স্ট্রবেরির উপকারিতা, ব্যবহার এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া | Strawberry Benefits, Uses And Side Effects in Bengali

আইসক্রিম হোক বা কেক কিংবা যে কোনও রকমের ডেজার্ট, অথবা লিপ বাম থেকে শুরু করে শ্যাম্পু- প্রসাধনী সামগ্রীতেও স্ট্রবেরি ফ্লেভার কিন্তু অনেকেরই খুব পছন্দের। লাল টুকটুকে এই ফলটি ভালোবাসে না, এমন মানুষ বোধহয় হাতে গোণা। স্ট্রবেরি থেকে তৈ্রি করা হয় নানা ধরনের চকোলেট এবং মকটেলও। শুধু খাবার না রুপচর্চাতেও ভীষণ উপকারী এই স্ট্রবেরি। শুধু স্বাদে বা গন্ধেই নয়, পুষ্টিগুণেও সেরার সেরা স্ট্রবেরি। এমনক্কি ফেলা হয় না এই ফলের খোসা এবং বীজও। ফলের খোসা, শাঁস বা ত্বক এবং বীজ সবেতেই লুকিয়ে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিগুণ।
বিশ্বের সর্বাধিক জনপ্রিয় বেরি হল স্ট্রবেরি (Fragaria ananassa)। উজ্জ্বল এই লাল রঙের ফলটি যেমন স্বাস্থ্যকর তেমনই সুস্বাদু। এই ফলের রসালো টক-মিষ্টি স্বাদ এবং সুন্দর মিষ্টি গন্ধ মানুষের মন জয় করে আসছে বহুদিন ধরে। জেলি, জ্যাম, মিষ্টি, বিভিন্ন রকম ডেজার্টের সঙ্গে স্ট্রবেরি মিশিয়ে খেলে মন জুড়িয়ে যায় নিমেষের মধ্যে। প্রচুর ভিটামিন, শরীর ভালো রাখার জন্য অত্যাবশ্যকীয় নানান ধরনের খনিজ উপাদান এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ এই ফল আপনার স্বাস্থের জন্য উপকারী।
স্টাইলক্রেজের এই নিবন্ধে আজকে আমরা স্ট্রবেরি খাওয়ার উপকারিতা, খাওয়ার উপায়, দীর্ঘদিন ধরে সংরক্ষণ করার বিভিন্ন উপায় সম্পর্কে আলোচনা করব।
In This Article
স্ট্রবেরির প্রকারভেদ
স্ট্রবেরি বিভিন্ন ধরনের হয়। উৎপাদনের প্রকৃতি ও সময়ের নিরিখে মূলত ধরনগুলি ঠিক করা হয়। তবে প্রধানত তিন ধরনের স্ট্রবেরির পাওয়া যায় –
- জুন বিয়ারিং স্ট্রবেরি ( June Bearing Strawberry ) – স্ট্রবেরির সবচেয়ে সাধারণ এবং জনপ্রিয় ধরন হল জুন বিয়ারিং স্ট্রবেরি। বিশ্বব্যাপী ব্যাপকভাবে চাষ হয় এই প্রজাতির স্ট্রবেরি। সাধারণত, জুন মাসে ফল পাকে তাই এই জাতের স্ট্রবেরির। জুন বিয়ারিং স্ট্রবেরি প্রজাতির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল আর্লিগ্লো (Earliglow), হোনয় (Honeoye), অলস্টার (Allstar), জুয়েল (Jewel) ইত্যাদি। (১)
- এভার বিয়ারিং স্ট্রবেরি ( Everbearing Strawberry ) – চিরকালীন নাম হলেও এই জাতের স্ট্রবেরির ফলন বছরে দুবার হয়। একবার বসন্তে এবং একবার গ্রীষ্মের শেষ দিকে। পাহাড়ি এলাকায় যেখানে জায়গার অভাব থাকে সেখানেই প্রধানত চাষ করা হয় এই প্রজাতির স্ট্রবেরির। চিরকালীন এই স্ট্রবেরি জাতের মধ্যে সর্বাধিক পরিচিত নাম হল ওজার্ক বিউটি ( Ozark Beauty )
- ডে নিউট্রাল স্ট্রবেরি ( Day Neutral Strawberry ) – সারা গ্রীষ্ম ঋতু জুড়ে যে স্ট্রবেরির ভালো ফলন হয় সেইসব জাতের স্ট্রবেরিকে ডে নিউট্রাল স্ট্রবেরি বলা যায়। এই জাতের স্ট্রবেরি খুব সুস্বাদু, মিষ্টি প্রকৃতির হয়। (২)
বিশ্বব্যাপী শত শত জাতের স্ট্রবেরির চাষ হয়। এদের মধ্যে চ্যান্ডেলার (Chandler), টিওগা (Tioga), সেলভা (Selva) ইত্যাদি জাতের স্ট্রবেরির চাষ ভারতে হয়। (৩)
রসনা তৃপ্তির পাশাপাশি স্ট্রবেরি কীভাবে আমাদের স্বাস্থ্যের দিকেও নজর রাখে। এবার জেনে নিন, কী কী স্বাস্থ্যগুণ লুকিয়ে রয়েছে লাল টুকটুকে রসালো এই ফলের মধ্যে –
স্ট্রবেরির উপকারিতা
স্ট্রবেরিতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং পলিফেনল যৌগ আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ভীষণ উপকারী এবং বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। এতে থাকা ভিটামিন-সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় সঙ্গে আপনার ত্বক ও চুলের যত্ন নিতেও সহায়তা করে। ফাইবার সমৃদ্ধ স্ট্রবেরি ক্ষুধা দমন করে ওজন হ্রাসে সহায়তা করে, আবার পেটের মেদ ঝড়াতেও সহায়তা করে।এছাড়াও স্ট্রবেরিতে থাকা ফাইবার হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে, ওজন হ্রাসে সহায়তা করে। স্ট্রবেরিতে থাকা পুষ্টি উপাদান রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখে ফলে বয়স্কদের ক্ষেত্রে স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে।
প্রত্যেকদিন দু’কাপ স্ট্রবেরি জুস পান করলে শরীরে ভিটামি সি এর চাহিদা পূরণ হয় প্রায় শতভাগ। দিনে ৮ টি করে স্ট্রবেরি খেলে হার্ট সুস্থ থাকে, এমনকি ক্যান্সারের ঝুঁকিও কমতে পারে। এবার সবিস্তারের জেনে নেওয়া যাক স্ট্রবেরির সুবিধাগুলি –
- ওজন হ্রাসে সহায়তা করে
স্ট্রবেরি কম ক্যালোরির ফল হওয়ায়, আপনি আপনার ডায়েটে স্ট্রবেরি যোগ করতে পারেন। এক কাপ স্ট্রবেরিতে মাত্র ৫০ গ্রাম ক্যালোরি থাকে। ক্ষতিকারক সব স্ন্যাকস এড়িয়ে বারবার এই ফল খেয়ে পেট ভরাতে পারেন আপনি। ফাইবার স্মৃদ্ধ এই ফল দীর্ঘক্ষণ পেট ভরিয়ে রাখবে আর আপনার ওজন হ্রাসেও সহায়তা করবে।
স্ট্রবেরিতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান এবং অ্যালজিক অ্যাসিড (Ellagic Acid) ওজন হ্রাসে প্রধান ভূমিকা পালন করে। এটি ওজন বৃদ্ধিকারী হরমোনের নিঃসরণ হ্রাস করে ওজন হ্রাসকারী হরমোনগুলির কার্যকারীতা বৃদ্ধি করে।
এছাড়াও স্ট্রবেরিতে থাকা প্রধান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট অ্যান্থোসায়ানিনস (anthocyanins) দেহে অ্যাডিপোনেক্টিন (adiponectin) নামক হরমোনের উৎপাদন বাড়ায় যা ক্ষুধা দমন করে, দেহের মেটাবলিজম রেট বাড়ায় এবং খাদ্য বিপাক প্রক্রিয়া উন্নত করে। এটি খারাপ মেদ ঝরিয়ে ফেলতে সাহায্য করে। (৪)
- ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে
স্ট্রবেরি ক্যান্সারের মতো মারাত্মক রোগের নিরাময় হতে পারে। একটি গবেষণা অনুসারে, স্ট্রবেরিতে ক্যান্সার প্রতিরোধক এবং ক্যান্সার প্রতিকারক বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা ক্যান্সার প্রতিরোধ ও চিকিৎসায় কার্যকর প্রভাব দেখাতে পারে। এছাড়াও, স্ট্রবেরিগুলিতে উপস্থিত প্রতিরোধমূলক উপাদান ক্যান্সার কোষের বিস্তার বন্ধ করতে পারে ক্যান্সার কোষের উৎপাদনকে ধীর করে এবং শরীরকে নির্দিষ্ট ধরনের কার্সিনোজেন ধ্বংস করতে সহায়তা করে ।
স্ট্রবেরিতে থাকা ভিটামিন-সি এবং ফাইবার খাদ্যনালী এবং কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে পারে। আমেরিকান ইনস্টিটিউট অফ ক্যান্সার রিসার্চ –এর তথ্য অনুসারে স্ট্রবেরিতে থাকা অ্যান্টিক্যান্সার উপাদানগুলির মধ্যে প্রধান হল অ্যালজিক অ্যাসিড (Ellagic Acid), একটি ফাইটোকেমিক্যাল যা ত্বক, ফুসফুস, মূত্রাশয় এবং স্তনের ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। (৫)
- হার্ট সুস্থ রাখে
স্ট্রবেরিতে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য এবং পলিফেনলসের যৌগ রয়েছে যা হৃৎপিন্ড সুস্থ রাখে এবং হার্টের বিভিন্ন রকম সমস্যা থেকে প্রতিরধ করে। স্ট্রবেরিতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট অ্যান্টোসায়ানিন (anthocyanins) যা স্ট্রবেরির লাল রঙের জন্য দায়ী, রক্ত সঞ্চালন তন্ত্রের আস্তরণকে রক্ষা করে, ফলে ধমনীগুলির ওপর ক্ষতিকারক আস্তরণ তৈরি হতে পারে না এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে ।
নিউ ইয়র্ক সিটির লেনক্স হিল হাসপাতালের কার্ডিওলজিস্ট ডাঃ সুজান স্টেইনবামের মতে, যে মহিলারা প্রতি সপ্তাহে তিন বা ততোধিক বার বেরি (বিশেষত স্ট্রবেরি) খান তাদের হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি তৃতীয়াংশ হ্রাস পায়। (৬)।
- দাঁত সাদা ঝকঝকে করে তোলে
আপনি যদি দাঁতকে ক্ষতি না করে সাদা করতে চান তবে আপনি স্ট্রবেরি ব্যবহার করতে পারেন। এই ফলটি প্রাকৃতিক উপায়ে দাঁত সাদা করার জন্য কাজ করতে পারে। (৭) বেকিং সোডার সঙ্গে স্ট্রবেরি পালপ মিশিয়ে একটি মসৃণ পেস্ট বানান। তারপর, নরম একটি ব্রাশের সাহায্যে দাঁতের ওপর লাগিয়ে নিন এবং ৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর, টুথপেস্ট দিয়ে ভালো করে ব্রাশ করে ধুয়ে ফেলুন। মনে রাখবেন, ফলের অ্যাসিড আপনার এনামেলের ক্ষতি করতে পারে তাই অতিরিক্ত পরিমাণে এই পদ্ধতিতে ব্রাশ করবেন না।
স্ট্রবেরিতে ম্যালিক অ্যাসিড থাকে যা অ্যাস্ট্রিনজেন্ট হিসাবে কাজ করে আপনার দাঁতগুলির হলুদভাব দূর করে ফলে দাঁতের রং বিবর্ন হতে পারে না। দাঁতের ফাঁকে জমা খাবারের কণা বা দাঁতের ওপরে পরা আস্তরন ব্যাকটিরিয়া সৃষ্টি করে এবং দাঁত ভাঙ্গন সৃষ্টি করে। ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ স্ট্রবেরি এমন ক্ষতিকারক এনজাইমগুলির গঠন প্রতিরোধ করে।
- হাড় মজবুত করে
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের হাড় দুর্বল হয়ে যায়। প্রকৃতপক্ষে, স্ট্রবেরি হাড়ের শক্তি বজায় রাখার জন্য খুব উপকারী। স্ট্রবেরিতে উপস্থিত ম্যাগনেসিয়াম হাড়কে শক্তিশালী করে তোলে।
- ফোলা চোখের চিকিৎসা করতে সহায়ক
স্ট্রবেরি খাওয়ার উপকারিতাও চোখের জন্য দেখা যায়। স্ট্রবেরিতে একটি বিশেষআলফা হাইড্রোক্সি অ্যাসিড থাকে যা ত্বককে মসৃণ ও নরম করতে করে তোলে এবং ফোলা চোখের উপরও ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তবে ফোলা চোখের জন্য আলফা হাইড্রোক্সি অ্যাসিড কতটা কার্যকর হবে তার কোনও সঠিক বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। তবে ত্বকের তারুণ্য বজায় রাখতে বা ফোলা চোখের জন্য এভাবেই স্ট্রবেরি ব্যবহার করতে পারেন।
ব্যবহারবিধি:
- সবার আগে স্ট্রবেরি কিছুক্ষণ ঠাণ্ডা করার জন্য ফ্রিজে রেখে দিন।
- তারপরে টুকরো করে কেটে নিন।
- এখন ১০ মিনিটের জন্য দু চোখের ওপর চাইলে সারা মুখের ওপর স্ট্রবেরির টুকরোগুলি দিয়ে চোখ বুঝে বিশ্রাম করুন।
- ঘুমাতে যাওয়ার আগে অবশ্যই প্রতি রাতে স্ট্রবেরি দিয়ে এই রিল্যাক্স সেশনটা করবেন। পারলে প্রতিদিন দুবার করে করুন।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে
ইতিমধ্যে উল্লিখিত যে, স্ট্রবেরিতে অ্যান্থোসায়ানিন (anthocyanins)নামক এক শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে যা রক্তনালীগুলির আস্তরণকে শিথিল করে, যার ফলে রক্তচাপ হ্রাস পায়। স্ট্রবেরিতে উপস্থিত দ্রবণীয় ফাইবার খারাপ কোলেস্টেরল (এলডিএল) হ্রাস করে, রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। এছাড়াও, স্ট্রবেরিতে প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম পাওয়া যায়, যা রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখে ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ থাকে এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে।
- মস্তিষ্কের সুস্থ কার্যকারীতা বজায় রাখে এবং স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে
প্রতিদিন স্ট্রবেরি খেয়ে আপনি আপনার মস্তিষ্কও সুস্থ রাখতে পারেন এবং স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে পারেন। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে যেতে থাকে। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, স্ট্রবেরিগুলিতে উপস্থিত ফ্ল্যাভোনয়েডগুলি স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে পড়ার এই সমস্যা প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে। এছাড়াও স্ট্রবেরিতে থাকা প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্যগুলি আপনাকে রিল্যাক্স রাখে। মস্তিষ্ক সম্পর্কিত রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়তা করে।
টুফ্টস বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেরিল্যান্ড বাল্টিমোর কাউন্টি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের দ্বারা করা গবেষণা অনুসারে, আমরা দেহে কিছু নির্দিষ্ট বিষাক্ত প্রোটিনের পরিমাণ বৃদ্ধির কারণে মস্তিষ্কের বেশিরভাগ রোগ যেমন Alzheimer’s বা Parkinson’s -এ আক্রান্ত হই। তবে প্রতিদিন স্ট্রবেরির খাওয়ার অভ্যাস এই বিষাক্ত প্রোটিনের জমায়েত রোধ করে। (৮)
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
এবার থেকে আপনি সুস্বাদু স্ট্রবেরি খেয়ে আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে পারেন। স্ট্রবেরি ভিটামিন সি এর দুর্দান্ত উৎস যা আপনার দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করবে। ভিটামিন সি প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিকারী অ্যান্টিবডিগুলির কার্যকারীতা বৃদ্ধি করে এবং আপনার শরীরের সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা বাড়ায়। (৯) দক্ষিণ আফ্রিকান চিকিত্সকদের দ্বারা পরিচালিত গবেষণা অনুসারে, ভিটামিন-সি ইমিউনোগ্লোবুলিনের ঘনত্বকে বাড়িয়ে তোলে, এটি একটি অ্যান্টিবডি এবং ইমিউন সিস্টেমের মূল উপাদান। স্ট্রবেরি অ্যালার্জি এবং হাঁপানির বিরুদ্ধে লড়াই করতেও পরিচিত। আপনি জেনে অবাক হবেন যে এক কাপ স্ট্রবেরিতে কমলালেবুর থেকেও বেশি ভিটামিন-সি রয়েছে ।
- পুরুষদের জন্য উপকারী
স্ট্রবেরি খাওয়ার উপকারিতা অবশ্যই অনেকগুলি। তবে, এটি পুরুষদের জন্য বিশেষ উপকারী বলে বিবেচিত হয়। স্ট্রবেরিতে থাকা ভিটামিন সি এর ফলেও পুরুষদের মধ্যে শুক্রাণুর সংখ্যা বেশি হয়। এছাড়া, স্ট্রবেরিতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টগুলি আপনার হৃৎপিণ্ড সুস্থ রাখে যা স্বাস্থ্যকর যৌনজীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- গর্ভাবস্থায় উপকারী
গর্ভাবস্থায় মহিলাদের অতিরিক্ত পরিমাণে ভিটামিন এবং ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন হয়। বিশেষত, ফোলেট (এক ধরনের ভিটামিন-বি) গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফোলেট গর্ভস্থ শিশুর বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়ে নানান রকম জন্মগত ত্রুটি যেমন শিশুর বিকাশের অভাব, ওজন হ্রাস, এবং অপুষ্টি এড়াতে সাহায্য করে। এইসব জন্মগত ত্রুটি মূলত পুষ্টির অভাব থেকেই হয়। স্ট্রবেরি হল গর্ভাবস্থায় প্রয়োজনীয় এই সকল ভিটামিন বিশেষত ফোলেট এবং খনিজ উপাদান বিশেষত আয়রন, ক্যালশিয়াম এর একটি সমৃদ্ধ উৎস। এক কাপ কাঁচা স্ট্রবেরি থেকে আপনি প্রায় 40 মাইক্রোগ্রাম ফোলেট পাওয়া যায়। এটি প্রস্তাবিত দৈনিক চাহিদার প্রায় ১০ শতাংশ পূরণ করে। (১০) তবে, গর্ভাবস্থায় রোজকার ডায়েটে স্ট্রবেরি যোগ করার আগে সে সম্পর্কে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করুন।
- কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ে সহায়ক
স্ট্রবেরি কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করতে পারে। কারণ, স্ট্রবেরিতে থাকা ফাইবার হজমের গোলযোগ দূর করে, বিপাক প্রক্রিয়া উন্নত করে কোষ্ঠ্যকাঠিন্য নির্মূল করতে পারে।
- দৃষ্টিশক্তি বজায় রাখে
স্ট্রবেরিতে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদানগুলি আপনার চোখকে ছানি, ম্যাকুলার অবক্ষয় এবং অন্যান্য চোখের রোগ থেকে রক্ষা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, স্ট্রবেরিতে উপস্থিত ফ্ল্যাভোনয়েড যৌগ ছানি প্রতিরোধ করার পাশাপাশি দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে।
- খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়
স্ট্রবেরিতে প্যাকটিন থাকে, যা এক ধরনের দ্রবণীয় ফাইবার। এটি শরীরে এলডিএল (খারাপ কোলেস্টেরল) এর মাত্রা হ্রাস করে। ইতালীয় এবং স্প্যানিশ বিজ্ঞানীদের একত্রে করা বিশ্লেষণ অনুসারে, এক মাসের জন্য নিয়মিত ৫০০ গ্রাম স্ট্রবেরি খাবার ফলে এলডিএলের মাত্রা হ্রাস পেয়েছে কয়েকগুণ। সুতরাং, আপনি আপনার রোজকার খাদ্যতালিকায় স্ট্রবেরি যোগ করে কোলেস্টেরলজনিত হৃদরোগগুলি এড়াতে পারেন সহজেই।
- ডায়াবেটিক রোগীদের রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখে
স্ট্রবেরিতে খুব কম গ্লাইসেমিক সূচক (৪০) থাকে, তাই এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে। তাই, স্ট্রবেরি ডায়াবেটিস -২ রোগীদের জন্যও খুব উপকারী বলে মনে করা হয়। স্ট্রবেরিতে থাকা অ্যালজিক অ্যাসিড (Ellagic Acid) এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদানগুলি স্টার্চ জাতীয় খাবার হজম করতে সহায়তা করে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
- প্রদাহ বা ফোলাভাব কমাতে সহায়ক
প্রতিদিন স্ট্রবেরি খেয়ে বাত থেকে মুক্তি পেতে পারেন। এতে উপস্থিত পলিফেনল যৌগ এবং অন্যান্য পুষ্টিগুণ হাঁটুতে ফোলাভাব এবং ব্যথা হ্রাস করতে পারে। এছাড়াও, স্ট্রবেরি ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ হওয়ায়, এটি আর্থ্রাইটিস এবং গাউট এর লক্ষণ ও উপসর্গগুলি হ্রাস করতেও সহায়তা করে। (১১)
এছাড়াও, গবেষণায় দেখা গেছে যে শরীরে C-reactive প্রোটিন (CRP) এর মাত্রা বৃদ্ধি পেলে দেহে প্রদাহজনিত নানান রকম সমস্যার সৃষ্টি হয়।হার্ভার্ড স্কুল অফ পাবলিক হেলথের গবেষকদের মতে, যে মহিলারা প্রতি সপ্তাহে ১৬ বা ততোধিক স্ট্রবেরি খান তাদের দেহে এই ক্ষতিকারক প্রোটিনের মাত্রা বৃদ্ধি পাবার সম্ভাবনা ১৪ শতাংশ কম হয়।
- ত্বকের পরিচর্যা করতে সাহায্য করে
সুস্থ দেহের পাশাপাশি সুন্দর দাগহীন উজ্জ্বল ত্বক পেতে হলে রোজ স্ট্রবেরি খাওয়ার অভ্যাস করা উচিৎ। স্ট্রবেরি আপনার স্কিন টোন উন্নৎ করবে, ত্বকের বর্ন উজ্জ্বল করবে, ত্বকে কোনো রকম জ্বালাভাব হলে তা কমাতে পারে এবং ত্বককে ক্ষতিকারক ইউভি রশ্মির বিকিরণের হাত থেকে রক্ষা করবে।
স্ট্রবেরিতে সাধারণত আলফা-হাইড্রোক্সি অ্যাসিড (alpha-hydroxy acid) থাকে যা ত্বকের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । এটি ত্বকের মৃত কোষগুলি দূর করতে সহায়তা করে এবং ত্বককে করে তোলে ঝকঝকে, দাগহীন, ও উজ্জ্বল। পেনসিলভেনিয়ার হ্যানিম্যান ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ মেডিসিন দ্বারা পরিচালিত একটি সমীক্ষা অনুসারে, আলফা-হাইড্রোক্সি অ্যাসিড ত্বকে বার্ধক্যজনিত লক্ষণগুলির প্রভাব হ্রাস করতে পারে এবং ত্বকের তারুণ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
স্ট্রবেরির মধ্যে স্যালিসিলিক অ্যাসিড (Salicylic Acid) এবং অ্যালজিক অ্যাসিড (Ellagic Acid) রয়েছে যা হাইপারপিগমেন্টেশন এবং গাঢ় ডার্ক স্পটস বা যে কোণো রকম কালো দাগছোপ হ্রাস করতে পারে । স্যালিসিলিক অ্যাসিড ত্বক থেকে মৃত কোষগুলি অপসারণ করে, ত্বক টানটান করে এবং ব্রণর সমস্যা দূর করতে পারে।
স্ট্রবেরিও ভিটামিন সি এর ও একটি দুর্দান্ত উৎস, যা ত্বককে পরিষ্কার ও দাগমুক্ত রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও, এটিতে রয়েছে বিশেষ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান এবং পলিফেনল যৌগ, যা কার্যকর অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি হিসাবে কাজ করে। এতে অ্যান্থোসায়ানিনস নামে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রয়েছে যা ত্বকে সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্মি থেকে রক্ষা করে। এই কারণেই, ভেষজ উপায়ে তৈরী প্রসাধনীগুলিতে স্ট্রবেরির নির্যাস ব্যবহার করা হয়।
- স্ট্রবেরির ফেস মাস্ক – আপনি কিছুটা মধুর সঙ্গে স্ট্রবেরি পেস্ট মিশিয়ে একটি ফেস মাস্ক তৈরী করতে পারেন। প্রতিদিন সকালে এট ফেস মাস্কটি আপনার মুখে লাগান এবং 15 মিনিটের জন্য রেখে দিন। তারপর, ঠান্ডা জলে মুখ ধুয়ে ফেলুন। মধু না থাকলে মধুর বদলে গোলাপজল বা দুধ ও ব্যবহার করতে পারেন।এই সমস্ত উপাদান ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে আশ্চর্যজনকভাবে কাজ করে।
তবে, উল্লিখিত উপাদানগুলির মধ্যে কিছুতে আপনার অ্যালার্জি থাকলে সেটি এড়িয়ে চলুন। অথবা, ফেস মাস্কটি ব্যবহারের পর আপনার ত্বকে কোনোরকম চুলকানি বা অস্বস্তি হলে সঙ্গে সঙ্গে মুখ ধুয়ে ফেলবেন এবং দরকারে চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।
- বয়সের ছাপ দূর করে
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের মুখের এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা হারাতে থাকে, ত্বক কুঁচকে যায়, বলিরেখা পড়ে। স্ট্রবেরিতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিড্যানন্ট বিশেষত লাইকোপিন নামক এক উপাদান ত্বকে বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না, বার্ধক্যজনিত এইসব লক্ষনগুলির প্রকট হওয়া হ্রাস করে এবং ত্বকের তারুণ্য বজায় রাখতে পারে। স্ট্রবেরিতে উপস্থিত অ্যান্থোসায়ানিন নামক উপাদান ত্বককে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে রক্ষা করে, এর ফলে ত্বকের বার্ধক্যজনিত লক্ষণ হ্রাস পায়।
এছাড়াও, এতে উপস্থিত ভিটামিন সি আপনার ত্বকের বর্ণকে দিনে দিনে উজ্জ্বল করে তোলে পাকৃতিক উপায়ে এবং ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সহায়তা করে। রোজ স্ট্রবেরি খাবার সঙ্গে সঙ্গে স্ট্রবেরি দিয়ে বানানো বিভিন্ন রকম ফেস প্যাক বা ফেস মাস্ক মুখে লাগিয়ে দেখতে পারেন।
- চুলের পরিচর্যা করতে সাহায্য করে
চলের পরিচর্যার জন্য স্ট্রবেরি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রকৃতপক্ষে, পুষ্টির অভাবে বা ভিটামিন-সি এর অভাবে আমাদের চুল পড়ার সমস্যা হয়, চুলের স্বাস্থ্যের অবনতি হয়। ইতিমধ্যে আমরা আলোচনা করে ফেলেছি বহুবার যে স্ট্রবেরি হল আররণ এবং ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ একটি ফল। সুতরাং আপনার যদি চুল পড়ার সমস্যা থাকে তবে আপনার খাদ্যতালিকায় স্ট্রবেরি রাখা অত্যন্ত জরুরী। স্ট্রবেরির নির্যাস চুলের গোড়া মজবুত করে চুল পড়ার সমস্যা প্রতিরোধ করতে পারে, খুশকির সমস্যা দূর করে। এমনকি, চুল করে তোলে উজ্জ্বল, সতেজ ও প্রাণবন্ত সঙ্গে চুল বৃদ্ধি পায় খুব তাড়াতাড়ি। এটিও বিশ্বাস করা হয় যে স্ট্রবেরিতে থাকা সিলিকা মাথার টাক পড়ে যাওয়া অংশে নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে আর চুল বাড়েও তাড়াতাড়ি।যদিও, এই দাবির কোনও বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই।
- স্ট্রবেরি হেয়ার মাস্ক – আপনি স্ট্রবেরি হেয়ার মাস্ক প্রস্তুত করতে পারেন যা আপনার চুলের সমস্যাগুলি মোকাবেলায় সহায়তা করতে পারে। নারকেল তেল এবং মধু (প্রতিটি 1 টেবিল চামচ) এর সঙ্গে ২ টি স্ট্রবেরির পেস্ট বা নির্যাস মেশান। এবার মিশ্রণটি মাথার ত্বকে লাগান এবং এটি 20 মিনিটের জন্য রেখে দিন। তারপর, ঠান্ডা জল দিয়ে মাথা ধুয়ে ফেলুন।
সাধারণত, পরিষ্কার স্ক্যাল্পে এই হেয়ার মাস্কটি লাগানো উচিত। তাই, চুলে শ্যাম্পু করার পর মাস্কটি ব্যবহার করলে ভালো ফল পাবেন। এই মাস্কটি মাথার ত্বকে ছত্রাকের বৃদ্ধিও রোধ করে সঙ্গে স্ট্রবেরিতে থাকা ম্যাগনেসিয়াম চুলের বিভিন্ন রকম সমস্যার যত্ন নেয়।
ইতিমধ্যে জেনে গেছেন, স্ট্রবেরির সকল স্বাস্থ্যগুণ। আসুন এখন এটিতে উপস্থিত পুষ্টি সম্পর্কে কথা বলি।
স্ট্রবেরির পুষ্টিগুণ
আমাদের সুস্থ থাকার জন্য প্রয়োজনীয় প্রায় বেশীরভাগ পুষ্টিগুণই লুকিয়ে রয়েছে এই ছোট্ট রসালো টক-মিষ্টি ফলটির মধ্যে। নীচে টেবিলের সাহায্যে দেখানো হল কোন কোন পুষ্টিগুণ কী কী পরিমানে রয়েছে স্ট্রবেরির মধ্যে।
ভিটামিন | ||||
পরিমাণ | %DV | |||
1 µg | 0% | |||
ভিটামিন C | 58.8 mg | 65% | ||
ভিটামিন D | 0 µg | ~ | ||
ভিটামিন E | 0.29 mg | 2% | ||
ভিটামিন K | 2.2 µg | 2% | ||
ভিটামিন B1 (Thiamine) | 0.02 mg | 2% | ||
ভিটামিন B2 (Riboflavin) | 0.02 mg | 2% | ||
ভিটামিন B3 (Niacin) | 0.39 mg | 2% | ||
ভিটামিন B5 (Panthothenic acid) | 0.13 mg | 3% | ||
ভিটামিন B6 (Pyridoxine) | 0.05 mg | 4% | ||
ভিটামিন B12 | 0 µg | ~ | ||
ফোলেট (Folate) | 24 µg | 6% | ||
কোলিন (Choline) | 5.7 mg | 1% | ||
খনিজ উপাদান (MINERALS) | ||
পরিমাণ | %DV | |
ক্যালশিয়াম (Calcium) | 16 mg | 2% |
আয়রন (Iron) | 0.41 mg | 5% |
ম্যাগনেশিয়াম (Magnesium) | 13 mg | 3% |
ফসফরাস (Phosphorus) | 24 mg | 3% |
পটাশিয়াম (Potassium) | 153 mg | 3% |
সোডিয়াম (Sodium) | 1 mg | 0% |
জিঙ্ক ( Zinc) | 0.14 mg | 1% |
কপার (Copper) | 0.05 mg | 5% |
ম্যাঙ্গানিজ (Manganese) | 0.39 mg | 17% |
সেলেনিয়াম (Selenium) | 0.4 µg | 1% |
তথ্যসূত্র: USDA
এক কাপ স্ট্রবেরিতে বা ১৫২ গ্রাম স্ট্রবেরিতে রয়েছে ৪৯ গ্রাম ক্যালোরি, ৩ গ্রাম ফাইবার এবং ৭ গ্রাম সুগার। স্ট্রবেরিতে কোনো ফ্যাট থাকে না।
এছাড়াও স্ট্রবেরিতে রয়েছে –
- ১ গ্রাম প্রোটিন ( যা দৈনিক প্রয়োজনের ২ শতাংশ )
- ৪ মিলিগ্রাম ভিটামিন-C ( যা দৈনিক প্রয়োজনের ১৪৯ শতাংশ )
- ৪ মিলিগ্রাম ম্যাঙ্গানিজ ( যা দৈনিক প্রয়োজনের ২৯ শতাংশ )
- ৫ মাইক্রোগ্রাম ফোলেট ( যা দৈনিক প্রয়োজনের ৯ শতাংশ )
- ২৩৩ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম ( যা দৈনিক প্রয়োজনের ৭ শতাংশ )
- ৮ মিলিগ্রাম ম্যাগনেশিয়াম ( যা দৈনিক প্রয়োজনের ৫ শতাংশ )
- ৪ মিলিগ্রাম ভিটামিন- K ( যা দৈনিক প্রয়োজনের ৪ শতাংশ )
স্ট্রবেরিতে রয়েছে এমন আরোও পুষ্টিগুণ যা সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এবার জেনে নিন, কিভাবে বেছে নেবেন টাটকা স্ট্রবেরি এবং কীভাবেই একে সংরক্ষণ করবেন দীর্ঘদিনের জন্য।
- কীভাবে স্ট্রবেরি বাছবেন এবং সংরক্ষণ করবেন ?
- নির্বাচন – স্ট্রবেরি বাছাই করার সময়, উজ্জ্বল লাল রঙের ফলগুলি কিনবেন সবসময়। কেনার সময় হালকাভাবে হাতে টিপে ফল্গুলি রসালো কিনা পরীক্ষা করে দেখে নিতে পারেন। দাগযুক্ত বা শুকনো ও সংকুচিত কিংবা অত্যাধিক মোটা স্ট্রবেরি কিনবেন না।
- সংরক্ষণ – বন্ধ এয়ার টাইট প্লাস্টিকের পাত্র বা ব্যাগের মধ্যে স্ট্রবেরিগুলি রেখে ফ্রিজের মধ্যে ঢুকিয়ে টানা ৭ দিন পর্যন্ত স্ট্রবেরি সংরক্ষণ করতে পারেন। তবে, দীর্ঘদিনের জন্য সংরক্ষণ করতে চাইলে ফলগুলি ধুয়ে ফেলবেন না, অন্যথায় ফলগুলি পচে যেতে পারে।
স্ট্রবেরির ব্যবহার
স্ট্রবেরি এমন একটি ফল যা প্রায় সবার পছন্দের। বর্ণে, গন্ধে, স্বাদে অসাধারন হওয়ায় এর ব্যবহার ব্যাপকভাবে হয়। আইসক্রিম, কেক, কুকিজ, স্কোয়াশ, সিরাপ, জ্যাম, জেলি, ক্যান্ডি, চকোলেট বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্যের উৎপাদনে ব্যপকভাবে ব্যবহৃত হয় স্ট্রবেরি। বিভিন্ন প্রোটিন বার, সাপ্লিমেন্ট ফুড, ওষুধ তৈরীতেও ব্যবহার করা হয় স্ট্রবেরিকে।
তবে স্যালাডের সঙ্গে মিশিয়ে বা কাঁচা খেলেই উপকার বেশী পাওয়া যায়। সাধারণত, মিষ্টি ও রসালো এই ফলটি ডেজার্ট ও আইসক্রিমের সঙ্গে খাওয়া হয়। মিষ্টি ও রসালো হওয়ায় অনেকে অন্যান্য ফলের মত শুধুই স্ট্রবেরি খেতে পছন্দ করেন। স্ট্রবেরি দিয়ে বিভিন্ন রকমের সুইট ডিস বা ডেয়ার্ট বানানো হয়। মিষ্টি সুগন্ধযুক্ত রসালো এই ফলটি আরোও নানান উপায়ে উপভোগ করার কিছু টিপস রইল –
- অন্যান্য ফলের মত স্ট্রবেরি কাঁচা খেতে পারেন। খাবার আগে, অবশ্যই ফলটি ভালো করে জলে ধুয়ে, পেপার টাওয়েল দিয়ে মুছে শুকনো করে তারপর খাবেন। স্ট্রবেরিকে সামান্য সময়ের জন্য গরম জলের ভাপের মধ্যে রেখে বা গরম জলে ধুয়ে জীবানুমুক্ত করে নিয়েও খেতে পারেন। এমনকী স্ট্রবেরির বীজও ভোজ্য।
- গ্রিন স্যালাডকে আরোও সুস্বাদু করার জন্য যোগ করতে পারেন টক-মিষ্টি স্ট্রবেরির টুকরো।
- স্ট্রবেরি মুজ অনেকেরই খুব পছন্দের একটি ডেজার্ট। এছাড়াও অন্যান্য মিষ্টান্ন পদের ওপরে বা ডেজার্টে স্ট্রবেরির টুকরো ছড়িয়ে খাওয়া হয়।
- সুন্দর দেখতে আর অতি সুস্বাদু এক ডেজার্ট উপভোগ করতে চাইলে, একটি ওয়াইন গ্লাসে স্তরে স্তরে সাজিয়ে নিন স্ট্রবেরির টুকরো, আস্ত কিছু ব্লুবেরি এবং প্লেইন দই বা ইয়োগার্ট।
- কুলিস সস (coulis sauce) বানানোর জন্য স্ট্রবেরি মিক্সারে ব্লেন্ড করে তার সঙ্গে মিশিয়ে নিন কমলালেবুর রস। যেকোনো রকম শেক বা সরবরকে আরোও পুষ্টিকর এবং রঙিন করে তোলার জন্য তার সঙ্গে মেশাতে পারেন স্ট্রবেরির টুকরো।
- আমরা অনেকেই স্ট্রবেরি পাই খেতে ভীষণ পছন্দ করি। এটি বানানো আরও সহজ। স্ট্রবেরি কুচিয়ে সুস্বাদু ক্রিমি ফিলিং বা পুরের ওপর ছড়িয়ে দিয়ে সামান্য বেক করলেই তৈরি হয়ে যাবে সুস্বাদু, পুষ্টিকর এবং দারুন দেখতে এই মিষ্টান্ন।
- শুধুমাত্র ডেজার্ট না মেইন ডিসের সঙ্গেও যোগ করতে পারের স্ট্রবেরি। চিকেন স্ট্রবেরি স্যালাড হল এরকম মেইন ডিসের যোগ্য উদাহরন। চিকেন, ট্যাংগি ভিনিগ্রেট, ব্লু চিজের স্বাদের সঙ্গে স্ট্রবেরি টক-মিষ্টি স্বাদ ও মিষ্টি সুন্দর সুগন্ধ এক আলাদা মাত্রা যোগ করে খাবারটিতে এবং করে তোলে আরোও অনেক পুষ্টিকর।
- পিৎজার ক্ষেত্রেও স্ট্রবেরি কুঁচির টপিং দেওয়া যেতে পারে। আপনার পছন্দের পিৎজার ডো এর ওপর নরম চিজ, পেস্তা ও স্ট্রবেরি কুচো ছড়িয়ে গ্রিল করে নিন। স্বাদবদল তো হবেই সঙ্গে বেড়ে যাবে খাবারের পুষ্টিগুণও।
- স্ট্রবেরি অ্যাভোগাডো সালসা একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর এবং মজাদার খাবার। রোস্টেড চিকেন বা স্যতে করা মাছের সঙ্গে স্ন্যাকস হিসেবে এই মিষ্টান্ন পদটি পরিবেশন করা যায়। সঙ্গে যদি থাকে বেকড টর্টিলো চিপস তবে তো জমে যাবে আপনার স্ন্যাকস টাইম।
- স্ট্রবেরি দিয়ে বানাতে পারেন সুগন্ধী এক চা। জলে পরিমানমত চা পাতা এবং এক কাপ স্ট্রবেরি কুঁচি মিশিয়ে কিছুক্ষণের জন্য ফুটিয়ে নেবার পর, মিনিট ৫ সময় মত পাত্রটি ঢেকে রাখুন। এবার চা ছেঁকে নিয়ে তার সঙ্গে বরফের কিউব এবং চিনি মিশিয়ে পান করে দেখুন তো কেমন লাগে স্ট্রবেরি চা? ওহ হ্যাঁ, চাইলে পানীয়টিকে স্ট্রবেরি কুঁচি দিয়ে সাজাতেও পারেন।
এছাড়া অনেক নতুন রেসিপিও স্ট্রবেরি দিয়ে বানিয়ে ট্রাই করতে পারেন। স্ট্রবেরি দিয়ে বানানো কিছু জিভে জল আনা রেসিপি রইল আপনার জন্য।
১. স্ট্রবেরি জ্যাম
উপকরণ
- ২ পাউন্ড তাজা স্ট্রবেরি
- ৪ কাপ হোয়াইট সুগার
- ১/৪ কাপ লেবুর রস
বানানোর পদ্ধতি
- স্ট্রবেরিগুলি ভালোভাবে চটকাতে বা পিষতে থাকুন যতক্ষণ না পর্যন্ত ৪ কাপ নির্যাস বের হচ্ছে।
- এবার একটি ভারী তলযুক্ত সসপ্যান নিয়ে, তাতে স্ট্রবেরি নির্যাসের সঙ্গে চিনি আর লেবুর রস ভালোভাবে মেশান। চিনি সম্পূর্ণভাবে দ্রবীভূত না হওয়া পর্যন্ত অল্প আঁচে নাড়তে থাকুন মিশ্রণটি।
- এবার সিল করা এয়ার টাইট একটি পাত্রে মিশ্রণতি ঢেলে ফেলুন। পাত্রটি সম্পূর্ণ ভরবেন না। খেয়াল রাখবেন যাতে ওপরে এক ইঞ্চি মত জায়গা ফাঁকা থাকে।
- এবার পাত্রটি ফ্রিজে ভরে কিছু সময়ের জন্য রেখে দিন।
- বিশ্বাস করুন, ছোটো থেকে বড় সকলের মন জয় করতে বাধ্য স্ট্রবেরির মজাদার এই রেসিপিটি। লাঞ্চ বা ডিনারে খাবার পরে শুধু মুখে, কিংবা ব্রেকফাস্টে পাউরুটি বা রুটির সঙ্গে, যার সঙ্গেই খান না কেন জিভে জল আসবেই।
২. স্ট্রবেরি স্মুদি
উপকরণ
- ৪ টে স্ট্রবেরি
- আধ কাপ সর তোলা দুধ
- আধ কাপ প্লেইন দই বা ইয়োগার্ট
- ১ টেবিল চামচ মধু
- ২ চা চামচ ভ্যানিলা এক্সট্র্যাক্ট
- ৬ টি ক্রাশড বরফের কিউব
বানানোর পদ্ধতি
- বরফ বাদে মিক্সারে সব উপকরণ দিয়ে একতি মসৃণ মিশ্রণ বানিয়ে নিন।
- এবার বরফের ছোটো টুকরো দিয়ে আবার মিক্সিতে ব্লেন্ড করে নিন।
- এবার কিছু স্ট্রবেরি কুঁচি এবং ড্রাই ফ্রুটস ওপর থেকে ছড়িয়ে দিন।
- এবার কাঁচের গ্লাসে ঢেলে ব্রেকফাস্টের সঙ্গে পরিবেশন করুন স্ট্রবেরি স্মুদি।
এরম অনেক উপায়েই স্ট্রবেরিকে আপনি আপনার ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন। আসলে, ফলটি যতোটা সুস্বাদু ততোটাই পুষ্টিকর। তবে এত ভালোর সঙ্গে এর কিছু খারাপ দিকও আছে। সামান্য হলেও আছে। জেনে নিন সেইসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।
স্ট্রবেরির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
স্ট্রবেরির কী কী উপকারিতা আছে এবং কীভাবে খাবেন তা জেনে গেছেন। পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ স্ট্রবেরির তেমন কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। তবে অতিরিক্ত যে কোনো কিছু খাওয়াই আপনার জন্য ক্ষতিকারক হয়ে উঠতে পারে। আসুন এবার জেনে নিই স্ট্রবেরির অসুবিধাগুলি কী কী হতে পারে-
- গর্ভাবস্থায় এবং বুকের দুধ খাওয়ালেঃ
যদিও গর্ভাবস্থায় এবং বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় স্বাভাবিক পরিমাণে স্ট্রবেরি খাওয়া নিরাপদ তবে অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে কী হবে তা জানতে পর্যাপ্ত গবেষণা হয়নি। তবে, গর্ভাবস্থায় যেকোনো কিছু খাবার অভ্যাস শুরু করার আগেই চিকিৎসকের পরাম্ররশ নেওয়া আবশ্যিক।
- রক্তক্ষরণের ব্যাধি থাকলেঃ
স্ট্রবেরি রক্তক্ষরনের সময় দীর্ঘায়িত করতে পারে তাই অনেক আঘাত লাগলে সংবেদনশীল ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এটি ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে। আপনার যদি রক্তক্ষরণজনিত সমস্যা থাকে তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তবেই রোজ স্ট্রবেরি খাবার অভ্যাস শুরু করবনে। এছাড়াও, যদি ইদানীং আপনার অস্ত্রোপচার হয়ে থাকে তবে স্ট্রবেরি খাবেন না বেশী কারণ স্ট্রবেরি রক্ত তঞ্চনে বিলম্ব ঘটাতে পারে। যদি অস্ত্রোপচারের দিন নির্ধারিত হয়ে গিয়ে থাকে তবে কমপক্ষে ২ সপ্তাহ আগে থেকে স্ট্রবেরি খাবার অভ্যাস বন্ধ করুন। যদিও, এই ব্যাপারে বিশেষ গবেষণা করা হয় নি।
অতিরিক্ত স্ট্রবেরি খাওয়ার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
- স্ট্রবেরি অতিরিক্ত খাবার ফলে আপনার শরীরে প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম জমতে পারে। অতিরিক্ত পটাসিয়ামের কারণে হার্ট সম্পর্কিত সমস্যা হতে পারে। এছাড়াও, আপনার হাইপারক্লেমিয়াও হতে পারে যা পেশী দুর্বলতা এবং পক্ষাঘাতের কারণ হতে পারে।
- স্ট্রবেরি খাওয়ার সময়, মনে রাখবেন যে এটিতে ফাইবারের পরিমাণও বেশি, তাই অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে ডায়রিয়া, গ্যাস এবং পেটে ক্র্যাম্পও হতে পারে।
- হিমোক্রোম্যাটোসিস (শরীরে অতিরিক্ত আয়রন জমে থাকা) আক্রান্ত ব্যক্তিরা অতিরিক্ত মাত্রায় স্ট্রবেরি খেলে তাদের এই অবস্থার আরও অবনতি হতে পারে।
- এই সকল পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্যগুণে সমৃদ্ধ হওয়ার কারণে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় স্ট্রবেরি। তাই নিশ্চিন্তে আজ থেকে, আপনার রোজকার ডায়েটে স্ট্রবেরি অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন। তবে, অতিরিক্ত স্ট্রবেরি খাবার ফল বা এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার বিষয়টিও মনে রাখতে হবে। যেমন, কিডনির সমস্যা থাকলে স্ট্রবেরি খাবার ব্যাপারে সতর্ক হওয়া উচিত।
স্ট্রবেরি খেতে বা স্ট্রবেরি ফ্লেভার কার না ভালো লাগে? খাবারের ব্যাপারে শৌখিন মানুষ থেকে স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ সবার প্রায় মুখে মুখে ফেরে স্ট্রবেরির নাম। অতি সুস্বাদু, কম ক্যালোরিযুক্ত এবং অনেকগুলি ভিটামিন এবং খনিজ সমৃদ্ধ একটি অতি জনপ্রিয় এক ফল হল এই স্ট্রবেরি। লাল টুকটুকে রসালো এই ফল এখন সারা বছরই বাজারে কিনতে পাওয়া যায় প্রায়।
সাধারণত এই স্বাস্থ্যকর বেরিগুলি মিষ্টিতে বা ডেজার্টে যোগ করে খাওয়া হয়। লো ক্যালোরিযুক্ত আর বেশী মাত্রায় ফাইবার সমৃদ্ধ হবার জন্য ব্রেকফাস্টের সময় স্ট্রবেরি খাওয়া অত্যন্ত উপকারী। এমনকী বাচ্চার ১ বছর বয়স হয়ে যাবার পর থেকেই তাকে দেওয়া যেতে পারে স্ট্রবেরি। বাচ্চা সলিড ফুড খাওয়া শুরু করলেই বাচ্চাকে প্রতিদিন স্ট্রবেরি খাওয়াতে পারেন অন্যান্য ফলের সঙ্গে। তবে অনেক বাচ্চার স্ট্রবেরিতে অয়ালার্জি দেখা যায়, তাই অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনা করে নেবেন বাচ্চাকে স্ট্রবেরি খাওয়ানোর আগে।
Sources
- Strawberry Production
https://extension.psu.edu/strawberry-production - Growing Strawberries
https://extension.psu.edu/growing-strawberries - Strawberry
http://nhb.gov.in/report_files/strawberry/STRAWBERRY.htm - Weight-Loss Diets, Adiponectin, and Changes in Cardiometabolic Risk in the 2-Year POUNDS Lost Trial
https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC4891796/ - AICR’s Foods that Fight Cancer
https://www.aicr.org/cancer-prevention/food-facts/?referrer=https%3A%2F%2Fwww.google.co.in%2F - Eat blueberries and strawberries three times per week
https://www.health.harvard.edu/heart-health/eat-blueberries-and-strawberries-three-times-per-week - Teeth whitening with natural product
http://csef.usc.edu/History/2007/Projects/J1830.pdf - Beneficial effects of fruit extracts on neuronal function and behavior in a rodent model of accelerated aging – https://naldc.nal.usda.gov/download/22245/PDF
- Vitamin C and the Immune System
https://profiles.nlm.nih.gov/spotlight/mm/catalog/nlm:nlmuid-101584639X280-doc - Birth Defects
https://medlineplus.gov/birthdefects.html - Best Fruits for Arthritis
https://www.arthritis.org/health-wellness/healthy-living/nutrition/healthy-eating/best-fruits-for-arthritis