ত্রিফলার উপকারিতা, ব্যবহার এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া – All About Triphala Churna in Bengali

ত্রিফলা হল একাধিক গুণমান সম্পন্ন একটি ভেষজ ঔষধি। আয়ুর্বেদ চিকিৎসাশাস্ত্রে যুগ যুগ ধরে এর ব্যবহার হয়ে আসছে। শরীরের নানা সমস্যা দূর করতে ত্রিফলার জুরি মেলা ভার (1)। তিনটি ফল দিয়ে এই আয়ুর্বেদিক ভেষজ ওষুধটি তৈরি হয় বলে একে ত্রিফলা বলা হয়।
বহু প্রাচীন এই ভেষজ ওষুধের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল, ল্যাক্সাটিভ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান রয়েছে (2)। অতিরিক্ত মেদ কমানো থেকে শুরু করে ডায়াবেটিস একাধিক শারীরিক সমস্যায় ম্যাজিকের মতো কাজ করে ত্রিফলা। এর অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান বাতের ব্যথায় দারুণ কাজ দেয়। এছাড়া অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদানও রয়েছে যা বার্ধক্য রোধ করে, চোখে-মুখে সহজে বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না।
আমাদের এই প্রতিবেদনে ত্রিফলা এবং এর স্বাস্থ্যগুণ, ব্যবহার বিধি, ব্যবহারের মাত্রা ও সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলি নিয়ে আলোচনা করা হল।
In This Article
ত্রিফলা কী
ত্রিফলা দুটি সংস্কৃত শব্দের সংমিশ্রণ, “ত্রি” কথার অর্থ হল তিনটি এবং “ফলা” কথার অর্থ ফল। তিন ধরনের ফল শুকিয়ে গুঁড়ো করা হয়, যা ত্রিফলা নামে পরিচিত। সেই ফলগুলি হল হরিতকি, বহেড়া (বিভিতকি) এবং আমলা বা আমলকি।
ত্রিফলা এই তিনটি ফলের মিশ্রণ –
এম্বলিকা অফিসিনালিস, সাধারণভাবে যা আমলা নামে পরিচিত। এই টকফলটি দেশের প্রায় সব জায়গায় পাওয়া যায় এবং বিভিন্ন ধরণের খাবার তৈরিতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে (3)।
- এই ফলটি ফাইবার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং খনিজ পদার্থে সমৃদ্ধ এবং ভিটামিন সি -এর অন্যতম উৎস।
- কোষ্ঠকাঠিন্য, থাইরয়েড, ক্যান্সার, স্নায়ুরোগ এবং হাড়ের সমস্যা দূর করতে দারুণ কার্যকরী(4)।
তারমিনালিয়া বেলিরিকা, যা বিভিতকি বা বহেড়া নামে পরিচিত। ফলটি অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান সমৃদ্ধ (5)।
- আয়ুর্বেদ চিকিৎসায়, ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাল সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়তে এর ব্যবহার বহুদিন ধরে চলে আসছে। গ্লুকোসাইড, ট্যানিন, গ্যালিক অ্যাসিড, ইথাইল গ্যালেটের মতো একগুচ্ছ জৈব উপাদান সমৃদ্ধ এই ফল ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং ওজন কমায় (6) (7)।
তারমিনালিয়া চেবুলা, যা হরিতকি বা হরদ নামেও পরিচিত। হজমের সমস্যা থাকলে বা কোষ্ঠকাঠিন্যে এটি দারুণ উপকারী (8)। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টিইফল্যামেটরি উপাদান সমৃদ্ধ।
ফল তিনটি শুকিয়ে নিয়ে তারপর গুঁড়ো করে সঠিক মাত্রায় মিশিয়ে ত্রিফলা চূর্ণ তৈরি করা হয়। যদিও ফলগুলি আলাদা আলাদাভাবেও নানা রোগের চিকিৎসায় কার্যকরী, তবে তিনটির মিশ্রণ একাধিক শারীরিক সমস্যা নিরাময়ে শক্তিশালী হয়ে ওঠে (9)।
ত্রিফলার স্বাস্থ্য উপকারিতা
১. হজম শক্তি বাড়ায়: যারা পেটের সমস্যা বা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ভুগছেন, ত্রিফলা চূর্ণ খাওয়া শুরু করুন ( 10)। উপকার পাবেন। রাতে শুতে যাওয়ার আগে এক চামচ ত্রিফলা চূর্ণ হজমের সমস্যা দূর করতে পারে এবং বাওয়েল মুভমেন্টের উন্নতি ঘটায়। পেট খারাপ, ডায়ারিয়ার মতো সমস্যাকে বিদায় জানাতে সকালে উঠে খালি পেটে একচামক চূর্ণ এবং প্রচুর জল খান (11)।
২. দৃষ্টি শক্তির উন্নতি ঘটায়: ত্রিফলা চোখের সুস্থতা বজায় রাখে এবং দৃষ্টিশক্তি উন্নত রাখে (12)। চোখের যে কোনও ইনফেকশন দূর করতে ত্রিফলা খেতে পারেন অথবা এটি দিয়ে চোখ ধুয়ে ফেলতে পারেন।
চোখে জ্বালাভাব, অস্বস্তি, জল পড়া ইত্যাদি সমস্যা দূর করতে ত্রিফলা আই ড্রপ ভালো কাজ দেয় (13)।
১-২ চামচ ত্রিফলা চূর্ণ গরম জলে সারারাত ভিজিয়ে রাখুন। সকালে মিশ্রণটি ছেঁকে নিয়ে চোখ পরিষ্কার করে নিন। এভাবে দৃষ্টিশক্তি উন্নত হবে এবং চোখে সংক্রমণের ভয়ও থাকবে না।
৩. ওজন কমায়/অতিরিক্ত মেদ কমায়: শরীরে অতিরিক্ত মেদ জমেছে? রোজ সকালে লেবু জল, শরীরচর্চা, ডায়েট করেও ফল পাচ্ছেন না? তাহলে একবার ত্রিফলা চূর্ণ ব্যবহার করে দেখুন। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, ওজন কমাতে ত্রিফলা ম্যাজিকের মতো কাজ করে। এর মধ্যে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান এবং হাইড্রোক্সিল এবং নাইট্রিক অক্সাইড র্যাডিকেলস ওজন কমাতে সাহায্য করে (14)।
নিয়মিত ত্রিফলা চূর্ণ খেলে হজম ভালো হয়, শরীরে অতিরিক্ত মেদ জমার আশঙ্কা কমে যায়। স্বাভাবিকভাবে ওজন কম হতে শুরুন করে।
৪. কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে : কোষ্ঠকাঠিন্যর সমস্যা থাকলে রোজ রাতে একগ্লাস হালকা গরম জলের সঙ্গে দু চামচ ত্রিফলা খান। এটি খাওয়ার পর আর কিছু খাবেন না। চাইলে আধ ঘণ্টা পর জল খেতে পারেন। কিছুদিনের মধ্যে ভালো ফল পাবেন।
৫. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে : যাদের ব্লাড প্রেসার প্রায়শই ওঠানামা করে তারা নিয়মিত ত্রিফলা খান। দেখবেন কিছুদিনের মধ্যে ভালো ফল পাবেন, ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। কারণ এই মিশ্রণটির মধ্যে রয়েছে লাইনোলিক অ্যাসিড, ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য করে।
৬. ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ প্রতিরোধ করে : ভাইরাল বা ব্যাকটেরিয়া যে কোনও জীবাণু সংক্রমণে প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে।
৭. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় : বিভিন্ন পরীক্ষায় দেখা গেছে, নিয়মিত ত্রিফলা খেলে শরীরে পুষ্টিকর উপাদানের মাত্রা বেড়ে যায় এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ে। ফলত ঘন ঘন অসুখবিসুখের আশঙ্কাও কমে।
৮. ডায়াবেটিস : ত্রিফলা ডায়াবেটিসের বিরুদ্ধে কাজ করে। ইনসুলিন হরমোনের ওপর কাজ করে। রক্তস্রোতে গ্লুকোজ জমা হওয়া এবং বিমুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে (15)।
৯. রক্ত সঞ্চালন ঠিক রাখে : ত্রিফলা রক্ত সঞ্চালন সঠিক রাখতে সাহায্য করে।
১০. হাড় ও গাঁটের ব্যথা – আর্থ্রাইটিসের সমস্যা কমায় : যারা হাঁটুর ব্যথা বা বাতের যন্ত্রণায় ভুগছেন নিয়মিত ত্রিফলা খাওয়া শুরু করুন। এর অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান যন্ত্রণা দূর করে। গবেষণায় দেখা গেছে, ত্রিফলা তরুণাস্থি ও হাড় ফুলে যাওয়া কারণে আর্থ্রাইটিসের সমস্যা থেকেও রেহাই দেয় (16)।
১১. দাঁত ও মাড়ির সমস্যা : ত্রিফলার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টিইনফ্ল্যামেটরি এবং অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান দাঁতের সমস্যা দূর করতে এবং দাঁতের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। দাঁত ও মাড়ির সমস্যা এবং মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে কার্যকরী (17) ।
১২. অ্যানজাইটি এবং ট্রেস কমায় : প্রত্যেকদিন নিয়ম করে খালি পেটে ত্রিফলা খেলে শরীরে ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। যা মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়ায়, পাশাপাশি মানসিক ক্লান্তি এবং ট্রেস কমায় (1)।
১৩. ক্যান্সার প্রতিরোধ করে : ২০১৫ সালে ক্যান্সার সেলের গ্রোথ ও তার উপর ত্রিফলার প্রভাব সম্পর্কে একটি গবেষণা করা হয়েছিল। তাতে দেখা গিয়েছিল নিয়মিত খালি পেটে ত্রিফলা খেলে শরীরে ক্যান্সার সেল জন্মানোর সম্ভাবনা কমে যায়। যদিও বা জন্ম নেয় ত্রিফলা তার বৃদ্ধি আটকায়। এভাবে এই মারণরোগকে ধারে কাছেও ঘেঁষতে দেয় না (18)।
১৪. দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে : মাঝে মাঝেই ক্লান্তি বোধ করেন? কোনও কিছুতে এনার্জি পান না? তাহলে ডায়েটে রাখুন ত্রিফলা। কিছুদিনের মধ্যে শারীরিক দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে পারবেন (19)।
১৫. ত্বকের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখে : যে কোনও ক্ষত খুব তাড়াতাড়ি সারিয়ে তোলে। ত্বকের কালচেভাব দূর করে, ত্বক সুন্দর করে তোলে এবং বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না (20)।
১৬. চুলের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখে : চুল পড়ার সমস্যায় ভুগছেন? তাহলে ত্রিফলা ব্যবহার করুন। রাতে ঘুমতে যাওয়ার আগে নারকেল তেলের সঙ্গে ত্রিফলা চূর্ণ মিশিয়ে চুলে লাগিয়ে নিন। পরের দিন সকালে শ্যাম্পু দিয়ে চুল পরিষ্কার করে নিন। নিয়মিত এই ভেষজ ওষুধটির ব্যবহার শুধু চুল ওঠার সমস্যা কমায় না, সেইসঙ্গে চুল মজবুতও করে (21)। খুসকির সমস্যা দূর করতে দু চামচ ত্রিফলা পাউডার সামান্য জলে মিশিলে স্কাল্পে ভালোভাবে ম্যাসাজ করে নিন, আধ ঘণ্টা রেখে চুল ধুয়ে ফেলুন।
কীভাবে ত্রিফলা চূর্ণ ব্যবহার করবেন
ত্রিফলা সাধারণত চূর্ণ হিসেবে সেবন করা হয়। ত্রিফলা চূর্ণ ছাড়াও বাজারে এর ট্যাবলেট, ক্যাপসুল এবং ত্রিফলা রসের আকারে পাওয়া যায়। শরীরের ধরণের উপর নির্ভর করছে ত্রিফলার কীভাবে ব্যবহার করবেন।
ত্রিফলা ক্যাপসুল এবং ট্যাবলেট : যারা এই ভেষজ ওষুধটির গুড়ো খেতে পারেন না, তারা ত্রিফলা ক্যাপসুল অথবা ট্যাবলেট খেতে পারেন। তবে কখনই অতিরিক্ত মাত্রায় খাবেন না।
ত্রিফলা চা : চায়ের মতো করেও ত্রিফলা খেতে পারেন। এককাপ জলে এক চামচ ত্রিফলা পাউডার মিশিয়ে ভালো করে ফুটিয়ে নিন। সুস্বাদু করতে তাতে মধু যোগ করতে পারেন। দিনে ২-৩ বার ত্রিফলা চা খেতে পারেন, তবে মনে রাখবেন অতিরিক্ত সেবন শরীরের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারেন।
ত্রিফলা আইওয়াশ : চোখের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে ত্রিফলার কার্যকারিতা অপরিসীম। এক গ্লাস জলে একচামচ ত্রিফলা পাউডার সারারাত ভিজিয়ে রাখুন। সকালে মিশ্রণটি ছেঁকে নিয়ে চোখ পরিষ্কার করুন।
ত্রিফলা ফেসপ্যাক : একচামচ ত্রিফলা পাউডার সামান্য নারকেলের সঙ্গে মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে নিন। ১০-১৫ মিনিট রাখার পর হালকা গরম জল দিয়ে মুখ পরিষ্কার করে নিন। নিয়মিত ব্যবহারে মুখে উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে।
লেবু এবং মধুর সঙ্গে ত্রিফলা : ত্রিফলা চূর্ণ লেবু ও মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খেতে পারেন। কোনও কিছু ছাড়াই গরম জলে কেবলমাত্র ত্রিফলা পাউডার মিশিয়ে খেতে পারেন, যা অনেক বেশি উপকারী। দুধ এবং ঘি এর সঙ্গে মিশিয়েও খেতে পারেন।
ত্রিফলা ব্যবহারের সঠিক মাত্রা
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ত্রিফলা খালি পেটে অথবা খাবার খাওয়ার কিছুক্ষণ আগে খাওয়া যায়। সাধারণত ১/২ চা চামচ ত্রিফলা পাউডার গরম জলে মিশিয়ে চায়ের মতো করে দিনে দু’বার খেতে পারেন। ঘি বা মধুর সঙ্গে দু’বার খাওয়া যায়। তবে সকলের ক্ষেত্রে এর মাত্রা এক নাও হতে পারে। চেহারার ধরণ, বয়স, লিঙ্গ এবং শারীরিক অবস্থার উপর ত্রিফলা খাওয়ার পরিমাণের তারতম্য থাকে। ত্রিফলার যেমন একাধিক স্বাস্থ্যগুণ রয়েছে, তেমন মাত্রাতিরিক্ত সেবন নানা শারীরিক সমস্যাও দেখা দিতে পারে। তাই সবচেয়ে ভালো এটি খাওয়া শুরু করার আগে ডাক্তার পরামর্শ নিন।
তবে সাধারণভাবে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকেরা এই চূর্ণ যে অনুপাতে ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন তা হল ১ (হরিতকি), ২ (বহেড়া) এবং ৪ (আমলা)। চাইলে এই উপাদানগুলি ১:২:৪ অনুপাতে আলাদা আলাদা ভাবেও খেতে পারেন। বহেড়া চূর্ণ খাওয়ার আগে, আমলা চূর্ণ খাওয়ার পরে এবং হরদ চূর্ণ খাওয়ার ২-৩ ঘণ্টা পরে খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। ত্রিফলা নিয়মিত খেলে পাচনতন্ত্র উন্নত হয় এবং শরীর অসুখবিসুখ মুক্ত থাকে। বাজার থেকে কিনেও খেতে পারেন অথবা ডাক্তারের পরামর্শ অনুয়ায়ী বাড়িতে বানিয়ে ফেলতে পারেন ত্রিফলা চূর্ণ।
বাড়িতে কীভাবে ত্রিফলা চূর্ণ বানাবেন
বাজার থেকে এই উপাদানগুলি কিনে এনে খুব সহজেই বাড়িতে বানিয়ে ফেলুন ত্রিফলা চূর্ণ।
কী কী প্রয়োজন
উপাদানগুলি কেনার আগে ১:২:৪ (হরিতকি:বহেড়া:আমলা) এই অনুপাতের কথা মাথায় রাখতে হবে। সেই হিসেব মতো উপাদানগুলি কিনে আনুন। যদি ২০ গ্রাম হরিতকি নেন তাহলে বাকি উপাদানগুলি এই পরিমাণে কিনুন।
হরিতকি – ২০ গ্রাম
বহেড়া – ৪০ গ্রাম
আমলা – ৮০ গ্রাম
শিল নোড়া বা হামাল দিস্তা
কীভাবে তৈরি করবেন
১. প্রথমে সব উপাদান আলাদা আলাদা ভাবে শুকিয়ে নিয়ে শিল নোড়া বা হামাল দিস্তায় ভালো করে গুঁড়ো করে নিন।
২. পাউডারের মতো তৈরি হয়ে গেলে আলাদা আলাদা পাথরের পাত্রে রেখে দিন।
৩. এরপর পাউডারগুলি ১:২:৪ (হরিতকি:বহেড়া:আমলা) এই অনুপাতে মিশিয়ে নিন।
নতুন পাত্রে মিশ্রণটি রেখে দিন। এভাবে বাড়িতেই ত্রিফলা চূর্ণ তৈরি করে দীর্ঘদিন পর্যন্ত রেখে দিতে পারবেন এবং ব্যবহার করতে পারবেন। ত্রিফলা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হলেও এর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও রয়েছে, জেনে নিন সেগুলো কী কী –
ত্রিফলার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
একজন সুস্থ ব্যক্তি নিয়মিত ত্রিফলা চূর্ণ খেলে অবশ্যই উপকার পাবেন। কিন্তু ত্রিফলার কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। সেগুলো কী কী জেনে নিন এবং ত্রিফলা খাওয়া শুরু করার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
১. ত্রিফলা একটি ভেষজ ওষুধ। সঠিক মাত্রায় সেবন করলে যেমন উপকার পাবেন, তেমনই অত্যধিক মাত্রায় খেলে ডায়ারিয়া ও ডিসেন্ট্রির আকার নিতে পারে।
২. আপনি যদি অন্য কোনও ওষুধ খান, তবে খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করুন। কারণ ত্রিফলা অন্যান্য ওষুধের কাজে হস্তক্ষেপ করতে পারে। যা সমস্যা ডেকে আনতে পারে (22)।
৩. ডায়াবেটিস ওষুধের কাজে হস্তক্ষেপ করে ব্লাড সুগার স্বাভাবিকের থেকে কমিয়ে দিতে পারে। ডায়াবেটিস রুগীদের জন্য ত্রিফলা ক্ষতিকারক হতে পারে, তাই ত্রিফলা খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলুন (15)।
৪. ত্রিফলার মধ্যে উপস্থিত হরিতকি গর্ভবতী মহিলাদের জন্য ক্ষতিকারক। এই উপাদানটি গর্ভপাতের কারণ হতে পারে (23)। এছাড়াও গর্ভবতী মহিলাদের মধ্যে গ্যাস অম্বল, কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়রিয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেহেতু এই বিষয়ে তেমন কোনও বৈজ্ঞানিক প্রমাণ পাওয়া যায় নি, তাই ত্রিফলা সেবনের আগে গর্ভবতী মহিলাদের অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
৫. বাচ্চাদের ত্রিফলা দেওয়া উচিত নয়।
৬. এটি সেবনের পর তাদের ঘুমে ব্যাঘাত ঘটা, ডিপ্রেসন, ক্লান্তি ভাব, কোনও কিছুতে এনার্জি না পাওয়ার মতো বেশ কিছু অভিযোগ রয়েছে অনেকের।
বাজারে উপলব্ধ সেরা তিনটি ব্রান্ডের ত্রিফলা চূর্ণ
১. ডাবর ত্রিফলা চূর্ণ
২. বৈদ্যনাথ ত্রিফলা চূর্ণ
৩. দিব্যা ত্রিফলা চূর্ণ/ ঝান্ডু ত্রিফলা চূর্ণ
শরীরকে রোগমুক্ত রাখতে ত্রিফলা অন্যতম প্রাকৃতিক ওষুধ। তাই আয়ুবেদ চিকিৎসায় এর কদর যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। এর মধ্যে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অন্যান্য উপাদানগুলি হজমের সমস্যা থেকে অতিরিক্ত মেদ কমানো, একাধিক সমস্যায় ম্যাজিকের মতো কাজ করে। তবে অতিরিক্ত মাত্রায় কখনই খাওয়া উচিত নয়। তাই অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ত্রিফলা কে আপনার ডায়েটে রাখুন।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী
ত্রিফলা চূর্ণ ঠান্ডা না গরম প্রকৃতির?
উ: ত্রিফলা চূর্ণ গরম প্রকৃতির। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটি হালকা গরম জলে মিশিয়ে সেবন করা হয়ে থাকে।
আমরা কী খালি পেটে ত্রিফলা চূর্ণ খেতে পারি?
উ: সকালে ঘুম থেকে উঠেই খালি পেটে ত্রিফলা খেলে সবথেকে বেশি উপকার পাওয়া যায়। চিকিৎসকেরাও সবসময় এটি খালি পেটে খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
আমরা কী মধুর সঙ্গে ত্রিফলা মিশিয়ে খেতে পারি?
উ: হ্যাঁ, ত্রিফলা মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খেতে পারেন। আবার গরম জলে ত্রিফলা ফুটিয়ে চায়ের মতো করে যখন খাবেন, তাতে মধু যোগ করতে পারেন। খেতেও ভালো লাগবে আবার এটা উপকারীও।
আমরা কী গুড়ের সঙ্গে ত্রিফলা মিশিয়ে খেতে পারি?
উ: শরীরকে রোগমুক্ত রাখতে ত্রিফলা গুড়ের সঙ্গে মিশিয়েও খেতে পারেন।
Sources
- Therapeutic Uses of Triphala in Ayurvedic Medicine –
https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC5567597/ - Scientific validation of the ethnomedicinal properties of the Ayurvedic drug Triphala: a review – https://pubmed.ncbi.nlm.nih.gov/23239004/
- Amla (Emblica officinalis Gaertn), a wonder berry in the treatment and prevention of cancer- https://pubmed.ncbi.nlm.nih.gov/21317655/
- Emblica officinalis (Amla): A review for its phytochemistry, ethnomedicinal uses and medicinal potentials with respect to molecular mechanisms –
https://pubmed.ncbi.nlm.nih.gov/27320046/ - Chemical composition, antioxidant and hepatoprotective activities of methanol extracts from leaves of Terminalia bellirica and Terminalia sericea (Combretaceae) –
https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC6397638/ - Estimation of ellagic acid and/or repaglinide effects on insulin signaling, oxidative stress, and inflammatory mediators of liver, pancreas, adipose tissue, and brain in insulin resistant/type 2 diabetic rats
https://pubmed.ncbi.nlm.nih.gov/28092161/ - Gallic acid regulates body weight and glucose homeostasis through AMPK activation – https://pubmed.ncbi.nlm.nih.gov/25356824/
- Spasmogenic Activity of the Seed of Terminalia chebula Retz in Rat Small Intestine: In Vivo and In Vitro Studies –
https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC3216221/ - Polyherbal formulation: Concept of ayurveda-
https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC4127824/ - Triphala: current applications and new perspectives on the treatment of functional gastrointestinal disorders-
https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC6052535/ - Triphala
https://www.sciencedirect.com/topics/medicine-and-dentistry/triphala - Evaluation of anticataract potential of Triphala in selenite-induced cataract: In vitro and in vivo studies –
https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC3117320/ - A clinical study on “Computer vision syndrome” and its management with Triphala eye drops and Saptamrita Lauha –
https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC3215371/ - Triphala and its constituents ameliorate visceral adiposity from a high-fat diet in mice with diet-induced obesity
https://pubmed.ncbi.nlm.nih.gov/23251942/ - Hypoglycemic effect of triphala on selected non insulin dependent Diabetes mellitus subjects –
https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC3330861/pdf/ASL-27-45.pdf - The anti-inflammatory effect of triphala in arthritic-induced rats –
https://www.tandfonline.com/doi/full/10.3109/13880209.2014.910237 - The effect of Triphala and Chlorhexidine mouthwash on dental plaque, gingival inflammation, and microbial growth –
https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC3157106/ - Cancer chemoprevention through dietary antioxidants: progress and promise –
https://pubmed.ncbi.nlm.nih.gov/18154485/ - Immunomodulatory Effects of Triphala and its Individual Constituents: A Review –
https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC4293677/ - Triphala: A comprehensive ayurvedic review –
https://www.researchgate.net/publication/269846920_Triphala_A_comprehensive_ayurvedic_review - Protective Effects of Triphala on Dermal Fibroblasts and Human Keratinocytes –
https://pubmed.ncbi.nlm.nih.gov/26731545/ - Cytochrome P450 inhibitory potential of Triphala–a Rasayana from Ayurveda –
https://pubmed.ncbi.nlm.nih.gov/20883765/ - Herbal medicine use by pregnant women in Bangladesh: a cross-sectional study –
https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC6293557/?report=classic
Recommended Articles:
- আমলকির উপকারিতা, ব্যবহার এবং ক্ষতিকারক দিক
- চবনপ্রাশ এর উপকারিতা, ব্যবহার এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
- ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বন করে তৈলাক্ত বা তেলতেলে চুলের হাত থেকে মুক্তির উপায়