
ঘরোয়া উপায়ে ভার্টিগো নিরাময়ের টোটকা ও পদ্ধতি | Vertigo Home Remedies in Bengali
‘ভার্টিগো’ শব্দটির সঙ্গে আমরা কম-বেশি সবাই পরিচিত। উঁচু থেকে নীচে দেখলে আমাদের অনেকেরই ভয়ের পাশাপাশি শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি হয়। এর মানেই যে, তাঁদের ভার্টিগো আছে তা কিন্তু নয়। ভার্টিগো মানেই কিন্তু শুধু উচ্চতার ভয় নয়, তবে অনেকেই এটিকে তাইই মনে করে। তাই এই নিয়ে প্রচলিত কিছু ভুল ধারণা থেকেই গিয়েছে। আসলে ভার্টিগো হল এমন একটি অবস্থা যা হঠাৎ করে, তীব্র মাথা ঘোরা এবং বমি বমি ভাবের সৃষ্টি করে। (১) হয়ত এই মুহূর্তে আপনার মনে হচ্ছে আপনার চারপাশে সব কিছু ঠিক আছে, কিন্তু পরের মুহূর্তেই আপনার মনে হবে আপনার চারপাশের সব কিছু ভীষণভাবে দুলতে শুরু করেছে। এই আকস্মিকতার ফলে আপনি তীব্র মাথা ব্যাথা, বমি ভাব, ক্লান্তির পাশাপাশি ভারসাম্যের অভাব বোধ করতে পারেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে, রোগী সাময়িকভাবে নিজের পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়াতে বা চলাফেরা করতে পারেন না এবং কমপক্ষে আধা ঘন্টা ধরে তীব্র মাথা ব্যথা অনুভব করেন। ভারসাম্যহীনতা বা মাথাঘোরা ভার্টিগো অ্যাটাকের লক্ষণ হলেও এই দুটি কিন্তু সম্পূর্ণ আলাদা। বরং মাথাঘোরা যে এই সমস্যার একটি বিরাট লক্ষণ তা আমরা আগেই জেনেছি। (২) তবে অনেকসময় এর অন্য কারণও থাকতে পারে।
Table Of Contents
ভার্টিগো কী কী কারণে হতে পারে
অনেক উঁচু থেকে নীচে দেখার পাশাপাশি বিভিন্ন কারণে ভার্টিগো হতে পারে। আমাদের শরীরে বিভিন্নরকম সমস্যা বা রোগ থাকলে কিন্তু ভার্টিগোর লক্ষণগুলি বারবার ফিরে আসতে পারে। তবে ভার্টিগোর সমস্যা সমাধানের আগে, ঠিক কী কারণে এইরকম সমস্যা হচ্ছে তা নির্ধারণ করা উচিৎ। চলুন দেখে নিই, যেসব কারণে ভার্টিগো হতে পারে –
- আমাদের ব্লাডপ্রেশার অর্থাৎ রক্তচাপ খুব বেশি বা কম থাকলে
- হাই কোলেস্টেরলের সমস্যা থাকলে
- ডায়াবেটিক বা ব্লাড সুগারের সমস্যা থাকলে
- ব্রেন টিউমার থাকলে
- রক্তনালীর ব্যাধি থাকলে
- মাথায় বা ঘাড়ে আঘাত লাগলে
- মোশন সিকনেসের মতো সমস্যা থাকলে
- কানের ভিতরে ছিদ্র থাকলে বা প্রদাহ হলে
- কানের ভিতরে পুঁজ জমলে বা কানের ভিতরে স্ফীতি দেখা দিলে
ভার্টিগো–র লক্ষণ
ভার্টিগোর প্রধান উপসর্গ ও লক্ষণগুলি হল –
- মাথাঘোরা সঙ্গে বমিভাব
- ঘাম হওয়া
- কানের মধ্যে বোঁ বোঁ করা বা সাময়িক শ্রবণশক্তি হারানো
- শ্বাস প্রশ্বাসের ধরণ ও হৃৎস্পন্দনের পরিবর্তন
- অস্বাভাবিক দৃষ্টিশক্তি
- হাত ও পায়ে দুর্বলতা
- ভারসাম্যহীনতা
- সাময়িকভাবে হাঁটতে না পারা
- কিছু সময়ের জন্য কথা বলতে না পারা
ভার্টিগো নিরাময়ের ঘরোয়া প্রতিকার
ভার্টিগোতে যেহেতু হঠাৎ হঠাৎ তীব্র মাথা ঘোরা ও বমিভাব সৃষ্টি হয়, তাই রোগী সেই মুহূর্তে নিজে এই ঘরোয়া টোটকাগুলি বানাতে পারবেন না। সেক্ষেত্রে আপনি যদি ইতিমধ্যে ভার্টিগোর উপসর্গগুলি বেশ কয়েকবার অনুভব করে থাকেন, চেষ্টা করুন এইসব উপকরণগুলি বা রোগ নিরাময়ের এই উপায়গুলি হাতের কাছে প্রস্তুত রাখতে। তবে মাথা ঘোরা বা বমিভাব অত্যন্ত বেশি হলে বা লক্ষণগুলি মারাত্মক হলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
এবার জেনে নিন, কীভাবে ঘরোয়া উপকরণের সাহায্যে নিমেষের মধ্যে ভার্টিগো সমস্যার সমাধান করবেন।
ঘরোয়া টোটকা ১ঃ ভার্টিগো দূর করতে বিভিন্নরকম এসেন্সিয়াল অয়েলের ব্যবহার
ভার্টিগো দূর করতে বিভিন্নরকম এসেন্সিয়াল অয়েল আমাদের দারুন সাহায্য করে। চলুন নীচে দেখে নিই, তাদের উপকারিতা।
1. পিপারমেন্ট অয়েল (Peppermint Oil)
পিপারমেন্ট ভার্টিগোর মাথার যন্ত্রণা, বমিভাব এর মতো উপসর্গগুলি উপশম করে। তাই ভার্টিগোর চিকিৎসায় পিপারমেন্ট অয়েল ব্যবহার করা হয়।
উপকরণ
- ২-৩ ফোঁটা পিপারমেন্ট অয়েল
- ১ চা চামচ আমন্ড অয়েল
করণীয়
প্রথমে দুটি তেল মেশাতে হবে। এরপর তেলের মিশ্রণটি কপালে ও ঘাড়ের পেছনে লাগাতে হবে।
2. জিঞ্জার অয়েল (Ginger Oil)
আদার সুগন্ধ ভার্টিগোর বমিভাব দূর করতে সাহায্য করে। আদাতে বায়ুনাশকারী বৈশিষ্ট্যও রয়েছে যা মাথাঘোরা বা বমিভাব প্রতিকার করতে পারে (৩) ।
উপকরণ
- জিঞ্জার অয়েল
করণীয়
- দু-তিন ফোঁটা তেল হাতে নিয়ে ঘাড়ে বা কানের পিছনে এবং পায়ের নীচে লাগালে উপকার পাওয়া যায় তৎক্ষণাৎ।
3. গ্রেপফুট অয়েল (Grapefruit Oil )
গ্রেপফুট অয়েল-এর সুবাস আপনার ঘরকে তরতাজা রাখার পাশাপাশি ভার্টিগোর সমস্যাও নিয়ন্ত্রণে রাখে।
উপকরণ
- গ্রেপফুট অয়েল
- অ্যারোমা ডিফিউসার
করণীয়
ডিফিউসারের মাধ্যমে সারা ঘরে সুগন্ধ ছড়িয়ে দিতে হবে। সারাদিন গ্রেপফুট অয়েলের সুগন্ধ পেলে ভার্টিগোর সমস্যা কমতে পারে।
4. বেসিল বা তুলসী ও সাইপ্রেস অয়েল (Basil And Cypress Oils)
এই দুই তেলের মিশ্রণের গন্ধে শরীরে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায়, ব্রেনে অক্সিজেনের সরবরাহ বৃদ্ধি পায়। ফলে ভার্টিগোর সমস্যা কমে।
উপকরণ
- কয়েক ফোঁটা বেসিল অয়েল
- কয়েক ফোঁটা সাইপ্রেস অয়েল
- রুম ডিফিউসার
করণীয়
দু’রকমের তেল মিশিয়ে রুম ডিফিউসারে ভরে নিয়ে সারা ঘর ভরিয়ে তুলতে হবে সুগন্ধে। দুই তেলের মিষ্টি গন্ধে শ্বাস নিলে বমিভাব কমে এবং ভার্টিগোর অন্যান্য সমস্যাও দূর হয়।
5. ফ্র্যাংকিনসেন্স অয়েল (Frankincense Oil)
কানে ইনফেকশনে হলে বা স্ট্রেস ও অ্যাংজাইটি কমাতে খুব ভালো কাজ করে এই ফ্র্যাংকিনসেন্স অয়েল। এটি ব্রেনকে শান্ত করে, স্ট্রেস কমায় তাই ভার্টিগোর সমস্যাও কমে।
উপকরণ
- ফ্র্যাংকিনসেন্স অয়েল
করণীয়
ভার্টিগো অ্যাটাক হলে জিভের নীচে কয়েক ফোঁটা ফ্র্যাংকিনসেন্স অয়েল ঢেলে নিন। ৩০ মিনিট পর পুনরায় একই কাজ করুন।
6. ক্ল্যারি সেজ অয়েল (Clary Sage Oil)
অ্যাংজাইটি অ্যাটাক, মাথার যন্ত্রণা এবং খিঁচুনি-র চিকিৎসায় এই তেল ভীষণভাবে উপকারী। তেলের বাষ্প নিঃশ্বাসের সঙ্গে দেহে প্রবেশ করে স্নায়ুতন্ত্রকে শান্ত করে এবং ভার্টিগোর লক্ষণগুলি উপশম করে ।
উপকরণ
- কয়েক ফোঁটা ক্ল্যারি সেজ অয়েল
- ভেপোরাইজার
করণীয়
ভেপোরাইজারে কয়েক ফোঁটা ক্ল্যারি সেজ অয়েল নিন এবং নিশ্বাসের সঙ্গে এর ভাপ নিন।
ঘরোয়া টোটকা ২ঃ ভার্টিগো নিরাময়ে আদার উপকারিতা
ভার্টিগোর চিকিৎসায় আদা অত্যন্ত কার্যকারী। মস্তিষ্কে কোনও কারণে রক্তপ্রবাহ বাধাপ্রাপ্ত হলে মাথাঘোরার মতো সমস্যা আসতে পারে। আদার রস রক্ত চলাচল স্বাভাবিক করে। তার ফলে ব্রেনে অক্সিজেন সরবরাহ ঠিকঠাক হয়। তাই, আপনি যদি ঘন ঘন ভার্টিগোর সমস্যা লক্ষ্য করেন, তা রুখতে আদার সাপলিমেন্ট বা ক্যাপসুল খেতে পারেন। কাঁচা আদা মুখে রাখলে বা আদার লজেন্সও অনেকে ক্ষেত্রে বমিভাব কমাতে সাহায্য করে।
উপকরণ
- কাঁচা আদা বা আদার লজেন্স
করণীয়
যখন ভার্টিগো হবে তখন কাঁচা আদা বা আদার লজেন্স মুখে নিয়ে চেবালে স্বস্তি পাবেন। এছাড়া একাধিকবার ভার্টিগোর সমস্যা অনুভব করলে আদা চা বানিয়েও খেতে পারেন।
আদা চা বানানোর জন্য আদা নিয়ে খুব ছোটো ছোটো টুকরো করে কেটে নিন বা গ্রেট করে নিন। গ্রেট করা আদা বা আদার টুকরোগুলো ফুটন্ত জলে ফেলে ঢাকা দিয়ে রেখে দিন কিছু সময়ের জন্য। ব্যস, হয়ে গেল আদা চা। যখনই ভার্টিগো হবে তখন আদা-চা পান করলে বমিভাব কমে যাবে।
ঘরোয়া টোটকা ৩ঃ ভার্টিগো নিরাময়ে জিঙ্কো বিলোবা-র উপকারিতা
জিঙ্কো বিলোবা গাছের বহু ঔষধি গুণ আছে। এটি শরীরে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে। ফলে এটি খেলে কানের ভিতরভাগে ও মস্তিস্কে রক্ত সরবরাহ ঠিকঠাক হয়। তাই ভার্টিগোর ফলে হওয়া মাথাব্যথা, মাথা ঘোরা বা বমিভাবের মতো সমস্যা ধীরে ধীরে কমে যায় (৪)।
উপকরণ
- জিঙ্কো বিলোবা-র ট্যাবলেট
করণীয়
প্রাপ্তবয়স্করা দিনে ১২০mg ট্যাবলেট-এর ডোজ ৮-১২ সপ্তাহ নিলে ভালো ফল পাবেন।
ঘরোয়া টোটকা ৪ঃ ভার্টিগো নিরাময়ে বিভিন্ন রকমের জুস বা সরবতের উপকারিতা
গাজর, আনারস এবং কমলালেবুর রস বা জুস শরীরে পুষ্টি জোগায়। সঙ্গে ভার্টিগোর বিভিন্ন রকম উপসর্গ মূলত মাথা ঘোরার মতো সমস্যার সঙ্গে যুদ্ধ করার শক্তিও দেইয়। এছাড়া বমিভাব দূর করতে ভীষণ উপকারী লেবুর রস বা সরবত।
উপকরণ
আদার রস/ গাজরের সরবত/ লেবুর রস/ আনারসের সরবত/ কমলালেবুর সরবত
করণীয়
আদা ও লেবু রস বাদে, যে কোনও রকমের সরবত দিনে এক গ্লাস করে খেতে পারেন।
- আদার রস দিয়ে বানানো সরবত
আদা গ্রেট করে তা থেকে রস বার করে নিন। এবারে, এক কাপ জলে দুই টেবিল চামচ আদার রস মেশান। ফ্লেভারের জন্য মধুও মেশাতে পারেন। এবার পান করুন, ভার্টিগোর সমস্যা দূরে পালাবে।
- লেবুর রস দিয়ে বানানো সরবত
এক গ্লাস জলে এক টেবিল চামচ লেবুর রস মেশান। তাতে এক চিমটি নুন ও গোলমরিচ মিশিয়ে পান করুন, ফল পাবেন হাতেনাতে ।
ঘরোয়া টোটকা ৫ঃ ভার্টিগো নিরাময়ে আকুপাংচারের উপকারিতা
আকুপাংচার হল ভার্টিগোর একটি ঐতিহ্যবাহী চিনা চিকিৎসা কৌশল। পাশ্চাত্য দেশের চিকিৎসকেরাও ভার্টিগোর সমস্যা হলে আকুপাংচারের কৌশল প্রয়োগের পরামর্শ দেন। এই কৌশল শরীরের মধ্যে থাকা শক্তি প্রবাহকে নিয়ন্ত্রণ করে শরীরের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনে। (৫) আমাদের দেহে মোট পাঁচটি প্রেশার পয়েন্ট রয়েছে। আকুপাংচারের কৌশল প্রয়োগ করলে, ভার্টিগোর সমস্যাগুলি মূলত মাথাঘোরার উপশম হবে।
১. গভর্নিং ভেসেল ২০ (Governing Vessel 20) – এই প্রেশার পয়েন্টটি শনাক্ত করতে কানের উপর দিক থেকে মাথার মধ্যভাগ পর্যন্ত একটি লাইন কল্পনা করুন। মাথার উপরে ঠিক মাঝামাঝি অংশে রয়েছে এই GV 20 বা গভর্নিং ভেসেল ২০ প্রেশার পয়েন্ট।
২. গলব্লাডার ২০ ও ২১ (Gallbladder 20 and 21) – গলার পিছনে অর্থাৎ ঘাড়ে রয়েছে এই দুই প্রেশার পয়েন্ট GB 20 এবং GB 21 অর্থাৎ গলব্লাডার ২০ ও ২১। মেরুদণ্ডের দু’পাশে হেয়ার লাইনের ঠিক নীচে অবস্থিত GB 20 প্রেশার পয়েন্ট। আর GB 21 পয়েন্টটি রয়েছে আপনার কাঁধের সর্বোচ্চ অংশে যেটি স্তনবৃন্তের সঙ্গে প্রায় এক লাইনে থাকে।
৩. পেরিকার্ডিয়াম ৬ (Pericardium 6) – মধ্যমা থেকে কবজি পর্যন্ত একটি সোজা লাইন কল্পনা করুন। কব্জির ওপর তিনটি আঙুল রাখলে মাঝের আঙুল যেখানে থাকবে তার মধ্যভাগে অর্থাৎ টেন্ডনের ঠিক মধ্যভাগে অবস্থিত এই P6 বা পেরিকার্ডিয়াম ৬ প্রেশার পয়েন্ট।
৪. ট্রিপল ওয়ার্মার ১৭ (Triple Warmer 17) – কানের লতির পিছনে অবস্থিত এই TW 17 বা ট্রিপল ওয়ার্মার ১৭ প্রেশার পয়েন্ট।
মনে রাখবেন
প্রফেশানাল থেরাপিস্টদের দিয়েই কেবলমাত্র আকুপাংচার করানো উচিৎ। পেশাদারি পরামর্শ ছাড়া এই পয়েন্টগুলিতে চাপ প্রয়োগ করে এদের উত্তেজিত করা উচিৎ না। অনেক ক্ষেত্রে তাতে হিতে বিপরীত হতে পারে।
ভার্টিগোর জন্য ডায়েট
ব্রেন ও সারা শরীরের কার্যকারিতা সঠিক মাত্রায় বজায় রাখার জন্য স্বাস্থ্যকর এবং পুষ্টিকর ডায়েট বা খাদ্যাভ্যাস মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি। পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করা উচিত। নইলে রক্ত ও শরীরের সমস্ত তরল পদার্থ প্রবাহ বাধাপ্রাপ্ত হতে পারে এবং ভার্টিগোর সৃষ্টি করতে পারে।
নীচে আমরা তা নিয়ে আলোচনা করলাম। আর আপনি আপনার রোজকার খাদ্য তালিকায় এই খাবারগুলি অবশ্যই যোগ করে নিন।
- বিভিন্ন রকমের মাছ
- হোল গ্রেইন ব্রেড (হোয়াইট ব্রেড ছাড়া)
- ভেজিটেবিল ও ফলের জুস (উপরে উল্লিখিত)
- পটাশিয়াম, নায়সিন ও ভিটামিন B3 সমৃদ্ধ খাবার
আর নিম্নলিখিত এই খাবারগুলি আপনার খাদ্য তালিকা থেকে অবিলম্বে বাদ দিন।
- নোনতা খাবার
- মিষ্টি জাতীয় খাবার যেমন লজেন্স, জেলি, কেক, কেন সুগার বা বাজারজাত কোল্ড ড্রিংকস ইত্যাদি
- পিনাট, ওয়ালনাট এবং পিক্যান এর মতো বাদাম
- প্রসেসড মাংস যেমন সসেজ, পেপারনি
- চিজ যেমন মোজারেলা, সুইস, চেডার এবং অন্যান্য
- কুমড়ো বীজ
- তিল বীজ
ভার্টিগোর জন্য অনুশীলন বা এক্সারসাইজ
ভার্টিগোর সমস্যা কমানোর জন্য বাড়িতে বসে বিভিন্ন রকমের সহজ এক্সারসাইজও করতে পারেন। যেমন –
১. রোমবার্গ এক্সারসাইজ( Romberg exercise)
চলুন দেখা যাক কীভাবে এই এক্সারসাইজটি আপনি করতে পারবেন।
- সোজাভাবে দাঁড়ান – একটি দেওয়ালের সামনে সোজা হয়ে দাঁড়ান। এবং আপনার সামনে একটি চেয়ার নিন সাপোর্টের জন্য। দুই পা একসঙ্গে জড়ো করে এবং হাত দুটি দু পাশে রেখে পুরোপুরি সোজাভাবে দাঁড়ান ৩০ সেকেন্ডের জন্য। এই প্রক্রিয়াটি পাঁচ বার করুন।
- সামনে পিছনে করুন – এবার চেয়ারের সাপোর্ট নিয়ে দেহকে সামনে ও পিছনে দোলান ধীরে ধীরে যাতে দেহের ভর গোড়ালি থেকে পায়ের পাতায় স্থানান্তর হয়। তবে আপনার হিপ অর্থাৎ পশ্চাৎদেশ বাঁকাবেন না। এই প্রক্রিয়াটি ২০ বার করুন।
- দেহকে দু’পাশে দোলান – আবার আগের পোজিশনে ফিরে এসে অর্থাৎ সোজাভাবে দাঁড়ান। এবার দেহকে একবার বাম পাশে ও একবার ডান পাশে পর্যায়ক্রমে দোলান। এই প্রক্রিয়াটিও ২০ বার করুন।
দিনে দু’বার এই এক্সারসাইজটি করতে পারেন। এমনকি ভার্টিগো অ্যাটাক হলে দেহের ভারসাম্য ফেরাতেও এই অনুশীলনটি অভ্যাস করতে পারেন।
২. ব্র্যান্ডেট-ড্যারোফ এক্সারসাইজ (Brandt-Daroff Exercise) –
ভার্টিগোর উপসর্গ থেকে চটজলদি মুক্তি পেতে বহু চিকিৎসকই এই অনুশীলনটি অভ্যাস করার পরামর্শ দেন।
চলুন দেখে নিই কীভাবে এই এক্সারসাইজটি করবেন।
- প্রথমে সোজাভাবে অর্থাৎ মেরুদন্ড সোজা রেখে বসে শুরু করুন।
- এবার এক পাশ ফিরে শুয়ে যান। তবে খেয়াল রাখবেন, আপনার নাক যেন মাটি থেকে ৪৫ ডিগ্রী কোণে থাকে।
- ৩০ সেকেন্ড এভাবে শুয়ে থেকে আবার আগের অবস্থানে ফিরে আসুন।
- এবার অন্য পাশ ফিরে শোওয়ার ভঙ্গি করুন।
- দিনে দু’বার এই এক্সারসাইজটি অভ্যাস করুন। দেহের ভারসম্য ফিরে আসবে এবং ভার্টিগোর সমস্যা দূর হবে।
ভার্টিগো হল অদৃশ্য এক রোগ। আপনার আশেপাশের মানুষ বুঝতেও পারবে না আপনি কী সাংঘাতিক অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। শুধু আপনিই অনুভব করতে পারবেন এই রোগের প্রভাব। তাই ভার্টিগো কে সহজভাবে নেবেন না।
উপরে উল্লিখিত ব্যায়ামগুলি ভার্টিগোর সময় দেহের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে। ঘরোয়া উপাদানগুলিও মাথার যন্ত্রণা বা ঘোরা ও বমিভাবকে অনেকাংশে দূর করতে পারে। পেশাদার থেরাপিস্টের পরামর্শ নিয়ে আকুপাংচার অভ্যাস করলে কমতে পারে ভার্টিগোর প্রকোপও। ভার্টিগোর উপসর্গ অনুভব করলে উত্তেজিত হবেন না। বরং চুপ করে বসে, শান্ত করুন নিজের মন ও শরীরকে। আর অবশ্যই ডায়েটচার্ট মেনে খাওয়াদাওয়া করুন। ঘরোয়া এইসব প্রতিকারের উপায়গুলি দিয়ে ভার্টিগোকে দূর করুন শীঘ্রই।
প্রায়শই জিজ্ঞাস্য প্রশ্নাবলী
ভার্টিগো কি প্রতিরোধ করা যায়?
হ্যাঁ, উপরিউক্ত ডায়েট রেস্ট্রিকশন মেনে ভার্টিগো প্রতিরোধ করা যায়। রক্তচাপ, ব্লাড সুগার, কোলেস্টেরলের মাত্রা, এবং দেহের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করুন। কম নোনতা ও কম মিষ্টি সর্বোপরি স্বাস্থ্যকর খাবার খেলে অনেকাংশেই এই রোগ প্রতিরোধ সম্ভব।
ভার্টিগো কতক্ষণ স্থায়ী হয়?
ভার্টিগোর লক্ষণ সাধারণত কয়েক ঘন্টা স্থায়ী হয়। তবে শরীরে পরোক্ষভাবে এর প্রভাব বা ক্লান্তিভাব সারাদিন থেকে যায়।এর থেকে সম্পূর্ণ মুক্তি পেতে তিন থেকে ছয় সপ্তাহও লেগে যেতে পারে।
5 sources
- Vertigo-associated disorders
https://medlineplus.gov/ency/article/001432.htm - Chapter 123Vertigo and Associated Symptoms
https://www.ncbi.nlm.nih.gov/books/NBK228/ - Chapter 7 The Amazing and Mighty Ginger
https://www.ncbi.nlm.nih.gov/books/NBK92775/ - Treatment of Vertigo: A Randomized, Double-Blind Trial Comparing Efficacy and Safety of Ginkgo biloba Extract EGb 761 and Betahistine
https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC4099171/ - Acupuncture: In Depth
https://www.nccih.nih.gov/health/acupuncture-in-depth

Latest posts by StyleCraze (see all)
- চা খাওয়ার উপকারিতা এবং অতিরিক্ত চায়ের নেশার অপকারিতা | Tea Benefits and Side Effects in Bengali - February 25, 2021
- অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যুক্ত খাদ্য সামগ্রী এবং তার গুণাবলী | Antioxidant Rich Foods in Bengali - February 22, 2021
- মূত্র নালীতে সংক্রমণের কারণ, লক্ষণ এবং ঘরোয়া উপায়ে চিকিৎসা পদ্ধতি | Home Remedies for UTI - February 18, 2021
- জিলাটিনের ব্যবহার, উপকারিতা ও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া | Gelatin Benefits and Side Effects in Bengali - February 17, 2021
- উইলসন রোগ – কারন, লক্ষন, চিকিৎসা | Wilson Disease in Bengali - February 17, 2021
