পেস্তার উপকারীতা, ব্যবহার এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া | All About Pista in Bengali

বাদামের বিষয়ে কথা হবে কিন্তু পেস্তার কথা হবেনা এমন টা হতে পারে না। অনেকেই আছেন যারা লবনাক্ত স্বাদের বাদাম পছন্দ করেন না, তাদের ক্ষেত্রে পেস্তা অন্যভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে যেমন পায়েস, মিষ্টি, কেক, পুডিং ইত্যাদিতেও। তাই যে কেউই খাদ্য হিসেবে পেস্তা গ্রহণে ইচ্ছুক হলো পেস্তা নানান রূপে তার কেছে পরিবেশন করা যেতে পারে। শুধু মাত্র স্বাদে উত্তম বলেই খাদ্য হিসেবে পেস্তা গ্রহণ করা উচিৎ এমন নয়, একাধিক স্বাস্থ্য গুণ সম্পন্ন এই পেস্তা। তবে শরীরের জন্য উপকারী অন্যসব খাদ্যের মতন পেস্তা ও একটা নির্দিষ্ট পরিমাণে গ্রহণ করা উচিৎ নাহলে হিতে বিপরীত হতে পারে। আলোচ্য নিবন্ধ থেকে পেস্তার যাবতীয় গুণাগুণ, ব্যবহারের পদ্ধতি, স্বাস্থ্যোপযোগীতা, পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ইত্যাদি বিষয় গুলি সম্পর্কে জানতে পারা যাবে।
In This Article
পেস্তা আসলে কী?
পেস্তা এক ধরণের সবুজ শুকনো বাদাম। বিভিন্ন মিষ্টির স্বাদ এবং সৌন্দর্য বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এটা ব্যবহার করা হয়। একাধিক উপযোগীতার কারণে বিভিন্ন শুকনো ফলের মধ্যে পেস্তার একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। বহু পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ পেস্তা একদিকে যেমন মানব দেহে রক্তচাপ মাত্রা নিয়ন্ত্রন থেকে আরম্ভ করে ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে অন্যদিকে তেমন হৃদযন্ত্রের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখে, ওজন নিয়ন্ত্রন করে। পেস্তার বিজ্ঞানসম্মত নাম পিস্তাসিয়া ভেরা। এই বাদাম এশিয়া মহাদেশের আফগানিস্থান, ইরান, সিরিয়া এছাড়াও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যায়। ইরান বিশ্বের সর্বাধিক পরিমান পেস্তা উৎপাদন করে বলে মনে করা হয় (1) ।
পেস্তা কেন স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী ?
পেস্তা একাধিক স্বাস্থ্যগুণ সমৃদ্ধ হয়। এতে রয়েছে স্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড, পলি আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড, মনো আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড, ফাইবার, প্রোটিন, পটাসিয়াম, জিঙ্ক, ফসফরাস, ভিটামিন বি৬, ম্যাঙ্গানীজ। স্বাস্থ্যোন্নতির পাশাপাশি অনেক গুরুতর শারীরিক সমস্যাও দূর করে পেস্তা। এই কারণে বলা হয় খাদ্য তালিকায় পেস্তার অন্তর্ভূক্তি হলে অনেক রোগ জীবানুকে এড়ানো সম্ভব হয়।
পেস্তার স্বাস্থ্যপোযোগীতা
পেস্তার নানাবিধ স্বাস্থ্যোপোযোগীতা রয়েছে। কিন্তু আশ্চর্যের কথা হলো বেশিরভাগ মানুষই পেস্তার স্বাস্থ্যোপোযোগীতা সম্পর্কে অজ্ঞাত। পেস্তার অজানা সেইসব স্বাস্থ্যোপযোগীতা গুলি সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো –
১. হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্যোন্নতি করে
হৃদযন্ত্রকে সুস্থ্য রাখার জন্য পেস্তার একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। পেস্তায় রয়েছে একাধিক পৌষ্টিক উপাদান। এনসিবিআই ( ন্যাশানাল সেনয়ার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশন) এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণা থেকে জানা যায় যে পেস্তার ব্যবহার কম ঘন্ত্বের লাইপোপ্রোটিন ( ক্ষতিকর কোলেস্টেরল) কমাতে পারে। একইসাথে বেশি ঘনত্বের লাইপোপ্রোটিন বা উপকারী কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। কম ঘনত্বের লাইপোপ্রোটিন করোনারি হৃদরোগ এবং ইস্কিমিক হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকটাই কমিয়ে দিতে পারে। এছাড়াও আরেকটি গবেষণা সূত্রে জানা গিয়েছে পেস্তায় রয়েছে অনেক ফাইটোকেমিক্যাল যেমন ফ্যাটি অ্যাসিড যা হার্টের সুস্থ্যতা বজায় রাখে (2)।
২. দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে
চোখ মানবদেহ তথা মুখমণ্ডলের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই চোখের সুস্বাস্থ্য বজার রাখার জন্য পেস্তা খুবই উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। বিশদে দেখলে পেস্তার পৌষ্টিক উপাদানের মধ্যে রয়েছে ল্যুটেইন এবং জ্যাক্সনন্থন ইত্যাদি ক্যারোটিনয়েড যা চোখের রেটিনার জন্য খুবই উপকারী বলে মনে করা হয়। খাদ্য তালিকায় ল্যুটেইন এবং জ্যাকান্থনের অভাব বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে সৃষ্ট বার্ধক্যজনিত রোগ যেমন ম্যাকুলার ডিজেনারেশন (এএমডি) এর সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। পেস্তা শরীরে ল্যুটেইন এবং জ্যাক্সনন্থন এর সরবরাহ অবিরত রেখে শরীরে এএমডির এর ঝুঁকি অনেকটাই কমিয়ে দেয় (3)।
৩. মেদ হ্রাস করে
মেদ মুক্ত শরীর সকল মানুষেরই কাম্য। এটা জেনে আশ্চর্য হবেন পেস্তা কিন্তু মেদ হ্রাসে সহায়ক। খাদ্য তালিকায় মেদ অন্তর্ভুক্ত করা হলে ওজন নিয়ন্ত্রনে থাকে। এনসিবিআই এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত রিপোর্ট থেকে একথা জানা যায়। খাদ্য হিসেবে পেস্তা গ্রহণের নির্দিষ্ট পরিমাণের ওপর হওয়া একটা গবেষণা থেকে জানা যায় পেস্তা শরীরের অধিক ক্যালোরি গ্রহণ নিয়ন্ত্রনে রাখে। এনসিবিআইয়ের অন্য একটি গবেষণা সূত্রে আরো জানা গিয়েছে নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে ১২ সপ্তাহ ধরে পেস্তার ব্যবহার শরীরে বিএমই কমিয়ে দিতে পারে। এছাড়াও পেস্তা অ্যান্টিওবিস বৈশিষ্ট্যযুক্ত হওয়ার জন্য সহজেই স্টার্চ ব্লকেজ, ক্ষুধা মন্দ্রতা, চর্বি শোষণ, এবং কম শক্তি ঘনত্ব হিসেবে কাজ করে (4) (5) ।
৪. মধুমেহ নিয়ন্ত্রক
মধুমেহ রোগের ক্ষেত্রে পেস্তা খুবই উপকারী বলে মনে করা হয়। মধুমেহ আক্রান্ত মানুষদের খাদ্য হিসেবে পেস্তা একটি সক্রিয় এবং কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এই তথ্যের ওপর ভিত্তি করে প্রস্তুত একটি বৈজ্ঞানিক প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যে পেস্তা টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে শর্করার পরিমাণ এবং ইনসুলিন ক্ষরণের মাত্রা নিয়ন্ত্রন করে। এর ফলে ডায়াবেটিস আক্রান্তদের স্বাস্থ্যের অবস্থা কিছুটা হলেও উন্নত হয় (6) ।
৫. প্রদাহ নাশক
শরীরে আঘাত জনিত কারণে আক্রান্ত স্থান ফুলে যায় এবং জ্বালা যন্ত্রনা শুরু হয়। পেস্তার ব্যবহার আক্রান্ত স্থানের জ্বালা বা প্রদাহ উপশম করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণা অনুসারে জানা যাচ্ছে যে পেস্তা অ্যান্টি ইনফ্লেমেটারি এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যযুক্ত হওয়ার কারণে প্রদাহ নাশে সহায়তা করে। এছাড়াও পেস্তায় মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট এর উপস্থিতি আঘাত জনিত জ্বালা যন্ত্রনা থেকে শরীরকে বিরত রাখে (7) ।
৬. মস্তিষ্ক তথা স্নায়বিক স্বাস্থ্য রক্ষক
পেস্তা বাদামের উপকারীতা গুলির মধ্যে একটি হলো এই বাদাম মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য এবং স্নায়বিক স্বাস্থ্য সুরক্ষিত রাখে। একটি চিকিৎসা গবেষণা থেকে জানা যাচ্ছে পেস্তায় রয়েছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি ইনফ্লেমেটারি ও অ্যান্টি নিউরোপ্রোটেক্টিভ বৈশিষ্ট্যযুক্ত ফেনোলিক যৌগ। যা অ্যাড্রেনসিয়াল (স্নায়বিক কোষের সাথে সম্পর্কিত) এবং নরড্রেন অ্যালার্জি (স্নায়বিক হরমোন) রিসেপটারের কার্যকারিতার বয়স সংক্রান্ত পরিবর্তন প্রভাবিত করতে সক্ষম। যা মস্তিষ্ককে সুস্থ্য রাখে। এছাড়াও পেস্তায় রয়েছে ফ্ল্যাভোনয়েড যা স্মৃতিশক্তি সহ নিউরোকগনেটিভ উন্নতিতে সহায়তা করে (8)।
৭. ক্যান্সার প্রতিরোধক
খাদ্য হিসেবে পেস্তার ব্যবহার ক্যান্সারের ঝুঁকি এড়াতে সহায়ক। এনসিবিআই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণা অনুসারে পেস্তা কেমো প্রতিরোধক বৈশিষ্ট্যযুক্ত হয়। এই প্রভাবের কারণে পেস্তা ক্যান্সার কোষ বিকশিত হতে বাধা প্রদান করে। অন্য আরেক গবেষণা থেকে জানা যাচ্ছে যে পেস্তায় উপস্থিত পি টোকোফেরল ( এক ধরণের ভিটামিন ই) এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্টের উপস্থিতি ক্যান্সারের বিরুদ্ধে সুরক্ষা প্রদান করে আর ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেকটাই কমিয়ে দেয়। ক্যান্সার সনাক্ত হওয়ার পর ঘরোয়া পদ্ধতিতে চিকিৎসা বিধি অনুসরণ না করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করাই শরীরের জন্য উপকারী (9)।
৮. অনাক্রম্যতা বর্দ্ধক
খাদ্য তালিকায় পেস্তার উপস্থিতি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণা থেকে জানা যাচ্ছে পেস্তায় রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমানে ম্যাগনেশিয়াম। যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এছাড়াও পেস্তায় উপস্থিত টোকোফেরল যৌগ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করে তুলতে সহায়ক হয়। এইজন্য দৈনিক খাদ্য তালিকায় পেস্তার উপস্থিতি শরীরের জন্যখুবই উপযোগী বলে মনে করা হয় (10)।
৯. হিমোগ্লোবিন তৈরীতে সহায়ক
নির্দিষ্ট পরিমাণ খাদ্যের অভাবে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যায়। কিন্তু জানলে অবাক হবেন যে পেস্তায় এমন সব উপাদানের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় যা হিমোগ্লোবিন প্রস্তুতের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে। বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক গবেষণা সূত্রে জানা যায় যে শরীরে হিমোগ্লোবিনের অভাব হয় মূলত শরীরে পর্যাপ্ত আয়রনের অভাবের জন্য। পেস্তা খেলে শরীরে আয়রনের মাত্রা বজায় থাকে যা হিমোগ্লোবিনের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে (11)।
১০. হাড়ের সুস্বাস্থ্য রক্ষক
পেস্তা হাড়ের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখে। একটি গবেষণা সূত্রে জানা গিয়েছে পেস্তায় রয়েছে স্ট্রোনসিয়াম যা এক ধরণের ট্রেস খনিজ। স্ট্রোনসিয়াম, ক্যালসিয়ামের বিকল্প দ্রব্য হিসেবে কাজ করে। এই খনিজ হাড় এবং দাঁতের গঠন উন্নত করে। এছাড়াও হাড়ের পুষ্টি জুগিয়ে ঘনত্ব বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। সেই অর্থে দেখলে স্ট্রোনসিয়াম অস্টিওব্লাষ্ট (হাড়ের কোষ গঠন) এবং অস্টিওক্লাস্ট (হাড়ের গঠনে) উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে (12) ।
১১. যৌন স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে উপযোগী
যৌন স্বাস্থ্যের উন্নতির ক্ষেত্রে পেস্তার ব্যবহার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মনে করা হয় খাদ্য তালিকায় পেস্তা অন্তর্ভূক্ত করলে তা যৌন স্বাস্থ্যের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। বৈজ্ঞানিক গবেষণা অনুসারে জানা যায় যে পেস্তায় উপস্থিত অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এবং অ্যার্জিনাইন (এক ধরণের অ্যামিনো অ্যাসিড) ইরেক্টাইল ডিসফাংশান বা যৌন শিথিলতা কে দূর করে এবং যৌন জীবন কে স্বাভাবিক করে তোলে। পেস্তার ব্যবহার যৌন স্বাস্থ্যকে ব্যাপক ভাবে প্রভাবিত করে (13)। তাই বলা হয় যৌন জীবন সুস্থ্য এবং স্বাভাবিক রাখার জন্য পেস্তার ভূমিকা অনস্বীকার্য।
১২. ইস্ট্রোজেন ক্ষরণের মাত্রা বর্দ্ধক
ইস্ট্রোজেন এক ধরণের স্টেরয়েড হরমোন যা মূলত মহিলাদের প্রজনন অঙ্গের সাথে সম্পর্কিত। ইস্ট্রোজেনের ভারসাম্য বজায় থাকলে প্রাথমিক স্তরের ডিম্বাশয় ইনফিজিওলজি, হাইপোগোনাডিজম, মেনোপজের উপসর্গ, অস্টিওপোরেসিস এবং প্রোস্ট্রেট ক্যান্সারের সম্ভবনা অনেকটাই কম হয়। সেই কারণে খাদ্য হিসেবে পেস্তা গ্রহণ করলে শরীরে ইস্ট্রোজেনের ভারসাম্য বজায় থাকে বলে মনে করা হয়। পেস্তায় রয়েছে ফাইটোইস্ট্রোজেন যা শরীরে ইস্ট্রোজেনের ভারসাম্য রক্ষা করে (14) ।
১৩. গর্ভবতী এবং স্তনদায়ীদের জন্য উপকারী
গর্ভবতী মহিলাদের শরীরে পর্যাপ্ত পুষ্টির প্রয়োজন আছে যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি পৌষ্টিক উপাদান হলো ওমেগা ফ্যাটি অ্যাসিড। যা সদ্যজাত শিশুকে সুস্থ্য রাখতে সহায়তা করে। পেস্তায় এই ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যায়। এছাড়াও স্তনদায়ী মায়েদের জন্য পেস্তা গ্রহণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয় কারণ মাতৃ দুগ্ধের মাধ্যমে শিশুর শরীরে আয়রন যায়। তাই স্তনদায়ী মহিলাদের খাদ্য তালিকা পেস্তার উপস্থিতি খুবই জরুরী। যদিও এই সংক্রান্ত বিষয়ে এখনও পর্যন্ত কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
১৪. কোলেস্টেরল এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রক
পেস্তা বাদাম রকের কোলেস্টেরল এবং রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রন করে। এনসিবিআই এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি মেডিক্যাল রিপোর্ট অনুযাই পেস্তা রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রন করে। অপর একটি গবেষণা পত্র থেকে জানা গেছে ১ মাস যাবত খাদ্য তালিকা তালিকায় নিয়মিত পেস্তার উপস্থিতি সিস্টোলিক রক্তচাপ কম রাখে। তবে ডায়াস্টোলিক রক্তচাপের ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন হয়না সেটা অপরিবর্তিত থাকে।
১৫. ত্বকের সুস্বাস্থ্য বর্দ্ধক
পেস্তার ব্যবহার ত্বকের জন্য খুবই উপকারী হিসেবে প্রমাণিত হয়। একটি গবেষণা থেকে জানা যাচ্ছে খাদ্য হিসেবে পেস্তা গ্রহণ করলে ত্বকের স্বাস্থ্যোন্নতি ঘটে। পেস্তায় রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা সূর্য রশ্মির ফলে অক্সিডেটিভ ক্ষতি এবং অতিবেগুনী রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করতে সহায়তা করে। তাই ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষায় পেস্তাকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য বলে মনে করা হয় (15)।
১৬. চুলের স্বাস্থ্যোন্নতি করে
পেস্তার ব্যবহার চুলের উন্নতি করে। এনসিবিআই ওয়েবসাইট সূত্রে জানা গিয়েছে পেস্তা অ্যামাইনো অ্যাসিডের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস, যা চুলের জন্য অপরিহার্য। অ্যামিনো অ্যাসিড চুল শক্তিশালী করে চুলের ক্ষতি প্রতিরোধ করতে পারে। তাই চুলের স্বাস্থ্যোন্নতি করতে ইচ্ছুকদের কে পেস্তা গ্রহণ করার পরামর্শ দেওয়া হয় (16) ।
পেস্তার পুষ্টিগুণ
পৌষ্টিক উপাদান | পরিমাণ (প্রতি ১০০ গ্রামে) |
শক্তি | ৫৭১ কিক্যাল |
প্রোটিন | ২১.৪৩ গ্রাম |
মোট লিপিড (ফ্যাট) | ৪৬.৪৩ গ্রাম |
কার্বোহাইড্রেট | ২৮.৫৭ গ্রাম |
ফাইবার | ১০.৭ গ্রাম |
শর্করা | ৭.১৪ গ্রাম |
ক্যালসিয়াম | ১০৭ মিলিগ্রাম |
আয়রন | ৩.৯৩ মিলিগ্রাম |
ম্যাগনেশিয়াম | ১২৫ মিলিগ্রাম |
ফসফরাস | ৫০০ মিলিগ্রাম |
পটাসিয়াম | ১০৩৬ মিলিগ্রাম |
কপার / পারদ | ১৪২৯ মিলিগ্রাম |
ম্যাঙ্গানীজ | ১ মিলিগ্রাম |
থায়মিন | ১ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন বি ৬ | ১.৭৮৬ মিলিগ্রাম |
স্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড | ৫.৩৬ গ্রাম |
মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড | ২৫ গ্রাম |
পলিস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড | ১৪.২৯ গ্রাম |
সূত্র – (17)
পেস্তার ব্যবহার
পেস্তা এমন এক ধরণের শুকনো বাদাম, যা প্রতিদিনই খাওয়া যেতে পারে। তবে প্রতিদিন ঠিক কতটা পরিমাণে পেস্তা খাওয়া উচিৎ, কিভাবে পেস্তা খাওয়া উচিৎ এবার সেই বিষয়ে জেনে নেওয়া যাক –
কীভাবে পেস্তা ব্যবহার করা যায়
শুধু শুধুই পেস্তা খাওয়া যেতে পারে।
- রোস্ট করেও পেস্তা খাওয়া যেতে পারে।
- বিস্কুট এবং কেক তৈরীর সময় পেস্তা ব্যবহার করা হয়।
- পায়েস এবং অন্যান্য মিষ্টি তৈরীর সময়ও পেস্তার প্রয়োজন হয়।
- বাড়িতেও তৈরী মিষ্টি বা হোম মেড ডেসার্টে পেস্তা ব্যবহার করা যেতে পারে।
- দুধের সাথে পেস্তা মিশিয়ে পান করলে তা খুবই স্বাস্থ্যকর বলে বিবেচিত হয়।
- পেস্তা রাতে জলে ভিজিয়ে সকালে খাওয়ার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।
কখন খাওয়া উচিৎ
- সকালবেলা ভেজা পেস্তা খাওয়া যেতে পারে।
- পেস্তা সহযোগে প্রস্তুত মিষ্টি এবং কেক সন্ধ্যেবেলা স্ন্যাক্স হিসেবে পরিবেশন করা যেতে পারে।
- রাতে শোওয়ার আগে দুধের সাথে পেস্তা খাওয়া যেতে পারে।
- পেস্তা দিয়ে তৈরী মিষ্টি দুপুরে বা রাতের আহারের সময়ও গ্রহণ করা যেতে পারে।
পেস্তা গ্রহণের পরিমাণ
দৈনিক ৩৫-৪০ গ্রাম পেস্তা খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করলে পর্যাপ্ত পরিমান উপকারীতা পাওয়া যায়। একইসাথে নির্দিষ্ট পরিমাণ পেস্তা খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করলে শরীরে কোনো কুপ্রভাব পরেনা। অবশ্য প্রত্যেক মানুষের খাদ্যাভ্যাস এবং হজম শক্তি সমান হয়না তাই কার শরীরে কতটা পরিমান পেস্তা গ্রহণ নিরাপদ হবে সেটা পুষ্টি বিশেষজ্ঞার সাথে পরামর্শ করে নেওয়া জরুরী।
পেস্তা চিনে নেওয়ার উপায় এবং সংরক্ষণের পদ্ধতি
বাজার থেকে বেছে বেছে ভালো পেস্তা কেনা নিসন্দেহেই একটা বড় গুণের পরিচায়ক। একইসাথে পেস্তা সংরক্ষণের জন্য সঠিক উপায়ও জেনে নেওয়া জরুরী।
পেস্তা বেছে নেওয়ার পদ্ধতি
- দেখা দরকার পেস্তা যেন খোসা সমেত হয়। কারণ খোসা ছাড়ানো পেস্তা বেশিদিন সংরক্ষণ করে রাখা যায় না।
- একান্তই খোসা ছাড়ানো পেস্তা কেনার প্রয়োজন হলে, দেখে নিতে হবে যাতে পেস্তার গায়ে কোন প্রকার দাগ ছোপ না থাকে।
- পেস্তার রঙ অবশ্যই সবুজ হওয়া উচিৎ।
- পেস্তা গুলি যেনো পোকায় খাওয়া না হয় সেটাও পরীক্ষা করে নেওয়া জরুরী।
পেস্তা সংরক্ষণ পদ্ধতি
পেস্তাকে এয়ার টাইট ব্যাগের মধ্যে ঢুকিয়ে ব্যাগের মুখ বন্ধ করে রাখা যেতে পারে। এতে পেস্তা ভালো থাকে।
পেস্তার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া (18) –
পেস্তার উপকারীতা এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পূর্ণ ভাবে নির্ভর করে খাদ্য হিসেবে কতটা পরিমাণ পেস্তা গ্রহণ করা হচ্ছে তার ওপর। একইসাথে কখন এবং কতটা পরিমান পেস্তা খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করলে তা শরীরের জন্য নিরাপদ সেটাও জানা জরুরী। কারণ এসব প্রয়োজনীয় তথ্য না জেনে অধিক পরিমাণ পেস্তা গ্রহণ করলে শরীরের উপকারের পরিবর্তে অপকার হবে। এবার জেনে যাক পেস্তার পার্শ প্রতিক্রিয়া গুলি কী কী –
- খাদ্য হিসেবে পেস্তা গ্রহণ মধুমেহ আক্রান্ত মানুষদের ক্ষেত্রে খুবই উপকারী বলে বিবেচিত হয় কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় বেশি মাত্রায় গ্রহণের করলে রক্তে শর্করার পরিমাণ উল্লেখযোগ্য রকমভাবে কম হয়ে যায়।
- কিছু বাচ্চাদের ক্ষেত্রে পেস্তা গ্রহণের ফলে অ্যালার্জি সমস্যা হতে দেখা যায়।
- ছোটো বাচ্চাদের গলায় পেস্তা আটকে যেতে পারে তাই বাচ্চাদের পেস্তা গুঁড়ো করে দেওয়া দরকার। অবশ্য বাচ্চাদের খাদ্য তালিকা পেস্তা অন্তর্ভূক্ত করার আগে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে নেওয়া জরুরী।
এখন এটা জানা গিয়েছে যে পেস্তা এক আশ্চর্য গুণাগুণ সমৃদ্ধ ফল। নির্দিষ্ট পরিমান পেস্তা গ্রহণ করলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। এবং নির্দিষ্ট মাত্রার বেশি পেস্তা গ্রহণ করলে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক বলে বিবেচিত হয়। তাই এবার থেকে বাজারে অন্যসব ফল কেনার জন্য গেলে পেস্তা কিনতে ভুলবেন না।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী
কত সময় পর্যন্ত পেস্তা খাবার যোগ্য থাকে ?
এয়ারটাইট কৌটো বা ব্যাগে রাখলে ২-৩ মাস সময় পর্যন্ত পেস্তা খাবার যোগ্য থাকে।
পেস্তা এতো মূল্যবাণ হয় কেনো?
পেস্তা শরীরের জন্য অতি প্রয়োজনীয় পুষ্টি গুণ যুক্ত উপাদান। এবং পেস্তার উৎপাদন বেশ কম পরিমাণেই হয়ে থাকে। তাই পেস্তা খুব দামী হয়।
পেস্তা খারাপ হয়ে গেলে সেটা কী করে জানা যাবে?
পেস্তা খারাপ হয়ে গেলে স্বাদের পরিবর্তন হয়ে যায়। পেস্তা খারাপ হয়ে গেলে তা স্বাদে তেঁতো হয়ে যায়।
পেস্তার খোলা (খোসা) কী বিষাক্ত প্রকৃতির হয়?
একদমই সেরকম কিছু নয়। পেস্তার খোলা বিষাক্ত প্রকৃতির হয়না। তবে এটা খাওয়ার উপযুক্ত করা সম্ভব নয়। এর একমাত্র কারণ এই খোলা গুলি খুবই কঠিন প্রকৃতির হয়। তাই এটা চেবানো খুবই মুশকিল।
ভাজা পেস্তা বাদাম কী শরীরের জন্য ভালো?
হ্যাঁ, ভাজা পেস্তা বাদাম শরীরের জন্য খুবই ভালো। কারণ এতে খুবই কম পরিমাণে ফ্যাট থাকে যা মূলত স্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড, পলি আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড, এবং মনো আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড ইত্যাদির সমন্বয়ে তৈরী। যা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী বলে মনে করা হয়।
কাঁচা পেস্তা খাওয়া কী শরীরের জন্য উপকারী?
হ্যাঁ, কাঁচা পেস্তা খাওয়া শরীরের জন্য উপকারী তবে জটিল শারীরিক সমস্যায় থাকা ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ ব্যতীত পেস্তা খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করা ঠিক নয়।
পেস্তা কী পেটের চর্বি কমাতে সাহায্য করে?
ওপরের নিবন্ধে আমরা জানতে পেরেছি পেস্তায় খুব অল্প পরিমাণ ফ্যাট রয়েছে এবং পেস্তা ওজন কমানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই বলা যেতে পারে যে পেস্তা পেটে চর্বি গলানোর ক্ষেত্রে সহায়তা করে।
পেস্তা, ঠাণ্ডা না গরম কী প্রকৃতির হয়?
পেস্তা গরম প্রকৃতির হয়। তাই গ্রীষ্মকালে বেশি পরিমাণে পেস্তা গ্রহণ করা সঠিক নয়।
Sources
- Pistachios for Health, What Do We Know About This Multifaceted Nut? –
https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC4890834/ - Pistachio nuts: composition and potential health benefits –
https://pubmed.ncbi.nlm.nih.gov/22458696/ - Lutein and Zeaxanthin-Food Sources, Bioavailability and Dietary Variety in Age-Related Macular Degeneration Protection –
https://pubmed.ncbi.nlm.nih.gov/28208784/ - Pistachio nuts reduce triglycerides and body weight by comparison to refined carbohydrate snack in obese subjects on a 12-week weight loss program –
https://pubmed.ncbi.nlm.nih.gov/20833992/ - Effects of Pistachio Nut Supplementation on Blood Glucose in Patients with Type 2 Diabetes: A Randomized Crossover Trial
https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC4310069/ - Effects of Pistachio Nut Supplementation on Blood Glucose in Patients with Type 2 Diabetes: A Randomized Crossover Trial –
https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC4310069/ - The Anti-Inflammatory and Antioxidant Potential of Pistachios (Pistacia vera L.) In Vitro and In Vivo –
https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC5579708/ - Pistachio supplementation attenuates motor and cognition impairments induced by cisplatin or vincristine in rats –
https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC4434487/ - Chemopreventive Potential of Raw and Roasted Pistachios Regarding Colon Carcinogenesis –
https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC5748818/ - A review on pistachio: Its composition and benefits regarding the prevention or treatment of diseases –
https://johe.rums.ac.ir/article-1-144-en.pdf - Iron –
https://ods.od.nih.gov/factsheets/Iron-%20HealthProfessional/ - Identification and Quantification of Heavy Metals Concentrations in Pistacia –
http://citeseerx.ist.psu.edu/viewdoc/download?doi=10.1.1.952.3000&rep=rep1&type=pdf - Effect of Nut Consumption on Erectile and Sexual Function in Healthy Males: A Secondary Outcome Analysis of the FERTINUTS Randomized Controlled Trial –
https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC6627592/ - Phytoestrogens –
https://www.sciencedirect.com/topics/neuroscience/phytoestrogens - Photoprotection by pistachio bioactives in a 3-dimensional human skin equivalent tissue model –
https://pubmed.ncbi.nlm.nih.gov/28122479/ - Nutrition of women with hair loss problem during the period of menopause –
https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC4828511/ - USDA
https://fdc.nal.usda.gov/fdc-app.html#/food-details/170184/nutrients - Low percentage of clinically relevant pistachio nut and mango co-sensitisation in cashew nut sensitised children –
https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC5357817/