন বাদাম তেল। পাইন বাদাম যেহেতু প্রোটিন সমৃদ্ধ তাই এটা খেলে চুল হয় ঘন, নরম ও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল। এই বাদাম চুলকে অনেক রকম ড্যামেজ থেকেও রক্ষা করে।
১৪. এনার্জি লেভেল বাড়ানো
পাইন বাদামের কিছু নির্দিষ্ট পরিপোষক – যেমন মনোস্যাকারাইড ফ্যাট, আয়রন, এবং প্রোটিন, এনার্জি লেভেল বৃদ্ধি করে। পাইন বাদাম ম্যাগনেসিয়ামের একটা ভালো উৎস। শরীরে ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি অবসাদের কারণ হতে পারে। পাইন বাদাম শরীরের কলা-কোষ গঠন ও মেরামতের কাজ করে। এর মধ্যে থাকা প্রোটিনও একই সাহায্য করে। এই জটিল অণু শরীরে ভাঙতে অনেক সময় নেয় যা একটা দৃঢ় এবং দীর্ঘস্থায়ী এনার্জি উৎস হিসেবে কাজ করে।
১৫. পাইন বাদামের পুষ্টিগুণ
প্রতিদিন যে পরিমাণ পাইন বাদাম খাওয়া উচিৎ( ধরা যাক ২৮ গ্রাম), তাতে ১৯১ ক্যালোরি, ৩.৭ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ১৯ গ্রাম ফ্যাট থাকে। এছাড়া অন্যান্য যে উপাদান থাকে সেগুলো হল-
- ১ গ্রাম ফাইবার ( ১% দৈনিক মূল্য)
- ১৬৮ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম (৪% দৈনিক মূল্য)
- ৯ গ্রাম প্রোটিন (৭% দৈনিক মূল্য)
- ১ মিলিগ্রাম থাইমিন(৭% দৈনিক মূল্য)
- ৬ মিলিগ্রাম আয়রন (৮% দৈনিক মূল্য)
- ৭ মিলিগ্রাম ভিটমিন (৯% দৈনিক মূল্য)
- ৮ মিলিগ্রাম জিঙ্ক (১২% দৈনিক মূল্য)
- ১৬৩ মিলিগ্রাম ফসফরাস(১৬% দৈনিক মূল্য)
- ৭১ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম (১৮% দৈনিক মূল্য)
- ৩ মাইক্রো গ্রাম পটাশিয়াম ( ১৯% দৈনিক মূল্য)
পাইন বাদামে উপস্থিত উপাদানগুলোর পরিমাণ নিম্নরূপ –
উপাদান | পরিমাণ (প্রতি ১০০গ্রামে) |
---|---|
জল | ২.২৪ গ্রাম |
প্রোটিন | ১৩.৬৯ গ্রাম |
লিপিড | ৬৮.৩৭ গ্রাম |
কার্বোহাইড্রেট | ১৩.০৮ গ্রাম |
ফাইবার | ৩.৭ গ্রাম |
সুগার | ৩.৫৯ গ্রাম |
এনার্জি | ৬৭৩ কিলোক্যালোরি |
মিনারেলস
ক্যালশিয়াম | ১৬ মিলিগ্রাম |
---|---|
ম্যাগনেশিয়াম | ২৫১ মিলিগ্রাম |
ফসফরাস | ৫৭৫ মিলিগ্রাম |
পটাশিয়াম | ৫৯৭ মিলিগ্রাম |
আয়রন | ৫.৫৩ মিলিগ্রাম |
জিঙ্ক | ৬.৪৫ মিলিগ্রাম |
সোডিয়াম | ২ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন
ভিটামিন সি | ০.৮ মিলিগ্রাম |
---|---|
থাইমিন | ০.৩৬৪ মিলিগ্রাম |
রিবোফ্লাভিন | ০.২২৭ মিলিগ্রাম |
নিয়াসিন | ৩.৪৮৭ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন বি-৬ | ০.০৯৪ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন বি-১২ | ০.০০ মাইক্রোগ্রাম |
ভিটামিন ই | ৯.৩৩ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন এ | ১ মাইক্রোগ্রাম |
ভিটামিন ডি | ০ মাইক্রোগ্রাম |
ভিটামিন কে | ৫৩.৯ মাইক্রোগ্রাম |
ফোলেট | ৩৪ মাইক্রোগ্রাম |
লিপিড
ফ্যাটি অ্যাসিড, কুল স্যাচুরেটেড | ৪.৮৯৯ গ্রাম |
---|---|
ফ্যাটি অ্যাসিড, কুল মনোস্যাচুরেটেড | ১৮.৭৬৪ গ্রাম |
ফ্যাটি অ্যাসিড, সম্পূর্ন পলি আনস্যাচুরেটেড | ৩৪.০৭১ গ্রাম
|
কোলেস্টেরল | ০ মিলিগ্রাম |
ইউনাইটেড স্টেটস ডিপার্টমেন্ট অফ এগ্রিকালচার বলেছে, পাইন বাদামে উপস্থিত আরও অনেক পুষ্টিকর উপাদানের মধ্যে মূল কাজ হল আমাদের শরীরে পুষ্টি জোগানো এবং উন্নতি সাধন করা।
পাইন বাদাম কীভাবে ব্যবহার করবেন?
পাইন বাদামে থাকা প্রচুর পুষ্টিকর উপাদানের জন্য আপনার খাদ্য তালিকায় এটি নিয়মিত যোগ করুন। পিজ্জা, বিস্কুট, কেক তৈরিতে ব্যবহার করবেন। স্যালাড বানানোর সময় পাইন বাদাম যোগ করতে পারেন। স্মুদি বানাতেও পাইন বাদাম ব্যবহার করা যায়। চিকেনের কোটিং এবং মাছের ডিপ ফ্রাই করতেও এই বাদাম ব্যবহার করা যেতে পারে। আইসক্রিম তৈরিতেও পাইন বাদামের ব্যবহার আছে।
পাইন বাদাম কীভাবে বাছবেন এবং সংরক্ষণ করবেন?
পাইন বাদাম খাওয়া লাভজনক ঠিকই, কিন্তু কেনার সময় সঠিকভাবে বাছাই করতে হবে। সঠিক পরিমাণে গ্রহণ করলে এর উপকারিতা অপরিসীম। এবার দেখা যাক কীভাবে পাইন বাদাম বেছে সংরক্ষিত করা হয়।
- বাছাই পদ্ধতি
বাজারে যখন পাইন বাদাম কিনতে যাবেন, উজ্জ্বল বাদামি রঙের পাইন বাদামই কিনুন। আরেকটি বিশেষ পদ্ধতি প্রয়োগ করতে পারেন। সামান্য উঁচু জায়গা থেকে পাইন বাদামকে ফেলুন, যদি ধাতুর মতো আওয়াজ সৃষ্টি করে তাহলে বুঝবেন তার গুণগত মান ভালো। পচা গন্ধ বেরোলে সেই বাদাম কেনা একদম উচিৎ নয়। বাজার থেকে পাইন বাদাম কেনার সময় অবশ্যই লক্ষ্য রাখুন এটা কতদিন আগে থেকে বাজারে উপলব্ধ? প্রয়োজনে কেনার আগে ম্যানুফ্যাকচারিং তারিখটি দেখে নিন।
- সংরক্ষণ
আপনারা জানেন বাজারে দুই ধরনের পাইন বাদাম পাওয়া যায় – খোসাযুক্ত ও খোসা ছাড়া পাইন বাদাম। এর মধ্যে খোসা ছাড়া পাইন বাদাম বেশি সময়ের জন্য সংরক্ষণ করা যায় যদি সেটাকে ফ্রিজে রাখা হয়। প্রায় ছয় থেকে বারো মাস পর্যন্ত এটা ঠিক থাকে। খোসা যুক্ত পাইন বাদাম দীর্ঘদিন ধরে সংরক্ষণ করার জন্য উপযুক্ত নয়। গরম ও আর্দ্র আবহাওয়ায় নষ্ট হয়ে যাওয়ায় পাইন বাদামকে ঠাণ্ডা ও শুষ্ক পরিবেশে সংরক্ষণ করা হয়।
পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
পাইন বাদামের যেমন উপকারিতা রয়েছে, সঠিকভাবে ব্যবহার না করা গেলে এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও দেখা দেয়। নীচে কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে বলা হল।
১. অ্যালার্জি
যাদের বাদামে অ্যালার্জি আছে, তাদের ক্ষেত্রে পাইন বাদাম খেলে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা যেতে পারে। পাইন বাদামে থাকা ওমেগা-৬ অ্যালার্জির কারণ হতে পারে। যাদের বাদামে অ্যালার্জি আছে, তারা এই বাদাম খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
২. বিষক্রিয়া
পাইন বাদামে ভিটামিন-এ, ভিটামিন-ই, ভিটামিন-কে উপস্থিত। তাই অত্যধিক পরিমাণে পাইন বাদাম খেলে শরীরে বিষক্রিয়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
৩. অন্যান্য সমস্যা
- এর আগে আলোচনা করা হয়েছে পাইন বীজ গর্ভাবস্থায় কতটা উপকারী। কিন্তু তার ব্যবহার অবশ্যই পরিমিত হওয়া উচিৎ। কিন্তু আপনি যদি বাচ্চাকে দুধ খাওয়ান, সেক্ষেত্রে এর ব্যবহারের আগে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে নিন। কারণ, এই নিয়ে বিশেষ তথ্য পাওয়া যায়নি, তাই তাঁরাই আপনাকে সঠিক উপদেশ দেবেন।
- পাইন বাদাম থেকে প্রস্তুত কিছু তেল ( বিশেষত সিবেরিন পাইন বাদাম তেল) খিঁচুনি রোগীর ক্ষেত্রে সমস্যার কারণ হতে পারে।
- পাইন বাদামে জিঙ্ক থাকে। জিঙ্কের বেশি মাত্রায় সেবনে বমি, মাথা ব্যথা, ডায়েরিয়া, পেট ব্যথা, খিদে কমে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যা দেখ যায়।
অতএব, আপনারা জানতে পারলেন পাইন বাদাম কত উপকারী এবং তার কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কেও জানলেন। দেহের রোগ প্রতিরোধ থেকে ত্বকের যত্নে, কেশ পরিচর্যায় পাইন বাদামের উপকারী দিকগুলি বলে শেষ করা যাবে না। এত গুণাগুণ থাকার জন্য এই পাইন বাদাম বাজারেও খুব প্রচলিত।
প্রায়শই জিজ্ঞাস্য প্রশ্নাবলী :
গর্ভাবস্থায় কি পাইন বাদাম খাওয়া উচিৎ?
যেহেতু পাইন বাদাম খুব পুষ্টিকর তাই সন্তানসম্ভবা মহিলাদের জন্য খুব ভালো। এই বাদামে উপস্থিত ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে, যা গর্ভবতী মহিলাদের অন্যতম সমস্যা। এতে যে আয়রন, প্রোটিন, ভিটামিন সি থাকে, তা গর্ভবতী মা ও বাচ্চার জন্যও খুব উপকারী।
দিনে কী পরিমাণ পাইন বাদাম খাওয়া উচিৎ?
দিনে ১৫ থেকে ২০ টা পাইন বাদাম (প্রায় ৩০ গ্রাম) খাওয়া শরীরের জন্য উপযুক্ত।
পাইন বাদাম কি বিষাক্ত?
এই সম্পর্কিত কোনও বৈজ্ঞানিক তথ্য এখন বিশদে জানা যায়নি।
12 sources
- Eating nuts daily could help control Type 2 diabetes and prevent complications, study suggests
https://www.sciencedaily.com/releases/2011/07/110712094201.htm - Nuts Good for Some With Diabetes
https://www.webmd.com/diabetes/news/20110708/nuts-good-some-with-diabetes#1 - Nut consumption and decreased risk of sudden cardiac death in the Physicians’ Health Study
https://pubmed.ncbi.nlm.nih.gov/12076237/ - Best superfoods for weight loss
https://www.cbsnews.com/pictures/best-superfoods-for-weight-loss/21/ - Magnesium intake and incidence of pancreatic cancer: the VITamins and Lifestyle study
https://pubmed.ncbi.nlm.nih.gov/26554653/ - Impact of high iron intake on cognition and neurodegeneration in humans and in animal models: a systematic review
https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC5914328/ - Vitamin K in the treatment and prevention of osteoporosis and arterial calcification
https://pubmed.ncbi.nlm.nih.gov/16030366/ - Vitamin K and bone
https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC5726210/ - Evaluation of the Effects of Pinus koraiensis Needle Extracts on Serum Lipid and Oxidative Stress in Adults with Borderline Dyslipidemia: A Randomized, Double-Blind, and Placebo-Controlled Clinical Trial
https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC5004035/ - Preparation of Pinolenic Acid Concentrates from Pine Nut Oil Fatty Acids by Solvent Fractionation
https://pubmed.ncbi.nlm.nih.gov/30404957/ - Pine Nut Oil May Cut Appetite
https://www.webmd.com/diet/news/20060328/pine-nut-oil-cut-appetite - Pine Nut Oil Boosts Appetite Suppressors Up To 60 Percent For 4 Hours
https://www.sciencedaily.com/releases/2006/04/060404085953.htm

Latest posts by StyleCraze (see all)
- চা খাওয়ার উপকারিতা এবং অতিরিক্ত চায়ের নেশার অপকারিতা | Tea Benefits and Side Effects in Bengali - February 25, 2021
- অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যুক্ত খাদ্য সামগ্রী এবং তার গুণাবলী | Antioxidant Rich Foods in Bengali - February 22, 2021
- মূত্র নালীতে সংক্রমণের কারণ, লক্ষণ এবং ঘরোয়া উপায়ে চিকিৎসা পদ্ধতি | Home Remedies for UTI - February 18, 2021
- জিলাটিনের ব্যবহার, উপকারিতা ও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া | Gelatin Benefits and Side Effects in Bengali - February 17, 2021
- উইলসন রোগ – কারন, লক্ষন, চিকিৎসা | Wilson Disease in Bengali - February 17, 2021
